শিল্প-ব্যবসায় করের বোঝা বাড়ল – ইউ এস বাংলা নিউজ




শিল্প-ব্যবসায় করের বোঝা বাড়ল

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩ জুন, ২০২৫ | ৬:৪৩ 20 ভিউ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে প্রস্তাবিত বাজেটে কর অব্যাহতি প্রত্যাহারের মাধ্যমে স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষা কমানো হয়েছে। অপরদিকে রাজস্ব আয় বাড়াতে সুতা উৎপাদনে ভ্যাট এবং লোকসানি প্রতিষ্ঠানেরও কর বাড়ানো হয়েছে। আবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের স্থান-স্থাপনা ভাড়ার উৎসেও কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে করপোরেট করের শর্ত শিথিল, এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট হ্রাস, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর হ্রাস এবং কাস্টমসে মিথ্যা ঘোষণার জরিমানা কমানোর মতো উদ্যোগ রয়েছে, যা ব্যবসাকে সহজ করতে ভূমিকা রাখতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেটে দেশীয় টেক্সটাইল মিলে তৈরি সুতা উৎপাদনে ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে। এতে আরও চাপে পড়বে গ্যাস সংকটে ধুঁকতে থাকা টেক্সটাইল মিলগুলো। প্রতি কেজি কটন সুতা ও ম্যানমেইড ফাইবারে তৈরি

সুতার সুনির্দিষ্ট কর ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় সুতার সঙ্গে প্রতিযোগী সক্ষমতায় আরও পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন মিল মালিকরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, গত ৮ মাসে ২৮ লাখ মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে, যার মধ্যে ১৮ লাখের বেশি নারী। গ্যাস-বিদ্যুৎ, ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদের কারণে ভালো ভালো অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান রুগ্ণ হতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় দেশের শিল্প ধ্বংস করতে একের পর এক উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। দেশীয় সুতার ভ্যাট বাড়ানো হলে সুতা আমদানি বেড়ে যাবে। এতে কার লাভ হবে? বাস্তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। সুতা

বিক্রি হলে সরকার যেই রাজস্ব পেত, তখন সেই রাজস্বও পাবে না। তিনি বলেন, এ নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে শিল্পের গলা চেপে মেরে ফেলার জন্য। প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক খাতেও করের বোঝা চাপানো হয়েছে। অব্যাহতি সংস্কৃতি পরিহার করতে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, পলিপ্রোপাইন স্টাপল ফাইবারের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন উৎপাদনে হ্রাসকৃত ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে। এতে ইলেকট্রনিক্স শিল্পের সুরক্ষা কমবে, বিদেশি ইলেকট্রনিক্সসামগ্রীর আমদানি বাড়বে। পাশাপাশি ক্রেতার খরচ বাড়াবে। গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত সিমেন্ট শিট উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট আছে, এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। স্টিল শিল্পের কাঁচামাল ফেরো ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকা ম্যাঙ্গানিজ অ্যালয় উৎপাদনে টনপ্রতি

এক হাজার টাকা ভ্যাট আছে, এটি এক হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। ফেরো সিলিকন অ্যালয়ের ভ্যাট দেড় হাজার টাকা করা হয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে হোম অ্যাপ্লায়েন্স বা গৃহস্থালিসামগ্রী উৎপাদনে। ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, মিক্সার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রন, রাইস কুকার, মাল্টি কুকার ও প্রেসার কুকার উৎপাদনে ২০২৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ৫ শতাংশ, ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৭ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১০ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। লিফটের ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করে উৎপাদনের জন্য উপকরণ ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে বছরভিত্তিক ভ্যাট হার বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়েছে, শিল্পের

লাভ-লোকসান যাই হোক-বাজেটে দ্বিগুণহারে এক শতাংশ ন্যূনতম আয়কর দিতে হবে। অবশ্য টার্নওভারের সীমা এক কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ পদক্ষেপের ফলে ব্যবসা-শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ব্যবসা পরিচালনার জন্য রাজধানীর প্রায় সব প্রতিষ্ঠানকে স্থান-স্থাপনা ভাড়া নিতে হয়। স্থান-স্থাপনা ভাড়ার উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। সাধারণত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকেই এ খরচ বহন করতে হয়। ব্যবসার প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করতে কনভেনশন হল, কনফারেন্স সেন্টার ভাড়া নিতে হয়। এ ধরনের হল ভাড়ার উৎসে কর দ্বিগুণ করে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। স্থান-স্থাপনা ভাড়া বা কনফারেন্স সেন্টার ভাড়ার ওপর উৎসে কর বাড়ানোয় ব্যবসা খরচ বাড়বে। এ

ছাড়া শিল্পের কর অবকাশ সুবিধাও বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে ৩১টি শিল্প খাত ১০ বছরের জন্য অঞ্চলভেদে ক্রমহ্রাসমান হারে কর অবকাশ সুবিধা ভোগ করছে। শিল্প খাতগুলো হচ্ছে-অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যালস ইনগ্রিডিয়েন্ট, কৃষি যন্ত্রপাতি, ব্যারিয়ার কন্ট্রাসেপটিভ ও রাবার ল্যাটেক্স, ইলেকট্রনিক্সের মৌলিক উপাদান (রেজিস্টর, ক্যাপাসিটর, ট্রানজিটর, ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট ও মাল্টিলেয়ার পিভিসি); বাইসাইকেল ও এর যন্ত্রাংশ, বায়ো ফার্টিলাইজার; বায়োটেকনলজিভিত্তিক কৃষি পণ্য, বয়লারের খুচরা যন্ত্রাংশ ও সরঞ্জামসহ, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, আসবাবপত্র, হোম অ্যাপ্লায়েন্স (ব্লেন্ডার, রাইস কুকার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ইলেকট্রিক ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, ইনডাকশন কুকার, ওয়াটার ফিল্টার), কীটনাশক ও বালাইনাশক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, এলইডি টিভি, ফলমূল ও শাকসবজি প্রক্রিয়াকরণ, মোবাইল ফোন, পেট্রোকেমিক্যাল; ফার্মাসিউটিক্যালস; প্লাস্টিক রিসাইক্লিং; টেক্সটাইল মেশিনারি; টিস্যু

গ্রাফটিং; খেলনা উৎপাদন; টায়ার ম্যানুফেকচারিং, ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার, ম্যানমেইড ফাইবার উৎপাদন, অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ ম্যানুফেকচারিং, রোবটিক্স ডিজাইন, এআইভিত্তিক সিস্টেম ডিজাইন, ম্যানুফেকচারিং, ন্যানোটেকনোলজিভিত্তিক পণ্য ম্যানুফেকচারিং এবং এয়ারক্রাফট হেভি মেইনটেন্যান্স সার্ভিস ও খুচরা যন্ত্রাংশ ম্যানুফেকচারিং। অবশ্য অর্থ উপদেষ্টা এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট হ্রাস, শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে আগাম কর হ্রাস এবং কাস্টমসে মিথ্যা ঘোষণা জরিমানা কমিয়ে শিল্পে করের চাপ কমানোর চেষ্টা করেছেন। শিল্পের কাঁচামালের আগাম কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিধিবহির্ভূত রেয়ার গ্রহণের জরিমানা কমানো হয়েছে। নির্মাণ সংস্থা, যোগানদার ও সিএন্ডএফ এজেন্টদের ভ্যাট রিটার্ন জমার মেয়াদ প্রতি মাসের পরিবর্তে ৬ মাস করা হয়েছে। পাশাপাশি শিল্পের আগাম কর, রিফান্ড আবেদন, রেয়াত গ্রহণের সময়সীমা ৪ মাসের পরিবর্তে ৬ মাস করা হয়েছে। কাস্টমসে এইচএড কোড ভুলবশত মিথ্যা ঘোষণা কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। এ ছাড়া করপোরেট করের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, করপোরেট করে নগদ লেনদেনের শর্ত বাতিলের সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে কোম্পানির রিটার্ন জমা দেওয়ার পর দায়িত্বরত কর কর্মকর্তারা যেভাবে খরচ অননুমোদন করে, তাতে কার্যকরী কর হার ৩৫ শতাংশের বেশি হয়ে যায়। কর হার বাড়িয়ে হলেও কোম্পানি করদাতারা যেভাবে রিটার্ন জমা দেয়, সেভাবে গ্রহণের বিধান করা হলে হয়রানি কমত। খরচ অননুমোদনের ক্ষমতা থাকায় বাধ্য হয়েই সব কোম্পানি করদাতাকে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কর কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনৈতিক নোগেশিয়েশনে যেতে হয়। তিনি আরও বলেন, কোম্পানিগুলো অনেক সময় সাপ্লায়ারদের কাছ থেকে ভুলবশত ভ্যাট-ট্যাক্স আদায় করে না। পরে সেই ট্যাক্স জমা দেওয়ার সুযোগ আইনে নেই। এ কারণে কর কর্মকর্তা সেই খরচকে ব্যবসা আয় দেখিয়ে ট্যাক্স নির্ধারণ করে, যা কোম্পানি করদাতাদের জন্য বড় একটি বোঝা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
‘ওরা বন্দুক দেখিয়ে আমাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে’ কালুরঘাট সেতুতে প্রাইভেটকার ও অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কা, নিহত ৩ বাড়ল স্বর্ণের দাম শি জিনপিং ও ট্রাম্পের ফোনালাপ, যে কথা হলো ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস বকেয়া থাকা দুঃখজনক: গণসংহতি আন্দোলন কুরবানির খুশির ঈদে পরিমিত খাওয়ায় থাকুক প্রশান্তি আসামে ‘বিদেশি’ বলে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া অনেকে ফিরেছেন, ১৪৫ জন নিখোঁজ- সরেজমিন প্রতিবেদন নারীকে লাথি মারা বহিষ্কৃত জামায়াত নেতাকে ফুলেল শুভেচ্ছা কী বার্তা দেয় প্রস্তুত জাতীয় ঈদগাহ, ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৭টায় ‘বিচারকদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ ছিল ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল উদ্দেশ্য’ প্রস্তুত ২০ হাজার কর্মী, কুরবানির বর্জ্য দিনেই সরাতে চায় ঢাকার দুই সিটি গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে এনসিপি ও চীনা রাষ্ট্রদূতের মধ্যে সংলাপ পবিত্র হজের খুতবা দিলেন ড. সালেহ আল হুমাইদ গাজার পথে গ্রেটা, যা বলল ইসরাইল কুরবানির পশু কেনার পর শরিকের সংখ্যা বাড়ানো যাবে কি? যে কারণে কুরবানি না করার আদেশ দিল মরক্কো সরকার শরিকি কুরবানিতে কেউ হারাম টাকায় অংশ নিলে কুরবানি হবে কি? ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার’, হয় না সত্যি সবার দুই ভাতিজিকে কুপিয়ে হত্যা, ঘাতক চাচা গ্রেপ্তার খোলা ট্রাক-পিকআপে ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে মানুষ