যন্ত্রণার নাম ব্যাটারি রিকশা – ইউ এস বাংলা নিউজ




যন্ত্রণার নাম ব্যাটারি রিকশা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৬:৩৩ 12 ভিউ
রাজধানীর অলিগলি এবং আশপাশের এলাকায় চলাচলকারী অবৈধ ব্যাটারির রিকশা ও ইজিবাইক উঠে এসেছে মূল সড়কে। এলোমেলো চলাচল, হুটহাট ঘোরানো, উলটোপথে চলাচলের কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। শুধু ব্যাটারির রিকশাচালকরাই নন, অন্য পরিবহণ চালকদের কেউ কেউ সড়ক আইন মানছেন না। ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করে তারা চলার চেষ্টা করছেন নিজেদের খেয়ালখুশিমতো। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা প্রধান সড়কে অবৈধ যানবাহন বন্ধ এবং সড়ক আইন মানাতে কঠোর হচ্ছেন। প্রতিদিনই আড়াই থেকে তিন হাজার ব্যাটারির রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবুও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে বাড়ছে যানজট এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এসব অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হতে হবে। পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন গ্যারেজে যৌথ

অভিযানের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার সকাল ৯টা। মিরপুরের পল্লবী মোড়। বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা আব্দুল হামিদ খান। হঠাৎ তার পায়ে ধাক্কা লাগল। পেছন ফিরতেই দেখেন উলটোপথে আসা একটি ব্যাটারির রিকশা তাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। আব্দুল হামিদ খান বলেন, পায়ে হালকা ব্যথা লেগেছে। এর চেয়ে বড় দুর্ঘটনা তো ঘটে যেতে পারত। সকাল সাড়ে ১০টায় ফার্মগেটে একটি ব্যাটারির রিকশা আটকের চেষ্টা করেন একজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্য। তিনি জানতে চান চালক রিকশা নিয়ে কোথা থেকে এসেছে। রিকশাচালক জানান, তিনি যাত্রী নিয়ে লালমাটিয়া থেকে এসেছেন। চালকের দাবি, তিনি আসতে চাননি, যাত্রী তাকে অনেকটা জোর করে নিয়ে এসেছেন। এ সময় যাত্রী বলেন,

প্রতিদিনই রিকশায় আসি, হাতে সময় কম, সামনে বাড়ান। ওই ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বলেন, ব্যাটারির রিকশা চলাচল নিষিদ্ধ আপনি জানেন তো স্যার? উত্তরে ওই যাত্রী ধমকের স্বরে বলেন, আপনাদের ওপর আবারও ফ্যাসিবাদের পুলিশিং ভর করছে বুঝি? পরে আর কথা না বাড়িয়ে ওই পুলিশ সদস্য সরে যান। বেলা সাড়ে ১২টা। পান্থপথ সিগন্যাল। গ্রিনরোডের দিকের সড়কের যানবাহন থামার নির্দেশনা দিল ট্রাফিক পুলিশ। কিন্তু নির্দেশনা উপেক্ষা করে আস্তে আস্তে এগোতে শুরু করলেন একজন প্রাইভেটকার চালক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশের আগের মতো ‘জোর’ (ক্ষমতা) নেই। এখন কথায় কথায় মামলা দেয় না তারা। শুধু পল্লবী, ফার্মগেট ও পান্থপথই নয়। এমন চিত্র ঢাকার সড়কের

সর্বত্র। নিয়ম ভাঙার সংস্কৃতি জেঁকে বসায় বাড়ছে যানজট। প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পড়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন মানুষ। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী সাদ্দাম হোসেন। মঙ্গলবার দুপুরে রামপুরা ব্রিজ থেকে বাসে ওঠেন কুড়িল বিশ্বরোডের উদ্দেশে। তিনি বলেন, কোকাকোলা মোড় পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগেছে দেড় ঘণ্টা। এরপর একেবারে থমকে যায় বাসের চাকা। একপর্যায়ে বাস থেকে নেমে তপ্ত রোদে হেঁটে পৌঁছান গন্তব্যে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার মতো অবৈধ যানবাহন যে যানজট সৃষ্টির অন্যতম কারণ তা মানতে চান না অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষও। তিনি বলেন, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক এসব রিকশার বিরুদ্ধে অ্যাকশন না নেওয়ার

অনুরোধ করে তাকে বলেছেন, এসব রিকশা তো সাধারণের জন্য ভালো। আপনারা এদের ‘ডিস্টার্ব’ করেন কেন? তিনি বলেন, উনাকে বোঝাতে আমার ঘণ্টাখানেক সময় ব্যয় হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগের পর জনরোষের শিকার হয় পুলিশ। এর আঁচ পড়ে ট্রাফিক পুলিশের ওপরও। অবশ্য আগে থেকেই সড়ক ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। এই অবস্থায় ছাত্র-জনতা সড়কে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব নেয়। ওই সময় ব্যাটারির রিকশাসহ হাজার হাজার অবৈধ যানবাহন নগরীর সড়কে উঠে আসে। পরে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব নিলেও এসব যানবাহনের চালকরা মানতে চাননি সড়ক আইন। তারা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তাচ্ছিল্য করে কথাবার্তা বলতে থাকেন। আগে অলিগলিতে

চললেও ৫ আগস্টের পর থেকে প্রধান সড়কে বেড়েছে ব্যাটারির রিকশার উৎপাত। এতে সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে বিশৃঙ্খলা। রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রধান সড়কে ব্যাটারির রিকশা চলতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার ৭ জন ব্যাটারির রিকশার চালকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, আগে বিভিন্ন অলিগলিতে রিকশা চালাতেও টোকেন নিতে হতো ১২শ টাকা খরচ করে। এখন আর রাস্তায় কোনো চাঁদা দিতে হয় না। চার্জিং খরচ আর রিকশার জমা ছাড়া রাস্তায় কোনো বাড়তি খরচ নেই। তাছাড়া যাত্রী নিয়ে যেখানে খুশি সেখানেই যেতে পারছেন, কেউ বাধা দিচ্ছে না। আয়ও হচ্ছে বেশি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, অন্যান্য গাড়ির পাশাপাশি ব্যস্ত সড়কে ঝুঁকি

নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অসংখ্য ব্যাটারির রিকশা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. হাদিউজ্জামান বলেন, এই যানবাহনগুলো মূল সড়ক বা মহাসড়কে চলার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, সড়ক আইনেও নিষিদ্ধ রয়েছে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি থেকেও নেই-এমন একটা অবস্থায় মূল সড়কে উঠে এসেছে এসব অবৈধ যানবাহন। তাৎক্ষণিক স্বস্তি পাওয়ার জন্য মূল সড়ক থেকে এসব যানবাহন সরাতে হবে। দ্বিতীয়ত, ঢাকার বাইরে থেকে যেসব রিকশা-অটোরিকশা এসেছে, এগুলো নগরীর চার্জিং পয়েন্টগুলোতে (গ্যারেজ) চার্জ দিচ্ছে। চার্জিং পয়েন্টগুলোতে পুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগে অভিযান চালাতে হবে। যেসব ওয়ার্কশপে এসব অবৈধ যানবাহন তৈরি হচ্ছে সেসব স্থানেও অভিযান চালানো প্রয়োজন। এছাড়া বিদেশ থেকে মোটরসহ যন্ত্রপাতি আমদানির বিষয়েও নজর দেওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, সড়কে যানজট কমাতে হলে বাসস্টপেজগুলোতে বাস-বে নির্মাণ, অবৈধ পার্কিং রোধ এবং পাশাপাশি বাস থামানো বন্ধ করতে হবে। চালক, যাত্রী সবাইকে সচেতন হতে হবে। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) খোন্দকার নজমুল হাসান বলেন, ব্যাটারির রিকশাসহ অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ট্রাফিক পুলিশের অভিযান শুরু হয়েছে। প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন হাজার ব্যাটারির রিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কারও রিকশার তার ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে, কারও সিট খুলে নেওয়া হচ্ছে। এ রকম লঘুশাস্তি দেওয়া হচ্ছে। তবে জনবল এবং যানবাহন স্বল্পতার কারণে রেকারিং কিংবা ডাম্পিং করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা দিন দিন কঠোর হচ্ছি। পর্যায়ক্রমে সড়কে একটি যানবাহনও চলতে দেওয়া হবে না।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
টানা বৃষ্টিতে তিন জেলার লাখো মানুষ পানিবন্দি দেশের ক্রান্তিলগ্নে সেনাবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার মানুষের মিছিল পূর্বাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা: সিপিডি ‘ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ব্যবহার করেনি র‍্যাব’ ডিসি নিয়োগে দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে দুদকে আবেদন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ইরানে হামলার ঘোষণা দিলেন নেতানিয়াহু স্থগিত হবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা? শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ৭ দিনের রিমান্ডে রায় দিয়ে ‘বাবার ট্রাস্টে’ টাকা নেন বিচারপতি মধ্যপ্রাচ্যে কত সেনা মোতায়েন রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র? জুয়ার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব, যুবককে কুপিয়ে হত্যা লেবাননে স্থল অভিযানে ত্রিশ কমান্ডারসহ ৪৪০ হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত: ইসরায়েল রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে নতুন অনিশ্চয়তা সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় জামায়াত সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও এগিয়ে নেবে সরকার কেরানীগঞ্জে হোটেলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নিহত ৩ নতুন ভারতের সঙ্গে পুরোনো বাংলাদেশ অন্যায় করে পার পাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে: অর্থ উপদেষ্টা ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে শেরপুর, পানিতে ডুবে দু’দিনে ৫ মৃত্যু