শুক্রবার খাসির ভোজ, রোববার ভাঙা হবে ৫৩ বছরের ঘরবাড়ি – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
     ১১:১১ অপরাহ্ণ

শুক্রবার খাসির ভোজ, রোববার ভাঙা হবে ৫৩ বছরের ঘরবাড়ি

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ১১:১১ 100 ভিউ
রাজশাহীর মোল্লাপাড়ার ছোট্ট এক টুকরো পাড়া— সবাই যার নাম দিয়েছে ‘আদিবাসীপাড়া’। এখানে তিন প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসছেন পাহাড়িয়া সম্প্রদায়ের মানুষ। ৫৩ বছরের শিকড় গেড়ে থাকা সেই আবাস আজ ভেঙে যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাজ্জাদ আলীর পক্ষ থেকে আয়োজন করা হবে খাসির ভোজ। সেদিন সবাইকে খাওয়ানো হবে ভরপেট। কিন্তু আনন্দের সেই ভোজ আসলে বিদায়ের ঘণ্টা। কারণ পরের রোববারের (৭ সেপ্টেম্বর) মধ্যেই তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে হবে। অর্ধশতাব্দীর বসতি এখন উচ্ছেদের মুখে : জানা গেছে, ৫৩ বছর আগে ১৬ কাঠা জমির ওপর ছয়টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল এখানে। ইন্দ্র ধুপি নামের এক দয়ালু ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে তাদের জায়গা দিয়েছিলেন মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে। সময়ের

সঙ্গে ছয়টি বাড়ি বেড়ে দাঁড়ায় ১৬টিতে। এই ছোট্ট মহল্লাই হয়ে ওঠে তাদের শেকড়, সংস্কৃতি আর স্মৃতির ভাণ্ডর। কিন্তু এখন জমির মালিকানা দাবি করছেন সাজ্জাদ আলী নামের এক ব্যক্তি। তিনি দাবি করেন, ইন্দ্র ধুপি মৃত্যুর আগে জমি বিক্রি করে গিয়েছিলেন তার কাছে। স্থানীয়রা জানান, সাজ্জাদের দখলের চাপে ইতোমধ্যে তিনটি পরিবার ভিটেমাটি ছেড়ে চলে গেছে। এখনো বাকি রয়েছে ১৩টি পরিবার— যাদের আগামী রোববারের মধ্যে বিদায় নিতে হবে। ন্যায্যতার প্রশ্ন : পাড়ার বাসিন্দা মিশ্র রাম বর্মণ (৪০) জানান, বছর দুয়েক আগে বিষয়টি নিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের সামনে বসা হয়েছিল। তখন সাজ্জাদের দলিলকে জাল বলেছিলেন কাউন্সিলর। কিন্তু সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যান সাজ্জাদ। পরে আর

কোনো উদ্যোগ হয়নি। গত বছরের ৫ আগস্ট, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর, ফের হাজির হন সাজ্জাদ। তখন তিনি বাড়ি ছাড়তে বলেন। প্রথমে কিছু টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন, পরে সেই টাকাই নির্ধারিত হয় বাড়ি ছাড়ার শর্ত হিসেবে। ছয়টি মূল পরিবারের প্রতিটি ঘরের জন্য নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৬ লাখ টাকা। মিশ্র রাম বলেন, ‘আমরা তো কারও কাছে যেতে পারছি না। কাউন্সিলরও নাই। তাই বাধ্য হয়েই রাজি হলাম। এখন বাড়িতে তিন ছেলে থাকলে দুই লাখ করে ভাগ হবে। এই সামান্য টাকা নিয়েই চলে যেতে হচ্ছে।’ ভাঙনের বেদনা : এ পাড়ার প্রবীণতম বাসিন্দা ফুলমনি বিশ্বাসের বয়স এখন প্রায় ৮০। প্রথম দিকের ছয় পরিবারের একজন

তিনি। বাড়ির সামনে বসে বিষণ্ন কণ্ঠে বললেন, ‘কোথায় যাব? আমরা তো এখুন আন্ধার ঘরে হাইতড়াই তো পাছি ন্যা। আমরাও কিছু খুইজে পাছি ন্যা।’ তার মেয়ে সরলা বিশ্বাসের জন্মও এই মহল্লায়। ‘এখানেই জন্ম, এখানেই বড় হয়েছি। এখন সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। অন্যায় মনে হয়, কিন্তু করার কিছু নাই।’ ইতোমধ্যে তিন পরিবার ঘর ভেঙে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকিরা গুছিয়ে নিচ্ছেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কেউ কেউ গ্রামে সামান্য জমি কিনেছেন, কিন্তু বাড়ি করার মতো অর্থ নেই কারও হাতে। গর্ভবতী পার্বতী রানীর চোখে শুধু উৎকণ্ঠা। ‘আমি পোয়াতি। এখন কার বাড়িতে গিয়ে উঠব?’ কথাগুলো বলার সময় তার চোখে ভয় আর অনিশ্চয়তার ছাপ। তরুণ শিপেন বিশ্বাস, সদ্য এইচএসসি পরীক্ষার্থী,

জানালেন তার দাদা বামনা পাহাড়িয়া ছিলেন প্রথম ছয়জনের একজন। এখানেই তার বাবা জন্মেছেন, সেও জন্মেছে। অথচ রোববারের পর আর থাকবে না তাদের পরিচিত সেই ভিটেমাটি। সাজ্জাদের দাবি : অন্যদিকে সাজ্জাদ আলী বলছেন, ‘জমিটা আমার কেনা। কয়েকটা ঘর আগেই ছিল। আমি জোর করে উচ্ছেদ করছি না, সুন্দরভাবে বিদায় দিচ্ছি। টাকা দিয়ে দিয়েছি, তারা বাড়িঘর করছে। শুক্রবার খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করেছি, তারপর রোববার তারা চলে যাবে।’ তবে কবে জমি কিনেছেন, তা মনে নেই বলেই জানান তিনি। সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম তার দলিলকে জাল বলেছিলেন কি না— জানতে চাইলে সাজ্জাদের উত্তর, ‘এটা মিথ্যা কথা।’ প্রশাসনের নীরবতা : সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী বলেন, তার জানা নেই এমন কোনো বিষয়। তবে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ হলে পাহাড়িয়া পরিবারগুলো থানায় আসতে পারে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক টুকরো প্রশ্নবিদ্ধ বিদায় : অর্ধশতাব্দী ধরে টিকে থাকা একটি সম্প্রদায়, তাদের শিকড়, স্মৃতি, জন্ম ও মৃত্যুর গল্প— সবকিছু ভেঙে যাচ্ছে টাকার বিনিময়ে। শুক্রবারের ভোজ হয়তো ভরপেট খাওয়াবে, কিন্তু রোববারের পর সেসব পরিবার কোথায় মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পাবে, তার উত্তর কারও কাছে নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
গণভোট ইস্যুতে মুখোমুখি বিএনপি-জামায়াত শাহজালালে যাত্রীর পাকস্থলীতে মিলল ৬৩৭৮ ইয়াবা চলতি বছর স্বর্ণের দাম বেড়েছে ৫০ বার, কমেছে কত বার? সকাল ৯টার মধ্যে ঢাকাসহ যেসব জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস বিএনপির একজন নেতার চাঁদাবাজির টাকা দিয়েই গণভোট আয়োজন সম্ভব: পাটওয়ারী ঢাকায় জুলাইযোদ্ধা শাফিনের রহস্যজনক মৃত্যু জামায়াত নিষিদ্ধে আলালের বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানালেন আবদুল হালিম বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে বোঝাপড়া হচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি: পাটওয়ারী জামায়াত-বিএনপি ও এনসিপির কাঠামোর মধ্যে নির্বাচন সম্ভব নয়: জাপা মহাসচিব নির্বাচন কমিশন ভাগাভাগি হয়ে গেছে: হাসনাত ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে মন্দিরে পদদলিত হয়ে নিহত ৯ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সরকার পতনের কারণ জানালেন অজিত দোভাল! আজ থেকে বন্ধ হচ্ছে ১০টির বেশি সিম নিবিড় হচ্ছে ঢাকা-ইসলামাবাদ সামরিক বন্ধন: অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেলের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বর রাওয়ালপিন্ডি যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ভোলায় বিএনপি-বিজেপি সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, আহত অর্ধশতাধিক বর্তমান বাস্তবতায় অন্তবর্তী সরকার গঠনকল্পে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে পাঠানো মহামান্য রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সটি রি-কল (Recall) হওয়া উচিত নবজাগরণে জ্বলে উঠুক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল: অবৈধ ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আওয়ামী লীগ, ১০ মাসে গ্রেপ্তার ৩ হাজার বিশ্ববাজারে গমের দাম কমতে কমতে অর্ধেকে নামলেও দেশে আটার দাম আকাশছোঁয়া, এই বৈষম্য কমবে কবে? বিশ্ব মিডিয়ায় শেখ হাসিনার সদর্প উপস্থিতি, ডিপ স্টেটের গভীর ষড়যন্ত্র এবং স্বদেশ প্রত্যাবর্তন