
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

কুরবানির উপযুক্ত সুস্থ গরু চেনার উপায়

কেশচর্চায় আমলকি

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে তালশাঁস

ডায়াবেটিস থাকলে কি পাকা আম খাওয়া ঠিক হবে, যা বলছেন পুষ্টিবিদ

অফিস যাওয়ার আগে অল্প সময়ে চুলের সাজে পরিবর্তন আনবেন যেভাবে

চুল ও ত্বকের জন্য বেল কতটা উপকারী

গরমে বরফের ৫ ব্যবহার, ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক হতে পারে দাগহীন ও মসৃণ
কুরবানির মাংসের পুষ্টিগুণ ও সংরক্ষণ

দেহ গঠন ও দেহের রক্ষণাবেক্ষণে মাংস অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। এতে আছে সবকটি অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো অ্যাসিড। যা দেহে ভালোভাবে পরিপাক হয়। মাংসের মধ্যে কোলাজেন ও ইলাস্টিন নামক প্রোটিন থাকে। রান্নার সময় তাপের প্রভাবে কোলাজেন জেলাটিনে রূপান্তরিত হয়। ফলে মাংস সিদ্ধ হয়। তাপ প্রয়োগে ইলাস্টিনও নরম হয়। ইলাস্টিন বেশি থাকলে মাংস সিদ্ধ হতে সময় বেশি লাগে। যে মাংসের আঁশ আকারে বড় ও মোটা, সেটা নিকৃষ্টমানের। ছোট সরু আঁশের মাংস মসৃণ, ভেলভেটের মতো এবং উৎকৃষ্টমানের। মাংসের নির্যাসে থাকে ল্যাকটিক অ্যাসিড ও ক্রিয়াটিনিন। এ ছাড়া সামান্য পরিমাণে থাকে ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড ও অন্যান্য উপাদান। মাংসের পেশিতে থাকে পানি, চর্বি, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ।
যকৃত ও পেশির কোষে গ্লাইকোজেন রূপে শর্করা থাকে। এর পরিমাণ ১-৫ শতাংশ। * মাংসের পুষ্টিগুণ মাংসে আছে উচ্চ জৈবমূল্যের প্রোটিন। আরও আছে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ফসফরাস, সোডিয়াম, লৌহ, পটাশিয়াম। মাংসের লৌহ সবজির চেয়ে উন্নতমানের। এর চর্বি সম্পৃক্ত চর্বি। প্রতি ১০০ গ্রামে আছে ৭৫ মিলিগ্রাম। কলিজা ও মগজে ১০০ শতাংশ কোলেস্টেরল আছে। মাংসের ক্যালরি নির্ভর করে চর্বির উপস্থিতির ওপর। চর্বি ছাড়া ও কচি মাংসে ক্যালরি কম থাকে। তেমনি হাড় ছাড়া মাংসে ক্যালসিয়াম কম থাকে। * মাংসের উপকারিতা সব বয়সেই মাংস প্রয়োজন। সঠিক পরিমাণে মাংস খাওয়া শরীর বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গরুর মাংসের জিংক শোষিত হয় ২৫ শতাংশ। পোড়া ঘা ও দেহের
ক্ষত সারানোর জন্য জিংক দরকার। খেলোয়াড় ও যারা কঠিন ব্যায়াম করেন তাদের প্রচুর ঘাম হয়। এ ঘামের সঙ্গে জিংক বেরিয়ে যায়। এ কারণে তাদের খাবারে জিংক বাড়ালে উপকার পাওয়া যায়। নিরামিশভোজীদের দেহে জিংক ও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি দেখা যায়। মাংসের ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের জন্য হাড় ও দাঁত মজবুত থাকে। মাংস রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। * মাংস রান্না করার সঠিক পদ্ধতি রান্নার ফলে মাংস জীবাণুমুক্ত হয়। কারণ তখন এর লালকণিকা ভেঙে যায়। এ সময় প্রোটিন জমাট বেঁধে যায়। সাধারণত মাংসের প্রোটিন জমাট বাঁধে ১৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। উচ্চ তাপে প্রোটিন শক্ত ও সংকুচিত হয়ে যায়। এ কঠিন মাংস সহজপাচ্য নয়। সুতরাং অল্প তাপে
মাংস রান্না করা উচিত। রান্নার ফলে মাংসের পুষ্টি মূল্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। তবে তাপের মাত্রা ও সময়ের ওপর থায়ামিনের ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করে। টিনজাত মাংসে থায়ামিন কম থাকে। থায়ামিন ও রাইবোফ্লাভিন রান্নার ফলে নষ্ট হয় না। মাংস রান্নার সময় চর্বি ছাড়িয়ে নেওয়া ভালো। সাদা সিরকা, লেবুর রস ও টকদই মাখিয়ে ২ ঘণ্টা রেখে রান্না করলে ভালো হয়। রান্নার সময় কম তেল ব্যবহার করা ভালো। কম তেল, কম মসলা মাংসকে সহজপাচ্য করে তোলে। মাংসে ঘি, মাখন, ক্রিম, ডালডা ব্যবহার না করা ভালো। মাংস রান্নায় চিনি ও কাঁচা পেঁপে ব্যবহার করলে দ্রুত সিদ্ধ হয়। মাংস ঢেকে রান্না করলেও এর মান ভালো
হয়। মাংস বড় টুকরা করে ঢেকে রান্না করলে ভালো হয়। মাংস কোটা, ধোয়া, রান্না, পরিবেশন সবই হতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে। মাংস কাটার টেবিল, কাটার ছুরি, বঁটি সবই পরিষ্কার থাকতে হবে। রান্নার ফলে মাংস নরম হয় ও রং বদলে যায়। এরপর সুঘ্রাণযুক্ত হয়। তাপের প্রভাবে চর্বির কোষ গলে গিয়ে মাংস থেকে পৃথক হয়ে যায়। যখন গরম মাংস খাওয়া হয় তখন মাংস সুস্বাদু হয়ে মুখে একটা খাদ্যযুক্ত অনুভূতি দেয়। মাংসে যে পানি থাকে, তাপের প্রভাবে পানি শুকিয়ে গেলেও প্রোটিনের কোনো তারতম্য হয় না। মাংসের স্বাভাবিক সুন্দর ঘ্রাণ আসে এর নির্যাস ও ধাতব লবণের জন্য। হিমায়িত মাংস রান্না করতে হলে ছোট ছোট টুকরা
করে রান্না করলে ভালো হয়। প্রেশার কুকারে রান্না করলে এর খাদ্যগুণ বজায় থাকে। মাংস কষানোর ওপর এর স্বাদ নির্ভর করে। যত বেশি কষানো হবে তত এর স্বাদ বাড়বে। কিমা করা মাংস পানিতে ডুবিয়ে রাখলে এর স্বাদ নষ্ট হয়। * মাংস নরম ও সুস্বাদু করার উপায় মাংস নরম করতে হলে এনজাইম প্রয়োগ করতে হবে। এটা প্রাচীন পদ্ধতি। প্রাচীনকালে মাংস কেটে ধুয়ে পেঁপে পাতা দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হতো। এতে মাংসের প্রোটিনের ওপর পেপেইন নামক এনজাইমের প্রতিক্রিয়া ঘটত। অন্যান্য এনজাইমের মধ্যে আছে আনারসের ব্রোমেলেইন এবং ডুমুরের ফাইসিস। বর্তমানে কাঁচা পেঁপে বাটা দিয়ে মাংস নরম করা হয়। যাতে আছে পেপেইন নামক এনজাইম। এ ছাড়া মাংস নরম
করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে- ▶ হালকা লবণ ব্যবহার করলেও মাংস নরম হয়। এজন্য প্রয়োজন সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম বাই কার্বনেট এবং পটাশিয়াম ফসফেট। ▶ সিরকা বা ভিনেগারের মধ্যে মাংস ভিজিয়ে রাখলেও মাংস নরম হয় এবং রসালো হয়। ▶ প্রোটিওলাইটিক এনজাইম বা টেন্ডারাইজার ব্যবহার করা হয় মাংস নরম করার জন্য। ▶ দই, টমেটো, তেঁতুল দিয়েও মাংস নরম করা হয়। * মাংস সিদ্ধ হওয়ার সময় একই পশুর বিভিন্ন অংশের মাংস ভিন্ন সময়ে সিদ্ধ হয়। যেমন- ▶ তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয় : পিঠের ওপরের পাঁজরের মাংস (Rib) ও কোমরের মাংস (Loin)। ▶ মোটামুটি সময় লাগে : পিঠের ওপরের দিকের ঘাড়ের মাংস (Chuck), মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তের মাংস (Rump), পেছনের রানের ওপরের মাংস (Round)। ▶ দেরিতে সিদ্ধ হয় : পেটের কাছে দুই পাশে পাঁজরের মাংস (Flank), সামনের রানের মাংস (Brisket), ঘাড়ের মাংস (Neck)। * মাংসের চর্বি কমানোর উপায় ▶ মাংস হলুদ-লবণ দিয়ে সিদ্ধ করুন। ঠান্ডা হলে ফ্রিজে রেখে দিন। ওপরে চর্বি জমাট বাঁধলে সেটা ফেলে দিন। ▶ কাঁচা মাংস কেটে ধুয়ে একটি ঝাঁঝরিতে নিয়ে ফুটন্ত পানির পাত্রের মুখে বসিয়ে রাখুন। চর্বি গলে নিচের পাত্রে পড়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে রান্না করুন। ▶ আগুনে ঝলসে রান্না করলে বা শিক কাবাব করলে চর্বি অনেকখানি কমে যায়। ▶ টকদই, অলিভ ওয়েল, লেবুর রস, রসুন বাটা, তেঁতুলের ক্বাথ, পেঁপে বাটা ইত্যাদি দিয়ে মেরিনেট করলে মাংসের চর্বি কমনো যায়। দৃশ্যমান চর্বি ফেলে দিতে হবে। * স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে মাংস খাওয়া ▶ উচ্চতাপে দীর্ঘসময় ধরে মাংস রান্না করলে এতে পলিসাইক্লিক হাইড্রোকার্বন ও হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইন জাতীয় ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয়। এ জন্য অল্প তাপে মাংস রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত। ▶ বেশি তেল-মসলা দিয়ে রেজালা বা ভুনা করে মাংস না খাওয়াই ভালো। এতে হজমের সমস্যা হতে পারে। ▶ কিমা করে খাওয়া ভালো। তবে আগুনে ঝলসানো কাবাব না খাওয়াই ভালো। ▶ হৃদরোগী, উচ্চরক্তচাপের রোগী যাদের রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি তারা কলিজা, মগজ, ভুঁড়ি ও নেহারি এড়িয়ে চলুন। ▶ প্রতি বেলায় মাংসের সঙ্গে সবজি ও সালাদ খান। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচা যাবে। ▶ ঈদের দিন অনেকেই বাসায় শিক কাবাব ও বারবিকিউ করে থাকেন। লক্ষ রাখতে হবে এগুলো যেন ভালোভাবে সিদ্ধ হয়। ▶ বাড়িতে যারা বয়স্ক আছেন তারা শক্ত মাংস খেতে না পারলে কিমা রান্না, শামী কাবাব, কলিজা, মগজ, ইত্যাদি তাদের দিতে পারেন। ▶ মাংসের সঙ্গে টকদই, বোরহানি, চিনি ছাড়া লেবুর শরবত খেতে পারেন। * মাংসের ক্ষতিকর দিক মাংসে ট্রাইগ্লাইসেরাইড, কোলেস্টেরল, পিউরিন, ক্রিয়াটিনিন থাকে বলে হৃদরোগী, বাত, উচ্চরক্তচাপ ও কিডনি রোগী যতটা সম্ভব কম খাবেন। এছাড়া লিভার সিরোসিস, গলব্লাডারে পাথর ও প্যানক্রিয়াসের অসুখে প্রাণীজ চর্বি বাদ দেওয়া ভালো। অর্ধসিদ্ধ মাংসে সেলেনিয়াস নামক প্যারাসাইট থাকে। এটা দেহে বিশেষ ধরনের যক্ষ্মার জন্ম দেয়। এ ধরনের জীবাণু মানুষের অন্ত্র, পাকস্থলী, যকৃৎ প্রভৃতি স্থানে প্রবেশ করে মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। অতিরিক্ত মাংস খেলে হজমের ব্যাঘাত হয়ে মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, বমি হতে পারে। আবার অতিরিক্ত মাংস ওজন বৃদ্ধি করা ছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। * মাংস সংরক্ষণ অনেক সময় সংরক্ষণের অজ্ঞতার জন্য মাংস দূষিত হয়ে পড়ে। এ জন্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণের কয়েকটি পদ্ধতি হল- ▶ কাঁচা ও সিদ্ধ মাংস সমান পরিমাণে মিশিয়ে সসেজ তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। ▶ হালকা লবণ ও হলুদ মেখে অল্প আঁচে গরম করে রাখলে বেশ কিছুদিন রাখা যাবে। ▶ ভিনেগারে মাংস ডুবিয়ে রাখলে ভালো থাকবে। ভিনেগারের পরিবর্তে লেবুর রস ব্যবহার করা যায়। ▶ কাঁটা চামচ বা ছুরি দিয়ে কেচে লবণ ও লেবুর রস মাখিয়েও রাখা যায়। ▶ কিছু মাংস সিদ্ধ করে রাখলে পরে এগুলো দিয়ে কাবাব তৈরি করা যায়। ▶ রান্না করা মাংস ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখতে হবে। ▶ সংরক্ষণের জন্য মাংসের টুকরা বড় করা ভালো। ▶ বাতাসবিহীন এলুমিনিয়াম ফয়েলের প্যাকেট বা প্লাস্টিকের প্যাকেটে মাংস রাখুন। ▶ ডিপ ফ্রিজে প্যাকেটের মধ্যে আঁটোসাঁটো করে না রেখে কিছুটা আলগা করে মাংস রাখুন। ▶ ফ্রিজ না থাকলে মাংসে পানি না দিয়ে কম মসলায় মাংস কষিয়ে রাখুন। এ মাংস প্রথম দুই দিন দিনে ২ বার গরম করতে হবে। তারপর দিনে একবার জ্বাল দিলেও চলবে। ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত ঢাকনা দেওয়া যাবে না। কাঁচা মাংস রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ তিন-চার দিন রাখা যায়। ডিপ ফ্রিজে পাঁচ-ছয় মাস। রান্না করা মাংস ফ্রিজে থাকবে দুই-তিন দিন। ডিপ ফ্রিজে থাকবে ২-৩ মাস। চপ-কাটলেট-কাবাব ফ্রিজে থাকে ৩-৪ দিন। ডিপ ফ্রিজে থাকে ৩-৪ মাস। লবণ-হলুদ মেখে কাঁচা মাংস রোদে শুকিয়েও সংরক্ষণ করা যায়। লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।
যকৃত ও পেশির কোষে গ্লাইকোজেন রূপে শর্করা থাকে। এর পরিমাণ ১-৫ শতাংশ। * মাংসের পুষ্টিগুণ মাংসে আছে উচ্চ জৈবমূল্যের প্রোটিন। আরও আছে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ফসফরাস, সোডিয়াম, লৌহ, পটাশিয়াম। মাংসের লৌহ সবজির চেয়ে উন্নতমানের। এর চর্বি সম্পৃক্ত চর্বি। প্রতি ১০০ গ্রামে আছে ৭৫ মিলিগ্রাম। কলিজা ও মগজে ১০০ শতাংশ কোলেস্টেরল আছে। মাংসের ক্যালরি নির্ভর করে চর্বির উপস্থিতির ওপর। চর্বি ছাড়া ও কচি মাংসে ক্যালরি কম থাকে। তেমনি হাড় ছাড়া মাংসে ক্যালসিয়াম কম থাকে। * মাংসের উপকারিতা সব বয়সেই মাংস প্রয়োজন। সঠিক পরিমাণে মাংস খাওয়া শরীর বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গরুর মাংসের জিংক শোষিত হয় ২৫ শতাংশ। পোড়া ঘা ও দেহের
ক্ষত সারানোর জন্য জিংক দরকার। খেলোয়াড় ও যারা কঠিন ব্যায়াম করেন তাদের প্রচুর ঘাম হয়। এ ঘামের সঙ্গে জিংক বেরিয়ে যায়। এ কারণে তাদের খাবারে জিংক বাড়ালে উপকার পাওয়া যায়। নিরামিশভোজীদের দেহে জিংক ও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি দেখা যায়। মাংসের ফসফরাস ও ক্যালসিয়ামের জন্য হাড় ও দাঁত মজবুত থাকে। মাংস রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে। * মাংস রান্না করার সঠিক পদ্ধতি রান্নার ফলে মাংস জীবাণুমুক্ত হয়। কারণ তখন এর লালকণিকা ভেঙে যায়। এ সময় প্রোটিন জমাট বেঁধে যায়। সাধারণত মাংসের প্রোটিন জমাট বাঁধে ১৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। উচ্চ তাপে প্রোটিন শক্ত ও সংকুচিত হয়ে যায়। এ কঠিন মাংস সহজপাচ্য নয়। সুতরাং অল্প তাপে
মাংস রান্না করা উচিত। রান্নার ফলে মাংসের পুষ্টি মূল্যের তেমন কোনো পরিবর্তন হয় না। তবে তাপের মাত্রা ও সময়ের ওপর থায়ামিনের ক্ষয়ক্ষতি নির্ভর করে। টিনজাত মাংসে থায়ামিন কম থাকে। থায়ামিন ও রাইবোফ্লাভিন রান্নার ফলে নষ্ট হয় না। মাংস রান্নার সময় চর্বি ছাড়িয়ে নেওয়া ভালো। সাদা সিরকা, লেবুর রস ও টকদই মাখিয়ে ২ ঘণ্টা রেখে রান্না করলে ভালো হয়। রান্নার সময় কম তেল ব্যবহার করা ভালো। কম তেল, কম মসলা মাংসকে সহজপাচ্য করে তোলে। মাংসে ঘি, মাখন, ক্রিম, ডালডা ব্যবহার না করা ভালো। মাংস রান্নায় চিনি ও কাঁচা পেঁপে ব্যবহার করলে দ্রুত সিদ্ধ হয়। মাংস ঢেকে রান্না করলেও এর মান ভালো
হয়। মাংস বড় টুকরা করে ঢেকে রান্না করলে ভালো হয়। মাংস কোটা, ধোয়া, রান্না, পরিবেশন সবই হতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে। মাংস কাটার টেবিল, কাটার ছুরি, বঁটি সবই পরিষ্কার থাকতে হবে। রান্নার ফলে মাংস নরম হয় ও রং বদলে যায়। এরপর সুঘ্রাণযুক্ত হয়। তাপের প্রভাবে চর্বির কোষ গলে গিয়ে মাংস থেকে পৃথক হয়ে যায়। যখন গরম মাংস খাওয়া হয় তখন মাংস সুস্বাদু হয়ে মুখে একটা খাদ্যযুক্ত অনুভূতি দেয়। মাংসে যে পানি থাকে, তাপের প্রভাবে পানি শুকিয়ে গেলেও প্রোটিনের কোনো তারতম্য হয় না। মাংসের স্বাভাবিক সুন্দর ঘ্রাণ আসে এর নির্যাস ও ধাতব লবণের জন্য। হিমায়িত মাংস রান্না করতে হলে ছোট ছোট টুকরা
করে রান্না করলে ভালো হয়। প্রেশার কুকারে রান্না করলে এর খাদ্যগুণ বজায় থাকে। মাংস কষানোর ওপর এর স্বাদ নির্ভর করে। যত বেশি কষানো হবে তত এর স্বাদ বাড়বে। কিমা করা মাংস পানিতে ডুবিয়ে রাখলে এর স্বাদ নষ্ট হয়। * মাংস নরম ও সুস্বাদু করার উপায় মাংস নরম করতে হলে এনজাইম প্রয়োগ করতে হবে। এটা প্রাচীন পদ্ধতি। প্রাচীনকালে মাংস কেটে ধুয়ে পেঁপে পাতা দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হতো। এতে মাংসের প্রোটিনের ওপর পেপেইন নামক এনজাইমের প্রতিক্রিয়া ঘটত। অন্যান্য এনজাইমের মধ্যে আছে আনারসের ব্রোমেলেইন এবং ডুমুরের ফাইসিস। বর্তমানে কাঁচা পেঁপে বাটা দিয়ে মাংস নরম করা হয়। যাতে আছে পেপেইন নামক এনজাইম। এ ছাড়া মাংস নরম
করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে- ▶ হালকা লবণ ব্যবহার করলেও মাংস নরম হয়। এজন্য প্রয়োজন সোডিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম বাই কার্বনেট এবং পটাশিয়াম ফসফেট। ▶ সিরকা বা ভিনেগারের মধ্যে মাংস ভিজিয়ে রাখলেও মাংস নরম হয় এবং রসালো হয়। ▶ প্রোটিওলাইটিক এনজাইম বা টেন্ডারাইজার ব্যবহার করা হয় মাংস নরম করার জন্য। ▶ দই, টমেটো, তেঁতুল দিয়েও মাংস নরম করা হয়। * মাংস সিদ্ধ হওয়ার সময় একই পশুর বিভিন্ন অংশের মাংস ভিন্ন সময়ে সিদ্ধ হয়। যেমন- ▶ তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয় : পিঠের ওপরের পাঁজরের মাংস (Rib) ও কোমরের মাংস (Loin)। ▶ মোটামুটি সময় লাগে : পিঠের ওপরের দিকের ঘাড়ের মাংস (Chuck), মেরুদণ্ডের শেষ প্রান্তের মাংস (Rump), পেছনের রানের ওপরের মাংস (Round)। ▶ দেরিতে সিদ্ধ হয় : পেটের কাছে দুই পাশে পাঁজরের মাংস (Flank), সামনের রানের মাংস (Brisket), ঘাড়ের মাংস (Neck)। * মাংসের চর্বি কমানোর উপায় ▶ মাংস হলুদ-লবণ দিয়ে সিদ্ধ করুন। ঠান্ডা হলে ফ্রিজে রেখে দিন। ওপরে চর্বি জমাট বাঁধলে সেটা ফেলে দিন। ▶ কাঁচা মাংস কেটে ধুয়ে একটি ঝাঁঝরিতে নিয়ে ফুটন্ত পানির পাত্রের মুখে বসিয়ে রাখুন। চর্বি গলে নিচের পাত্রে পড়ার পর স্বাভাবিক নিয়মে রান্না করুন। ▶ আগুনে ঝলসে রান্না করলে বা শিক কাবাব করলে চর্বি অনেকখানি কমে যায়। ▶ টকদই, অলিভ ওয়েল, লেবুর রস, রসুন বাটা, তেঁতুলের ক্বাথ, পেঁপে বাটা ইত্যাদি দিয়ে মেরিনেট করলে মাংসের চর্বি কমনো যায়। দৃশ্যমান চর্বি ফেলে দিতে হবে। * স্বাস্থ্যকর পদ্ধতিতে মাংস খাওয়া ▶ উচ্চতাপে দীর্ঘসময় ধরে মাংস রান্না করলে এতে পলিসাইক্লিক হাইড্রোকার্বন ও হেটেরোসাইক্লিক অ্যামাইন জাতীয় ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হয়। এ জন্য অল্প তাপে মাংস রান্না করা স্বাস্থ্যসম্মত। ▶ বেশি তেল-মসলা দিয়ে রেজালা বা ভুনা করে মাংস না খাওয়াই ভালো। এতে হজমের সমস্যা হতে পারে। ▶ কিমা করে খাওয়া ভালো। তবে আগুনে ঝলসানো কাবাব না খাওয়াই ভালো। ▶ হৃদরোগী, উচ্চরক্তচাপের রোগী যাদের রক্তে চর্বির পরিমাণ বেশি তারা কলিজা, মগজ, ভুঁড়ি ও নেহারি এড়িয়ে চলুন। ▶ প্রতি বেলায় মাংসের সঙ্গে সবজি ও সালাদ খান। এতে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচা যাবে। ▶ ঈদের দিন অনেকেই বাসায় শিক কাবাব ও বারবিকিউ করে থাকেন। লক্ষ রাখতে হবে এগুলো যেন ভালোভাবে সিদ্ধ হয়। ▶ বাড়িতে যারা বয়স্ক আছেন তারা শক্ত মাংস খেতে না পারলে কিমা রান্না, শামী কাবাব, কলিজা, মগজ, ইত্যাদি তাদের দিতে পারেন। ▶ মাংসের সঙ্গে টকদই, বোরহানি, চিনি ছাড়া লেবুর শরবত খেতে পারেন। * মাংসের ক্ষতিকর দিক মাংসে ট্রাইগ্লাইসেরাইড, কোলেস্টেরল, পিউরিন, ক্রিয়াটিনিন থাকে বলে হৃদরোগী, বাত, উচ্চরক্তচাপ ও কিডনি রোগী যতটা সম্ভব কম খাবেন। এছাড়া লিভার সিরোসিস, গলব্লাডারে পাথর ও প্যানক্রিয়াসের অসুখে প্রাণীজ চর্বি বাদ দেওয়া ভালো। অর্ধসিদ্ধ মাংসে সেলেনিয়াস নামক প্যারাসাইট থাকে। এটা দেহে বিশেষ ধরনের যক্ষ্মার জন্ম দেয়। এ ধরনের জীবাণু মানুষের অন্ত্র, পাকস্থলী, যকৃৎ প্রভৃতি স্থানে প্রবেশ করে মানুষকে অসুস্থ করে তোলে। অতিরিক্ত মাংস খেলে হজমের ব্যাঘাত হয়ে মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, বমি হতে পারে। আবার অতিরিক্ত মাংস ওজন বৃদ্ধি করা ছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়। * মাংস সংরক্ষণ অনেক সময় সংরক্ষণের অজ্ঞতার জন্য মাংস দূষিত হয়ে পড়ে। এ জন্য সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণের কয়েকটি পদ্ধতি হল- ▶ কাঁচা ও সিদ্ধ মাংস সমান পরিমাণে মিশিয়ে সসেজ তৈরি করে সংরক্ষণ করা যায়। ▶ হালকা লবণ ও হলুদ মেখে অল্প আঁচে গরম করে রাখলে বেশ কিছুদিন রাখা যাবে। ▶ ভিনেগারে মাংস ডুবিয়ে রাখলে ভালো থাকবে। ভিনেগারের পরিবর্তে লেবুর রস ব্যবহার করা যায়। ▶ কাঁটা চামচ বা ছুরি দিয়ে কেচে লবণ ও লেবুর রস মাখিয়েও রাখা যায়। ▶ কিছু মাংস সিদ্ধ করে রাখলে পরে এগুলো দিয়ে কাবাব তৈরি করা যায়। ▶ রান্না করা মাংস ঠান্ডা করে ফ্রিজে রাখতে হবে। ▶ সংরক্ষণের জন্য মাংসের টুকরা বড় করা ভালো। ▶ বাতাসবিহীন এলুমিনিয়াম ফয়েলের প্যাকেট বা প্লাস্টিকের প্যাকেটে মাংস রাখুন। ▶ ডিপ ফ্রিজে প্যাকেটের মধ্যে আঁটোসাঁটো করে না রেখে কিছুটা আলগা করে মাংস রাখুন। ▶ ফ্রিজ না থাকলে মাংসে পানি না দিয়ে কম মসলায় মাংস কষিয়ে রাখুন। এ মাংস প্রথম দুই দিন দিনে ২ বার গরম করতে হবে। তারপর দিনে একবার জ্বাল দিলেও চলবে। ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত ঢাকনা দেওয়া যাবে না। কাঁচা মাংস রেফ্রিজারেটরে সর্বোচ্চ তিন-চার দিন রাখা যায়। ডিপ ফ্রিজে পাঁচ-ছয় মাস। রান্না করা মাংস ফ্রিজে থাকবে দুই-তিন দিন। ডিপ ফ্রিজে থাকবে ২-৩ মাস। চপ-কাটলেট-কাবাব ফ্রিজে থাকে ৩-৪ দিন। ডিপ ফ্রিজে থাকে ৩-৪ মাস। লবণ-হলুদ মেখে কাঁচা মাংস রোদে শুকিয়েও সংরক্ষণ করা যায়। লেখক : চিফ নিউট্রিশন অফিসার ও বিভাগীয় প্রধান (অব.), বারডেম। সভাপতি, ডায়াবেটিস নিউট্রিশনিস্ট সোসাইটি অব বাংলাদেশ, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শ্যামলী ও অ্যাডভান্স হাসপাতাল, ঢাকা।