ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
‘চার মাসে সেনাবাহিনীর ১২৩ সদস্য হতাহত’
উত্তাল চট্টগ্রামসহ সারাদেশ, ইসকন নিষিদ্ধের দাবি
চিন্ময়কে নিয়ে শেখ হাসিনার বিবৃতি
এবার বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যে নালিশ
এজলাস কক্ষে ডিম ছুড়ে মারার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ
এবার বকেয়া বেতনের দাবিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ
আ‘লীগকে রাজনীতি করতে দেয়ার পক্ষে ৫৭% মানুষ
আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন দুর্নীতির বরপুত্র হুন্ডি জামান
ব্যাংকিং খ্যাতের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে বেশ পরিচিত এম বদিউজ্জামান ওরফে হুন্ডি জামান। এ খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতির অন্যতম হোতা ছিলেন তিনি। ব্যাংকার হওয়ার সুবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন অবৈধ হুন্ডি ব্যবসায়।
পরে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত হন। ১/১১-এর পর থেকে ২০২২ পর্যন্ত নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পরে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দুদকে মামলা হওয়ায় গা ঢাকা দেন তিনি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে ব্যবহার করে অনৈতিকভাবে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে যাওয়া হুন্ডি জামান এখন লোকচক্ষুর আড়ালে। তিনি এখন কোথায়- এমন প্রশ্নে প্রশাসন ও রাজনৈতিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক অভিযোগের পাশাপাশি দুটি মামলাও করেছে সংস্থাটি। অভিযোগ ও মামলায় বদিউজ্জামানের দুই স্ত্রী, ছেলেসহ ৬ জনের নামও রয়েছে। অনুসন্ধানে যায় গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এম বদিউজ্জামান সিঙ্গাপুরে লুকিয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পাচারের টাকায় সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন নিজের অপরাধের সাম্রাজ্য। সিঙ্গাপুরের ৩নং রোবার্টস রোডে বদিউজ্জামানের নামে রয়েছে জামান সেন্টার। জামান সেন্টারে ‘হোটেল সিঙ্গাপুর ইন’ পরিচালনার পাশাপাশি স্বর্ণ ও অর্থ পাচার করে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যাতায়াতকারী অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাকে ‘হুন্ডি জামান’ নামেই চিনেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার সেখানে কয়েক প্রভাবশালী নেতা আশ্রয় নিয়েছেন বলে একাধিক
সূত্র নিশ্চিত রয়েছে। সূত্র জানিয়েছেন, সাবেক আইজিপি বেনজীরের আহমেদের অধিকাংশ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বদিজ্জামানের হাত হয়ে। তিনি বেনজীরের একাংশের ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন। এসব অভিযোগ সম্পর্কে এম বদিউজ্জামানের বক্তব্য জানতে সিঙ্গাপুর লোকাল মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন। পরে বারবার কল দেওয়া হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। দুদক সূত্র জানিয়েছেন, এম বদিউজ্জামান তার দুই ছেলে নাফিহ রশিদ খান ও নাভিদ রশিদ খান এবং বদিউজ্জামানের দুই স্ত্রী নাসরিন জামান ও তৌহিদা সুলতানাসহ তার আত্মীয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিসহ অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের শেয়ার ক্রয়সহ মানি লন্ডারিংয়ের
মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ থাকায় দুদক কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ মামলা দুটি করা হয়। দুদক সূত্র আরও জানিয়েছেন, শুধুমাত্র শেয়ার কেনাবেচায় অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বদিউজ্জামান ও সহযোগীরা। এম বদিউজ্জামান অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অ্যাডভান্স হোম প্রাইভেট লিমিটেড ও ফিনিক্স লিমিটেডের বিপুল অঙ্কের শেয়ার কেনা, মানি লন্ডারিং করেছেন। এছাড়াও কালো টাকার ব্যবসায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সহকারী পরিচালক জানান, ২০২২ সালে এম বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ ওঠে। তার বিরুদ্ধে দুজন সহকারী পরিচালক ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। প্রাথমিক তারা অভিযোগের তথ্যের সত্যতা প্রমাণ পান। যার প্রেক্ষিতে দুদকের ঐ দুজন
সহকারী পরিচালক বাদী হয়ে শুধুমাত্র বদিজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি মামলা এবং তার স্ত্রীসহ আরও ৬ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন। বিষয়টি নিয়ে এখনো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হুন্ডি জামানের কয়েকজন সহযোগী রয়েছেন। তারা মূলত বিভিন্ন কৌশলে হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে টাকা পাঠান। দেশ থেকে যারা বিদেশ টাকার পাচার করতে চান, এসব ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমিশনের চুক্তি করেন তারা। পরে সেই মোতাবেক তারা বাংলা টাকা বুঝে নিয়ে সিঙ্গাপুরী ডলার বা ইউএস ডলার বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরসহ একাধিক দেশে হুন্ডি ব্যবসার অন্যতম অংশীদার বদিউজ্জামানের স্ত্রী। সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানির নামে ওভার
ইনভয়েস করে অর্থ পাচার করেন। এসবের এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) রয়েছে একাধিক প্রমাণ। এছাড়াও সিঙ্গাপুর থেকে যারা দেশে ফেরেন বদিউজ্জামান তাদের প্রলোভনে ফেলে স্বর্ণ চোরাচালান করেন দেশে। প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় কখন কখন বিমানের অর্ধেক ভাড়া প্রদান, আইফোন উপহারসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানে বাধ্য করেন। তার এ কাজের সহযোগিতা করেন সিঙ্গাপুরে স্থানীয় আরভিন রাথোর নামের একজন সহযোগী। এছাড়াও রাজধানীর ঢাকার তাঁতী বাজারের কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে দেদারছে স্বর্ণ পাচার করে যাচ্ছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, বদিউজ্জামান, স্ত্রী ও ছেলেদের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে তিনটি প্লট, যার আনুমানিক বাজার মূল ৪০ কোটি টাকা। গুলশানে রয়েছে একটি
ফ্ল্যাট, যার দাম ৭ কোটি টাকা। বনানীতে রয়েছে অ্যাডভান্স রাইটস নামে বহুতল ভবন, যার দাম ৬৫ কোটি টাকা। জোয়ার সাহারায় রয়েছে দুটি ৯ তলা আবাসিক ভবন। যেগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। উত্তরায় বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য দশ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ জেলা সদরে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে রয়েছে দুটি আবাসিক প্রকল্প- অ্যাডভান্স নিরালা ও অ্যাডভান্স সুগন্ধা। এগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ সদরে সার্কিট হাউস রোডে রয়েছে নিজের নামে বিলাসবহুল আবাসিক বাড়ি, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দশ কোটি টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় তারা নানা প্লট, ফ্ল্যাট, জমি-জমা সম্পত্তি কিনেছেন। নামমাত্র জামানতের বিপরীতে শত শত কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে নরসিংদীতে বিশাল আকারের ফ্যাক্টরি ও খামার গড়ে তুলেছেন। নামে-বেনামে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে কয়েকশ’ বিঘা জমি কিনেছেন। জাহাজের ছোট ছোট বোট চালানোর ডকইয়ার্ডও রয়েছে তাদের। সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এর আগে এম বদিজ্জামানের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল। এছাড়াও বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে তার অপরাধের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ব্যাংকের পরিচালক থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিল। যেহেতু তার বিষয় নিয়ে দুদক কাজ করছে। প্রয়োজনে দুদককে সহযোগিতা করতে ইন্টাপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরে এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশ থেকে প্রতিনিয়ত সুকৌশলে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, যা অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এক্ষেত্রে অপরাধীরা কোনো ডকুমেন্টেশন রাখে না। আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে যে ব্যক্তির নাম শুনলাম যদি তিনি এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকেন দুদকের উচিত হবে যেকোনো মূল্যে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা। তিনি আরও জানান, তথ্য-প্রমাণ ও মামলা থাকার পরও সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে অপরাধীরা বিদেশে পালাতে সক্ষম হচ্ছে। তাই দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। বদিউজ্জামানের নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের একজন আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, এম বদিউজ্জামানের সঙ্গে এলাকার মানুষজনের সম্পর্ক ভালো না। এলাকার বেশ কয়েক যুবককে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিদেশে নিয়ে গেছেন। কিন্তু কাজ না পেয়ে তাদের দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এছাড়াও তার প্রলোভনে পড়ে অনেকেই বিদেশে গেছেন। মূলত অবৈধভাবে ও অবাধে আদম ব্যবসা করছেন। গোপালগঞ্জ সদরে তার বহুতল একটি ভবন রয়েছে। সেখান থেকে তিনি শেখ সেলিমকে দুটি উপহার দিয়েছেন এটা এলাকার সবাই জানেন। এখন তার আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক অভিযোগের পাশাপাশি দুটি মামলাও করেছে সংস্থাটি। অভিযোগ ও মামলায় বদিউজ্জামানের দুই স্ত্রী, ছেলেসহ ৬ জনের নামও রয়েছে। অনুসন্ধানে যায় গেছে, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এম বদিউজ্জামান সিঙ্গাপুরে লুকিয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে পাচারের টাকায় সিঙ্গাপুরে গড়ে তুলেছেন নিজের অপরাধের সাম্রাজ্য। সিঙ্গাপুরের ৩নং রোবার্টস রোডে বদিউজ্জামানের নামে রয়েছে জামান সেন্টার। জামান সেন্টারে ‘হোটেল সিঙ্গাপুর ইন’ পরিচালনার পাশাপাশি স্বর্ণ ও অর্থ পাচার করে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে যাতায়াতকারী অধিকাংশ ব্যবসায়ী তাকে ‘হুন্ডি জামান’ নামেই চিনেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার সেখানে কয়েক প্রভাবশালী নেতা আশ্রয় নিয়েছেন বলে একাধিক
সূত্র নিশ্চিত রয়েছে। সূত্র জানিয়েছেন, সাবেক আইজিপি বেনজীরের আহমেদের অধিকাংশ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে বদিজ্জামানের হাত হয়ে। তিনি বেনজীরের একাংশের ব্যবসায়িক পার্টনারও ছিলেন। এসব অভিযোগ সম্পর্কে এম বদিউজ্জামানের বক্তব্য জানতে সিঙ্গাপুর লোকাল মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তিনি অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন। পরে বারবার কল দেওয়া হলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। দুদক সূত্র জানিয়েছেন, এম বদিউজ্জামান তার দুই ছেলে নাফিহ রশিদ খান ও নাভিদ রশিদ খান এবং বদিউজ্জামানের দুই স্ত্রী নাসরিন জামান ও তৌহিদা সুলতানাসহ তার আত্মীয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতিসহ অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের শেয়ার ক্রয়সহ মানি লন্ডারিংয়ের
মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের আমলযোগ্য তথ্য-প্রমাণ থাকায় দুদক কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ মামলা দুটি করা হয়। দুদক সূত্র আরও জানিয়েছেন, শুধুমাত্র শেয়ার কেনাবেচায় অনিয়মের মাধ্যমে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বদিউজ্জামান ও সহযোগীরা। এম বদিউজ্জামান অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে অ্যাডভান্স হোম প্রাইভেট লিমিটেড ও ফিনিক্স লিমিটেডের বিপুল অঙ্কের শেয়ার কেনা, মানি লন্ডারিং করেছেন। এছাড়াও কালো টাকার ব্যবসায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন সহকারী পরিচালক জানান, ২০২২ সালে এম বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ ওঠে। তার বিরুদ্ধে দুজন সহকারী পরিচালক ব্যাপক অনুসন্ধান চালান। প্রাথমিক তারা অভিযোগের তথ্যের সত্যতা প্রমাণ পান। যার প্রেক্ষিতে দুদকের ঐ দুজন
সহকারী পরিচালক বাদী হয়ে শুধুমাত্র বদিজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি মামলা এবং তার স্ত্রীসহ আরও ৬ জনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা করেন। বিষয়টি নিয়ে এখনো আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, বাংলাদেশে হুন্ডি জামানের কয়েকজন সহযোগী রয়েছেন। তারা মূলত বিভিন্ন কৌশলে হুন্ডির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে টাকা পাঠান। দেশ থেকে যারা বিদেশ টাকার পাচার করতে চান, এসব ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমিশনের চুক্তি করেন তারা। পরে সেই মোতাবেক তারা বাংলা টাকা বুঝে নিয়ে সিঙ্গাপুরী ডলার বা ইউএস ডলার বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরসহ একাধিক দেশে হুন্ডি ব্যবসার অন্যতম অংশীদার বদিউজ্জামানের স্ত্রী। সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানির নামে ওভার
ইনভয়েস করে অর্থ পাচার করেন। এসবের এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটে (বিএফআইইউ) রয়েছে একাধিক প্রমাণ। এছাড়াও সিঙ্গাপুর থেকে যারা দেশে ফেরেন বদিউজ্জামান তাদের প্রলোভনে ফেলে স্বর্ণ চোরাচালান করেন দেশে। প্রবাসীরা দেশে ফেরার সময় কখন কখন বিমানের অর্ধেক ভাড়া প্রদান, আইফোন উপহারসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানে বাধ্য করেন। তার এ কাজের সহযোগিতা করেন সিঙ্গাপুরে স্থানীয় আরভিন রাথোর নামের একজন সহযোগী। এছাড়াও রাজধানীর ঢাকার তাঁতী বাজারের কয়েকজন স্বর্ণ ব্যবসায়ীর মাধ্যমে দেদারছে স্বর্ণ পাচার করে যাচ্ছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে, বদিউজ্জামান, স্ত্রী ও ছেলেদের নামে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে তিনটি প্লট, যার আনুমানিক বাজার মূল ৪০ কোটি টাকা। গুলশানে রয়েছে একটি
ফ্ল্যাট, যার দাম ৭ কোটি টাকা। বনানীতে রয়েছে অ্যাডভান্স রাইটস নামে বহুতল ভবন, যার দাম ৬৫ কোটি টাকা। জোয়ার সাহারায় রয়েছে দুটি ৯ তলা আবাসিক ভবন। যেগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০ কোটি টাকা। উত্তরায় বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যার বর্তমান বাজারমূল্য দশ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ জেলা সদরে প্রায় ৩৫০ বিঘা জমিতে রয়েছে দুটি আবাসিক প্রকল্প- অ্যাডভান্স নিরালা ও অ্যাডভান্স সুগন্ধা। এগুলোর বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ সদরে সার্কিট হাউস রোডে রয়েছে নিজের নামে বিলাসবহুল আবাসিক বাড়ি, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দশ কোটি টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় তারা নানা প্লট, ফ্ল্যাট, জমি-জমা সম্পত্তি কিনেছেন। নামমাত্র জামানতের বিপরীতে শত শত কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নিয়ে নরসিংদীতে বিশাল আকারের ফ্যাক্টরি ও খামার গড়ে তুলেছেন। নামে-বেনামে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশে কয়েকশ’ বিঘা জমি কিনেছেন। জাহাজের ছোট ছোট বোট চালানোর ডকইয়ার্ডও রয়েছে তাদের। সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এর আগে এম বদিজ্জামানের বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছিল। এছাড়াও বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে তার অপরাধের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ব্যাংকের পরিচালক থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ছিল। যেহেতু তার বিষয় নিয়ে দুদক কাজ করছে। প্রয়োজনে দুদককে সহযোগিতা করতে ইন্টাপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরে এনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশ থেকে প্রতিনিয়ত সুকৌশলে অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, যা অনেকটাই ধরাছোঁয়ার বাহিরে। এক্ষেত্রে অপরাধীরা কোনো ডকুমেন্টেশন রাখে না। আপনার (প্রতিবেদক) মাধ্যমে যে ব্যক্তির নাম শুনলাম যদি তিনি এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকেন দুদকের উচিত হবে যেকোনো মূল্যে তাকে বিচারের মুখোমুখি করা। তিনি আরও জানান, তথ্য-প্রমাণ ও মামলা থাকার পরও সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারণে অপরাধীরা বিদেশে পালাতে সক্ষম হচ্ছে। তাই দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। বদিউজ্জামানের নিজ এলাকা গোপালগঞ্জের একজন আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, এম বদিউজ্জামানের সঙ্গে এলাকার মানুষজনের সম্পর্ক ভালো না। এলাকার বেশ কয়েক যুবককে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিদেশে নিয়ে গেছেন। কিন্তু কাজ না পেয়ে তাদের দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। এছাড়াও তার প্রলোভনে পড়ে অনেকেই বিদেশে গেছেন। মূলত অবৈধভাবে ও অবাধে আদম ব্যবসা করছেন। গোপালগঞ্জ সদরে তার বহুতল একটি ভবন রয়েছে। সেখান থেকে তিনি শেখ সেলিমকে দুটি উপহার দিয়েছেন এটা এলাকার সবাই জানেন। এখন তার আত্মীয় হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে বলে তিনি মন্তব্য করেন।