ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
দুর্নীতির বরপুত্র’র মুখে নীতি কথা
শীতের ভরা মৌসুমেও অসহনীয় সবজির দাম
ঐতিহাসিক অডিওতে জিয়ার স্বীকারোক্তি: বঙ্গবন্ধুর নামেই স্বাধীনতার ঘোষণা, স্লোগান ছিল ‘জয় বাংলা’
‘ভুয়া তথ্যে চাকরি, ধরা পড়ে পায়ে ধরে কান্না’: শাহরিয়ার কবিরের জালিয়াতির মুখোশ উন্মোচন করলেন ব্যারিস্টার জিন্নাত আলী চৌধুরী
কথিত জুলাই আন্দোলনে পর হওয়া বেশীরভাগ মামলার ভুয়া মামলার মূল উদ্দেশ্য ছিল চাঁদাবাজি
‘দেশ ধ্বংস করে ফেলছে এই স্টুপিড জেনারেশন’—জুলাই থেকে চলমান অরাজকতায় অতিষ্ঠ জনতা, ভাইরাল নারীর ক্ষোভ
ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রের
দুবাইয়ের চাকরির প্রলোভনে পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ
দুবাইয়ের চাকরির প্রলোভনে পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ
টিটিপিতে যোগ দিয়ে নিহত অন্তত চার বাংলাদেশি, আরও ২৫–৩০ জন সক্রিয়
সীমান্ত পেরিয়ে নিখোঁজ তরুণরা, অনিশ্চয়তায় পরিবার
দুবাইয়ের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি তরুণদের পাকিস্তানের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-তে যুক্ত করার ভয়াবহ চিত্র সামনে এসেছে। এখন পর্যন্ত টিটিপির হয়ে লড়াইরত অবস্থায় অন্তত চারজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, আরও ২৫ থেকে ৩০ জন বর্তমানে পাকিস্তানে সক্রিয়ভাবে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত।
২০২৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার কারাক জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হন মাদারীপুরের তরুণ ফয়সাল হোসেন (২২)। তিনি পরিবারকে জানিয়েছিলেন, দুবাইয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি যোগ দিয়েছিলেন টিটিপিতে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি দেখে
তাঁর মরদেহ শনাক্ত করেন বড় ভাই আরমান। ফয়সালের পাশাপাশি একই পথে যুক্ত হয়ে নিহত হয়েছেন জুবায়ের আহমেদ (২২)। তাঁর মৃত্যু হয় ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে। জুবায়ের ইসলামী শিক্ষায় স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন করছিলেন। তাঁর মা আলেয়া আক্তার জানান, অচেনা নম্বর থেকে ফোন পেয়ে তিনি ছেলের মৃত্যুসংবাদ পান। ⸻ রতন ঢালি: জীবিত না মৃত, অনিশ্চয়তায় পরিবার তৃতীয় তরুণ রতন ঢালি (২৯)-কে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা। নভেম্বরের শুরুতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট তাঁর পরিবারকে জানায়, ২৬ সেপ্টেম্বরের অভিযানে তিনি নিহত হয়েছেন। কিন্তু ১ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে রতনের পরিচয়ে একজন নিজেকে জীবিত দাবি করেন। সিটিটিসির পুলিশ সুপার রওশন সাদিয়া
আফরোজ জানান, ভিডিওটি তদন্ত করে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হবে না। অন্যদিকে টিটিপির মুখপাত্র ইমরান হায়দার প্রথমে রতনের মৃত্যুর কথা বললেও পরে তা প্রত্যাহার করেন। এতে চরম মানসিক সংকটে পড়েছে রতনের পরিবার। তাঁর বাবা আনোয়ার ঢালি বলেন, “একদিন পুলিশ বলে ছেলে মারা গেছে, আরেকদিন শুনছি সে জীবিত। এখন আল্লাহই জানেন আমার ছেলে কোথায়।” ২০২৪ সালের ১১ এপ্রিল ঈদের দিন মায়ের সঙ্গে রতনের শেষ কথা হয়। তিনি তখন দিল্লিতে থাকার কথা বলেছিলেন এবং দুবাই যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ⸻ বেনাপোল-ভারত-আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান তদন্তে জানা গেছে, ফয়সাল হোসেন ও রতন ঢালি ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা
কলকাতা ও দিল্লিতে অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে যান। পাকিস্তানে গিয়েই তাঁরা টিটিপিতে যোগ দেন। ফয়সাল ঢাকার খিলগাঁওয়ের রফ রফ হিজামা সেন্টারে কাজ করতেন। রতনও একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বর্তমানে ক্লিনিকটি আর সেখানে নেই। জুবায়ের আহমেদ ভিন্ন পথে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন। তিনি ২০২৪ সালে ওমরাহ করতে সৌদি আরব যান। ওমরাহ শেষে দেশে না ফিরে বৈধ পথে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন বলে জানায় সিটিটিসি। ⸻ দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত তরুণরাই মূল লক্ষ্য তিন তরুণই এসেছেন সীমিত আয়ের পরিবার থেকে। রতনের বাবা অটোরিকশাচালক। ফয়সালের বাবা অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি কর্মচারী। জুবায়ের ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পরিবারগুলোর অভিযোগ, তাঁদের সন্তানদের প্রতারণার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ানো হয়েছে। রতনের বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে যারা
এই পথে নিয়েছে, আমি তাদের শাস্তি চাই।” রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবাশশির হাসান বলেন, “নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণরা অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে সহজেই প্রলোভনে পড়ে।” ⸻ অনলাইনেই হচ্ছে নিয়োগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মই জঙ্গি নিয়োগের প্রধান মাধ্যম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাওহিদুল হক বলেন, “অনলাইনে জঙ্গি মতাদর্শ ছড়ানোয় ঝুঁকি কম থাকায় নিয়োগকারীরা আরও সক্রিয় হচ্ছে।” সিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, শুধু টিটিপিই নয়, টিএলপি ও আইএমপি নামের আরও দুটি পাকিস্তানি সংগঠনেও বাংলাদেশিরা যুক্ত হচ্ছে। ⸻ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে ২০২৫ সালের ৫ জুলাই ঢাকার সাভার থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে টিটিপির পক্ষে প্রচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয় ছয়জনের বিরুদ্ধে। একই মাসে টিটিপি সংশ্লিষ্ট অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার
করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ⸻ হোলি আর্টিজানের পর দেশে জঙ্গি হামলা কমলেও বিদেশমুখী প্রবণতা বাংলাদেশে সর্বশেষ বড় জঙ্গি হামলা হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে। ওই ঘটনার পর সরকার নয়টি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করে। দেশে হামলা কমলেও এখন দেখা যাচ্ছে এক নতুন ধারা—বিদেশে গিয়ে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হওয়া। ⸻ অনিশ্চয়তার জীবন, অপেক্ষার প্রহর রতন ঢালির জীবিত থাকার ভিডিও সত্য না হলেও তাঁর পরিবার আজও নিশ্চিত নয় তিনি আসলে কোথায়। এই অনিশ্চয়তা এখন অনেক পরিবারের বাস্তবতা। তরুণরা সীমান্ত পেরিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, আর পরিবারগুলো বেঁচে আছে শুধু অপেক্ষা আর অজানার আতঙ্ক নিয়ে।
তাঁর মরদেহ শনাক্ত করেন বড় ভাই আরমান। ফয়সালের পাশাপাশি একই পথে যুক্ত হয়ে নিহত হয়েছেন জুবায়ের আহমেদ (২২)। তাঁর মৃত্যু হয় ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে। জুবায়ের ইসলামী শিক্ষায় স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন করছিলেন। তাঁর মা আলেয়া আক্তার জানান, অচেনা নম্বর থেকে ফোন পেয়ে তিনি ছেলের মৃত্যুসংবাদ পান। ⸻ রতন ঢালি: জীবিত না মৃত, অনিশ্চয়তায় পরিবার তৃতীয় তরুণ রতন ঢালি (২৯)-কে ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তা। নভেম্বরের শুরুতে কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট তাঁর পরিবারকে জানায়, ২৬ সেপ্টেম্বরের অভিযানে তিনি নিহত হয়েছেন। কিন্তু ১ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে রতনের পরিচয়ে একজন নিজেকে জীবিত দাবি করেন। সিটিটিসির পুলিশ সুপার রওশন সাদিয়া
আফরোজ জানান, ভিডিওটি তদন্ত করে ভুয়া হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে এবং ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হবে না। অন্যদিকে টিটিপির মুখপাত্র ইমরান হায়দার প্রথমে রতনের মৃত্যুর কথা বললেও পরে তা প্রত্যাহার করেন। এতে চরম মানসিক সংকটে পড়েছে রতনের পরিবার। তাঁর বাবা আনোয়ার ঢালি বলেন, “একদিন পুলিশ বলে ছেলে মারা গেছে, আরেকদিন শুনছি সে জীবিত। এখন আল্লাহই জানেন আমার ছেলে কোথায়।” ২০২৪ সালের ১১ এপ্রিল ঈদের দিন মায়ের সঙ্গে রতনের শেষ কথা হয়। তিনি তখন দিল্লিতে থাকার কথা বলেছিলেন এবং দুবাই যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ⸻ বেনাপোল-ভারত-আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান তদন্তে জানা গেছে, ফয়সাল হোসেন ও রতন ঢালি ২০২৪ সালের ২৭ মার্চ যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর তাঁরা
কলকাতা ও দিল্লিতে অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে অবৈধভাবে আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তানে যান। পাকিস্তানে গিয়েই তাঁরা টিটিপিতে যোগ দেন। ফয়সাল ঢাকার খিলগাঁওয়ের রফ রফ হিজামা সেন্টারে কাজ করতেন। রতনও একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। বর্তমানে ক্লিনিকটি আর সেখানে নেই। জুবায়ের আহমেদ ভিন্ন পথে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন। তিনি ২০২৪ সালে ওমরাহ করতে সৌদি আরব যান। ওমরাহ শেষে দেশে না ফিরে বৈধ পথে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন বলে জানায় সিটিটিসি। ⸻ দরিদ্র ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত তরুণরাই মূল লক্ষ্য তিন তরুণই এসেছেন সীমিত আয়ের পরিবার থেকে। রতনের বাবা অটোরিকশাচালক। ফয়সালের বাবা অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি কর্মচারী। জুবায়ের ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। পরিবারগুলোর অভিযোগ, তাঁদের সন্তানদের প্রতারণার মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ানো হয়েছে। রতনের বাবা বলেন, “আমার ছেলেকে যারা
এই পথে নিয়েছে, আমি তাদের শাস্তি চাই।” রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুবাশশির হাসান বলেন, “নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণরা অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে সহজেই প্রলোভনে পড়ে।” ⸻ অনলাইনেই হচ্ছে নিয়োগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মই জঙ্গি নিয়োগের প্রধান মাধ্যম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাওহিদুল হক বলেন, “অনলাইনে জঙ্গি মতাদর্শ ছড়ানোয় ঝুঁকি কম থাকায় নিয়োগকারীরা আরও সক্রিয় হচ্ছে।” সিটিটিসির তথ্য অনুযায়ী, শুধু টিটিপিই নয়, টিএলপি ও আইএমপি নামের আরও দুটি পাকিস্তানি সংগঠনেও বাংলাদেশিরা যুক্ত হচ্ছে। ⸻ বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে ২০২৫ সালের ৫ জুলাই ঢাকার সাভার থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের হয়, যেখানে টিটিপির পক্ষে প্রচার ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয় ছয়জনের বিরুদ্ধে। একই মাসে টিটিপি সংশ্লিষ্ট অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার
করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ⸻ হোলি আর্টিজানের পর দেশে জঙ্গি হামলা কমলেও বিদেশমুখী প্রবণতা বাংলাদেশে সর্বশেষ বড় জঙ্গি হামলা হয় ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে। ওই ঘটনার পর সরকার নয়টি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ করে। দেশে হামলা কমলেও এখন দেখা যাচ্ছে এক নতুন ধারা—বিদেশে গিয়ে জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হওয়া। ⸻ অনিশ্চয়তার জীবন, অপেক্ষার প্রহর রতন ঢালির জীবিত থাকার ভিডিও সত্য না হলেও তাঁর পরিবার আজও নিশ্চিত নয় তিনি আসলে কোথায়। এই অনিশ্চয়তা এখন অনেক পরিবারের বাস্তবতা। তরুণরা সীমান্ত পেরিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে, আর পরিবারগুলো বেঁচে আছে শুধু অপেক্ষা আর অজানার আতঙ্ক নিয়ে।



