শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ‘সাংবিধানিক প্রহসন’, সংবিধানের ওপর আঘাত: ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদন – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
     ৯:৫৭ পূর্বাহ্ণ

আরও খবর

ক্ষমতার মোহ নয়, সাধারণ মানুষের হৃদয়েই থাকতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: ড. কামাল হোসেন

৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯: ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নাম মুছে যেভাবে ‘বাংলাদেশ’ নাম দিলেন বঙ্গবন্ধু

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যের সাথে ‘হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফাউন্ডেশন’-এর বৈঠক

‘বালের বিজয় দিবস’ মন্তব্যের জেরে ইলিয়াসকে ‘স্টুপিড’, ‘শুয়োরের বাচ্চা’, ‘বেজন্মা’ বললেন আম জনতা দলের তারেক

ক্ষমতার মোহ নয়, সাধারণ মানুষের হৃদয়েই থাকতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: ড. কামাল হোসেন

শাসক বঙ্গবন্ধু: ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে এক রাষ্ট্রনির্মাতার উপাখ্যান

তারেক জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির উত্থান: একটি অন্ধকার অধ্যায়ের বিশ্লেষণ

শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ‘সাংবিধানিক প্রহসন’, সংবিধানের ওপর আঘাত: ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদন

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৯:৫৭ 21 ভিউ
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘সাংবিধানিক প্রহসন’ এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর চরম আঘাত হিসেবে অভিহিত করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্ট। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৫) প্রকাশিত ‘দ্য ডেথ সেন্টেন্স দ্যাট শেমস বাংলাদেশ: হোয়াই শেখ হাসিনাস ট্রায়াল ওয়াজ এ কনস্টিটিউশনাল ফার্স’ (যে মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশকে লজ্জিত করে: কেন শেখ হাসিনার বিচার ছিল সাংবিধানিক প্রহসন)—শীর্ষক এই নিবন্ধটি লিখেছেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত। যে মৃত্যুদণ্ড বাংলাদেশের জন্য লজ্জা: কেন শেখ হাসিনার বিচার একটি সাংবিধানিক প্রহসন শেখ হাসিনার ওপর প্রদত্ত মৃত্যুদণ্ড শুধু একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আঘাত নয়; এটি বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর সরাসরি আঘাত। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডকে কেউ কেউ ন্যায়বিচারের বিজয় হিসেবে উদযাপন করছে; জুলাই ২০২৪-এর

ঘটনাবলির জন্য বহু কাঙ্ক্ষিত জবাবদিহি বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম ও অন্তর্বর্তী সরকারের মুখপাত্ররা এটিকে নিখুঁত বিচারপ্রক্রিয়া, শক্ত প্রমাণ এবং ঐতিহাসিক জবাবদিহির দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরছেন। তাঁরা দাবি করছেন, এই রায় শোকাহত পরিবারগুলোর জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং বাংলাদেশকে দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে বের করে এনেছে। এই দাবি একটি বিপজ্জনক কল্পকাহিনি, যা সত্য হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এটি কোনো ন্যায়বিচার নয়; এটি ছিল অবৈধ মঞ্চে অভিনীত রাজনৈতিক নাটক, যেখানে অভিনয়শিল্পীদের কোনো বৈধ কর্তৃত্বই ছিল না। এই রায় বাংলাদেশের সাংবিধানিক ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার প্রতীক—যা রাজনৈতিক পরিচয় নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত। যাঁরা এই রায়ের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন, তাঁরা

একটি মৌলিক প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন: এই ট্রাইব্যুনাল তার ক্ষমতা কোথা থেকে পেল? এই প্রশ্নের উত্তরই শুরু থেকেই পুরো বিচারপ্রক্রিয়াকে একটি প্রহসনে পরিণত করে। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার চারটি নির্বাহী অধ্যাদেশ জারি করে ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে এই ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এটি সম্পূর্ণ বেআইনি। সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদ অধিবেশনে না থাকলে মাত্র অধ্যাদেশ জারি করা যায়, এবং সেগুলোকে ৩০ দিনের মধ্যে সংসদে উপস্থাপন করতে হয়; তা না হলে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যায়। বর্তমানে কার্যকর কোনো সংসদ না থাকায় এই অধ্যাদেশগুলোর কোনো আইনি বৈধতাই নেই। আইনগত ভাষায় এগুলো ‘আল্ট্রা ভাইরেস’—অর্থাৎ ক্ষমতার

সীমা অতিক্রম করে করা। এর অর্থ কী দাঁড়ায়? বাংলাদেশে এখন একটি অনির্বাচিত সরকার নিজেরাই ফৌজদারি আইন পরিবর্তন করছে এবং মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে। এটি সংবিধানের সেই মৌলিক নীতির পরিপন্থী, যেখানে বলা হয়েছে—সব ক্ষমতার উৎস জনগণ, এবং সে ক্ষমতা কেবল সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই প্রয়োগযোগ্য। সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ সব আইনই শূন্য ও বাতিল। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে স্পষ্ট বলা আছে, কেবলমাত্র হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বিচারকগণই এই ট্রাইব্যুনালে বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু ইউনূস সরকার সেখানে নিযুক্ত করেছে পরীক্ষাধীন বা প্রবেশনকালীন বিচারকদের, যাঁদের প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক মর্যাদা ও চাকরির নিরাপত্তা নেই। কেন? কারণ ২০২৪ সালের আগস্টে রাস্তায় জনতার হুমকির মুখে পুরো সুপ্রিম কোর্টকে কার্যত পদত্যাগে বাধ্য

করা হয়েছিল। দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে ভয়ভীতি ও চাপের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হয়েছে, এবং তার জায়গায় রাজনৈতিকভাবে অনুগত নতুন বিচারক বসানো হয়েছে। এটি শুধু অনিয়ম নয়; এটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সম্পূর্ণ ধ্বংস। কেউ কেউ এসব সাংবিধানিক লঙ্ঘনকে “বিপ্লব” বলে বৈধতা দিতে চান। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন কোনো সামাজিক রোমান্টিক তত্ত্বে দাঁড়িয়ে নেই; সেখানে স্পষ্ট মানদণ্ড আছে কখন একটি বিপ্লবোত্তর সরকার বৈধতা পায়। বর্তমান সরকার সেই কোনো মানদণ্ডই পূরণ করে না। এর প্রমাণ হিসেবে ১৯৭২ সালের পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক আসমা জিলানী মামলার রায় আজ আমাদের পরিস্থিতির সঙ্গে সরাসরি প্রাসঙ্গিক। সে রায়ে বলা হয়েছিল, যে ব্যক্তি অবৈধভাবে আইনি ব্যবস্থা ধ্বংস করে সে কখনো বৈধ আইনের

উৎস হতে পারে না। জোরজবরদস্তির মাধ্যমে কেউ সাময়িকভাবে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, কিন্তু তার আদেশ আইনত অবৈধই থেকে যায়। আদালতের সেই ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বক্তব্য ছিল: “যখনই সুযোগ আসবে, যখন দখলদারের হাত থেকে বলপ্রয়োগের যন্ত্রপাতি খসে পড়বে, তখন তাকে উচ্চ রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে বিচারের মুখোমুখি করে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।” রায়ের সমর্থকেরা বলছেন, এই মামলার ভিত্তি ছিল অভূতপূর্ব প্রমাণ—এমন কিছু অডিও রেকর্ডিং, যেখানে নাকি শেখ হাসিনা হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। তারা দাবি করে, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এসব রেকর্ডিং “যাচাই” করেছে। কিন্তু বাস্তবে কী হয়েছে, তা দেখলে বিষয়টি হয় চরম অযোগ্যতা, নয়তো ইচ্ছাকৃত প্রতারণার উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমত, এই রেকর্ডিংগুলো অবৈধভাবে সংগৃহীত। সংবিধানের ৪৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রত্যেক নাগরিকের

যোগাযোগের গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া এই অধিকার লঙ্ঘন করা যায় না। এখানে কোনো আদালতের অনুমতি ছিল না, কোনো আইনি প্রক্রিয়াও অনুসরণ করা হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই রেকর্ডিং ফাঁস করা হয়েছে সর্বোচ্চ ক্ষতি সাধনের জন্য। আমাদের সাক্ষ্য আইনের অধীনে এবং সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায় অনুযায়ী, অবৈধভাবে সংগৃহীত প্রমাণের গ্রহণযোগ্যতা গুরুতরভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু এই ট্রাইব্যুনাল এসব আইনি প্রশ্নের তোয়াক্কাই করেনি এবং কে এসব ফাঁস করল তার তদন্তও করেনি। আরও ভয়াবহ হলো এই রেকর্ডিংগুলোর ব্যাখ্যা যেভাবে দেওয়া হয়েছে। প্রসিকিউশনের পুরো মামলা দাঁড় করানো হয় শেখ হাসিনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মধ্যকার একটি ফোনালাপের ওপর। ট্রাইব্যুনাল দাবি করে, এটি প্রমাণ করে তিনি ছাত্র হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পুরো কথোপকথন শুনলে বোঝা যায় এটি চরম বিকৃত উপস্থাপন। শেখ হাসিনা সেখানে আন্দোলনরত ছাত্রদের তুলনা করেছিলেন জামায়াত নেতাদের সঙ্গে, যাদের আইনি বিচার শেষে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল। তিনি বিচারিক শাস্তির প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন, কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যার নির্দেশ দিচ্ছিলেন না। “আমি নির্দেশ দিচ্ছি” বাক্যটি আসে উপাচার্য যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা, অর্থাৎ ক্যাম্পাস থেকে বহিষ্কারের কথা বলেন, তার পরের অংশে। ট্রাইব্যুনাল ইচ্ছাকৃতভাবে কথোপকথনের আলাদা অংশ জোড়া দিয়ে একটি কৃত্রিম “হত্যার নির্দেশ” তৈরি করেছে, যা আদতে কখনোই ছিল না। এই রায়ের সমর্থকেরা আরও দাবি করেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অনুপস্থিতিতে বিচার (trial in absentia) বৈধ এবং শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় পালিয়ে গেছেন। এটিও বাস্তবতা ও আইনের বিকৃত উপস্থাপন। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছিলেন কারণ তার জীবনের উপর তাৎক্ষণিক হুমকি ছিল। সশস্ত্র জনতা তার বাসভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, অনুপস্থিতিতে বিচার শুধু তখনই বৈধ যখন কোনো আসামি আদালতে হাজির হওয়ার পর স্বেচ্ছায় পলাতক হয়। শেখ হাসিনাকে সে সুযোগই দেওয়া হয়নি। তার সমর্থকদের ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে শারীরিকভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে। যারা তাকে আইনগতভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছিলেন, সেই সিনিয়র আইনজীবীদেরও আদালতের কাছে যেতে দেওয়া হয়নি। বরং ট্রাইব্যুনাল একটি সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করে, যিনি নিজেই স্বীকার করেন যে তিনি “আসামির কাছ থেকে কোনো নির্দেশ পাননি।” আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সনদ (আইসিসিপিআর), যা বাংলাদেশ অনুমোদন করেছে, সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে—প্রত্যেক অভিযুক্ত ব্যক্তির তার বিচারকালে উপস্থিত থাকার অধিকার এবং নিজের পছন্দমতো আইনজীবী নিয়োগের অধিকার রয়েছে। এগুলো কোনো ঐচ্ছিক সুবিধা নয়; এগুলো ন্যায্য বিচারের মৌলিক শর্ত। এই ট্রাইব্যুনাল দুটিই লঙ্ঘন করেছে। আরও ভয়াবহ হলো আপিলের অধিকার কার্যত কেড়ে নেওয়া। প্রসিকিউশন ঘোষণা করেছে, শেখ হাসিনাকে ৩০ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে, নইলে তিনি আপিলের অধিকার হারাবেন। অর্থাৎ, তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে পা বাড়াতে হবে, তার পরেই কেবল তিনি রায় চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন। এটি আন্তর্জাতিক আইনের সব নীতির পরিপন্থী। জাতিসংঘ স্পষ্টভাবে বলেছে, আপিল বিচারাধীন থাকলে কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা যায় না। কোনো বৈধ আইনি ব্যবস্থাই দেশের বাইরে থাকার কারণে আসামির আপিলের অধিকার কেড়ে নেয় না। আভিযোগ গঠন থেকে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত মাত্র কয়েক মাসে এই বিচার শেষ করা হয়েছে, যা প্রকৃত প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার সুযোগই দেয়নি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো জটিল অভিযোগে বছরের পর বছর সময় লাগে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতগুলোর বিচার সাধারণত বহু বছর ধরে চলে। এই তড়িঘড়ি রায়ই প্রমাণ করে, এটি ছিল রাজনৈতিক বিচার। এই বিচারের রাজনৈতিক চরিত্র সবচেয়ে স্পষ্ট হয় যা বিচারাধীন হয়নি তা দেখে। অন্তর্বর্তী সরকার “দায়মুক্তির সংস্কৃতি ভাঙার” কথা বলছে, কিন্তু তাদের বিচার একপাক্ষিক। ২০২৪ সালের ৫ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ৫০০-এর বেশি আওয়ামী লীগের কর্মীকে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়। পুলিশ স্টেশনে হামলা হয়, কর্মরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের হত্যা করা হয়। এগুলো কোনো সংঘর্ষের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছিল না; এগুলো ছিল প্রতিশোধমূলক হত্যা, গণপিটুনি ও লক্ষ্যভিত্তিক হত্যাকাণ্ড। এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বদলে সরকার তাদের “আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ” বলে সাধারণ ক্ষমা দিয়েছে। একটি মামলাও দায়ের করা হয়নি, একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি। এটি জনসমর্থন নয়; এটি সন্ত্রাসের মাধ্যমে শাসন। শেখ হাসিনার মামলার প্রধান কৌঁসুলি মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম অতীতে জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধীদের প্রধান ডিফেন্স আইনজীবী ছিলেন। তিনি প্রকাশ্যেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিচারকরা নিয়োগ পেয়েছেন বৈধ বিচারব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার পর। এটি ন্যায়বিচার নয়; এটি বিজয়ীর প্রতিশোধ, আইনের পোশাকে মোড়া। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল পর্যন্ত এই ট্রাইব্যুনালের স্বাধীনতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক উচ্চ কমিশনারের দপ্তরও নির্বাচিত ও পক্ষপাতদুষ্ট বিচারের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যখন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো আপনার বিচারব্যবস্থার সমালোচনা করে, তখন তা গুরুত্ব দিয়ে শোনাই উচিত। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন তৈরি হয়েছিল একটিমাত্র উদ্দেশ্যে—১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য। এটি জেনেভা কনভেনশনের ভিত্তিতে, যা রাষ্ট্রের মধ্যে বা সংগঠিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘটিত সশস্ত্র সংঘাতের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ২০২৪ সালের জুলাইয়ের ঘটনা কোনো সশস্ত্র সংঘাত ছিল না; তা ছিল অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও গণঅসন্তোষ। এগুলো সাধারণ ফৌজদারি আইনের বিষয়, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের নয়। জুলাইয়ের ঘটনায় আইসিটি আইন প্রয়োগ করা ঠিক ততটাই অযৌক্তিক, যতটা সড়ক দুর্ঘটনার বিচার করতে নৌ-আইন প্রয়োগ করা। তার ওপর, বৈধ সরকারপ্রধান হিসেবে, রাষ্ট্র উৎখাতের উদ্দেশ্যে সংঘটিত সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার শুধু অধিকারই নয়, দায়িত্বও ছিল রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করা। দণ্ডবিধির ৯৬ ধারা রাষ্ট্ররক্ষার আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকৃতি দেয়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষায় সংগত বলপ্রয়োগ কোনো অপরাধ নয়; এটি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব। বর্তমানে যারা ক্ষমতায় আছে, তাদের অনেকেই ১৯৭১ সালে পরাজিত শক্তির উত্তরসূরি, যারা পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিল। আজ রাস্তায় আইএসআইএসের পতাকা উড়ছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। ১৯৭১-এর গণহত্যাকারীদের আদর্শের উত্তরসূরিরাই আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যার বিচার করছে—এটাই সবচেয়ে নির্মম বিদ্রূপ। শেখ হাসিনা কখনো পদত্যাগ করেননি, সংসদ ভাঙার পরামর্শও দেননি। প্রাণনাশের হুমকির মুখে দেশত্যাগ কোনোভাবেই ক্ষমতার বৈধ হস্তান্তর নয়। সংবিধানের ৭ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল উচ্চ রাষ্ট্রদ্রোহ। এই অবৈধ সরকারের প্রতিটি কাজ শুরু থেকেই বাতিল। আজ যারা এই রায়ে উল্লাস করছে, তাদের বুঝতে হবে তারা কী ধরনের বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। যদি আমরা মেনে নিই যে অনির্বাচিত সরকার অবৈধ অধ্যাদেশ দিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে পারে, নিজের পছন্দের বিচারক বসাতে পারে, অবৈধ প্রমাণ ব্যবহার করতে পারে, আসামির আইনজীবীর অধিকার কেড়ে নিতে পারে এবং মৃত্যুদণ্ড দিতে পারে—তাহলে কেউই নিরাপদ নয়। আজ শেখ হাসিনা, কাল হতে পারে আপনি। আইনের শাসন শুধু “পছন্দসই” রায় পাওয়া নয়; সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করাই এর মূল কথা। রাজনৈতিক সুবিধার জন্য যদি আমরা সংবিধানকে বিসর্জন দিই, তবে আমরা নিজেরাই আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করি। বাংলাদেশ প্রকৃত ন্যায়বিচার চায়, এই নাটকীয় প্রহসন নয়। জুলাই ২০২৪-এর ঘটনায় যারা স্বজন হারিয়েছেন, তারা রাজনৈতিক গল্প নয়, সত্য ও নিরপেক্ষ বিচার চান। আইনের স্মৃতি দীর্ঘ। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, যারা নিজেদের দায়মুক্তি দিয়ে অন্যদের ফাঁসি দিয়েছে, তাদেরও একদিন জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই মৃত্যুদণ্ড কেবল একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়; এটি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ভিত্তির ওপর সরাসরি আঘাত। আর যখন সংবিধান প্রতিশোধের রাজনীতির শিকার হয়, তখন প্রতিটি নাগরিকই সম্ভাব্য শিকারে পরিণত হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ক্ষমতার মোহ নয়, সাধারণ মানুষের হৃদয়েই থাকতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: ড. কামাল হোসেন ৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯: ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নাম মুছে যেভাবে ‘বাংলাদেশ’ নাম দিলেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যের সাথে ‘হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফাউন্ডেশন’-এর বৈঠক ‘বালের বিজয় দিবস’ মন্তব্যের জেরে ইলিয়াসকে ‘স্টুপিড’, ‘শুয়োরের বাচ্চা’, ‘বেজন্মা’ বললেন আম জনতা দলের তারেক ক্ষমতার মোহ নয়, সাধারণ মানুষের হৃদয়েই থাকতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: ড. কামাল হোসেন শাসক বঙ্গবন্ধু: ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে এক রাষ্ট্রনির্মাতার উপাখ্যান শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ‘সাংবিধানিক প্রহসন’, সংবিধানের ওপর আঘাত: ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদন তারেক জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির উত্থান: একটি অন্ধকার অধ্যায়ের বিশ্লেষণ গৃহকর্মীর পেটে বাবার ‘অবৈধ সন্তান’: ব্যারিস্টার শাহরিয়ার কবিরের কলঙ্কিত জন্মরহস্য ফাঁস! বিজয় দিবসের আনন্দ ম্লান করতেই কি ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’? খালেদা জিয়ার মৃত্যুর গুঞ্জন ও ১৬ই ডিসেম্বরের নেপথ্য বিশ্লেষণ ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে বৈঠক: বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ ব্রাসেলসে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে বৈঠক: বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ মালাইকার বিস্ফোরক মন্তব্য ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠিত: দেখে নিন কোন গ্রুপে কোন দল যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পরিধি বাড়ছে, তালিকায় ৩০টির বেশি দেশ ২০২৬ বিশ্বকাপে কবে মুখোমুখি হতে পারে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল? দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ১০ ভারত চাইলে নিরবচ্ছিন্ন তেল সরবরাহে প্রস্তুত রাশিয়া : পুতিন লিবিয়া থেকে দেশে ফিরলেন ৩১০ বাংলাদেশি কর্মবিরতিতে থাকা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি