
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

বরুড়ায় বাজারে প্রকাশ্যে শিয়ালের মাংস বিক্রি

টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল, প্রস্তুত আশ্রয় কেন্দ্র

মেঘনায় ৩৯ যাত্রী নিয়ে ডুবে গেল ট্রলার

ফেরি চলাচল বন্ধ, ২ কিমি এলাকায় যানবাহনের সারি

সীমান্তে সব লাইট বন্ধ করে পুশইন চেষ্টা, রুখে দিল বিজিবি-জনতা

সেন্টমার্টিনে তলিয়ে গেছে শতাধিক বাড়ি, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট

৩ দিনের মধ্যে যেসব জেলায় বন্যার আভাস
মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর দেখে যেতে চান মা

মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নৃশংসতার কথা মনে হলে এখনো আঁতকে উঠেন এলাকাবাসী। ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল নুসরাতকে হাত-পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওইদিন নুসরাত ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন। পরীক্ষা শুরুর আগে ছাত্রলীগের ৫ সন্ত্রাসী নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া নুসরাত চিকিৎসাধীন অবস্থায় চার দিন পর ১০ এপ্রিল মারা যান। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আওয়ামীপন্থি অধ্যক্ষ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ দলের ১৬ নেতাকর্মীকে (এলাকায় আওয়ামী সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত) মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু
সাড়ে ৬ বছর পরও চূড়ান্ত বিচার পায়নি নুসরাতের পরিবার। খুনি শিক্ষক ও আওয়ামী নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় কার্যকর দেখতে চান এলাকাবাসী। সন্ত্রাসীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এখনো হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নুসরাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও মাদ্রাসা কমিটির সহসভাপতি রুহুল আমিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, ছাত্র ও যুবলীগ কর্মী নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, সাইফুর রহমান, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন, ইমরান হোসেন, মহিউদ্দিন শাকিল, মোহাম্মদ শামীম, কামরুল নাহার ও উম্মে সুলতানা পপি। ১৬ আসামির মধ্যে ২ জন ফেনী এবং অপর ১৪
জন কুমিল্লা, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। সাজার ৫ বছর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। সম্প্রতি সোনাগাজী এলাকা সরেজমিন দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অর্থাৎ থানার প্রায় দেড়শ গজ দূরে মাদ্রাসাটি অবস্থিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাদ্রাসাটি পুরোপুরি ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছু স্থানীয় সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশনায় বাস্তবায়িত হতো। প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সমন্বয়ে একটি ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ তৈরি করেন।
ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ নানানভাবে শ্লীলতাহানি করা হতো। খোদ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে অথবা নির্দিষ্ট স্থানে ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করতেন। নুসরাতকে বেশ কয়েকবার শ্লীলতাহানি ও কুপ্রস্তাব দেন তিনি। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন নুসরাত। তার মা শিরিন আক্তার সোনাগাজী থানায় সিরাজের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। তখন থেকেই সিরাজসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছাত্রীদের জড়ো হয়ে খেলার দৃশ্য। তিনটি বহুতল পাকা ভবনের সঙ্গে দুটি টিনশেডের ভবনও রয়েছে। এই প্রতিবেদক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে নুসরাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতেই তারা বলছিল,
‘নুসরাত আপাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, ভাবনায় এলেই আতঙ্কে কাঁপতে থাকি। যে ভবনের ছাদে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, সে ভবনের নিচে যেতেই নির্যাতনের কথা মনে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলল, ‘ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও কুপ্রস্তাবের অভিযোগ ছিল অসংখ্য। পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের চারণভূমি ছিল। আওয়ামী লীগের সব ধরনের সভা-অনুষ্ঠান, মিছিলে শিক্ষার্থীদের জোর করে অংশগ্রহণ করানো হতো। ছাত্রীদের শুধু প্রতিষ্ঠানের ভেতরে নয়, মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথেও নানাভাবে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করত ছাত্রলীগ ও সিরাজের পালিত সন্ত্রাসীরা। যে ভবনের ছাদে নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়, সেখানে
শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ রয়েছে। চারতলা পর্যন্ত উঠে দেখা গেছে, ছাদে একটি তালা ঝুলছে। ওই ভবনের নিচে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা ভয়ে ছাদের দিকেই তাকান না। ওই তালার চাবি থাকে অধ্যক্ষের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রহরী বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ ছিলেন ত্রাস। তার কক্ষে সব সময় ছাত্রলীগ ও বখাটে ছেলেরা আসা-যাওয়া করত। মাদ্রাসার প্রধান গেটের সামনে সারি সারি দোকান রয়েছে। লেপ-তোশকের দোকানে কাজ করা এক শ্রমিক জানালেন, ঘটনার দিন চিৎকার শুনে তিনিও মাদ্রাসাটির ভেতরে ঢোকেন। এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডের কথা মনে হলেই সবাই আঁতকে উঠেন। যৌন লালসায় একটি ছাত্রীকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। বিচার চূড়ান্ত না হওয়ায় আমরা
লজ্জিত। মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহিম খলিল বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ড চরম বর্বর, নৃশংস। আসামিরা জেলে রয়েছে। এলাকাবাসী তথা আমরাও চাই দ্রুত এর চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত হোক। রায় কার্যকর হলে আমরাও কলঙ্কমুক্ত হব। নুসরাতের মায়ের আর্তনাদ : নুসরাতের বাড়ির প্রবেশমুখেই পুলিশি পাহারা রয়েছে। ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দায়িত্বরত পুলিশকে এ প্রতিবেদকের পরিচয় দেওয়া হয়। পর্দার আড়ালে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতেই পরিচয় দিয়ে কথা বলছিলেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার। নুসরাতের বাবা বিশিষ্ট আলেম মাওলানা একেএম মুসা জামেয়া সারাফাতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। তিনি প্রায় ৩০ বছর ইমামতি করছেন। তাদের ছিল তিন ছেলে ও এক মেয়ে (নুসরাত)। নুসরাত ছিল অদম্য সাহসী, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। নুসরাতের স্মৃতিবিজড়িত কক্ষে পড়ার টেবিল, মাদ্রাসার পোশাক, বই-খাতা সবই পড়ে রয়েছে। শুধু নুসরাত নেই। আর্তনাদ করে মা বলছিলেন, তার মেয়েকে সন্ত্রাসীরা উত্ত্যক্ত করত। খোদ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ তার মেয়েকে শ্লীলতাহানি করেছে-নুসরাতের এমন অভিযোগে তিনি থানায় একটি মামলা করেন। তখন থেকেই আসামিরা মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। ওই সময় পুলিশি সহযোগিতাও তেমন পাননি। মেয়েকে হত্যার পর আসামি গ্রেফতার হলেও এখনো তাদের ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটে। বাড়িতে পুলিশি পাহারা থাকলেও পরিবারের সদস্যরা বাইরে গেলে প্রাণভয়ে থাকতে হয়। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মরেও শান্তি পাবেন না জানিয়ে শিরিন আক্তার বলেন, আসামিরা খুবই ক্ষমতাবান। তাদের আত্মীয়স্বজনরা এলাকায় ত্রাস করে বেড়ায়। রাজনৈতিক ক্ষমতায় তারা যা ইচ্ছা তাই করত। আসামিদের হয়ে এখনো সন্ত্রাসী চক্রটি হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ফাঁসির রায় কার্যকর হলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। আমার মেয়ে মৃত্যুর আগে সবকিছু বলে গেছে। আসামিদের নাম বলে গেছে, যা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে নুসরাত মারা যান। হাসপাতালে পুরো সময়ই মা নুসরাতের পাশে ছিলেন। পোড়া শরীর নিয়ে নুসরাতের বেঁচে থাকার টানা আর্তনাদ ভুলতে পারছেন না মা। নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, নুসরাত ছিল পরিবারের সবচেয়ে আদরের। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। আমার বোনের হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করলে নুসরাতের আত্মাও শান্তি পাবে। সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বায়েজীদ আকন বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বর্বরতা দেশব্যাপী সবাইকে ব্যথিত করেছে। আমরা নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসিয়েছি। খোঁজখবর রাখছি। তাদের পরিবারটি একটি আদর্শ পরিবার। ধার্মিক পরিবার। সমাজে খুবই ভালো মানুষ হিসাবে তারা পরিচিত।
সাড়ে ৬ বছর পরও চূড়ান্ত বিচার পায়নি নুসরাতের পরিবার। খুনি শিক্ষক ও আওয়ামী নেতাদের সর্বোচ্চ শাস্তির রায় কার্যকর দেখতে চান এলাকাবাসী। সন্ত্রাসীরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এখনো হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। নুসরাত হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি ও মাদ্রাসা কমিটির সহসভাপতি রুহুল আমিন, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, ছাত্র ও যুবলীগ কর্মী নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, সাইফুর রহমান, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদের, আবছার উদ্দিন, আব্দুর রহিম শরীফ, ইফতেখার উদ্দিন, ইমরান হোসেন, মহিউদ্দিন শাকিল, মোহাম্মদ শামীম, কামরুল নাহার ও উম্মে সুলতানা পপি। ১৬ আসামির মধ্যে ২ জন ফেনী এবং অপর ১৪
জন কুমিল্লা, কাশিমপুরসহ বিভিন্ন কারাগারে রয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। সাজার ৫ বছর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি শুরু হয়। সম্প্রতি সোনাগাজী এলাকা সরেজমিন দেখা যায়, শহরের প্রাণকেন্দ্রে অর্থাৎ থানার প্রায় দেড়শ গজ দূরে মাদ্রাসাটি অবস্থিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মাদ্রাসাটি পুরোপুরি ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের দখলে ছিল। শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছু স্থানীয় সংসদ-সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশনায় বাস্তবায়িত হতো। প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদদৌলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের সমন্বয়ে একটি ‘সন্ত্রাসী গ্রুপ’ তৈরি করেন।
ছাত্রীদের কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ নানানভাবে শ্লীলতাহানি করা হতো। খোদ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা তার কক্ষে অথবা নির্দিষ্ট স্থানে ছাত্রীদের ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করতেন। নুসরাতকে বেশ কয়েকবার শ্লীলতাহানি ও কুপ্রস্তাব দেন তিনি। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে উঠেন নুসরাত। তার মা শিরিন আক্তার সোনাগাজী থানায় সিরাজের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। তখন থেকেই সিরাজসহ আওয়ামী লীগ নেতা ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছাত্রীদের জড়ো হয়ে খেলার দৃশ্য। তিনটি বহুতল পাকা ভবনের সঙ্গে দুটি টিনশেডের ভবনও রয়েছে। এই প্রতিবেদক বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে নুসরাত হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলতেই তারা বলছিল,
‘নুসরাত আপাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, ভাবনায় এলেই আতঙ্কে কাঁপতে থাকি। যে ভবনের ছাদে কেরোসিন দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, সে ভবনের নিচে যেতেই নির্যাতনের কথা মনে পড়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলল, ‘ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও কুপ্রস্তাবের অভিযোগ ছিল অসংখ্য। পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি অধ্যক্ষসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের চারণভূমি ছিল। আওয়ামী লীগের সব ধরনের সভা-অনুষ্ঠান, মিছিলে শিক্ষার্থীদের জোর করে অংশগ্রহণ করানো হতো। ছাত্রীদের শুধু প্রতিষ্ঠানের ভেতরে নয়, মাদ্রাসায় আসা-যাওয়ার পথেও নানাভাবে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্ত করত ছাত্রলীগ ও সিরাজের পালিত সন্ত্রাসীরা। যে ভবনের ছাদে নুসরাতকে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়, সেখানে
শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ রয়েছে। চারতলা পর্যন্ত উঠে দেখা গেছে, ছাদে একটি তালা ঝুলছে। ওই ভবনের নিচে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা ভয়ে ছাদের দিকেই তাকান না। ওই তালার চাবি থাকে অধ্যক্ষের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রহরী বলেন, অধ্যক্ষ সিরাজ ছিলেন ত্রাস। তার কক্ষে সব সময় ছাত্রলীগ ও বখাটে ছেলেরা আসা-যাওয়া করত। মাদ্রাসার প্রধান গেটের সামনে সারি সারি দোকান রয়েছে। লেপ-তোশকের দোকানে কাজ করা এক শ্রমিক জানালেন, ঘটনার দিন চিৎকার শুনে তিনিও মাদ্রাসাটির ভেতরে ঢোকেন। এমন বর্বর হত্যাকাণ্ডের কথা মনে হলেই সবাই আঁতকে উঠেন। যৌন লালসায় একটি ছাত্রীকে পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। বিচার চূড়ান্ত না হওয়ায় আমরা
লজ্জিত। মাদ্রাসার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা ইব্রাহিম খলিল বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ড চরম বর্বর, নৃশংস। আসামিরা জেলে রয়েছে। এলাকাবাসী তথা আমরাও চাই দ্রুত এর চূড়ান্ত বিচার নিশ্চিত হোক। রায় কার্যকর হলে আমরাও কলঙ্কমুক্ত হব। নুসরাতের মায়ের আর্তনাদ : নুসরাতের বাড়ির প্রবেশমুখেই পুলিশি পাহারা রয়েছে। ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে দায়িত্বরত পুলিশকে এ প্রতিবেদকের পরিচয় দেওয়া হয়। পর্দার আড়ালে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলতেই পরিচয় দিয়ে কথা বলছিলেন নুসরাতের মা শিরিন আক্তার। নুসরাতের বাবা বিশিষ্ট আলেম মাওলানা একেএম মুসা জামেয়া সারাফাতিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমাম। তিনি প্রায় ৩০ বছর ইমামতি করছেন। তাদের ছিল তিন ছেলে ও এক মেয়ে (নুসরাত)। নুসরাত ছিল অদম্য সাহসী, উচ্ছল ও প্রাণবন্ত। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন। নুসরাতের স্মৃতিবিজড়িত কক্ষে পড়ার টেবিল, মাদ্রাসার পোশাক, বই-খাতা সবই পড়ে রয়েছে। শুধু নুসরাত নেই। আর্তনাদ করে মা বলছিলেন, তার মেয়েকে সন্ত্রাসীরা উত্ত্যক্ত করত। খোদ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ তার মেয়েকে শ্লীলতাহানি করেছে-নুসরাতের এমন অভিযোগে তিনি থানায় একটি মামলা করেন। তখন থেকেই আসামিরা মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। ওই সময় পুলিশি সহযোগিতাও তেমন পাননি। মেয়েকে হত্যার পর আসামি গ্রেফতার হলেও এখনো তাদের ভয় আর আতঙ্কে দিন কাটে। বাড়িতে পুলিশি পাহারা থাকলেও পরিবারের সদস্যরা বাইরে গেলে প্রাণভয়ে থাকতে হয়। আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত মরেও শান্তি পাবেন না জানিয়ে শিরিন আক্তার বলেন, আসামিরা খুবই ক্ষমতাবান। তাদের আত্মীয়স্বজনরা এলাকায় ত্রাস করে বেড়ায়। রাজনৈতিক ক্ষমতায় তারা যা ইচ্ছা তাই করত। আসামিদের হয়ে এখনো সন্ত্রাসী চক্রটি হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। ফাঁসির রায় কার্যকর হলে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। আমার মেয়ে মৃত্যুর আগে সবকিছু বলে গেছে। আসামিদের নাম বলে গেছে, যা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চারদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে নুসরাত মারা যান। হাসপাতালে পুরো সময়ই মা নুসরাতের পাশে ছিলেন। পোড়া শরীর নিয়ে নুসরাতের বেঁচে থাকার টানা আর্তনাদ ভুলতে পারছেন না মা। নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, নুসরাত ছিল পরিবারের সবচেয়ে আদরের। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। আমার বোনের হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালত মামলাটি নিষ্পত্তি করলে নুসরাতের আত্মাও শান্তি পাবে। সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বায়েজীদ আকন বলেন, নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বর্বরতা দেশব্যাপী সবাইকে ব্যথিত করেছে। আমরা নুসরাতের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়িতে পুলিশি পাহারা বসিয়েছি। খোঁজখবর রাখছি। তাদের পরিবারটি একটি আদর্শ পরিবার। ধার্মিক পরিবার। সমাজে খুবই ভালো মানুষ হিসাবে তারা পরিচিত।