ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি: সংকটে নিম্ন আয়ের মানুষ
উদ্বৃত্ত ধানের এলাকা রংপুরে চালের দামে নাভিশ্বাস
অর্থনীতিতে অশনিসংকেত, প্রবৃদ্ধি নামবে ৩.৮ শতাংশে
দ্বিগুণ পণ্য নিয়ে আবারও চট্টগ্রাম আসছে সেই পাকিস্তানি জাহাজ
ফের আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে প্রশাসক নিয়োগ
বাংলাদেশকে ৭ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা দিচ্ছে আইএমএফ
নিলামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তুলে নিল ২০৮৩ কোটি টাকা
ভুয়া ক্রয় দেখিয়ে রিজার্ভের ডলার জালিয়াতি
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ডলার নিয়ে ভয়াবহ জালিয়াতি হয়েছে। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় সম্প্রতি ইসলামী ব্যাংক থেকে তিন দফায় ১ হাজার ১০০ মিলিয়ন ডলারের ভুয়া ক্রয় দেখিয়ে ১২ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তারল্য সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংককে অবৈধ সুবিধা দিতে এ অভিনব পন্থা বেছে নেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদ ছেড়ে পলাতক আব্দুর রউফ তালুকদারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। সর্বশেষ গত ৩ জুলাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ডলার ক্রয় দেখিয়ে ৬ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এভাবে একদিকে জালিয়াতি করে টাকা দেওয়া হয়েছে, অন্যদিকে ভুয়া হিসাবসহ রিজার্ভ বেশি দেখানো হয়েছে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের
পতনের পর জালিয়াতির এ তথ্য সামনে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার পতনের আগে নজিরবিহীনভাবে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পরিচালিত চলতি হিসাবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রেখে লেনদেনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সুযোগ অবারিত রাখা হয়। তবে ব্যাংকগুলোতে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল ছিল না। এ অবস্থায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের ভুয়া লেনদেন করে অভিনব কায়দায় টাকা দেওয়া শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ গত ৩ জুলাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের ভুয়া ক্রয় দেখানো হয়। প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হারে ইসলামী ব্যাংককে ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংক ৬ হাজার ৪৯০
কোটি টাকা পরিশোধ করে। কয়েক দফা তাগিদের পর বিপরীতে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেয় ইসলামী ব্যাংক। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাকি ৪৫০ মিলিয়ন ডলার আর দেওয়া হয়নি। আবার এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে টাকা নিয়েছে, তাও ফেরত দেয়নি। সরকার পতনের পর গত ১১ আগস্ট রোববার তড়িঘড়ি করে সেই টাকা আদায় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে আবার বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়। ভুয়াভাবে কেনা ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভে দেখানো হলেও নিট রিজার্ভে দেখানো হয়নি। এর ফলে গত জুলাই শেষে গ্রস রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন এবং নিট রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। গত ২৮
আগস্ট গ্রস রিজার্ভ কমে ২৫ দশমিক ৬৪ বিলিয়নে নামে। অথচ নিট রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ১১ আগস্টের অভ্যন্তরীণ এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩ জুলাই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে কেনা ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’ হিসাবে জমা করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৫০ মিলিয়ন ডলার জমা করার জন্য অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের ব্যাক অফিস একাধিকবার সুইফট মেসেজ ও ইমেইল পাঠায়। তবে ইসলামী ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি। এ অবস্থায় অবশিষ্ট ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে রক্ষিত ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে
কেটে নেওয়া হয়। আর রিজার্ভ থেকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সমন্বয় করা হয়। এর মানে ওই পরিমাণ রিজার্ভ কমে যায়। জানা গেছে, প্রথমে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ভুয়া ক্রয় দেখিয়ে ব্যাংকটিকে দেওয়া হয় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ওই টাকা সমন্বয় করে মার্চে এসে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ক্রয় দেখিয়ে আবার দেওয়া হয় ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী যেদিন ডলার কেনা হবে পরদিন তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে যোগ হওয়ার কথা। প্রথম দফায় ভুয়া ডলার ক্রয়ের পরদিন ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার ও ২০ জানুয়ারি শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর ২১ জানুয়ারি রোববার ছিল নিউইয়র্কে বন্ধের দিন।
পরদিন সোমবারও ডলার যোগ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা তখনও জানতে পারেননি যে, এটি ডলার কেনার ভুয়া আয়োজন। যে কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ইসলামী ব্যাংকের কাছে ডলার বা টাকা ফেরত চেয়ে তাগাদাপত্র দেয়। তবে ব্যাংক এর কোনো জবাব দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে ডলার বেচাকেনার বিষয়টি দেখা হয়। এ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রথম দফায় এ ঘটনার পর তারা ভয় পেয়ে যান। তারা প্রথমে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. মো. কবির আহাম্মদ ও ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছেরের কাছে যান। ডেপুটি গভর্নর জবাব দেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ডলার দিয়ে দেবে। এর
পরও ডলার আসেনি বা টাকা ফেরত দেয়নি। তখন ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গড়িমসি এবং ইসলামী ব্যাংকের আচরণে নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তারা জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পারেন। ডেপুটি গভর্নর হিসেবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আবু ফরাহ মো. নাছেরের মেয়াদ শেষ হয়। এর পর ওই বিভাগের দায়িত্ব পান ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার। আর আবু ফরাহ মো. নাছেরকে নীতি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন আব্দুর রউফ তালুকদার। এখনও নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে আছেন ড. মো. কবির আহাম্মদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের পর গত ১২ আগস্ট আবু ফরাহ মো. নাছেরসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগে বাধ্য হন। জানতে চাইলে আবু ফরাহ মো. নাছের এ ঘটনা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কারিগরি জ্ঞান কম ছিল। তিনি সব সময় বিভাগকে বলতেন নিয়ম-কানুনের বাইরে কিছু না করতে। বিভাগের সবাই গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করে এ কাজ করেছেন। গভর্নরের অনুমোদন ছাড়া এমন হওয়া সম্ভব নয়। তাঁর বুদ্ধিতেই এমন জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ রকম হওয়ার কথা নয়। আমি নীতি নিয়ে থাকতাম। এসব দিকে এত নজর দিতাম না। আবার শুরু থেকে এসব নিয়ে আমার কাজের অভিজ্ঞতাও ছিল না।’ এ বিষয়ে ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহারের বক্তব্যের জন্য টেলিফোন করলে প্রথমে বলেন, ‘একটি মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলব।’ দুই ঘণ্টা পর কয়েক দফা ফোন করলেও আর ধরেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জেনে বলতে হবে। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে টেলিফোন ও এসএমএস করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও তিনি তাতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২ সালের জুলাইতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদান করেন আব্দুর রউফ তালুকদার। এর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও অনুগত হয়ে ওঠেন তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। পরে ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহারও ইসলামী ব্যাংককে একই কায়দায় টাকা দেওয়ায় সায় দিয়ে গেছেন। নির্বাহী পরিচালক ড. কবির আহমেদ এ নিয়ে আপত্তি তোলেননি। তবে ওই সময় মতিঝিল অফিসের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক জাকের হোসেন এভাবে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৩ আগস্ট জুমার নামাজের পর বাসার নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। বাসার ভবন থেকে পড়ে মারা গেছেন, নাকি অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে ডলার বা অন্য বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি স্বীকৃত প্রথা। সাধারণভাবে কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি করতে চাইলে সমপরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। দিনের পর দিন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’ অ্যাকাউন্টে ডলার যোগ হয় পরদিন। কোনো কারণে পরদিন ডলার না এলে সুদসহ পুরো টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ফেরত দিতে হয়। এসব নিয়ম না মেনে ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ডলারের সাজানো লেনদেনের বিপরীতে বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়ার বিষয়টি একটি জালিয়াতি। বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়ে গভর্নর, নীতি উপদেষ্টা, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা নিয়েছেন কিনা, দেখা দরকার। এ ছাড়া আগামীতে এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।
পতনের পর জালিয়াতির এ তথ্য সামনে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার পতনের আগে নজিরবিহীনভাবে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে পরিচালিত চলতি হিসাবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রেখে লেনদেনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসব ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার সুযোগ অবারিত রাখা হয়। তবে ব্যাংকগুলোতে ঋণ দেওয়ার মতো তহবিল ছিল না। এ অবস্থায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডলারের ভুয়া লেনদেন করে অভিনব কায়দায় টাকা দেওয়া শুরু হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী সর্বশেষ গত ৩ জুলাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের ভুয়া ক্রয় দেখানো হয়। প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হারে ইসলামী ব্যাংককে ওই দিন বাংলাদেশ ব্যাংক ৬ হাজার ৪৯০
কোটি টাকা পরিশোধ করে। কয়েক দফা তাগিদের পর বিপরীতে ১০০ মিলিয়ন ডলার দেয় ইসলামী ব্যাংক। তবে দীর্ঘদিন ধরে বাকি ৪৫০ মিলিয়ন ডলার আর দেওয়া হয়নি। আবার এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে যে টাকা নিয়েছে, তাও ফেরত দেয়নি। সরকার পতনের পর গত ১১ আগস্ট রোববার তড়িঘড়ি করে সেই টাকা আদায় করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যে কারণে ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে আবার বড় অঙ্কের ঘাটতি তৈরি হয়। ভুয়াভাবে কেনা ডলার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্রস রিজার্ভে দেখানো হলেও নিট রিজার্ভে দেখানো হয়নি। এর ফলে গত জুলাই শেষে গ্রস রিজার্ভ ২৫ দশমিক ৯২ বিলিয়ন এবং নিট রিজার্ভ ছিল ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার। গত ২৮
আগস্ট গ্রস রিজার্ভ কমে ২৫ দশমিক ৬৪ বিলিয়নে নামে। অথচ নিট রিজার্ভ বেড়ে ২০ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গত ১১ আগস্টের অভ্যন্তরীণ এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৩ জুলাই ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ থেকে কেনা ৫৫০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’ হিসাবে জমা করা হয়েছে। অবশিষ্ট ৪৫০ মিলিয়ন ডলার জমা করার জন্য অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের ব্যাক অফিস একাধিকবার সুইফট মেসেজ ও ইমেইল পাঠায়। তবে ইসলামী ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো জবাব দেয়নি। এ অবস্থায় অবশিষ্ট ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ ৫ হাজার ৩১০ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে রক্ষিত ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে
কেটে নেওয়া হয়। আর রিজার্ভ থেকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সমন্বয় করা হয়। এর মানে ওই পরিমাণ রিজার্ভ কমে যায়। জানা গেছে, প্রথমে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার ভুয়া ক্রয় দেখিয়ে ব্যাংকটিকে দেওয়া হয় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। ওই টাকা সমন্বয় করে মার্চে এসে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ক্রয় দেখিয়ে আবার দেওয়া হয় ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। নিয়ম অনুযায়ী যেদিন ডলার কেনা হবে পরদিন তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে যোগ হওয়ার কথা। প্রথম দফায় ভুয়া ডলার ক্রয়ের পরদিন ১৯ জানুয়ারি শুক্রবার ও ২০ জানুয়ারি শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর ২১ জানুয়ারি রোববার ছিল নিউইয়র্কে বন্ধের দিন।
পরদিন সোমবারও ডলার যোগ না হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা তখনও জানতে পারেননি যে, এটি ডলার কেনার ভুয়া আয়োজন। যে কারণে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে ইসলামী ব্যাংকের কাছে ডলার বা টাকা ফেরত চেয়ে তাগাদাপত্র দেয়। তবে ব্যাংক এর কোনো জবাব দেয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে ডলার বেচাকেনার বিষয়টি দেখা হয়। এ বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রথম দফায় এ ঘটনার পর তারা ভয় পেয়ে যান। তারা প্রথমে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ড. মো. কবির আহাম্মদ ও ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছেরের কাছে যান। ডেপুটি গভর্নর জবাব দেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ডলার দিয়ে দেবে। এর
পরও ডলার আসেনি বা টাকা ফেরত দেয়নি। তখন ওপরের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গড়িমসি এবং ইসলামী ব্যাংকের আচরণে নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তারা জালিয়াতির বিষয়টি বুঝতে পারেন। ডেপুটি গভর্নর হিসেবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আবু ফরাহ মো. নাছেরের মেয়াদ শেষ হয়। এর পর ওই বিভাগের দায়িত্ব পান ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহার। আর আবু ফরাহ মো. নাছেরকে নীতি উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন আব্দুর রউফ তালুকদার। এখনও নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে আছেন ড. মো. কবির আহাম্মদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের নজিরবিহীন বিক্ষোভের মুখে সরকার পতনের পর গত ১২ আগস্ট আবু ফরাহ মো. নাছেরসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পদত্যাগে বাধ্য হন। জানতে চাইলে আবু ফরাহ মো. নাছের এ ঘটনা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে তাঁর কারিগরি জ্ঞান কম ছিল। তিনি সব সময় বিভাগকে বলতেন নিয়ম-কানুনের বাইরে কিছু না করতে। বিভাগের সবাই গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করে এ কাজ করেছেন। গভর্নরের অনুমোদন ছাড়া এমন হওয়া সম্ভব নয়। তাঁর বুদ্ধিতেই এমন জালিয়াতি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে– এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ রকম হওয়ার কথা নয়। আমি নীতি নিয়ে থাকতাম। এসব দিকে এত নজর দিতাম না। আবার শুরু থেকে এসব নিয়ে আমার কাজের অভিজ্ঞতাও ছিল না।’ এ বিষয়ে ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহারের বক্তব্যের জন্য টেলিফোন করলে প্রথমে বলেন, ‘একটি মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলব।’ দুই ঘণ্টা পর কয়েক দফা ফোন করলেও আর ধরেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, এ বিষয়ে তাঁর জানা নেই। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জেনে বলতে হবে। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলাকে টেলিফোন ও এসএমএস করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও তিনি তাতে রাজি হননি। সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২২ সালের জুলাইতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে যোগদান করেন আব্দুর রউফ তালুকদার। এর পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিজস্ব একটি বলয় তৈরি করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও অনুগত হয়ে ওঠেন তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের। পরে ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহারও ইসলামী ব্যাংককে একই কায়দায় টাকা দেওয়ায় সায় দিয়ে গেছেন। নির্বাহী পরিচালক ড. কবির আহমেদ এ নিয়ে আপত্তি তোলেননি। তবে ওই সময় মতিঝিল অফিসের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী পরিচালক জাকের হোসেন এভাবে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২৩ আগস্ট জুমার নামাজের পর বাসার নিচে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। বাসার ভবন থেকে পড়ে মারা গেছেন, নাকি অন্য কোনো ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তাঁর আকস্মিক মৃত্যু নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে ডলার বা অন্য বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি স্বীকৃত প্রথা। সাধারণভাবে কোনো ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার বিক্রি করতে চাইলে সমপরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। দিনের পর দিন ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘নস্ট্রো’ অ্যাকাউন্টে ডলার যোগ হয় পরদিন। কোনো কারণে পরদিন ডলার না এলে সুদসহ পুরো টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ফেরত দিতে হয়। এসব নিয়ম না মেনে ইসলামী ব্যাংকের সঙ্গে ডলারের সাজানো লেনদেনের বিপরীতে বিপুল অঙ্কের টাকা দেওয়ার বিষয়টি একটি জালিয়াতি। বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়ে গভর্নর, নীতি উপদেষ্টা, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে সুবিধা নিয়েছেন কিনা, দেখা দরকার। এ ছাড়া আগামীতে এ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত।