ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
চট্টগ্রামে এবার নিজ বাড়ির সামনে খুন হলেন ব্যবসায়ী
রাজনীতির মাঠে সক্রিয় চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা
রমনায় গির্জা লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ
ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ৪০ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামে আটক
ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটিতে নতুন রাডার স্থাপন করছে বাংলাদেশ চীনা প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা; নির্মাণাধীন হ্যাঙ্গারের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বাড়ি নির্মাণে বাধা দিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি যুবদল কর্মীদের, প্রতিবাদ করায় প্রবাসীকে পিটুনি
শাহজালালে যাত্রীর পাকস্থলীতে মিলল ৬৩৭৮ ইয়াবা
ব্রাজিলে এবারের জলবায়ু সম্মেলন অনেক ঝক্কির
আমাজন অরণ্যের তীরে ব্রাজিলের বেলেম শহরে আগামী বুধবার শুরু হচ্ছে জাতিসংঘের ৩০তম জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ৩০)। যেখানে প্রায় ১৫০ দেশের প্রতিনিধি জলবায়ু সংকট মোকাবিলার পথ নির্ধারণে যূথবদ্ধ হচ্ছেন।
তবে এবার উড়োজাহাজ ও হোটেলের খরুচে ভাড়ার কারণে অনেক দেশের প্রতিনিধি দলের আকার ছোট থাকছে। যাতায়াত ও আবাসন খরচ দুই থেকে তিন গুণ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে উন্নয়নশীল ও জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দরিদ্র দেশগুলোর ওপর। জলবায়ু ন্যায়বিচারের আলোচনায় তাদের উপস্থিতি কম হবে। ফলে কপের এই আসরে ভুক্তভোগী দেশের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ হয়ে পড়তে পারে। পুরো সম্মেলন একতরফা হয়ে পড়বে বলে শঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা। অনেক দরিদ্র দেশ ব্রাজিল সরকারের কাছে সাশ্রয়ী ফ্লাইট ও বিকল্প
আবাসনের দাবি জানালেও সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক ধীরগতি, করপোরেট আধিপত্য এবং শক্তিধর দেশের চাপে প্রত্যাশা আগের চেয়ে অনেক কম। এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে– কপ৩০ কি আন্তর্জাতিক জলবায়ু কূটনীতির ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে। নাকি আবারও প্রতিশ্রুতির ফানুস চুপসে যাবে! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন দশকের পুরোনো এই সম্মেলন এখন অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক হয়ে পড়েছে, যা বাস্তব পদক্ষেপ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তাদের মত, সময় এসেছে পুরো প্রক্রিয়া পুনর্গঠনের। জাতিসংঘের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এবার কপ৩০-এ নিবন্ধিত প্রতিনিধি মাত্র ১২ হাজার ২০০। অথচ গত বছর আজারবাইজানের বাকুতে কপ২৯-এ ৫৪ হাজার এবং ২০২৩ সালে দুবাইয়ের কপ২৮-এ ৮৪ হাজার নিবন্ধিত প্রতিনিধি ছিলেন। ব্রাজিল আশা করেছিল,
অন্তত ৪৫ হাজার প্রতিনিধি থাকবে। তবে উচ্চ ভ্রমণ খরচ ও সীমিত আবাসন সেই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমিয়েছে। ব্রাজিলের বেলেম শহরে প্রায় ৫৩ হাজার অতিথির জন্য আবাসন প্রস্তুত করা হলেও আয়োজকরা নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে খেই হারাচ্ছেন। উচ্চ বিমান ভাড়া, ব্যয়বহুল হোটেল ও জটিল যাত্রাপথ অনেকের অংশগ্রহণ অসম্ভব করে তুলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। উচ্চ খরচের কারণে বাংলাদেশও কমিয়েছে প্রতিনিধি সংখ্যা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, কপ৩০-এ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সচিব ফারহিনা আহমেদ যাচ্ছেন না। তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২ জনের একটি প্রতিনিধি দল কপে
অংশ নেবে। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো কপে যোগ দিতে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা ফরিদা আখতারসহ দুজন সম্মেলনে যাচ্ছেন। কপে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এবার বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে জায়গা পাবে ইলিশ, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মতো প্রাণিজ সম্পদের তথ্য ও ছবি। জলবায়ু সমস্যা কীভাবে দেশের মৎস্য ও প্রাণিজ সম্পদে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, তা সেখানে তুলে ধরা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক শওকত আলী মির্জা বলেন, উড়োজাহাজের বিজনেস ক্লাসের ভাড়া ২৭ লাখ টাকারও বেশি। আর ইকোনমিতে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ছোট করা হয়েছে। নেপালের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মহেশ্বর ঢাকাল বলেন, ফ্লাইট ভাড়া
ও আবাসনের খরচ এত বেশি, আমাদের দল ছোট করতে হয়েছে। কপ২৯-এ নেপাল পাঠিয়েছিল প্রায় ১০০ প্রতিনিধি, এবার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সেই সংখ্যা ত্রিশের বেশি হবে না। পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ জলবায়ু সাংবাদিক মোহাম্মদ দাউদ খান বলেন, করাচি থেকে বেলেম যাওয়ার টিকিট এখন তিন হাজার ডলারের বেশি। এর সঙ্গে আবাসনের খরচ অন্তত আরও এক হাজার ডলার। কিছু বুকিং আগাম দিয়েও বাতিল হয়ে গেছে, আবার নতুন করে বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে। ফলে এবার ঘরে বসেই সম্মেলন দেখতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এনজিও ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনও জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছে। দক্ষিণ এশিয়া ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরামের সেক্রেটারি কেরামত উল্লাহ বিপ্লব জানান, সাধারণত প্রতিবছর
বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সাংবাদিক জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেন। এবার সংখ্যা পঁচিশের বেশি হবে না। তিনি বলেন, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে অন্য সময়ে ঢাকা থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলো যাওয়া-আসা ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা। তবে এখন সাড়ে তিন লাখ টাকারও বেশি। আবার সাও পাওলো থেকে বেলেম পর্যন্ত ভাড়া লাখের ওপরে। অন্য এয়ারলাইন্সে ভাড়া ছয় লাখের মতো। এয়ারলাইন্সগুলো হঠাৎ করে ভাড়া বাড়িয়ে দিলেও কেউ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি। বেলেমের সঙ্গে সরাসরি আন্তর্জাতিক যোগাযোগও নেই। সেখানে পৌঁছাতে সাধারণত ব্রাজিলের সাও পাওলো হয়ে যেতে হয়, ফলে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোও পূর্ণ। ভাড়াও হয়েছে কয়েক গুণ। অক্টোবরের শুরু থেকেই হোটেল ভাড়া দুই থেকে তিন গুণ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন হাজার ডলারে। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকা থেকে তিন হাজার ৫০০ ডলারের নিচে টিকিট নেই। যাত্রাপথে দীর্ঘ ট্রানজিট। এত কিছুর পরও হোটেল পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাও পাওলো থেকে বেলেম পর্যন্ত উড়োজাহাজের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে এবার জলবায়ু সম্মেলনে যেতে পারবেন না। সাও পাওলো থেকেই ফিরে আসতে হবে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলো পর্যন্ত আমার যাওয়া-আসার টিকিট তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা পড়েছে। সাও পাওলো থেকে আবার বেলেম শুধু যেতেই লাগছে এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা। সাও পাওলো থেকে আবার বেলেম যাওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ বিমানের টিকিট মিলছে না। ফলে অনেকে সাও পাওলো গেলেও জলবায়ু সম্মেলনে যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, এবার জলবায়ু সম্মেলন শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। আমাজন বনের গাছ কাটা পড়েছে সম্মেলনের অবকাঠামো তৈরির জন্য। এরপর উচ্চ খরচের কারণে দরিদ্র দেশগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এত দূরের বিমান ভ্রমণে প্রত্যেক যাত্রী এক হাজার ২০০ কেজি কার্বন দূষণ করবে। বেলেমে কপ৩০ আয়োজক শহর হিসেবে বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে প্রতীকী গুরুত্ব। আমাজন বন ও এর আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু কূটনীতির কেন্দ্রে আনাই ছিল উদ্দেশ্য। শত শত আদিবাসী নেতা নদী পাড়ি দিয়ে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। ব্রাজিল সরকারও জানাতে চায়– আমাজন শুধু তাদের সম্পদ নয়, পুরো পৃথিবীর ফুসফুস। সম্মেলনের আগে সাও পাওলো, রিও ও বেলেম শহরে চলছে তিন সপ্তাহজুড়ে জলবায়ু ইভেন্ট। যেখানে ব্যবসায়ী, গবেষক ও পরিবেশকর্মীরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বন সংরক্ষণের বাস্তব সমাধান খুঁজছেন। জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে বাংলাদেশ পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে এবং দীর্ঘ প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ দ্রুত দেওয়ার দাবি তুলছে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তহবিল সম্পূর্ণ কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো সরাসরি অর্থ পেতে পারে। অন্য অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করা, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং গ্লোবাল স্টকটেক প্রক্রিয়ায় অর্থায়ন ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়টি যুক্ত করা। ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায়বিচারে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। তবে বিশ্বকে এখনই ন্যায্য অর্থায়ন ও অভিযোজন সহায়তা দিতে হবে। প্রতিশ্রুতির সময় শেষ, এখন দরকার বাস্তব পদক্ষেপ। প্যারিস চুক্তির এক দশক পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তব রূপ পায়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা কমছে, আর্থিক অঙ্গীকার ঝুলে আছে।
আবাসনের দাবি জানালেও সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে, রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক ধীরগতি, করপোরেট আধিপত্য এবং শক্তিধর দেশের চাপে প্রত্যাশা আগের চেয়ে অনেক কম। এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে– কপ৩০ কি আন্তর্জাতিক জলবায়ু কূটনীতির ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারবে। নাকি আবারও প্রতিশ্রুতির ফানুস চুপসে যাবে! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিন দশকের পুরোনো এই সম্মেলন এখন অতিমাত্রায় আমলাতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক হয়ে পড়েছে, যা বাস্তব পদক্ষেপ থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। তাদের মত, সময় এসেছে পুরো প্রক্রিয়া পুনর্গঠনের। জাতিসংঘের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, এবার কপ৩০-এ নিবন্ধিত প্রতিনিধি মাত্র ১২ হাজার ২০০। অথচ গত বছর আজারবাইজানের বাকুতে কপ২৯-এ ৫৪ হাজার এবং ২০২৩ সালে দুবাইয়ের কপ২৮-এ ৮৪ হাজার নিবন্ধিত প্রতিনিধি ছিলেন। ব্রাজিল আশা করেছিল,
অন্তত ৪৫ হাজার প্রতিনিধি থাকবে। তবে উচ্চ ভ্রমণ খরচ ও সীমিত আবাসন সেই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমিয়েছে। ব্রাজিলের বেলেম শহরে প্রায় ৫৩ হাজার অতিথির জন্য আবাসন প্রস্তুত করা হলেও আয়োজকরা নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে খেই হারাচ্ছেন। উচ্চ বিমান ভাড়া, ব্যয়বহুল হোটেল ও জটিল যাত্রাপথ অনেকের অংশগ্রহণ অসম্ভব করে তুলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। উচ্চ খরচের কারণে বাংলাদেশও কমিয়েছে প্রতিনিধি সংখ্যা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, কপ৩০-এ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও সচিব ফারহিনা আহমেদ যাচ্ছেন না। তবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২ জনের একটি প্রতিনিধি দল কপে
অংশ নেবে। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো কপে যোগ দিতে যাচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। উপদেষ্টা ফরিদা আখতারসহ দুজন সম্মেলনে যাচ্ছেন। কপে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, এবার বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে জায়গা পাবে ইলিশ, ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মতো প্রাণিজ সম্পদের তথ্য ও ছবি। জলবায়ু সমস্যা কীভাবে দেশের মৎস্য ও প্রাণিজ সম্পদে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, তা সেখানে তুলে ধরা হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক শওকত আলী মির্জা বলেন, উড়োজাহাজের বিজনেস ক্লাসের ভাড়া ২৭ লাখ টাকারও বেশি। আর ইকোনমিতে সাড়ে ছয় লাখ টাকা। ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ছোট করা হয়েছে। নেপালের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মহেশ্বর ঢাকাল বলেন, ফ্লাইট ভাড়া
ও আবাসনের খরচ এত বেশি, আমাদের দল ছোট করতে হয়েছে। কপ২৯-এ নেপাল পাঠিয়েছিল প্রায় ১০০ প্রতিনিধি, এবার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে সেই সংখ্যা ত্রিশের বেশি হবে না। পাকিস্তানের জ্যেষ্ঠ জলবায়ু সাংবাদিক মোহাম্মদ দাউদ খান বলেন, করাচি থেকে বেলেম যাওয়ার টিকিট এখন তিন হাজার ডলারের বেশি। এর সঙ্গে আবাসনের খরচ অন্তত আরও এক হাজার ডলার। কিছু বুকিং আগাম দিয়েও বাতিল হয়ে গেছে, আবার নতুন করে বেশি টাকা চাওয়া হচ্ছে। ফলে এবার ঘরে বসেই সম্মেলন দেখতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এনজিও ও সিভিল সোসাইটি সংগঠনও জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছে। দক্ষিণ এশিয়া ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্টস ফোরামের সেক্রেটারি কেরামত উল্লাহ বিপ্লব জানান, সাধারণত প্রতিবছর
বাংলাদেশ থেকে শতাধিক সাংবাদিক জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নেন। এবার সংখ্যা পঁচিশের বেশি হবে না। তিনি বলেন, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে অন্য সময়ে ঢাকা থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলো যাওয়া-আসা ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা। তবে এখন সাড়ে তিন লাখ টাকারও বেশি। আবার সাও পাওলো থেকে বেলেম পর্যন্ত ভাড়া লাখের ওপরে। অন্য এয়ারলাইন্সে ভাড়া ছয় লাখের মতো। এয়ারলাইন্সগুলো হঠাৎ করে ভাড়া বাড়িয়ে দিলেও কেউ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়নি। বেলেমের সঙ্গে সরাসরি আন্তর্জাতিক যোগাযোগও নেই। সেখানে পৌঁছাতে সাধারণত ব্রাজিলের সাও পাওলো হয়ে যেতে হয়, ফলে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোও পূর্ণ। ভাড়াও হয়েছে কয়েক গুণ। অক্টোবরের শুরু থেকেই হোটেল ভাড়া দুই থেকে তিন গুণ হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারাও বাড়ি ভাড়া দিচ্ছেন হাজার ডলারে। বাংলাদেশের একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঢাকা থেকে তিন হাজার ৫০০ ডলারের নিচে টিকিট নেই। যাত্রাপথে দীর্ঘ ট্রানজিট। এত কিছুর পরও হোটেল পেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সাও পাওলো থেকে বেলেম পর্যন্ত উড়োজাহাজের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে এবার জলবায়ু সম্মেলনে যেতে পারবেন না। সাও পাওলো থেকেই ফিরে আসতে হবে। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলো পর্যন্ত আমার যাওয়া-আসার টিকিট তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা পড়েছে। সাও পাওলো থেকে আবার বেলেম শুধু যেতেই লাগছে এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা। সাও পাওলো থেকে আবার বেলেম যাওয়ার জন্য অভ্যন্তরীণ বিমানের টিকিট মিলছে না। ফলে অনেকে সাও পাওলো গেলেও জলবায়ু সম্মেলনে যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, এবার জলবায়ু সম্মেলন শুরু থেকেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। আমাজন বনের গাছ কাটা পড়েছে সম্মেলনের অবকাঠামো তৈরির জন্য। এরপর উচ্চ খরচের কারণে দরিদ্র দেশগুলো বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এত দূরের বিমান ভ্রমণে প্রত্যেক যাত্রী এক হাজার ২০০ কেজি কার্বন দূষণ করবে। বেলেমে কপ৩০ আয়োজক শহর হিসেবে বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে প্রতীকী গুরুত্ব। আমাজন বন ও এর আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে জলবায়ু কূটনীতির কেন্দ্রে আনাই ছিল উদ্দেশ্য। শত শত আদিবাসী নেতা নদী পাড়ি দিয়ে সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। ব্রাজিল সরকারও জানাতে চায়– আমাজন শুধু তাদের সম্পদ নয়, পুরো পৃথিবীর ফুসফুস। সম্মেলনের আগে সাও পাওলো, রিও ও বেলেম শহরে চলছে তিন সপ্তাহজুড়ে জলবায়ু ইভেন্ট। যেখানে ব্যবসায়ী, গবেষক ও পরিবেশকর্মীরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও বন সংরক্ষণের বাস্তব সমাধান খুঁজছেন। জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে বাংলাদেশ পাঁচটি অগ্রাধিকারমূলক লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ২০৩৫ সালের মধ্যে বছরে ৩০০ বিলিয়ন ডলারের নতুন বৈশ্বিক জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে এবং দীর্ঘ প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের অর্থ দ্রুত দেওয়ার দাবি তুলছে। পাশাপাশি ২০২৬ সালের মধ্যে ক্ষয়ক্ষতির তহবিল সম্পূর্ণ কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছে, যাতে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো সরাসরি অর্থ পেতে পারে। অন্য অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে রয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে অভিযোজন অর্থায়ন দ্বিগুণ করা, ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তর নিশ্চিত করা, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার এবং গ্লোবাল স্টকটেক প্রক্রিয়ায় অর্থায়ন ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের বিষয়টি যুক্ত করা। ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায়বিচারে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত। তবে বিশ্বকে এখনই ন্যায্য অর্থায়ন ও অভিযোজন সহায়তা দিতে হবে। প্রতিশ্রুতির সময় শেষ, এখন দরকার বাস্তব পদক্ষেপ। প্যারিস চুক্তির এক দশক পেরিয়ে গেলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তব রূপ পায়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা কমছে, আর্থিক অঙ্গীকার ঝুলে আছে।



