পল্লবীর সাবরেজিস্ট্রার প্রদীপের অন্ধকার জীবন – ইউ এস বাংলা নিউজ




পল্লবীর সাবরেজিস্ট্রার প্রদীপের অন্ধকার জীবন

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৪:২৬ 8 ভিউ
ভূমি নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মধ্যে দুর্নীতি অনেকটাই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। সারাদেশের বেশিরভাগ সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে চলছে তুঘলকি কাণ্ড। রাজধানীর পল্লবী সাবরেজিস্ট্রি অফিসের সাবরেজিস্ট্রার প্রদীপ কুমার বিশ্বাস যেন অনেকেই ছাড়িয়ে। তিনি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত। প্রদীপ এক দলিলের জন্য ৩০ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তাকে এ কাজে সাহায্য করেন আরেক দোসর ও দলিল লেখক সমিতির সাবেক নেতা জুবায়ের আহমেদ। এই ঘুসের দরবারে পল্লবী সাবরেজিস্ট্রার অফিসের উমেদার জসিম ও রাজীবও জড়িত বলে জানা যায়। ৩০ লাখ টাকা ঘুসের বিষয়ে প্রদীপ জানান, তাদের বিক্রি করে কতজন খাচ্ছেন। জানা যায়, প্রদীপ এক দলিলে সই করতে ঘুস নিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। বাউনিয়া

মৌজার ১০ শতাংশ বাণিজ্যিক শ্রেণির জমি বোরো দেখিয়ে (শ্রেণি পরিবর্তন) রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার বিনিময়ে তিনি এই ঘুস নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার এ কাণ্ডে সরকার প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। ২৮ দিন আগের এ ঘুস কেলেঙ্কারির ঘটনা অতিসম্প্রতি ফাঁস হওয়ায় তেজগাঁওয়ের রেজিস্ট্রি কমপ্লেক্সজুড়ে চলছে তোলপাড়। এ ঘটনার তদন্তসাপেক্ষে প্রদীপ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) টিম অভিযান চালালে সরকারের ক্ষতি হওয়া রাজস্ব আদায় করা সম্ভব বলেও জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, ২৯ ডিসেম্বর পল্লবী রেজিস্ট্রি অফিসে বাউনিয়া মৌজার ১০ শতাংশ জায়গার সাফ কবলা রেজিস্ট্রি দলিল

হয়। ৩০ ডিসেম্বর কমিশনে দলিল (নম্বর ১০৫৯৮) সম্পাদন করেন প্রদীপ। কমিশনে দলিল সম্পন্ন করার কাজে গিয়েছিলেন উমেদার মোসলেম উদ্দিন। দলিলের দাতা হিসাবে নুর হোম বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল ইসলাম গংয়ের নাম রয়েছে। আর তিন গ্রহীতা হলেন-মো. মনির হোসেন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও মো. আশরাফুল ইসলাম। জানতে চাইলে প্রদীপ বলেন, ‘কাগজে বাণিজ্যিক লেখা থাকলে তা যদি না করা হয়, তাহলে বকেয়া আদায়ের ব্যবস্থা করা হবে। যদি এমন দেখা যায়, নাল ব্র্যাকেটে বাণিজ্যিক লেখা আছে, তাহলে আমাদের ব্র্যাকেট দেখার সুযোগ নেই।’ ৩০ লাখ টাকা ঘুস নিয়ে বাণিজ্যিক জায়গা বোরো দেখিয়ে রেজিস্ট্রি করার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিষয়ে কতজন কতকিছু বলে, আবার আমাদের

বিক্রি করে কতজন খাচ্ছে, কত কিছু করছে। আমার এ ধরনের কোনো সুযোগ নেই।’ জানা যায়, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর প্রদীপ এই জমির বাণিজ্যিক শ্রেণির পরিবর্তে বোরো হিসাবে রেজিস্ট্রি করার জন্য দেনদরবার শুরু করেন গত ডিসেম্বরের শুরুর দিকে। ডিসেম্বরের শেষে দলিল লেখক সমিতির সাবেক নেতা ও আরেক দোসর জুবায়ের আহমেদের মধ্যস্থতায় ৩০ লাখ টাকা ঘুসের চুক্তিতে দলিল রেজিস্ট্রি সম্পন্ন হয়। এই ঘুসের দরবারে পল্লবী সাবরেজিস্ট্রার অফিসের উমেদার জসিম ও রাজীবও জড়িত। জানতে চাইলে ঘুস লেনদেনের কথা অস্বীকার করে জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘জমির শ্রেণি পুকুর (বাণিজ্যিক) লেখা আছে। বোরো হিসাবে রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। এখন এনবিআর ধরলে গ্রহীতারা রাজস্বের বাকি অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেবে। এটা

আমাদের কোনো বিষয় না। আমরা এই দলিল করার জন্য বাড়তি কোনো টাকা নিইনি।’ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাউনিয়া মৌজার বাণিজ্যিক শ্রেণির প্রতি শতাংশ জায়গার সরকার নির্ধারিত মূল্য ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার ৩৭১ টাকা। এ হিসাবে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ জায়গার দাম আসে ৫ কোটি ২৫ লাখ ৩৩ হাজার ৬২৭ টাকা। এই দামে দলিল রেজিস্ট্রি করা হলে ১% রেজিস্ট্রি ফি, ১.৫% স্ট্যাম্প, ২% স্থানীয় কর, মুনাফার ওপর কর ৮%, এআইটি ৫% ও ২% ভ্যাট মিলিয়ে সরকারি রাজস্বের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। কিন্তু বাণিজ্যিক শ্রেণি পরিবর্তন করে বোরো দেখিয়ে মাত্র ২৪ লাখ ৪০ হাজার টাকার দলিল

রেজিস্ট্রি করায় সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১০ লাখ টাকার কিছু বেশি। এ হিসাবে সরকার অন্তত ৯২ লাখ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে। বিনিময়ে প্রদীপ বিশ্বাস ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন দেখা যায়, বাউনিয়া-ভাষানটেক প্রধান সড়কসংলগ্ন টিনশেড পাকা বাণিজ্যিক স্থাপনার ওপর সাইনবোর্ডে লেখা এই সম্পত্তির ক্রয়সূত্রে মালিক-জিএমআর ডেভেলপমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মনির হোসেন, ইনটেনসিটি প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম ও নূর পলিমার ইন্ডাস্ট্রির স্বত্বাধিকারী মো. আশরাফুল ইসলাম। জেলা-ঢাকা, থানা-পল্লবী, মৌজা-বাউনিয়া। সাইনবোর্ডে জমির তফশিলের বিবরণও দেওয়া আছে। স্থাপনার সামনে ফুটপাতে ভ্যানে কলা বিক্রি করছিলেন রমিজ উদ্দিন নামের এক বৃদ্ধ। আলাপকালে তিনি বলেন, একসময় এ এলাকা ডোবা ছিল। তেমন

বসতিও ছিল না। এখন এগুলো সব বাণিজ্যিক প্লট। প্রতি কাঠার দাম কোটি টাকা। পরিচয় গোপন করে জমির ক্রেতা সেজে তিন মালিকের একজন আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ করেছেন এ প্রতিবেদক। আলাপকালে বাণিজ্যিক শ্রেণির জমি বোরো হিসাবে রেজিস্ট্রি করতে সাবরেজিস্ট্রারকে ঘুস দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন তিনি। তবে ঘুসের অঙ্ক প্রকাশ করতে চাননি। আলাপকালে তিনি বলেন, সাবরেজিস্ট্রার অফিসে সবাই টাকা দিয়েই কাজ করে। কে টাকা ছাড়া কাজ করতে পারে। টাকা না দিলে ভালো জমিনও প্যাঁচ লাগায় দিবে। তখন আপনি টাকা দিতে বাধ্য। এটা স্বাভাবিক। পল্লবীর বর্তমান সাবরেজিস্ট্রার প্রদীপ সাহেবের বাড়ি গোপালগঞ্জ। তারপরও এখনো কীভাবে এখানে টিকে আছেন, তা আমার মাথায় কাজ করে না। আমাদের বাড়তি খরচ যেটা গেছে, তা দিতে পারছি। এতে অতটা মনখারাপ হয়নি। কারণ, যে ঘোড়া কিনবে তার লাগাম কেনার টাকাও থাকতে হবে।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশের সাথে পাঙ্গা নিতে গিয়ে মহা বিপদে মোদি-মমতা! ‘আট বছরের বন্দিজীবনে আমি কখনও প্রধানমন্ত্রীর নিকট কোন আবেদন করিনি’ ট্রাম্পের সঙ্গ তর্ক করে চাকরি ছাড়লেন সাংবাদিক মাফলারকে নিউজ আইটেম করায় প্রেস সচিবের বিদ্রুপ! ভোটের রাজনীতি : বিএনপির সামনে তিন দশকের মিত্র জামায়াতের চ্যালেঞ্জ? ধ্বংসের ৮৯ সেকেন্ড দূরে পৃথিবী! বাড়তে পারে রান্নার গ্যাসের দাম! জীবনে কি কাজ করেছেন, মানুষের কেন আপনাকে নিয়ে এত মাতামাতি? ছাত্রলীগের ঘোষিত কর্মসূচির প্রতিবাদে মধ্যরাতে উত্তাল যবিপ্রবি ট্রাম্পের একের পর এক স্থগিতাদেশ, জেগে উঠছে আমেরিকানরা? কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু ট্রেন চালু হলেও ভোগাচ্ছে শিডিউল বিপর্যয় কর্মবিরতিতে কমলাপুর স্টেশনে সোয়া কোটি টাকার ক্ষতি ইজতেমায় আগের চেয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে: আইজিপি প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ২ বছরের কারাদণ্ড আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা : আপিল শুনানি ২৬ ফেব্রুয়ারি তিন বিভাগীয় কমিশনারসহ ৮ জনকে হাইকোর্টে তলব পুলিশি বর্বরতায় সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল: এইচআরডব্লিউ সৌদি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বাতিল, নতুন ঠিকানায় নেইমার অভিবাসী ফেরত না নেওয়ায় কলম্বিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ট্রাম্পের