নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে সদ্য ঘটে যাওয়া জাহাজ চুরির ঘটনা দেশবাসীকে আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে বিএনপির আসল চেহারা কেমন। ভাড়ায় নেয়া মালবাহী জাহাজ কেটে বিক্রি করে দেয়ার এই ঘটনায় জড়িত সাবেক ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেনের কীর্তিকলাপ প্রমাণ করে যে বিএনপি নামের এই রাজনৈতিক দলটি আসলে একটি সংগঠিত অপরাধী চক্র ছাড়া আর কিছুই নয়। চট্টগ্রাম থেকে মাসিক সাত লাখ বিশ হাজার টাকায় ভাড়া নেয়া জাহাজটিকে পণ্য পরিবহনের বদলে সরাসরি শীপইয়ার্ডে নিয়ে কেটে ফেলা এবং তার লোহার প্লেট বিক্রি করে দেয়ার এই ঘটনা নিছক একটি বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়। এটি বিএনপির গভীরে প্রোথিত দুর্নীতি আর লুটপাটের সংস্কৃতির প্রকাশ মাত্র। জাহাজের মালিকের প্রায় এক কোটি ষাট লাখ

টাকার ক্ষতি করে এই অপরাধীচক্র যেভাবে নির্দ্বিধায় অন্যের সম্পত্তি লুট করেছে, তা দেখলে বোঝা যায় এরা কতটা নির্লজ্জ হতে পারে। আরও লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই অপরাধে জড়িত সাবেক ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেনের বাবা রফিকুল ইসলাম নিজেই সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। অর্থাৎ এটি একটি পারিবারিক ব্যবসা, যেখানে বাপ-বেটা মিলে দলের ছত্রছায়ায় অবৈধ কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। শীপইয়ার্ডটি যেহেতু শাহাদাতের পারিবারিক মালিকানাধীন, সেহেতু পুরো পরিকল্পনাটি ছিল সুচিন্তিত এবং সুসংগঠিত। এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত করার জন্য প্রয়োজন হয় ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক আশ্রয় এবং স্থানীয় প্রশাসনকে পাশ কাটানোর সামর্থ্য। বিএনপি নেতাকর্মীরা এসবই ধারণ করে থাকে। বিএনপির ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, এই দলটি যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই দেশে

দুর্নীতি আর লুটপাটের মহোৎসব শুরু হয়েছে। হাওয়া ভবন থেকে পরিচালিত সমান্তরাল সরকার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মাদক চোরাচালান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন পর্যন্ত সব কিছুতেই বিএনপির নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার অসংখ্য নজির রয়েছে। সেনাবাহিনীর মদদে জন্ম নেয়া এই দলটি কখনোই গণতান্ত্রিক চর্চায় বিশ্বাসী ছিল না। তাদের মূল লক্ষ্য সবসময়ই ছিল ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের এবং দলীয় লোকজনের পকেট ভারী করা। নারায়ণগঞ্জের এই ঘটনায় যেভাবে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিলেমিশে অপরাধ সংঘটিত করেছে, তা দেখায় যে এদের মধ্যে সাংগঠনিকভাবে অপরাধ করার একটা সুদৃঢ় নেটওয়ার্ক রয়েছে। মামলায় সাতজন আসামি করা হলেও এর পেছনে আরও অনেকেই জড়িত বলে ধারণা করা যায়।

জাহাজ কাটার মতো একটি বড় কাজ ১৫ দিন ধরে চলতে থাকা এবং তা কারো নজরে না পড়া কিংবা প্রশাসনের টনক না নড়া প্রমাণ করে যে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই ঘটনার তাৎপর্য আরও বেশি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করার পর বিএনপি এবং তাদের মদদদাতারা যেভাবে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করছে, তা উদ্বেগজনক। নারায়ণগঞ্জের এই ঘটনা তারই একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ মাত্র। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এরকম অগণিত ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন, যার বেশিরভাগই আলোর মুখ দেখে না। ছাত্রদল নেতা শাহাদাত হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার বিষয়টিও প্রমাণ করে যে এরা অপরাধ করার

পর পালিয়ে যাওয়ার পথ আগে থেকেই তৈরি রেখেছিল। অপরাধীদের এই ধরনের আত্মবিশ্বাস আসে যখন তারা জানে যে রাজনৈতিক আশ্রয় তাদের রক্ষা করবে। বিএনপির নেতাকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে এই আশ্রয়ের সুবিধা ভোগ করে আসছে এবং সেই কারণেই তারা এত সাহসের সঙ্গে এমন জঘন্য অপরাধ করতে পারে। যে দল নিজেদের গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী হিসেবে দাবি করে, সেই দলের নেতাকর্মীরা যখন এভাবে সাধারণ মানুষের সম্পত্তি লুট করে, তখন প্রশ্ন জাগে তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আসলে কী। বিএনপির কাছে গণতন্ত্র মানে সম্ভবত নিজেদের এবং দলীয় লোকজনের লুটপাটের স্বাধীনতা। জনগণের অধিকার, আইনের শাসন কিংবা ন্যায়বিচার এসব বিষয় তাদের রাজনীতিতে কোনো স্থান পায় না। বিশেষত উদ্বেগের বিষয় হলো, যে উপায়ে বর্তমান

অবৈধ সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাতে বিদেশি প্রভু, জঙ্গিবাদী শক্তি এবং সামরিক মদদের বিষয়টি স্পষ্ট। জুলাই মাসে যে দাঙ্গা বাঁধিয়ে একটি নির্বাচিত সরকারকে অবৈধভাবে হটিয়ে দেয়া হয়েছিল, তার পেছনে এই তিন শক্তির সমন্বিত প্রচেষ্টা ছিল। আর সেই ক্যু-এর মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার পৃষ্ঠপোষক বিএনপি এখন দেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে যেখানে আইনের শাসন বলে কিছু থাকবে না, থাকবে শুধু জোর যার মুল্লুক তার নীতি। নারায়ণগঞ্জের এই ঘটনা তাই নিছক একটি সাধারণ চুরির ঘটনা নয়। এটি একটি রাজনৈতিক দলের নৈতিক অধঃপতন এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ চিত্রের প্রতিফলন। যে দেশে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে অপরাধ করতে পারে

এবং পার পেয়ে যায়, সেই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। বিএনপির এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নতুন কিছু নয়, তবে প্রতিবার তারা নতুন নতুন উপায়ে দেশবাসীকে চমকে দেয়। জাহাজের মালিক রাকেশ শর্মা যখন নিজের চোখে দেখলেন তার জাহাজ কাটা অবস্থায় পড়ে আছে, তখন তার অনুভূতি কেমন ছিল তা সহজেই অনুমেয়। একজন সাধারণ ব্যবসায়ী, যিনি বৈধ পথে তার ব্যবসা চালাচ্ছিলেন, তাকে এভাবে প্রতারণার শিকার হতে হলো শুধুমাত্র কারণ অপরাধীদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এটি প্রমাণ করে যে বিএনপির শাসনে সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা কতটা অনিরাপদ। যে দল দাবি করে তারা দেশের গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়াই করছে, সেই দলের নেতাকর্মীরা যখন এভাবে সাধারণ মানুষের সম্পদ লুট করে, তখন তাদের দাবির কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না। বিএনপির রাজনীতি কখনোই জনগণের কল্যাণের জন্য ছিল না, এটি সবসময়ই ছিল নিজেদের এবং দলীয় লোকজনের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার। নারায়ণগঞ্জের এই ঘটনা সেই সত্যকে আরেকবার প্রতিষ্ঠিত করেছে।