ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
চট্টগ্রামে সংগঠিত হচ্ছে খুুনিরা!
চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যার মদদদাতা পতিত স্বৈরাচারী হাসিনার ফ্যাসিবাদি শাসনের অন্যতম দোসর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী স্বঘোষিত ইসকন সদস্য মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও তার সহযোগীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কয়েকজন ধরা পড়লেও ছাত্র-জনতার উপর প্রকাশ্যে গুলি বর্ষণকারীদের বেশির ভাগই অধরা। তাদের অস্ত্র ভান্ডারও অক্ষত থেকে গেছে।
আর এই সুযোগে তারা ফের সংগঠিত হচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নেপথ্যে থেকে বাহিনীর সদস্যদের সংগঠিত হতে সহযোগীতা করছেন নওফেল নিজে। পলাতক অবস্থায় তথা গর্তে থেকে তারা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সরকারবিরোধী উস্কানিমূলক পোস্ট দিয়ে তারা নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে। নগরীর হাজারি গলিতে যৌথবাহিনীর উপর ভয়ঙ্কর
অ্যাসিড হামলায়ও এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে এসেছে। এই অপরাধী চক্রটি নগরীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে। তবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তড়িৎ পদক্ষেপে সেই চক্রান্ত নস্যাৎ হয়। এরপরও তারা হাল ছাড়েনি, এখন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুজব আর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সরকার বিরোধী অপতৎপরতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানের আড়ালে তারা মিলিত হচ্ছে। তাদের গোপন বৈঠকের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এই বাহিনীর সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হলে তারা ফের ঘুরে দাঁড়িয়ে নাশকতামূলক কর্মকা- করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। জুলাই বিপ্লবে চট্টগ্রামে ১১ জন শহীদ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ
আহত হন কয়েকশ ছাত্রজনতা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় সরাসরি মদত দিয়েছেন নফেল। রাজপথে হত্যাকা-ে নেতৃত্ব দেন ভয়ঙ্কর যুবলীগ ক্যাডার হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। এই শীর্ষ সন্ত্রাসী ছাত্র-জনতার সমাবেশে হামলার জন্য গাড়ি ভর্তি করে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যান তার নন্দনকাননের বাসা থেকে। তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও যুবলীগ ক্যাডার নুরুল আজিম রনি। তার অনুগত সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গুলি করে পাখির মতো ছাত্র হত্যা করে। নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার সমাবেশে তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে গুলি করেছে, নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই তারা এই নারকীয় হত্যাকা- চালায়। ৩ আগস্ট রাতে তারা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করেন। এসব সন্ত্রাসী হামলার পর তারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে হামলার দায় স্বীকার করে এই ধরনের হামলা অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন। খুনি হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত এসব সন্ত্রাসীরা রাজপথে সশস্ত্র অবস্থায় ছিল। ৪ আগস্ট নওফেলের বাহিনীর সাথে চট্টগ্রামসহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্যাডারেরাও যোগ দেয়। রক্তাক্ত বিপ্লবের পর হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এসব ক্যাডারেরা পালাতে শুরু করে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী
লীগের দুটি ধারা। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন নওফেল-অপরটির নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হতেই নওফেলের অনুসরারিরা প্রকাশ্যে ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতা শুরু করে। নওফেলের নির্দেশে তারা ছাত্র আন্দোলন দমাতে সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে তার বিপরীত অবস্থানে ছিলেন আ জ ম নাছিরের অনুসারিরা। তারা রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার পথ অনুসরণ করেন। নওফেলের ক্যাডারেরা সরাসরি ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে। তাদের সাথে মাঠে নামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একাংশ-যারা নওফেলের অনুসারি হিসাবে পরিচিত। ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি অংশ নেন নওফেলের অনুসারি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তাফা টিনু, এসরারুল হক, ওয়াসিম উদ্দিন, আবুল হাসনাত বেলাল, আবদুস সবুর লিটন, মোবারক আলীসহ অনেকে। আওয়ামী লীগের সাড়ে পনের বছরের
শাসনে এসব সন্ত্রাসীরা নগরীতে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ সব ধরনের অপরাধে জড়িত ছিলো। নগরীতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পুলিশের নিয়োগ বদলি থেকে পদায়ন সবকিছু ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। নওফেলকে ঘিরে ভয়ঙ্কর এক অপরাধ জগত তৈরী করে তারা। আর এই কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকিয়ে হাসিনার মাফিয়া শাসন টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে তারা মাঠে নামে। ফ্যাসিবাদি হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা ছিল এসব খুনিরা ধরা পড়বে। কিন্তু সরকার পতনের তিন মাস পরেও তাদের অনেকেই ধরা পড়েনি। কোটা আন্দোলন ঘিরে হামলার ঘটনায় সহিংসতায় নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই আত্মগোপনে। তাদের অবস্থান জানেন না কেউ। পুলিশ বলছে- বর্তমানে কেউ নিজ বাসাবাড়িতে অবস্থান করছেন
না। পরিচিত নিকটাত্মীয়ের বাসায়ও তারা নেই। ছাত্র সমাবেশে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে অন্তত ১০ গুলিবর্ষণকারীর ছবি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের প্রায় সবাইকে শনাক্তও করতে পেরেছিল পুলিশ। তাদের বেশির ভাগই এখনও ধরা পড়েনি। শিক্ষার্থীরা জানান, চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার প্রাণহানির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী নওফেল ও তার বাহিনীর সদস্য নুরুল আজিম রনি ও হেলাল আকবর বাবর। আবার তাদের মধ্যে রনি ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে শুরু থেকে সরব ছিলেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগকেই শিবির আখ্যা দিয়ে নানা প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য করেন। মুখোমুখি হয়ে দমনের আহ্বান করেন। আন্দোলনকারীদের শায়েস্তার হুমকিও দেন। তার নির্দেশে ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা ছাত্রদের উপর চোরাগোপ্তা হামলাও চালায়। ৪ আগস্ট আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন রাজপথে নেমে আসে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী, তাদের অভিভাবকসহ সর্বস্তরের জনতা। ওইদিন রাজপথে শক্তি প্রয়োগ করে নগর আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনও ছাত্র আন্দোলন দমনে মাঠে নামে। ছাত্র হত্যা ও সহিংসতায় জড়িত বাবর ও রনি দুজনেই পুলিশ ও র্যাবের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। বিশেষ করে বাবর রেলের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের জন্য আলোচিত। রেলের কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে নিয়ন্ত্রণের জেরে ২০১৩ সালের ২৪ জুন বাবর এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে হয়। এতে এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়। এই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাবরের বিরুদ্ধে রাউজানের আকবর-মুরাদ হত্যা, বিএনপিকর্মী আজাদ হত্যা, মির্জা লেনে ডাবল মার্ডার, সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আশিককে গোলপাহাড় মোড়ে হত্যা, তামাকুমুন্ড লেনে রাসেল হত্যা, এমইএস কলেজ থেকে ফরিদ নামের একজনকে ডেকে নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেটে হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী অসীম রায় বাবু নিহত হওয়ার পরই দুবাই চলে যান বাবর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৯ সালের ২ মে রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী খুন হলে বাবর আবার দুবাই চলে যান। নওফেলের ছায়ায় কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে আবার রাজনীতি শুরু করেন এই খুনি। বাবর এখন দেশে না বিদেশে তা জানে না পুলিশ। রনিও চট্টগ্রামের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচত। ২০১৬ সালের ৭ মে হাটহাজারির মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে অস্ত্র, গুলি ও ব্যালট পেপারে ব্যবহৃত সিলসহ রনিকে আটক করে বিজিবি। তার বিরুদ্ধে কলেজের প্রিন্সিপাল ও কোচিং সেন্টারের পরিচালককে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে নগরীতের একাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে উঠে। ছাত্র হত্যায় অভিযুক্ত এই সন্ত্রাসী এখন ফেইস বুকে সক্রিয়। অজ্ঞাত স্থান থেকে সরকার বিরোধী পোস্ট দিচ্ছে সে। হাসিনা পালানোর পর ‘যে যার অবস্থান থেকে পালাও’ পোস্ট দিয়ে পালিয়ে যান রনি। এখন আবার গর্ত থেকে ফেসবুকে সক্রিয় হয়েছে এ সন্ত্রাসী। জানা গেছে, দীর্ঘদিন গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হওয়ায় এসব সন্ত্রাসীরা ফের সংগঠিত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের মধ্যে গোপন বৈঠকও করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে সরকার বিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে, বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
অ্যাসিড হামলায়ও এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কাছে এসেছে। এই অপরাধী চক্রটি নগরীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে। তবে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তড়িৎ পদক্ষেপে সেই চক্রান্ত নস্যাৎ হয়। এরপরও তারা হাল ছাড়েনি, এখন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুজব আর বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সরকার বিরোধী অপতৎপরতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানের আড়ালে তারা মিলিত হচ্ছে। তাদের গোপন বৈঠকের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এই বাহিনীর সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা না হলে তারা ফের ঘুরে দাঁড়িয়ে নাশকতামূলক কর্মকা- করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। জুলাই বিপ্লবে চট্টগ্রামে ১১ জন শহীদ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধসহ
আহত হন কয়েকশ ছাত্রজনতা। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলায় সরাসরি মদত দিয়েছেন নফেল। রাজপথে হত্যাকা-ে নেতৃত্ব দেন ভয়ঙ্কর যুবলীগ ক্যাডার হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। এই শীর্ষ সন্ত্রাসী ছাত্র-জনতার সমাবেশে হামলার জন্য গাড়ি ভর্তি করে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যান তার নন্দনকাননের বাসা থেকে। তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও যুবলীগ ক্যাডার নুরুল আজিম রনি। তার অনুগত সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গুলি করে পাখির মতো ছাত্র হত্যা করে। নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় ছাত্র-জনতার সমাবেশে তারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে গুলি করেছে, নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই তারা এই নারকীয় হত্যাকা- চালায়। ৩ আগস্ট রাতে তারা
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি বর্তমান সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করেন। এসব সন্ত্রাসী হামলার পর তারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ক্যামেরার সামনে হামলার দায় স্বীকার করে এই ধরনের হামলা অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন। খুনি হাসিনার পতনের আগ পর্যন্ত এসব সন্ত্রাসীরা রাজপথে সশস্ত্র অবস্থায় ছিল। ৪ আগস্ট নওফেলের বাহিনীর সাথে চট্টগ্রামসহ এই অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ক্যাডারেরাও যোগ দেয়। রক্তাক্ত বিপ্লবের পর হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর এসব ক্যাডারেরা পালাতে শুরু করে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী
লীগের দুটি ধারা। একটির নেতৃত্বে রয়েছেন নওফেল-অপরটির নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হতেই নওফেলের অনুসরারিরা প্রকাশ্যে ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীতা শুরু করে। নওফেলের নির্দেশে তারা ছাত্র আন্দোলন দমাতে সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়। অন্যদিকে তার বিপরীত অবস্থানে ছিলেন আ জ ম নাছিরের অনুসারিরা। তারা রাজনৈতিকভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলার পথ অনুসরণ করেন। নওফেলের ক্যাডারেরা সরাসরি ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে। তাদের সাথে মাঠে নামে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একাংশ-যারা নওফেলের অনুসারি হিসাবে পরিচিত। ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি অংশ নেন নওফেলের অনুসারি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর মোস্তাফা টিনু, এসরারুল হক, ওয়াসিম উদ্দিন, আবুল হাসনাত বেলাল, আবদুস সবুর লিটন, মোবারক আলীসহ অনেকে। আওয়ামী লীগের সাড়ে পনের বছরের
শাসনে এসব সন্ত্রাসীরা নগরীতে অস্ত্রবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে অস্ত্র ও মাদক ব্যবসাসহ সব ধরনের অপরাধে জড়িত ছিলো। নগরীতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পুলিশের নিয়োগ বদলি থেকে পদায়ন সবকিছু ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণে। নওফেলকে ঘিরে ভয়ঙ্কর এক অপরাধ জগত তৈরী করে তারা। আর এই কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকিয়ে হাসিনার মাফিয়া শাসন টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে তারা মাঠে নামে। ফ্যাসিবাদি হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা ছিল এসব খুনিরা ধরা পড়বে। কিন্তু সরকার পতনের তিন মাস পরেও তাদের অনেকেই ধরা পড়েনি। কোটা আন্দোলন ঘিরে হামলার ঘটনায় সহিংসতায় নেতৃত্ব দেওয়া অনেকেই আত্মগোপনে। তাদের অবস্থান জানেন না কেউ। পুলিশ বলছে- বর্তমানে কেউ নিজ বাসাবাড়িতে অবস্থান করছেন
না। পরিচিত নিকটাত্মীয়ের বাসায়ও তারা নেই। ছাত্র সমাবেশে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে অন্তত ১০ গুলিবর্ষণকারীর ছবি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের প্রায় সবাইকে শনাক্তও করতে পেরেছিল পুলিশ। তাদের বেশির ভাগই এখনও ধরা পড়েনি। শিক্ষার্থীরা জানান, চট্টগ্রামে ছাত্র-জনতার প্রাণহানির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী নওফেল ও তার বাহিনীর সদস্য নুরুল আজিম রনি ও হেলাল আকবর বাবর। আবার তাদের মধ্যে রনি ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে শুরু থেকে সরব ছিলেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগকেই শিবির আখ্যা দিয়ে নানা প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য করেন। মুখোমুখি হয়ে দমনের আহ্বান করেন। আন্দোলনকারীদের শায়েস্তার হুমকিও দেন। তার নির্দেশে ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা ছাত্রদের উপর চোরাগোপ্তা হামলাও চালায়। ৪ আগস্ট আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখন রাজপথে নেমে আসে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী, তাদের অভিভাবকসহ সর্বস্তরের জনতা। ওইদিন রাজপথে শক্তি প্রয়োগ করে নগর আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনও ছাত্র আন্দোলন দমনে মাঠে নামে। ছাত্র হত্যা ও সহিংসতায় জড়িত বাবর ও রনি দুজনেই পুলিশ ও র্যাবের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। বিশেষ করে বাবর রেলের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণের জন্য আলোচিত। রেলের কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে নিয়ন্ত্রণের জেরে ২০১৩ সালের ২৪ জুন বাবর এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে হয়। এতে এক শিশুসহ দুজন নিহত হয়। এই মামলায় চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বাবরের বিরুদ্ধে রাউজানের আকবর-মুরাদ হত্যা, বিএনপিকর্মী আজাদ হত্যা, মির্জা লেনে ডাবল মার্ডার, সিটি কলেজ ছাত্রলীগ নেতা আশিককে গোলপাহাড় মোড়ে হত্যা, তামাকুমুন্ড লেনে রাসেল হত্যা, এমইএস কলেজ থেকে ফরিদ নামের একজনকে ডেকে নিয়ে ষোলশহর ২ নম্বর গেটে হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্ত্রাসী অসীম রায় বাবু নিহত হওয়ার পরই দুবাই চলে যান বাবর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে ফিরে আসেন। ২০১৯ সালের ২ মে রাতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী খুন হলে বাবর আবার দুবাই চলে যান। নওফেলের ছায়ায় কয়েক বছর আগে দেশে ফিরে আবার রাজনীতি শুরু করেন এই খুনি। বাবর এখন দেশে না বিদেশে তা জানে না পুলিশ। রনিও চট্টগ্রামের ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী হিসাবে পরিচত। ২০১৬ সালের ৭ মে হাটহাজারির মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একটি কেন্দ্রে অস্ত্র, গুলি ও ব্যালট পেপারে ব্যবহৃত সিলসহ রনিকে আটক করে বিজিবি। তার বিরুদ্ধে কলেজের প্রিন্সিপাল ও কোচিং সেন্টারের পরিচালককে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে নগরীতের একাধিক কিশোর গ্যাং গড়ে উঠে। ছাত্র হত্যায় অভিযুক্ত এই সন্ত্রাসী এখন ফেইস বুকে সক্রিয়। অজ্ঞাত স্থান থেকে সরকার বিরোধী পোস্ট দিচ্ছে সে। হাসিনা পালানোর পর ‘যে যার অবস্থান থেকে পালাও’ পোস্ট দিয়ে পালিয়ে যান রনি। এখন আবার গর্ত থেকে ফেসবুকে সক্রিয় হয়েছে এ সন্ত্রাসী। জানা গেছে, দীর্ঘদিন গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হওয়ায় এসব সন্ত্রাসীরা ফের সংগঠিত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের মধ্যে গোপন বৈঠকও করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ খুলে সরকার বিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। নগর পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ছাত্র হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে, বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।