কারাবন্দীদের উপর নির্যাতন: সংবিধান ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন

গত বছরের আগস্ট থেকে একটি অসংবিধান সরকারের অধীনে মব সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ মদদে বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী ও সখ্যালঘুদের উপর অপরিসীম অত্যাচারের সাথে বাংলাদেশে কারাগারগুলোতে নির্যাতন এবং বন্দীদের প্রতি অবহেলার বিষয়টি একটি গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারাগারে কয়েদিদের প্রতি আচরণ এবং সামগ্রিকভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে নির্যাতনের অভিযোগ মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি ভয়াবহ চিত্র। সংবিধান ও আইন দ্বারা নির্যাতন নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও, বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। কারাবন্দীদের উপর যে নির্যাতন চালানো হচ্ছে তা সংবিধান, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
সম্প্রতি কারাবন্দী অবস্থায় সাবেক শিল্পমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান
রাজনীতিবিদ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের মৃত্যু রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা একজন নাগরিকের প্রতি অবহেলার চিত্র তুলে ধরে। তিনি দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংগঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে নরসিংদীতে হত্যা, আক্রমণ ও ভাঙচুর মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন এবং তখন থেকে কারাগারে ছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের স্বজনরা দাবী করেছেন তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে মুমুর্ষ অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরেও তাঁকে হাতকড়া পড়িয়ে রাখা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের কারাবন্দী অবস্থায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে
মৃত্যু এবং মারা যাবার পরেও তাঁকে হাতকড়া পড়িয়ে অসম্মানজনক অবস্থায় রাখার ঘটনাটি বর্তমান সময়ে সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো, সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমগুলো তুলে ধরেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১ (দ্বিতীয় ভাগ: রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি) হলো একটি মৌলিক ঘোষণা, যা রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি স্থাপন করে। এতে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, যেখানে আইন, মৌলিক অধিকার, সমতা, স্বাধীনতা ও মানব মর্যাদার নিশ্চয়তা থাকবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা থাকবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে এবং এর ভিত্তি হবে মানব মর্যাদা (human dignity) ও মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা। মানব মর্যাদা অর্থ হলো প্রত্যেক নাগরিককে সমান সম্মান দেওয়া। তাকে
শুধু নাগরিক হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে সম্মানিত করা এবং তার অধিকারকে রক্ষা করা। অর্থাৎ এই নীতি নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্র সকল নাগরিককে সমান চোখে দেখবে এবং কোনো অবস্থাতেই কারো প্রতি এমন আচরণ করা হবে না যা তার মনুষ্যত্বকে অপমান করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর, অমানবিক, লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও দণ্ড মৌলিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না“। ১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ অথবা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের
কার্যকারিতা প্রদানের একটি সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে; এবং ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত দলিলের মাধ্যমে উক্ত সনদে বাংলাদেশও অংশীদার হয়েছে এবং এ বিষয়ে আইন প্রণীত হয়েছে। কারাগারের ব্যবস্থাপনা ও বন্দীদের অধিকার নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মানা হয়, যা বাংলাদেশ মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এর মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা রুলস ২০১৫ (Nelson Mandela Rules 2015) অন্যতম। এটি মূলত বন্দীদের প্রতি মানবিক, মর্যাদাপূর্ণ ও অধিকারভিত্তিক আচরণ নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। এই মানদণ্ডের মাধ্যমেঃ ১) প্রতিটি বন্দিকে সম্মানের সঙ্গে আচরণ করতে হবে; ২) নির্যাতন, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ একেবারেই নিষিদ্ধ; ৩) বন্দীদের স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ নাগরিকের সমমান হতে হবে; ৪) হাতকড়া বা শৃঙ্খল কেবলমাত্র নিরাপত্তাজনিত
প্রয়োজনে, সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে—শাস্তি বা অপমান হিসেবে নয় (Rule 47–48); ৫) বন্দীদের আইনি সহায়তা ও অভিযোগ জানানোর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; ৫) কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, বন্দীদের সমাজে পুনঃএকীভূত করার প্রক্রিয়াও নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের (Convention Against Torture- UNCAT) সদস্য রাষ্ট্র। এই কনভেনশন অনুযায়ী, রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর আইনি, প্রশাসনিক, বিচারিক বা অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে। হেফাজতে নির্যাতন বা মৃত্যুর প্রতিটি অভিযোগের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা রাষ্ট্রের আইনি বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি (The International Covenant on Civil and Political Rights, ICCPR)’র
স্বাক্ষরকারী। এই চুক্তির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ নির্যাতন, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর ব্যবহার বা শাস্তিকে নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া, ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত সকল ব্যক্তিকে মানবিকতার সাথে এবং ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ব্যবহার করতে হবে। একজন বয়স্ক ও অসুস্থ সাবেক মন্ত্রী কারাবন্দী অবস্থায় কেন প্রয়োজনীয় ও দ্রুততম চিকিৎসা পাননি, বা তার শারীরিক অবস্থার অবনতি কেন হলো—এই প্রশ্নগুলো গুরুতর অবহেলা এবং কারাগারে বন্দীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষত রাজনৈতিক কারনের বন্দীদের প্রতি একপ্রকার নির্যাতন ও নির্মম অবহেলা নির্দেশ করে। যেখানে সকল বন্দীর জীবন ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সেখানে এই মৃত্যু কারাগারে বন্দীদের প্রতি রাষ্ট্রের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় । এই মৃত্যু গুরুতর ‘হেফাজতে অবহেলা’ (Custodial Negligence) ইঙ্গিত করে। একজন বন্দীর সুচিকিৎসা প্রাপ্তির অধিকার রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা অবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। রাষ্ট্রের হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে, সেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অবহেলার কারণ খুঁজে বের করা এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। তাছাড়া হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে অসুস্থ, মুমুর্ষ অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরেও হাতকড়া পড়িয়ে রেখে কারা কর্তৃপক্ষ সাংবিধানিক, বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কারাবন্দীর ডিগ্নিটিকে খর্ব করেছে। এই মৃত্যু ও অমানবিক, নিষ্ঠুর ও অপমানজনক ঘটনা প্রমান করছে অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সকল অঙ্গীকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই সকল প্রকার নির্যাতন ও অবহেলার সংস্কৃতি বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক কমিউনিটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
রাজনীতিবিদ নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের মৃত্যু রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা একজন নাগরিকের প্রতি অবহেলার চিত্র তুলে ধরে। তিনি দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সংগঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালে নরসিংদীতে হত্যা, আক্রমণ ও ভাঙচুর মামলায় অভিযুক্ত হয়ে গত বছর ২৪ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন এবং তখন থেকে কারাগারে ছিলেন। কারা কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছিলেন। ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদের স্বজনরা দাবী করেছেন তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে মুমুর্ষ অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরেও তাঁকে হাতকড়া পড়িয়ে রাখা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের কারাবন্দী অবস্থায় সঠিক চিকিৎসার অভাবে
মৃত্যু এবং মারা যাবার পরেও তাঁকে হাতকড়া পড়িয়ে অসম্মানজনক অবস্থায় রাখার ঘটনাটি বর্তমান সময়ে সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ হিসেবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো, সংবাদ ও সামাজিক মাধ্যমগুলো তুলে ধরেছে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১ (দ্বিতীয় ভাগ: রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি) হলো একটি মৌলিক ঘোষণা, যা রাষ্ট্রের আদর্শিক ভিত্তি স্থাপন করে। এতে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, যেখানে আইন, মৌলিক অধিকার, সমতা, স্বাধীনতা ও মানব মর্যাদার নিশ্চয়তা থাকবে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থা থাকবে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে এবং এর ভিত্তি হবে মানব মর্যাদা (human dignity) ও মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা। মানব মর্যাদা অর্থ হলো প্রত্যেক নাগরিককে সমান সম্মান দেওয়া। তাকে
শুধু নাগরিক হিসেবে নয় বরং মানুষ হিসেবে সম্মানিত করা এবং তার অধিকারকে রক্ষা করা। অর্থাৎ এই নীতি নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্র সকল নাগরিককে সমান চোখে দেখবে এবং কোনো অবস্থাতেই কারো প্রতি এমন আচরণ করা হবে না যা তার মনুষ্যত্বকে অপমান করে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ নির্যাতন এবং নিষ্ঠুর, অমানবিক, লাঞ্ছনাকর ব্যবহার ও দণ্ড মৌলিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, “কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না“। ১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ অথবা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের
কার্যকারিতা প্রদানের একটি সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে; এবং ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর স্বাক্ষরিত দলিলের মাধ্যমে উক্ত সনদে বাংলাদেশও অংশীদার হয়েছে এবং এ বিষয়ে আইন প্রণীত হয়েছে। কারাগারের ব্যবস্থাপনা ও বন্দীদের অধিকার নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মানা হয়, যা বাংলাদেশ মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ। এর মধ্যে নেলসন ম্যান্ডেলা রুলস ২০১৫ (Nelson Mandela Rules 2015) অন্যতম। এটি মূলত বন্দীদের প্রতি মানবিক, মর্যাদাপূর্ণ ও অধিকারভিত্তিক আচরণ নিশ্চিত করার আন্তর্জাতিক মানদণ্ড। এই মানদণ্ডের মাধ্যমেঃ ১) প্রতিটি বন্দিকে সম্মানের সঙ্গে আচরণ করতে হবে; ২) নির্যাতন, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অপমানজনক আচরণ একেবারেই নিষিদ্ধ; ৩) বন্দীদের স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ নাগরিকের সমমান হতে হবে; ৪) হাতকড়া বা শৃঙ্খল কেবলমাত্র নিরাপত্তাজনিত
প্রয়োজনে, সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে—শাস্তি বা অপমান হিসেবে নয় (Rule 47–48); ৫) বন্দীদের আইনি সহায়তা ও অভিযোগ জানানোর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে; ৫) কারাগার শুধু শাস্তির জায়গা নয়, বন্দীদের সমাজে পুনঃএকীভূত করার প্রক্রিয়াও নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনের (Convention Against Torture- UNCAT) সদস্য রাষ্ট্র। এই কনভেনশন অনুযায়ী, রাষ্ট্রকে অবশ্যই তার এখতিয়ারাধীন অঞ্চলে নির্যাতন প্রতিরোধে কার্যকর আইনি, প্রশাসনিক, বিচারিক বা অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে হবে। হেফাজতে নির্যাতন বা মৃত্যুর প্রতিটি অভিযোগের দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা রাষ্ট্রের আইনি বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশ নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তি (The International Covenant on Civil and Political Rights, ICCPR)’র
স্বাক্ষরকারী। এই চুক্তির ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ নির্যাতন, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর ব্যবহার বা শাস্তিকে নিষিদ্ধ করেছে। এছাড়া, ১০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত সকল ব্যক্তিকে মানবিকতার সাথে এবং ব্যক্তির অন্তর্নিহিত মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ব্যবহার করতে হবে। একজন বয়স্ক ও অসুস্থ সাবেক মন্ত্রী কারাবন্দী অবস্থায় কেন প্রয়োজনীয় ও দ্রুততম চিকিৎসা পাননি, বা তার শারীরিক অবস্থার অবনতি কেন হলো—এই প্রশ্নগুলো গুরুতর অবহেলা এবং কারাগারে বন্দীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষত রাজনৈতিক কারনের বন্দীদের প্রতি একপ্রকার নির্যাতন ও নির্মম অবহেলা নির্দেশ করে। যেখানে সকল বন্দীর জীবন ও মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, সেখানে এই মৃত্যু কারাগারে বন্দীদের প্রতি রাষ্ট্রের যথাযথ দায়িত্ব পালনের ব্যর্থতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় । এই মৃত্যু গুরুতর ‘হেফাজতে অবহেলা’ (Custodial Negligence) ইঙ্গিত করে। একজন বন্দীর সুচিকিৎসা প্রাপ্তির অধিকার রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা অবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্ব বহন করে। রাষ্ট্রের হেফাজতে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু হলে, সেই রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো একটি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অবহেলার কারণ খুঁজে বের করা এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা। তাছাড়া হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনকে অসুস্থ, মুমুর্ষ অবস্থায় এবং মৃত্যুর পরেও হাতকড়া পড়িয়ে রেখে কারা কর্তৃপক্ষ সাংবিধানিক, বাংলাদেশের এবং আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন ও কারাবন্দীর ডিগ্নিটিকে খর্ব করেছে। এই মৃত্যু ও অমানবিক, নিষ্ঠুর ও অপমানজনক ঘটনা প্রমান করছে অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের সকল অঙ্গীকার রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। তাই সকল প্রকার নির্যাতন ও অবহেলার সংস্কৃতি বন্ধের কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার জন্য জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক কমিউনিটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।