এএফপির বিশ্লেষণ : চূড়ান্ত সংকটে খামেনি? – ইউ এস বাংলা নিউজ




এএফপির বিশ্লেষণ : চূড়ান্ত সংকটে খামেনি?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৬ জুন, ২০২৫ | ১০:১৩ 6 ভিউ
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি অতীতে বহু সংকট পেরিয়ে এলেও ইসরায়েলের নজিরবিহীন হামলা এবার তার নেতৃত্বাধীন ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা ও ব্যক্তিগতভাবে তার শারীরিক নিরাপত্তাকেই সরাসরি চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর পর থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্বে থাকা খামেনি দীর্ঘ সময় ধরে নিষেধাজ্ঞা, আন্তর্জাতিক টানাপড়েন ও সহিংসভাবে দমন করা অভ্যন্তরীণ বিক্ষোভ মোকাবেলা করে এসেছেন। সর্বশেষ ২০২২-২৩ সালে নারী নেতৃত্বাধীন অভ্যুত্থানের সময়ও তিনি ক্ষমতায় অবিচল ছিলেন। ৮৬ বছর বয়সী এই নেতার উত্তরসূরি নিয়ে ইরানে আগে থেকেই জল্পনা চলছিল। কিন্তু বর্তমান সংকটে তার নেওয়া পদক্ষেপই ঠিক করে দেবে ১৯৭৯ সালে শাহকে হটিয়ে চালু হওয়া ইসলামী বিপ্লব পরবর্তী ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ। একই সঙ্গে খামেনির শারীরিক

নিরাপত্তাও এখন হুমকির মুখে। যুক্তরাষ্ট্রের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েল তাকে হত্যা করতে চাইলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তবে ইসরায়েল এখনো এমন পদক্ষেপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক আরাশ আজিজি বলেন, ‘খামেনি এখন তার শাসনের গোধূলিলগ্নে। বয়স ৮৬ বছর। তার হাতে আর দৈনন্দিন শাসনের ভার নেই। তা এখন ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত বিভিন্ন পক্ষের হাতে। তিনি আরো বলেন, ক্ষমতার এই পালাবদল প্রক্রিয়া চলছিল আগেই, কিন্তু বর্তমান যুদ্ধ সেটিকে আরো ত্বরান্বিত করেছে। ‘আত্মঘাতী সংকটে’ খামেনি এদিকে ইসরায়েল একাধিক ইরানি শীর্ষ কর্মকর্তাকে হত্যা করতে সক্ষম হওয়ায় তাদের গোয়েন্দা সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এবং জল্পনা তৈরি হয়েছে—ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সরাসরি খামেনিকে

হত্যার নির্দেশ দিতে পারেন কিনা। সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে খামেনি কখনো ইরান ত্যাগ করেননি। সর্বশেষ বিদেশ সফর ছিল ১৯৮৯ সালে উত্তর কোরিয়ায়, তখন তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার গতিবিধি কঠোর গোপনীয়তার আওতায় রাখা হয়। আজিজির মতে, ইসরায়েল ইরানের ভেতরে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে শাসনব্যবস্থা বদলের কোনো পরিকল্পনা নিয়েও ভাবতে পারে বা উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একের পর এক হত্যা করে তেহরানের অবস্থানে মৌলিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা চালাতে পারে। কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো করিম সাদজাদপুর বলেন, খামেনি একপ্রকার ‘আত্মঘাতী সংকটে’ পড়েছেন এবং তার এখন উচ্চ প্রযুক্তিযুক্ত যুদ্ধ সামলানোর মতো শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা নেই। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দুর্বল প্রতিক্রিয়া দিলে তার

কর্তৃত্ব আরো ক্ষুণ্ন হবে। আবার শক্ত প্রতিক্রিয়া দিলে তা তার ও শাসনব্যবস্থার অস্তিত্বকেই ঝুঁকিতে ফেলবে।’ সংঘাত এড়ানোর কৌশল ভেঙে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরানের নীতিনির্ধারণী পরিচালক জেসন ব্রডস্কি বলেন, খামেনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তীব্র বক্তব্য দিলেও বরাবরই সরাসরি সংঘাত এড়িয়ে চলেছেন। বরং হিজবুল্লাহর মতো প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে শত্রুদের মোকাবেলা করেছেন। কিন্তু চলমান হামলা সেই কৌশলের অবসান ঘটিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘১৯৮৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই খামেনি সংঘাত ইরানের সীমান্তের বাইরে রাখার কৌশলকে সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন। কিন্তু এবার তিনি গুরুতর ভুল হিসাব করেছেন।’ খামেনি নিজেও একবার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন—১৯৮১ সালে। ব্রডস্কি মনে করেন, এই স্মৃতিই হয়তো বর্তমান পরিস্থিতিতে তাকে কিছুটা

পথ দেখাতে পারে। তবে বর্তমান হামলার মাত্রা ও গতি-প্রকৃতি তেহরানের সামর্থ্যের বাইরেই চলে যাচ্ছে। প্রথম ধাক্কাটি আসে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ইসরায়েলের প্রথম দফার হামলায়, যার সময় ও মাত্রা ইরানি নেতৃত্বকে পুরোপুরি চমকে দেয়। এমন এক সময় এই হামলা হলো, যখন অর্থনৈতিক সংকটে অতিষ্ঠ জনগণের নতুন কোনো বিক্ষোভ নিয়ে সরকারের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছিল এবং ওমানে ইরানি পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন সংলাপ শুরু হওয়ার কথা ছিল। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো হোলি ড্যাগরেস বলেন, ‘এই হামলা দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা ক্ষোভকে আরো উসকে দিচ্ছে। অনেক ইরানিই ইসলামী প্রজাতন্ত্রের অবসান চায়। তবে তারা রক্তপাত ও যুদ্ধের বিনিময়ে সেটা চায় না।’ ‘শক্ত থাকুন’ এদিকে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইঙ্গিত দেন, এই হামলা হয়তো ইরানে ‘শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন’ ডেকে আনবে। যদিও তিনি বলেন, এমন পরিবর্তন আনতে হবে ইরানিদেরই। নেতানিয়াহু বলেন, ‘ইরানি শাসনব্যবস্থা খুবই দুর্বল। ৮০ শতাংশ মানুষ এই ধর্মীয় স্বৈরাচারীদের ছুড়ে ফেলতে চায়।’ যুক্তরাষ্ট্রের বাধায় ইসরায়েল খামেনিকে হত্যা থেকে পিছিয়ে এসেছে কি না—এই প্রশ্নে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা যা প্রয়োজন, তা করব। আমরা করবই। এবং আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্র জানে তাদের জন্য কী ভালো।’ তবে ইরানি বিরোধী শিবির এখনো বিভক্ত। স্বদেশ ও প্রবাসে বিভাজিত এই আন্দোলনের এক পরিচিত মুখ সাবেক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভির ছেলে ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র রেজা পাহলাভি ইরানিদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘শক্ত থাকুন, আমরা জিতব।’ যদিও এখনো বড় ধরনের

কোনো গণবিক্ষোভের খবর মেলেনি। তবে প্রবাসে প্রচারিত কিছু পারসিয়ান টেলিভিশন চ্যানেল এমন ভিডিও সম্প্রচার করেছে, যেখানে কিছু মানুষকে খামেনিবিরোধী স্লোগান দিতে দেখা যায়। তবে আরাশ আজিজি সতর্ক করে বলেন, ‘এই যুদ্ধ বা সংকটের পরিণতি যে একটি গণ-অভ্যুত্থানে গিয়ে শেষ হবে এবং দেশের বাইরে থাকা কোনো বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় আসবে—এমন ধারণার বাস্তব ভিত্তি নেই।’

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ইসরায়েল বিজয় অর্জনের পথে : নেতানিয়াহু এএফপির বিশ্লেষণ : চূড়ান্ত সংকটে খামেনি? ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের চেষ্টা, ঝুঁকিতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র? ‘আলোচনা অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানাতে হবে’ ইরানের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করল পাকিস্তান বাংলায় কথা বললেই বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে : মমতা এইচএসসি পরীক্ষার বাকি ১০ দিন, এলো নতুন নির্দেশনা করোনায় ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু, শনাক্ত ২৫ ৪১ চার ও ২২ ছক্কায় ৩২৭ রানের বিধ্বংসী ইনিংসে আলোচনায় সূর্যবংশীর বন্ধু ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠন মে মাসে বিজিবির অভিযানে ১৩৩ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য জব্দ চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম মৃত্যু, আক্রান্ত সর্বোচ্চ সরকারি কলেজে শূন্য পদের তালিকা চেয়েছে সরকার বারবার গরম করা ঠিক নয় কোন খাবার ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ের শীর্ষে পাঁচ নাটক জরুরি বৈঠকে বসছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা পারমাণবিক অস্ত্র চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে পারে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা নেই: ইরানের প্রেসিডেন্ট দুর্নীতি প্রমাণ করে সাইফুজ্জামানের অর্থ ফেরত আনা হবে: দুদক চেয়ারম্যান ‘সাকিব আমাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে নেবে না, আমিও না’—তামিম