উচ্চমূল্যের চাপে মধ্যবিত্ত হয়ে যাচ্ছে নিম্নবিত্ত – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ১৩ অক্টোবর, ২০২৫
     ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

উচ্চমূল্যের চাপে মধ্যবিত্ত হয়ে যাচ্ছে নিম্নবিত্ত

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ | ৯:০০ 54 ভিউ
অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর হঠাৎ করেই নিত্যপণ্যের বাজার আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও বাজারে পণ্যের দামে লাগা আগুন এখন নিত্য-নৈমিত্তিক। এতে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। খেটে খাওয়া মানুষদের ইচ্ছে থাকলেও উচ্চমূল্যের কারণে তারা সাধ্যের মধ্যে মাছ-মাংস কিনতে পারছেন না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ডাল, ভাত আর সবজি জোগাড় করাই এখন স্বপ্নের মতো। পুষ্টির চাহিদা মেটাতে একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে ডিম; কিন্তু সেটিও এখন অনেকের নাগালের বাইরে। ক্রমবর্ধমান দামের চাপে নিম্নবিত্তের মতো মধ্যবিত্তরাও পড়েছেন বেকায়দায়। নিত্যপণ্যের দাম সামলাতে গিয়ে সাধারণ মানুষ এখন তাদের খাদ্যতালিকা ছোট করে ফেলছে। প্রয়োজনের তুলনায় কম কিনে কোনোভাবে

বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু বাজার খরচই নয়, নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াতসহ প্রায় সব খাতে। সব মিলিয়ে পণ্যের দাম মেটাতে গিয়ে অনেক প্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। আর সাধারণ ও নিম্নবিত্ত মানুষ চুলায় হাঁড়ি তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশে কৃষিপণ্য এখনো পুরোপুরি সংরক্ষণনির্ভর নয়। তাই কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মৌসুমি ঘাটতি বা পরিবহন সংকট দেখা দিলেই সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। এই অস্থিরতার বড় কারণ হলো মধ্যস্বত্বভোগীরা। তারা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পণ্য কিনে শহরের বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেন। এ ছাড়া ডলারের উচ্চ বিনিময় হারও দামের ওপর বড় প্রভাব ফেলে। কারণ

ডাল, ভোজ্যতেল, মসলা ও কিছু ফল আমদানি নির্ভর পণ্য। ডলারের দাম বাড়লে এসব পণ্যের দামও বেড়ে যায়। তারা আরও জানান, ব্যবসায়ীদের গোপন সমন্বয় বা অঘোষিত চুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে পণ্যের ঘাটতি তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে, এমন অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা খুবই সীমিত। এমনকি জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানও অনেক সময় স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারছে না। এদিকে সরকারি পর্যায়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বিভিন্ন টিম কাজ করছে এবং যেখানে সমস্যা ধরা পড়ছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে বাস্তবে ভোক্তারা এর তেমন সুফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। দাম ওঠানামার কারণ হিসেবে ভোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন—

দুর্বল মনিটরিং, সরবরাহ চেইনের সমস্যা, পরিবহন সংকট, জ্বালানি তেলের বাড়তি খরচ, বাজার সিন্ডিকেট এবং কারসাজিকে। রাজধানীর সূত্রাপুর, রায়সাহেব বাজার, নয়াবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলানিউজের এই প্রতিবেদক। তিনি সরেজমিনে দেখেছেন, প্রতিদিনই শাক-সবজি, চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন, মসলা, সবজি, ডিম, মুরগি ও মাছের দাম পরিবর্তন হচ্ছে। বাজারে কোনো নির্দিষ্ট দামের নিশ্চয়তা নেই। একেক দিন একেক দোকানে ভিন্ন ভিন্ন দাবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। কোনো দোকানে হয়ত কিছু কমে, আবার কোনো দোকানে বাড়তি দামে নিত্যদিনের জিনিস বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজারে এখন প্রতিদিনই এমন অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। চালের দামও হয়ে উঠেছে অসহনীয়। গরিবের মোটা চাল কেজিতে ৬০ টাকা,

আর সরু চালের দাম পৌঁছেছে ৯০ টাকায়। মসুর ডালের কেজি এখন ১৬০ টাকা। অন্যদিকে, ডিমের দাম কিছুদিন কম থাকলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে; প্রতি হালি ৫০ টাকা। ব্রয়লার মুরগির দামও স্থিতিশীল নয়, প্রায়ই ওঠানামা করছে। সবজির বাজারে দামের উত্তাপ যেন কমছেই না। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল ও কাঁকরোল প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে। শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়, পটোল ৮০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি পেঁপে ৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, করলা ৮০ টাকা, গোল বেগুন ১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা,

ঢ্যাঁড়স ৮০ টাকা, কচু ৬০ টাকা এবং গাজর ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাছ-মুরগির দোকানেও একই পরিস্থিতি। সপ্তাহের ব্যবধানে চাষের রুই, তেলাপিয়া ও পাঙাশের দাম ২০–৫০ টাকা বেড়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চাষের রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০–৪৫০ টাকায়। তেলাপিয়ার দাম প্রতি কেজি ২২০–২৬০ টাকা, আর পাঙাশের দাম ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকায়। চাষের চিংড়ির কেজি দাম ৭৫০–৮০০ টাকা, এবং নদীর চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ১০০০–১২০০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০–১৮০ টাকায়। সোনালি জাতের মুরগির দাম প্রতি কেজি ৩০০–৩২০ টাকা। ফার্মের ডিম প্রতি ডজন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭৫০–৮০০ টাকা, আর খাসির

মাংসের সর্বোচ্চ দাম ১২৫০ টাকা। বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, অদৃশ্য এক সিন্ডিকেট নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দামের বিশাল ব্যবধান তৈরি করে সিন্ডিকেটের সদস্যরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করছে। রায় সাহেব বাজারের ক্রেতা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আগে মাসে কয়েকবার দেশি মুরগি কিনতাম, এখন সেটা স্বপ্ন হয়ে গেছে। মাছ কিনতেও প্রায় দ্বিগুণ দাম গুনতে হচ্ছে। বাজারের দাম আর আয়-রোজগারের সঙ্গে কোনো মিল নেই। অসাধু চক্রের সদস্যরা অদৃশ্য থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আরেক ক্রেতা মো. তুষার বলেন, বাজারে যে জিনিসের দাম কম, সেটাই কেনার চেষ্টা করি। কখন যে কোনটার দাম বাড়বে, বলা যায় না। টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে কিছু পণ্য আনতেও হয়। সরকারের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। সূত্রাপুর এলাকায় গৃহপরিচারিকার কাজ করেন মোরশেদা আক্তার। পাঁচ বাসায় কাজ করে মাসে ১৫ হাজার টাকা বেতন পান তিনি। এই অর্থ দিয়েই তিনি তার সংসার চালান। স্বামী যে অর্থ উপার্জন করেন, সেটি দিয়ে ঘর ভাড়া, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ করেন। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের ঘরেও টানাপোড়েন শুরু করেছে। মোরশেদা ও তার স্বামীর আয় দিয়ে সংসারের খরচ এখন খুবই কঠিন। তিনি বলেন, মাসের শুরুতে বাজার কইরা কূল পাই না। বাজেটে মিলে না। খাওন-পরনের লাইগা আগে যা কিনতাম, হেডির অদ্দেকও (অর্ধেক) কিনতে পারি না। বাসের হেলপারি করেন রহমত। তিনি তার সংসারের একক উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। যে অর্থ আয় করেন, সেটি দিয়ে সংসার চালাতে তার প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে। গত কয়েকমাসে রহমত ভালো কোনো খাবার খেতে পারেননি। ভাত আর ডিম দিয়ে চলছে তার দৈনিক খাবার। রিকশাচালক নূরউদ্দিন বলেন, রাইতের মতো এহন দিনেও গরু-খাসির মাংস খাওনের স্বপ্ন দেখতে হয়। মুরগির মাংসও খাইতে পারি না বৌ-পোলাপান নিয়া। মাছও এহন বিলাসি খাওন হইয়া যাইতাসে। ডিম, ডাইল (ডাল) দিয়া ভাত খাইতাম। এহন এডিও দাম বাইড়া গেছে। ভাড়া ১০ টাকা বেশি চাইলে মাইনষে গালি দেয়। কেমনে সংসার চালামু? আমাগো কথা কেউ হুনেও না, আমাগোরে কেউ দেহেও না। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজার থেকেই দামের পরিবর্তন হচ্ছে। অনেক সময় পণ্য কমে আসে, আবার কোনো সময়ে পরিবহন সমস্যার কারণে সরবরাহে বিঘ্ন দেখা দেয়। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগেও বাজারে দামের ওপর প্রভাব পড়ে। ফলত প্রতিদিনই দামের ব্যবধান তৈরি হয়। সূত্রাপুর বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. আব্দুলাহ বাংলানিউজকে বলেন, সবজির দাম সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। মুলা, কচুর লতি, চিচিঙ্গা, গোল বেগুন, করলা, লম্বা বেগুন, পটোল, ধনেপাতা, ঢেঁড়শ, বরবটি সহ সব ধরনের সবজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। শীতের আগাম সবজিও বাজারে এসেছে, কিন্তু দাম রীতিমতো আকাশছোঁয়া। এর মধ্যে শিম ২০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। টানা বৃষ্টির কারণে কাঁচামরিচের দাম বেড়ে গেলেও এখন কিছুটা হাতের নাগালে এসেছে, ১৮০-২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে ‘নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান থেমে নেই’ বলে জানান। তিনি বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে প্রতিদিন বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। অসাধু পন্থায় দাম বাড়ালে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে পণ্যের দাম সহনীয় করা হচ্ছে। ভোক্তার স্বার্থে অধিদপ্তরের কার্যক্রম চলবে। এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দামের যে অস্থিরতা চলছে তা শুধু একটি শ্রেণিকে নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করছে। এটি শুধু ভোক্তার জন্য নয়, সরকারের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাজারে এই লাগামহীন দামের অস্থিরতা না থামলে জনজীবনে চাপ আরও বাড়বে। পরিকল্পিত বাজার ব্যবস্থাপনা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় ও ভোক্তা স্বার্থে কঠোর পদক্ষেপ ছাড়া এই পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তিনি বলেন, পণ্যের সরবরাহ চেইনে অসঙ্গতি, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি, ডলারের বিনিময় হার এবং স্থানীয়ভাবে গঠিত বাজার সিন্ডিকেট—এসবই এই অস্থিরতার মূল কারণ। এছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছে। এছাড়া সরকারের নীতিগত দুর্বলতা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব বাজার ব্যবস্থাকে আরও অনিয়ন্ত্রিত করে তুলেছে। শুধু তাৎক্ষণিক অভিযান নয়, প্রয়োজন পণ্যের উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পুরো ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক ও স্বচ্ছ করা। এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আমরা খুব খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি৷ এই খারাপ অবস্থা হওয়ার কারণ, বাজার মনিটরিং না হওয়া। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে সংস্থাগুলো বাজারে অভিযান চালাতো, এখন নাই। অর্থাৎ সরকারের তদারকিটা একেবারে বাজারে নাই। সরকারকে আমরা অনুরোধ করব, তদারকি যদি না বাড়ানো হয়, তাহলে জিনিসপত্র দাম আরও বাড়বে। এমন কোনো পণ্য নাই; চাল, ডাল, মাছ, মাংস, ডিম, পেঁয়াজসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে। শুধুমাত্র আলু আর পেঁপে ছাড়া আর কোনো সবজি ১০০ টাকার নিচে কিনতে পারে না কেউ। এভাবে চলতে পারে না। তিনি আরও বলেন, মানুষ একটা অস্বস্তিকর অবস্থার মধ্যে আছে। যারা মধ্যবিত্ত ছিল, তারা নিম্ন মধ্যবিত্ত হয়ে গেছে। দিন যত যাচ্ছে ততই মানুষের অবস্থা খারাপ হচ্ছে। সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজার থেকে সিন্ডিকেটটা যতক্ষণ না পর্যন্ত ভাঙতে পারবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি আসবে না। এর বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে কোনো স্থায়ী পদক্ষেপ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি নেই কোনো বাজার তদারকির পরিকল্পনা। ফলে বছরের পর বছর বাজারে ভোক্তা নিষ্পেষিত হচ্ছে। সরকারের উচিত হবে অন্যান্য সংস্কারের পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজর দেওয়া। একই সঙ্গে মানুষ কিন্তু খুব কষ্টের মধ্যে আছে এবং থাকবে। এজন্য সরকারের কাছে ক্যাবের পক্ষ থেকে বলতে চাই, সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোতে দ্রুত সক্রিয় করা হোক। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন বাংলানিউজের এ প্রতিবেদক। সচিব তাকে বলেন, ভোক্তার মাধ্যমে প্রত্যেকদিনের বাজার মূল্যের তথ্য নিচ্ছি। চিনি ও চালের দাম কমেছে। তবে শাব-সবজির বাজারে দাম খানিক চড়া। আলুর দাম আবার কম। পেঁয়াজের দাম বেড়ে গিয়েছিল, আমরা আমদানির অনুমতি দিয়েছি; এ পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে। এছাড়া অন্যান্য ভোগ্যপণ্য বার্ষিকী হিসেবে ঠিক আছে। তাহলে এখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণ কি? উত্তরে বাণিজ্য সচিব বলেন, সবজির দামে সারা বছরই এমন হয়ে আসছে। বিশেষ করে ট্রানজিশন সিজনে। বর্ষার শস্য শেষ হবে, সামনে শীতকালীন সবজি বাজারে উঠবে। ফলে সংশ্লিষ্ট বাজারে একটা ক্রাইসিস থাকবে, এতে দাম বাড়বে। পূজার কয়েকদিন আগে থেকে টানা বৃষ্টির কারণে দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহ থেকে আজকের দিন পর্যন্ত বাজার একটু আনস্টেবল হয়েছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে। ডিমের বাজারে আমরা আবার মনিটরিং জোরদার করবো। তিনি আরও বলেন, কিন্তু অন্য কিছু আইটেমের, যেমন চাল, ডাল, তেলের দাম কমেছে। চালের দাম গড়ে দুই থেকে তিন টাকা কমেছে। তেল বাড়ানোর জন্য একটি প্রস্তাব এসেছে, আমরা এখনো সেটা গ্রহণ করিনি, তাই খুচরা দাম এখনো বাড়েনি। ডালের দাম আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী কমেছে। চিনির ওপর যখন ডিউটি কমানো হলো—স্পেসিফিক ডিউটি ৬০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় আনা হলো— তারপর থেকে চিনির দাম বেশ সহনীয় হয়েছে। আমার কাছে গতদিনের রিপোর্ট আছে, সেখানে ডিমের দাম ৪২ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে দেখানো হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রধানত আমরা যা করি, তা হলো হোলসেল বাজারে গিয়ে সরবরাহ পরিস্থিতি যাচাই করা এবং অফিসারদের সেই জায়গায় পাঠানো। এটি করলে দাম মোটামুটি স্বাভাবিকের দিকে আসে। তবে চলমান ১৫ দিনের মতো বৃষ্টি কাঁচা সবজি ও ডিমের দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সময়ে নিত্যপণ্যের দাম ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবার, দৈনন্দিন খাবার ও পুষ্টির চাহিদা মেটাতে সমস্যার মুখে পড়েছে। বাজারে কৃত্রিম সংকট ও সিন্ডিকেটের উপস্থিতি দামের অস্থিরতার বড় কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে। সরকারি পর্যবেক্ষণ ও হোলসেল বাজারে সরবরাহ যাচাইয়ের মাধ্যমে কিছুটা স্বাভাবিকতা আনা সম্ভব হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবহন সমস্যা ও আমদানির ওপর নির্ভরতা দাম কমানোর ক্ষেত্রে সীমিত প্রভাব ফেলছে। দামের এই অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর পদক্ষেপ এবং সিন্ডিকেট বিরোধী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সংকেত ও টেলিকমের কাজেই ৫০ কোটি টাকা নয়ছয় কড়া নিরাপত্তায় ১৩ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির ভেনেজুয়েলাকে কেন্দ্র করে নতুন অভিযানে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আটটির মধ্যে পাঁচটি যুদ্ধ থামিয়েছি : ট্রাম্প গুমের মামলায় সশরীরে নয়, ভার্চুয়াল হাজিরা চান গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তারা গোলাপ গ্রাম এখন ‘মরুভূমি’ বায়ুদূষণের শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান কত তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নামল ১২ ডিগ্রিতে বিশ্বের বৃহত্তম ইসলামিক সংগঠনের নেতার পদত্যাগ দাবি মধ্যরাতে তিতুমীর কলেজে ছাত্রদল-শিবির সংঘর্ষ ক্যাঙারু কোর্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশে পুরো বিশ্বে উঠেছে নিন্দার ঝড় অবৈধ বিচারিক রায় বাতিল এবং অবৈধ দখলদার ইউনুস সরকারের পদত্যাগের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল জঘন্য রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র! বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন আজাদের মৃত্যুতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শোক ভূমিকম্পে আহতদের সঠিকভাবে সুচিকিৎসা প্রদান না করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার বিবৃতি মানুষ মেরে ক্ষমতায় থাকতে চাই না’: শেখ হাসিনার শেষ মুহূর্তের অডিও বার্তা ২৬ নভেম্বর বন্দর অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ কক্সবাজারে ‘শয়তানের নিশ্বাস’ আতঙ্ক: পাকিস্তানি দুই যুবকের অভিনব প্রতারণায় সর্বস্ব লুট ‘মানুষ মেরে ক্ষমতায় থাকব না’: অডিও ফাঁসে উন্মোচিত শেখ হাসিনার মানবিক ও রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রস্থান ‘শেখের বেটি আসবে, আমরাও ঘরে ফিরবো’— রিকশাচালকের বিশ্বাস ও ভাইরাল স্ট্যাটাস ‘মামা আপনি সাবধানে থাকবেন