ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
১৯৭১, নীলফামারীর গোলাহাট গণহত্যা
“কোন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ভাঙতে পারে না; শেখ হাসিনার রায়, এই সরকার মানিনা” — বীর বাঙালি
কোন দেশের নাগরিক হয়ে মঙ্গলবার দেশে ফিরছেন তারেক রহমান
সমকামিতার অভিযোগ: আইনজীবী শিশির মনিরের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির দ্বারে ভুক্তভোগী
‘ধানমন্ডি ৩২ ভাঙার পাপে তারেক রহমান আমৃত্যু অনিরাপদ, এসএসএফ তাকে জনবিচ্ছিন্ন করবে’: সাংবাদিক ফজলুল বারী
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিদ্রোহের নেতৃত্বে বিএনপি আমলের নিয়োগপ্রাপ্তরা, আইনি লড়াইয়েও দলটির শীর্ষ আইনজীবীরা
পিলখানা হত্যাকাণ্ড: বিদ্রোহের নেতৃত্বে বিএনপি আমলের নিয়োগপ্রাপ্তরা, আইনি লড়াইয়েও দলটির শীর্ষ আইনজীবীরা
২৭৫ কোটি বেড়ে ৬৮২ কোটি, লোপাটে দায় কার
২৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প। কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল দুই বছরের মধ্যে। কিন্তু সেই কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে ১১ বছর। আর ২৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প ধাপে ধাপে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮২ কোটি টাকায়। ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি। বহু কাজ না করেই বিল পরিশোধ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, ডিপিপিবহির্ভূত নতুন কাজ যুক্ত করা, এমনকি একই তলার নির্মাণে দুবার চুক্তির মতো ভয়াবহ সব অনিয়মও উঠে এসেছে নথিপত্রে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়—এই সব দুর্নীতির হোতারা ছিলেন মন্ত্রণালয় ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রভাবশালী কর্মকর্তা; তবে তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় বাদ পড়েছেন তারাই। উল্টো অভিযুক্ত করা হয়েছে মাত্র দুজন প্রকৌশলীকে, যারা তুলনামূলক স্বল্প সময় এবং কম
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। প্রকল্পজুড়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন একাধিক প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক ও নির্বাহী প্রকৌশলী। কিন্তু তাদের কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাদেরও সরকারি তদন্তে আড়াল করা হয়েছে। নথিপত্র বলছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু নানা অজুহাত, অনুমোদনবহির্ভূত কাজ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকায়। বাড়তি ৪০৭ কোটি টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে মেডিকেল যন্ত্রপাতি, হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কাজ, সীমানা প্রাচীর—ভূমি উন্নয়ন এবং নতুন সংযোজিত খাতে। মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়েই বাড়তি ব্যয় ধরা হয় ১০১
কোটি টাকা। হাসপাতাল ভবন নির্মাণে দেখানো হয়েছে ১০০ কোটি টাকা বাড়তি, ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল খাতে ৪০ কোটি, সীমানা প্রাচীর ও ভূমি উন্নয়নে ৪০ কোটি এবং ‘বিভিন্ন নতুন অংশে’ দেখানো হয়েছে আরও ৬৩ কোটি টাকা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণে অনিয়মের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদুল্লাহ খন্দকারের বলয়ের কয়েকজন প্রকৌশলী। ফলে ভয়াবহ সব অনিয়মের পরও ওই সময় মূল হোতাদের বাদ দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জড়িত কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যারা অনিয়ম করে অবসরে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নথিপত্র
বলছে, কেবল হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজেই ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া আর্থিক শৃঙ্খলার ব্যত্যয় করে অনুমোদিত ডিপিপির ১১২ কোটি টাকার বাজেটে ২০০৮ সালের রেট শিডিউলের পরিবর্তে ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী ৭ তলার পরিবর্তে ৪ তলা কমিয়ে ৩ (তিন) তলা পর্যন্ত দরপত্র আহ্বান ও চুক্তি করা হয়। হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের প্রথম পর্যায়ের দরপত্র (৩য় তলা পর্যন্ত) ছিল অতিমাত্রায় ‘ফ্রন্ট লোডেড’। যেসব আইটেমে ঠিকাদারের দর বেশি ছিল, যেমন আরসিসি, বালু ভরাট, এম.এস রড—সেগুলোর জন্য অনুমোদন ছাড়া কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আবার কম দরের কাজ (রং, টাইলস, ফ্যান, সুইচ) কমানো বা বাদ
দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে (৪র্থ থেকে ৭ম তলা) দরপত্র ও প্রাক্কলনে পূর্বের সম্পাদিত কাজ এবং বিভিন্ন আইটেমের অতিরিক্ত পরিমাপ অন্তর্ভুক্ত করে দরপত্র আহ্বান ও বিল পরিশোধ করা হয়। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় দরপত্রে প্রভাব বিস্তার করে আর্থিক সুবিধা নিতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগকে দরপত্র আহ্বান করতে না দিয়ে ওই দরপত্র অনিয়ম করে আহ্বান করেন পিপিসির তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল ইসলাম। এ ছাড়া হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ডিপিপিবহির্ভূত ২০ কোটি টাকার প্রায় ৩০টি ক্ষুদ্র কাজে (মূল্যমান ৪৫-৫০ লাখ) এলটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর বেশিরভাগ কাজ না করেই বিল পরিশোধ এবং সরকারি
টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদ মো. কবির ও মশিউর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন জি এম কামাল পাশা, একে এম গোলাম কবির ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল বশর। প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শরিয়ত উল্লাহ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজ আহমেদ। মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়েও ১০১ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেশি দরে ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া এবং পরিমাণ কমিয়ে স্পেসিফিকেশন বহির্ভূত নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। যার অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বর্তমানে অচল বা ব্যবহার উপযোগী নয়। ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়েও ৩৮.৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে।
লিফট, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, ফায়ার ফাইটিং এবং অন্যান্য কাজে ঊর্ধ্বদরে দরপত্রে অনিয়ম করে কাজ প্রদান এবং কাজের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর ও ভূমি উন্নয়ন কাজে ৩৬.৫০ কোটি অতিরিক্ত ব্যয় করা হয় । সংশোধিত ডিপিপির পরিমাণের চেয়ে কম কাজ করে সমুদয় টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। দরপত্র আহ্বানে অনিয়ম করে ঊর্ধ্বদরে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ভেরিয়েশন অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। একাডেমিক ভবন নির্মাণে দরপ্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে নিয়ে একাডেমিক ভবনের ৬ তলার ভিতের ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণের চুক্তি সম্পাদন এবং তা বিদ্যমান থাকার পরও নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্টরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুনরায় একাডেমিক ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার নির্মাণকাজের জন্য একই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করে, অর্থাৎ পঞ্চম তলা নির্মাণের জন্য দুবার একই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। গণপূর্তের প্রচলিত কর্ম পদ্ধতি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে ৬ তলা ভিতের পঞ্চম তলার দরপত্র আহ্বানে সরকারি অর্থের সাশ্রয় হলেও পরিকল্পনা শৃঙ্খলা ব্যত্যয়ের অজুহাতে অন্যদের বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে শাস্তি আরোপ প্রক্রিয়া করা হয়। অথচ মিথ্যা তথ্য দিয়ে পঞ্চম তলা নির্মাণে ২ বার চুক্তি, যা মারাত্মক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সামিল, সে ক্ষেত্রে জড়িত সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ছাড়া মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ, শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণে কোটি টাকার অনিয়ম, ফিজিবিলিটি স্টাডি না করেই ডিপিপি প্রণয়ন ও অনুমোদন অনিয়ম এবং ডিপিপি সংশোধনে ৬ বছর সময়ক্ষেপণে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনায় ডিজাইন, স্কোপ পরিবর্তন হলেও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিভাগীয় মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক ভবন ও স্টাফ নার্স ডরমিটরি ভবনের অনিয়মে ৩ সদস্যের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ উপেক্ষা করে ফ্যাসিস্ট আমলের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও মূল অপরাধীরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ২৬ জুন বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, ভবন নির্মাণকালে চুক্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণকাজ সম্পাদনকালে সুপারভাইজারি কর্মকর্তা হিসেবে থাকা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জি. এম. এম কামাল পাশা, এ কে এম গোলাম কবির এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল কাদের ও মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী দায় এড়াতে পারেন না। এ ছাড়া অনুমোদিত ডিপিপিবহির্ভূতভাবে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বিভিন্ন কাজের ব্যয় প্রাক্কলন ও দরপ্রস্তাব অনুমোদন প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ শহীদ মো. কবির, জিএম কামাল পাশা ও এ কে এম গোলাম কবির দায়ী মর্মে প্রতীয়মান। এ ছাড়া ডেলিগেশন অব ফিনান্সিয়াল পাওয়ার অনুযায়ী একাডেমিক ভবনের দরপত্র প্রস্তাব গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে শুধু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শুধু অনুমোদনে সম্মতি নিয়েই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। অর্থাৎ অনুমোদন বিহীনভাবেই একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজটি সম্পাদন করা হয়েছে, যার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন ক্রয় অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ যথা— অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (স্বাস্থ্য উইং) মো. আমান উল্লাহ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পিপিসি) খন্দকার ফওজী বিন ফরিদ, নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম তাজুল ইসলাম এবং প্রধান প্রকৌশলী মো. কবীর আহমেদ ভূঞা দায়ী। একাডেমিক ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নির্মাণেও ঠিকাদার নিয়োগে দাপ্তরিক প্রাক্কলন অনুমোদনের পূর্বেই দরপত্র আহ্বান ও চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি কাজগুলোতে পরিকল্পনা শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ও অনিয়মের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম সফিউল হান্নান এবং শহীদ মো. কবীর, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, খুলনা গণপূর্ত জোন, দায়ী। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়, আলোচ্য প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রকল্পটির ডিপিপি প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়নকালীন সকল পর্যায়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রকল্প পরিচালকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়ন মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রকল্প পরিচালক যথাযথ ভূমিকা পালন করেননি মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, একাডেমিক ভবন (৬ তলা ভিতে ৬ তলা পর্যন্ত) নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়মে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাগণ দায়ী বিধায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে; এ ছাড়া আলোচ্য প্রকল্পটির মূল ডিপিপি প্রণয়নেও অনেক ত্রুটি ছিল। তাই ভবিষ্যতে প্রকল্প প্রণয়ন বিশেষ করে ব্যয় প্রাক্কলনে আরও সতর্কতা অবলম্বনের গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করা যায়। আলোচ্য প্রকল্পটির বাস্তবায়নকালীন মনিটরিংয়ে দুর্বলতা লক্ষণীয়, বিধায় ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন মনিটরিং জোরদার করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা যায়। তথ্য বলছে, প্রকল্পটির বিভিন্ন সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তা। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন আরও পাঁচজন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ছয়জন। একই সময়ে দুজন প্রধান প্রকৌশলীও দায়িত্বে ছিলেন। আলাদা প্রকল্প পরিচালক তো ছিলেনই। সেইসঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী পর্যায়েও একাধিক কর্মকর্তা প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। অদ্ভুতভাবে এই দীর্ঘ তালিকার কাউকেই অভিযুক্ত করা হয়নি। উল্টো প্রকল্পে স্বল্প মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা মাত্র দুজন প্রকৌশলীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো প্রকল্প পরিচালনা করেছেন এমন অনেক প্রভাবশালী কর্মকর্তা ছিলেন, যাদের প্রত্যক্ষ ছত্রচ্ছায়া ছাড়া ব্যয় তিনগুণ বৃদ্ধি, কেনাকাটা ও নির্মাণে এমন ব্যাপক অনিয়ম সম্ভব ছিল না। কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় সেই প্রভাবশালীরা সম্পূর্ণ ‘অদৃশ্য’। অভিযোগ আরও আছে—যে কাজের দায়ে দুইজন প্রকৌশলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই একই কাজে জড়িত ছিলেন অন্তত আরও ছয়জন কর্মকর্তা। তবু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এই প্রকল্পে অনিয়মের আসল অপরাধীরা কারা, আর শাস্তি পেল কারা? সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল তদন্ত করা। আমরা তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করেছি। এরপর মন্ত্রণালয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বা আইন শাখা। কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে, তা কেবল মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে।’
গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। প্রকল্পজুড়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন একাধিক প্রধান প্রকৌশলী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, তত্ত্বাবধায়ক ও নির্বাহী প্রকৌশলী। কিন্তু তাদের কারও বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনেকেই এই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তাদেরও সরকারি তদন্তে আড়াল করা হয়েছে। নথিপত্র বলছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ২৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু নানা অজুহাত, অনুমোদনবহির্ভূত কাজ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকায়। বাড়তি ৪০৭ কোটি টাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় বৃদ্ধি দেখানো হয়েছে মেডিকেল যন্ত্রপাতি, হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল কাজ, সীমানা প্রাচীর—ভূমি উন্নয়ন এবং নতুন সংযোজিত খাতে। মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়েই বাড়তি ব্যয় ধরা হয় ১০১
কোটি টাকা। হাসপাতাল ভবন নির্মাণে দেখানো হয়েছে ১০০ কোটি টাকা বাড়তি, ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল খাতে ৪০ কোটি, সীমানা প্রাচীর ও ভূমি উন্নয়নে ৪০ কোটি এবং ‘বিভিন্ন নতুন অংশে’ দেখানো হয়েছে আরও ৬৩ কোটি টাকা। গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ নির্মাণে অনিয়মের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. শহীদুল্লাহ খন্দকারের বলয়ের কয়েকজন প্রকৌশলী। ফলে ভয়াবহ সব অনিয়মের পরও ওই সময় মূল হোতাদের বাদ দিয়ে ভিন্নমতাবলম্বী প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয়। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জড়িত কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালকদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যারা অনিয়ম করে অবসরে গেছেন, তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নথিপত্র
বলছে, কেবল হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজেই ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া আর্থিক শৃঙ্খলার ব্যত্যয় করে অনুমোদিত ডিপিপির ১১২ কোটি টাকার বাজেটে ২০০৮ সালের রেট শিডিউলের পরিবর্তে ২০১৪ সালের রেট শিডিউল অনুযায়ী ৭ তলার পরিবর্তে ৪ তলা কমিয়ে ৩ (তিন) তলা পর্যন্ত দরপত্র আহ্বান ও চুক্তি করা হয়। হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজের প্রথম পর্যায়ের দরপত্র (৩য় তলা পর্যন্ত) ছিল অতিমাত্রায় ‘ফ্রন্ট লোডেড’। যেসব আইটেমে ঠিকাদারের দর বেশি ছিল, যেমন আরসিসি, বালু ভরাট, এম.এস রড—সেগুলোর জন্য অনুমোদন ছাড়া কাজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ঠিকাদারকে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। আবার কম দরের কাজ (রং, টাইলস, ফ্যান, সুইচ) কমানো বা বাদ
দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় পর্যায়ে (৪র্থ থেকে ৭ম তলা) দরপত্র ও প্রাক্কলনে পূর্বের সম্পাদিত কাজ এবং বিভিন্ন আইটেমের অতিরিক্ত পরিমাপ অন্তর্ভুক্ত করে দরপত্র আহ্বান ও বিল পরিশোধ করা হয়। ২০১৮ সালে দ্বিতীয় দরপত্রে প্রভাব বিস্তার করে আর্থিক সুবিধা নিতে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগকে দরপত্র আহ্বান করতে না দিয়ে ওই দরপত্র অনিয়ম করে আহ্বান করেন পিপিসির তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খাইরুল ইসলাম। এ ছাড়া হাসপাতাল ভবন নির্মাণকাজে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ডিপিপিবহির্ভূত ২০ কোটি টাকার প্রায় ৩০টি ক্ষুদ্র কাজে (মূল্যমান ৪৫-৫০ লাখ) এলটিএম পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এর বেশিরভাগ কাজ না করেই বিল পরিশোধ এবং সরকারি
টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পুরো প্রকল্পে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তৎকালীন উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাদের, আব্দুল্লাহ আল মামুন, নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদ মো. কবির ও মশিউর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে ছিলেন জি এম কামাল পাশা, একে এম গোলাম কবির ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবুল বশর। প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শরিয়ত উল্লাহ এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজ আহমেদ। মেডিকেল যন্ত্রপাতি ক্রয়েও ১০১ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। বেশি দরে ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া এবং পরিমাণ কমিয়ে স্পেসিফিকেশন বহির্ভূত নিম্নমানের যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করা হয়েছে। যার অধিকাংশ যন্ত্রপাতি বর্তমানে অচল বা ব্যবহার উপযোগী নয়। ইলেকট্রো-মেকানিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়েও ৩৮.৫০ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে।
লিফট, বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন, ফায়ার ফাইটিং এবং অন্যান্য কাজে ঊর্ধ্বদরে দরপত্রে অনিয়ম করে কাজ প্রদান এবং কাজের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণ বিল পরিশোধ করা হয়েছে। সীমানা প্রাচীর ও ভূমি উন্নয়ন কাজে ৩৬.৫০ কোটি অতিরিক্ত ব্যয় করা হয় । সংশোধিত ডিপিপির পরিমাণের চেয়ে কম কাজ করে সমুদয় টাকার বিল পরিশোধ করা হয়। দরপত্র আহ্বানে অনিয়ম করে ঊর্ধ্বদরে ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ভেরিয়েশন অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে। একাডেমিক ভবন নির্মাণে দরপ্রস্তাব স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে নিয়ে একাডেমিক ভবনের ৬ তলার ভিতের ৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণের চুক্তি সম্পাদন এবং তা বিদ্যমান থাকার পরও নির্মাণকাজে সংশ্লিষ্টরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুনরায় একাডেমিক ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার নির্মাণকাজের জন্য একই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করে, অর্থাৎ পঞ্চম তলা নির্মাণের জন্য দুবার একই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। গণপূর্তের প্রচলিত কর্ম পদ্ধতি ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে ৬ তলা ভিতের পঞ্চম তলার দরপত্র আহ্বানে সরকারি অর্থের সাশ্রয় হলেও পরিকল্পনা শৃঙ্খলা ব্যত্যয়ের অজুহাতে অন্যদের বাদ দিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে শাস্তি আরোপ প্রক্রিয়া করা হয়। অথচ মিথ্যা তথ্য দিয়ে পঞ্চম তলা নির্মাণে ২ বার চুক্তি, যা মারাত্মক আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সামিল, সে ক্ষেত্রে জড়িত সংশ্লিষ্ট তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ছাড়া মাল্টিপারপাস ভবন নির্মাণ, শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণে কোটি টাকার অনিয়ম, ফিজিবিলিটি স্টাডি না করেই ডিপিপি প্রণয়ন ও অনুমোদন অনিয়ম এবং ডিপিপি সংশোধনে ৬ বছর সময়ক্ষেপণে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রকল্প পরিচালকের নির্দেশনায় ডিজাইন, স্কোপ পরিবর্তন হলেও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বিভাগীয় মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একাডেমিক ভবন ও স্টাফ নার্স ডরমিটরি ভবনের অনিয়মে ৩ সদস্যের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ উপেক্ষা করে ফ্যাসিস্ট আমলের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও মূল অপরাধীরা রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিনকে আহ্বায়ক করে গঠিত তদন্ত কমিটি গত ২৬ জুন বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীকে দায়ী করে প্রতিবেদন দেয়। এতে বলা হয়, ভবন নির্মাণকালে চুক্তির ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণকাজ সম্পাদনকালে সুপারভাইজারি কর্মকর্তা হিসেবে থাকা তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জি. এম. এম কামাল পাশা, এ কে এম গোলাম কবির এবং অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল কাদের ও মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী দায় এড়াতে পারেন না। এ ছাড়া অনুমোদিত ডিপিপিবহির্ভূতভাবে ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বিভিন্ন কাজের ব্যয় প্রাক্কলন ও দরপ্রস্তাব অনুমোদন প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ শহীদ মো. কবির, জিএম কামাল পাশা ও এ কে এম গোলাম কবির দায়ী মর্মে প্রতীয়মান। এ ছাড়া ডেলিগেশন অব ফিনান্সিয়াল পাওয়ার অনুযায়ী একাডেমিক ভবনের দরপত্র প্রস্তাব গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে শুধু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শুধু অনুমোদনে সম্মতি নিয়েই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। অর্থাৎ অনুমোদন বিহীনভাবেই একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজটি সম্পাদন করা হয়েছে, যার জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের তৎকালীন ক্রয় অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ যথা— অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (স্বাস্থ্য উইং) মো. আমান উল্লাহ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পিপিসি) খন্দকার ফওজী বিন ফরিদ, নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম তাজুল ইসলাম এবং প্রধান প্রকৌশলী মো. কবীর আহমেদ ভূঞা দায়ী। একাডেমিক ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলা নির্মাণেও ঠিকাদার নিয়োগে দাপ্তরিক প্রাক্কলন অনুমোদনের পূর্বেই দরপত্র আহ্বান ও চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি কাজগুলোতে পরিকল্পনা শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ও অনিয়মের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী এ জেড এম সফিউল হান্নান এবং শহীদ মো. কবীর, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, খুলনা গণপূর্ত জোন, দায়ী। তদন্ত কমিটির সুপারিশে বলা হয়, আলোচ্য প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রকল্পটির ডিপিপি প্রণয়ন থেকে শুরু করে বাস্তবায়নকালীন সকল পর্যায়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রকল্প পরিচালকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়ন মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রকল্প পরিচালক যথাযথ ভূমিকা পালন করেননি মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, একাডেমিক ভবন (৬ তলা ভিতে ৬ তলা পর্যন্ত) নির্মাণে বিভিন্ন অনিয়মে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাগণ দায়ী বিধায় তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে; এ ছাড়া আলোচ্য প্রকল্পটির মূল ডিপিপি প্রণয়নেও অনেক ত্রুটি ছিল। তাই ভবিষ্যতে প্রকল্প প্রণয়ন বিশেষ করে ব্যয় প্রাক্কলনে আরও সতর্কতা অবলম্বনের গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশনা প্রদান করা যায়। আলোচ্য প্রকল্পটির বাস্তবায়নকালীন মনিটরিংয়ে দুর্বলতা লক্ষণীয়, বিধায় ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন মনিটরিং জোরদার করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করা যায়। তথ্য বলছে, প্রকল্পটির বিভিন্ন সময়ে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন অন্তত পাঁচজন কর্মকর্তা। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন আরও পাঁচজন, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন ছয়জন। একই সময়ে দুজন প্রধান প্রকৌশলীও দায়িত্বে ছিলেন। আলাদা প্রকল্প পরিচালক তো ছিলেনই। সেইসঙ্গে উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলী পর্যায়েও একাধিক কর্মকর্তা প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। অদ্ভুতভাবে এই দীর্ঘ তালিকার কাউকেই অভিযুক্ত করা হয়নি। উল্টো প্রকল্পে স্বল্প মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা মাত্র দুজন প্রকৌশলীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো প্রকল্প পরিচালনা করেছেন এমন অনেক প্রভাবশালী কর্মকর্তা ছিলেন, যাদের প্রত্যক্ষ ছত্রচ্ছায়া ছাড়া ব্যয় তিনগুণ বৃদ্ধি, কেনাকাটা ও নির্মাণে এমন ব্যাপক অনিয়ম সম্ভব ছিল না। কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় সেই প্রভাবশালীরা সম্পূর্ণ ‘অদৃশ্য’। অভিযোগ আরও আছে—যে কাজের দায়ে দুইজন প্রকৌশলীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই একই কাজে জড়িত ছিলেন অন্তত আরও ছয়জন কর্মকর্তা। তবু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এই প্রকল্পে অনিয়মের আসল অপরাধীরা কারা, আর শাস্তি পেল কারা? সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল তদন্ত করা। আমরা তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করেছি। এরপর মন্ত্রণালয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বা আইন শাখা। কী ধরনের ব্যবস্থা নেবে, তা কেবল মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই বলতে পারবে।’



