মধ্যপ্রাচ্য কাঁপাচ্ছে ইসরায়েল, বড় দ্বিধায় সৌদি-আমিরাত – ইউ এস বাংলা নিউজ




মধ্যপ্রাচ্য কাঁপাচ্ছে ইসরায়েল, বড় দ্বিধায় সৌদি-আমিরাত

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ | ৪:৩৭ 15 ভিউ
সম্প্রতি ইসরায়েলের একের পর এক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কেঁপে উঠেছে ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, কাতার, তিউনিসিয়া ও ইয়েমেন। ঘটনাগুলো একসঙ্গে মিলেমিশে পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন সংঘাতে ঠেলে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েল গাজার ভেতরে সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানের নামে তীব্র হামলা চালালেও এবার তার পরিধি বেড়ে গিয়ে আশেপাশের দেশগুলোতেও আঘাত হানছে। এর ফলে শুধু সীমান্ত নয়, একাধিক আঞ্চলিক ফ্রন্ট একযোগে জ্বলে উঠেছে। পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। প্রথমেই নজর দিতে হয় ফিলিস্তিনের দিকে। গাজা উপত্যকা কয়েক মাস ধরেই রক্তাক্ত। সাম্প্রতিক হামলায় শত শত সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছেন, হাসপাতাল ও স্কুলে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোও বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার

সংস্থাগুলো একে ‘মানবিক বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করছে। কিন্তু ইসরায়েল দাবি করছে, তারা কেবল হামাসের অবকাঠামো ধ্বংস করছে। অথচ ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই হামলায় সাধারণ মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে গাজায় পানি ও খাদ্য সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো প্রবেশ করতে পারছে না, সীমান্ত বন্ধ। ফলে গাজার পুরো জনসংখ্যা মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি কেবল গাজায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। লেবাননের দক্ষিণ সীমান্তে ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের সংঘর্ষ তীব্র হয়ে উঠছে। ইসরায়েল কয়েকটি সীমান্ত গ্রাম ও ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে, হিজবুল্লাহ পাল্টা রকেট নিক্ষেপ করেছে। লেবানন আশঙ্কা করছে, এভাবে চলতে থাকলে পূর্ণাঙ্গ সীমান্তযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে। লেবাননের জনগণও

আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, কারণ তারা আগেও ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখেছে। এই উত্তেজনা শুধু লেবানন নয়, পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এর পাশাপাশি সিরিয়া আবারও পরিণত হয়েছে সংঘাতের ময়দানে। গত ৭ সেপ্টেম্বর হোমস প্রদেশের একটি সিরীয় বিমানঘাঁটি এবং লাতাকিয়ার কাছে একটি সামরিক ব্যারাকে আঘাত হেনেছে ইসরায়েল। এর আগেও দামেস্ক ও আলেপ্পোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ইসরায়েলের হামলায় সামরিক স্থাপনা ও বিমানঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েল বলছে, এগুলো ইরানপন্থি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন জায়গা। সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ অভিযোগ করেছিলেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে আগ্রাসী নীতি চালাচ্ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের পতনের পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় শত শত হামলা চালিয়েছে। দখল করে নেওয়া

গোলান মালভূমিতে নিজেদের দখলদারত্ব আরও বাড়িয়েছে। একই সময়ে কাতারও রেহাই পায়নি। হামাসের রাজনৈতিক নেতাদের অবস্থান লক্ষ্য করে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। কাতার এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ সরাসরি কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করবে। কাতার এতদিন হামাস ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল। কিন্তু রাজধানী দোহায় হামলা চালানো মানে ইসরায়েল সরাসরি কাতারকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এর ফলে উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যে নতুন উত্তেজনা দেখা দিতে পারে। কিছুদিনের মধ্যে মিসরও ইসরায়েলের হামলার শিকার হতে পারে। এদিকে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়াও এ আগ্রাসন থেকে বাদ যায়নি। হামাসপন্থী নেতাদের আশ্রয়দাতা বলে অভিযুক্ত করে ইসরায়েল তিউনিসিয়ায় হামলা

চালিয়েছে। তিউনিসিয়ার জনগণ ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং দেশটির সরকার একে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বলছে। উত্তর আফ্রিকার এই রাষ্ট্রে হামলা চালিয়ে ইসরায়েল জানিয়ে দিয়েছে, তাদের টার্গেট কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সীমাবদ্ধ নয়; বিশ্বজুড়ে যেখানেই প্রতিপক্ষ থাকবে, সেখানেই তারা আঘাত হানতে প্রস্তুত। এতে আরব জনমনে ক্ষোভ আরও তীব্র হচ্ছে এবং আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের এই অস্থির পরিস্থিতিতে সাইবার যুদ্ধও ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইসরায়েল শুধু সামরিক হামলা চালাচ্ছে না; বিভিন্ন মুসলিমপ্রধান দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক লক্ষ্য করে সাইবার হামলাও চালাচ্ছে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে কাতার, তিউনিসিয়া ও লেবাননের ব্যাংকিং ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়

হ্যাকিং ও ডেটা চুরি বেড়ে গেছে। এতে স্থানীয় প্রশাসন ও বেসরকারি খাতের কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, আর জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলি সামরিক ও কৌশলগত পরিকল্পনা এখন একাধিক ফ্রন্টে ছড়িয়ে পড়েছে, যা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। এরই মধ্যে ইয়েমেনের হুতি আন্দোলনও সক্রিয় হয়ে উঠছে। ইসরায়েলের হামলার প্রতিক্রিয়ায় হুতিরা রেড সি এলাকায় ইসরায়েলি জাহাজ ও স্বার্থকে টার্গেট করার ঘোষণা দিয়েছে। এতে বৈশ্বিক বাণিজ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্রপথ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ এরই মধ্যে রেড সি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। তবে হুতিদের পাল্টা হামলা রোধ করা সহজ হবে না, কারণ তারা এর আগেও সৌদি আরব ও

সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফলভাবে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে তেলের দাম ও পণ্য পরিবহনে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। উপসাগরীয় দেশগুলোও এখন বড় ধরনের দ্বিধার মধ্যে রয়েছে। সৌদি আরব ও ইউএই এতদিন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার দিকে এগোচ্ছিল। কিন্তু কাতার ও তিউনিসিয়ায় হামলার পর সেই প্রক্রিয়া হুমকির মুখে। সৌদি আরব জনমতের চাপে নরম অবস্থান নিতে বাধ্য হতে পারে। অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এখনো অপেক্ষার নীতিতে আছে। এই দ্বিধায়, উপসাগরীয় দেশগুলো কৌশলগতভাবে কোন দিক বেছে নেবে, তা এখনো নির্ধারণ করতে পারেনি তারা। আন্তর্জাতিক পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ইসরায়েলকে সমর্থন করছে। হোয়াইট হাউস বলছে, ইসরায়েলকে আত্মরক্ষার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একদল দেশ ইসরায়েলের নিরাপত্তার পক্ষে, অন্যদিকে মানবিক সংকট ঠেকাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি করছে। চীন ও রাশিয়া এর সুযোগ নিয়ে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানকে জোরালো করছে। বিশেষ করে রাশিয়া সিরিয়া ও ইরানের সঙ্গে একযোগে নতুন কৌশল সাজাচ্ছে। চীন আবার আরব দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে। এর ফলে বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন ব্লক গড়ে উঠতে পারে। বর্তমানে আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও কূটনৈতিক চাপও তীব্র হচ্ছে। ফিলিস্তিন, লেবানন ও সিরিয়ার সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে। একই সঙ্গে তিউনিসিয়া, কাতার ও ইয়েমেনের সরকার আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য আরব লীগ ও ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছে। এই পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কৌশল নিতে পারে। এতে শুধু সামরিক নয়, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক তেল ও বাণিজ্য নেটওয়ার্কেও এর প্রভাব পড়তে পারে। কারণ রেড সি ও সুয়েজ খাল অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে গ্লোবাল শিপিং লাইন স্থবির হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, এই সংঘাত কতটা বাড়বে? যদি লেবানন ও সিরিয়া পুরোপুরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেটি হবে সরাসরি আঞ্চলিক যুদ্ধ। আর হুতিরা রেড সি নিয়ন্ত্রণে সফল হলে বৈশ্বিক অর্থনীতি বড় ধরনের ধাক্কা খাবে। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা বিশ্ব তেলবাজারে দামের অস্থিরতা সৃষ্টি করবে, যা বাংলাদেশসহ আমদানি-নির্ভর দেশগুলোর ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। মুসলিম বিশ্বের জনমত যদি ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানকে আরও তীব্র করে, তবে সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলো বাধ্য হবে নিজেদের নীতি পরিবর্তন করতে। সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলাগুলো শুধু সামরিক অভিযান নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র পাল্টে দেওয়ার মতো ঘটনা। এটি মানবিক বিপর্যয় বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন মেরুকরণ তৈরি করছে। ভবিষ্যতে এই আগুন কোন দিকে ছড়িয়ে পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—মধ্যপ্রাচ্য আর আগের অবস্থায় ফিরছে না, বরং আরও অস্থির, আরও জটিল এক বাস্তবতার দিকে এগোচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
দেশের ৬৪ জেলায় হবে ‘মডেল মন্দির’ মধ্যপ্রাচ্য কাঁপাচ্ছে ইসরায়েল, বড় দ্বিধায় সৌদি-আমিরাত নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ১৯৭৩ সালে বিমান ছিনতাই করেছিলেন ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড কীভাবে সহ্য করছে আমিরাত? শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল রাশিয়ার পূর্ব উপকূল মেট্রোরেলের টিকিট ব্যবস্থাপনায় ঠিকাদার নিয়োগে নয়ছয় সাবেক ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম গ্রেপ্তার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে জাকসু নির্বাচনে আরেক কমিশনারের পদত্যাগ সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে হস্তান্তর করল বিএসএফ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড কীভাবে সহ্য করছে আমিরাত? ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, তেল আবিবে বেজে উঠল সাইরেন এবার ইসরাইলি কূটনীতিককে তলব করল স্পেন দরপত্র ছাড়াই ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার কাজ সম্পন্ন সেই অধ্যক্ষ লুটে নিলেন ৫ কোটি টাকা ৩৮৯ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় আনতে তিন চ্যালেঞ্জ চট্টগ্রামে দখল চাঁদাবাজি নিয়ে খুনোখুনি বাড়ছে দখলদাররা গিলে খাচ্ছে কীর্তনখোলা নদী ছাত্র-জনতাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদলেন ইউএনও