
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

খুলনা মৎস্য বীজ খামার দখল খুবি শিক্ষার্থীদের

তারাগঞ্জে শ্বশুর-জামাতাকে পিটিয়ে হত্যা

নালিতাবাড়ী সীমান্ত দিয়ে ১০ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করেছে বিএসএফ

‘হত্যার প্রতিশোধ’ নিতে আসামিকে পিটিয়ে হত্যা

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকা থেকে ১১০০ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার

গাজীপুরে যেভাবে হানিট্র্যাপের শিকার হন যাত্রীরা

বগুড়ায় দুদকের গণশুনানি মঞ্চে জুতা নিক্ষেপ
‘মোর নির্দোষ স্বামীক কেন মারিল, বেটির বিয়ার কী হইবে’

ছেলে জয় দাস (১৩) ও মেয়ে রূপা দাসকে (১০) বুকে জড়িয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন ভারতী দাস (৩৫)। জ্ঞান ফিরতেই আহাজারি, ‘এ্যালা মুই কেমন করি বাঁচিম? ছোট ছাওয়া দুইটাক কায় খাওয়াইবে, পড়াইবে। মোর নির্দোষ স্বামীক কেন মারিল, বেটিটার বিয়ার কী হইবে? মুই কোনটে যাইম, কী করিম? কার কাছোত বিচার চাইম?’
ভ্যানচোর সন্দেহে শনিবার রাতে রংপুরের তারাগঞ্জের সয়ার ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রূপলাল দাস (৪০) ও তাঁর ভাগনির স্বামী প্রদীপ দাস (৩৫)।
রূপলালের বাড়ি উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের ঘনিরামপুর গ্রামে। তিনি স্থানীয় বাজারে জুতা সেলাই করতেন। ছোট্ট টিনের ঘরে বৃদ্ধা মা লালিচা দাস, স্ত্রী ভারতী দাস, তিন সন্তানসহ থাকতেন রূপলাল। অল্প আয়ে ছয়জনের
সংসার চালাতেন তিনি। সহায়-সম্বল বলতে চার শতক জমি। আর ভ্যানচালক প্রদীপের বাড়ি মিঠাপুকুরের বালুয়াভাটা গ্রামে। রোববার ঘনিরামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রূপলালের বাড়িতে চলছে আহাজারি। স্বজনরা বলছেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা দিশেহারা। বাড়ির উঠোনে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল রূপলালের বড় মেয়ে নূপুর দাস (১৮)। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে সে বলে, ‘এ্যালা কায় হামাক দ্যাখপে, কায় মাও কয়া দাকপে, হামরা যে এতিম হয়া গেইনো। হামাক নিঃস্ব বানাইল।’ নূপুর বলে, রোববার আমার বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য প্রদীপদা মিঠাপুকুর থেকে শনিবার রাতে আমাদের বাড়ি আসছিলেন। রাস্তা না চেনায় কাজীরহাট থেকে তিনি বাবাকে ডেকে নেন। সেখান থেকে প্রদীপদার ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে
বটতলায় লোকজন তাদের আটক করে মারধর শেষে ফেলে যায়। খবর পেয়ে রাতে বুড়িরহাট গিয়ে বাবা ও দাদার রক্তাক্ত দেহ শনাক্ত করি। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধা লালিচা দাস। স্বজনরা তাঁর মুখ ও মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরান। বাড়ির এক কোণে বসে বুক চাপড়ে তাঁর বিলাপ, ‘মোর বেটার (ছেলে) কী দোষ আছিল? মাইনষের জুতা-সেন্ডেল সিলাই করি সংসার চালাইচে, কারও কোনো ক্ষতি করে নাই। এ্যালা হামাক দেইখপার যে কায়ও থাকিল না। যারা মোর ব্যাটাক মারছে, তার বিচার চাই।’ কুর্শা ইউনিয়নের সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, ‘রূপলালকে মেরে ফেলায় পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ল। তাদের সংসার কীভাবে চলবে, আল্লাহ জানেন।’ তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ
ফারুক জানান, গণপিটুনিতে নিহত দুজনের মধ্যে রূপলাল দাসের স্ত্রী ভারতী দাস অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ৭০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। নিহতের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপলাল দাসের মেয়ে নূপুর দাসের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মিঠাপুকুরের শ্যামপুর এলাকার লালচাঁদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার জন্য শনিবার রাতে মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে রূপলালের বাড়ি আসছিলেন প্রদীপ। গ্রামের ভেতর দিয়ে আসার সময় রাস্তা না চেনায় প্রদীপ সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রূপলালকে ফোনে ডেকে নেন। সেখান থেকে দুজন ভ্যানে ঘনিরামপুর আসছিলেন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যানচোর সন্দেহে দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এর পর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে।
এক পর্যায়ে প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের বোতল বের করা হয়। একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়েন আলমগীর হোসেন ও মেহেদী হাসান। এতে সন্দেহ আরও বাড়ে। অজ্ঞান করে ভ্যান চুরির সন্দেহে তাদের মারধর করা হয়। অচেতন হলে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রূপলাল ও প্রদীপকে ফেলে রাখা হয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে রূপলালকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। প্রদীপকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোববার ভোরে মারা যান। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যায় রূপলালের লাশ বাড়িতে আনার পর এলাকাবাসী সেটি রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বেলতলীতে রেখে বিক্ষোভ করেন। দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তারের
দাবি জানান তারা। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ইউএনওর আশ্বাসে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা। তারাগঞ্জ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপন দত্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। মাদারীপুরে তিনজনকে পিটুনি, চোখ উৎপাটনের চেষ্টা মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সদরের শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ বাঘাবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন– মাঠ বাঘাবাড়ির জাকির শেখ, ইস্রাফিল মাতুব্বর ও শ্রীনদী রায়েরকান্দি গ্রামের বাবুল শিকদার। জাকিরের চোখ উৎপাটনের চেষ্টা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে মাঠ বাঘাবাড়িতে স্থানীয় যুবসমাজ পাহারা দেয়। শনিবার রাতে তিনজনের চলাফেরায় সন্দেহ হলে প্রহরীরা ধরে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ
তিনজনকে হেফাজতে নেয়। গুরুতর আহত জাকিরকে প্রথমে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জাকিরের আত্মীয় রেজাউল করিম বলেন, ‘এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় গেলেই কী মারধর করতে হবে? দেশে পুলিশ-প্রশাসন তাহলে কীসের জন্য? জাকিরের চোখ দুটি হয়তো রক্ষা পাবে না।’ সদর মডেল থানার ওসি আদিল হোসেন জানান, বিষয়টি তারা তদন্ত করছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংসার চালাতেন তিনি। সহায়-সম্বল বলতে চার শতক জমি। আর ভ্যানচালক প্রদীপের বাড়ি মিঠাপুকুরের বালুয়াভাটা গ্রামে। রোববার ঘনিরামপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রূপলালের বাড়িতে চলছে আহাজারি। স্বজনরা বলছেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা দিশেহারা। বাড়ির উঠোনে মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিল রূপলালের বড় মেয়ে নূপুর দাস (১৮)। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে সে বলে, ‘এ্যালা কায় হামাক দ্যাখপে, কায় মাও কয়া দাকপে, হামরা যে এতিম হয়া গেইনো। হামাক নিঃস্ব বানাইল।’ নূপুর বলে, রোববার আমার বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার কথা ছিল। এ জন্য প্রদীপদা মিঠাপুকুর থেকে শনিবার রাতে আমাদের বাড়ি আসছিলেন। রাস্তা না চেনায় কাজীরহাট থেকে তিনি বাবাকে ডেকে নেন। সেখান থেকে প্রদীপদার ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে
বটতলায় লোকজন তাদের আটক করে মারধর শেষে ফেলে যায়। খবর পেয়ে রাতে বুড়িরহাট গিয়ে বাবা ও দাদার রক্তাক্ত দেহ শনাক্ত করি। ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধা লালিচা দাস। স্বজনরা তাঁর মুখ ও মাথায় পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরান। বাড়ির এক কোণে বসে বুক চাপড়ে তাঁর বিলাপ, ‘মোর বেটার (ছেলে) কী দোষ আছিল? মাইনষের জুতা-সেন্ডেল সিলাই করি সংসার চালাইচে, কারও কোনো ক্ষতি করে নাই। এ্যালা হামাক দেইখপার যে কায়ও থাকিল না। যারা মোর ব্যাটাক মারছে, তার বিচার চাই।’ কুর্শা ইউনিয়নের সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, ‘রূপলালকে মেরে ফেলায় পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ল। তাদের সংসার কীভাবে চলবে, আল্লাহ জানেন।’ তারাগঞ্জ থানার ওসি এম এ
ফারুক জানান, গণপিটুনিতে নিহত দুজনের মধ্যে রূপলাল দাসের স্ত্রী ভারতী দাস অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ৭০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। নিহতের পরিবার, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রূপলাল দাসের মেয়ে নূপুর দাসের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল মিঠাপুকুরের শ্যামপুর এলাকার লালচাঁদ দাসের ছেলে ডিপজল দাসের সঙ্গে। বিয়ের দিন-তারিখ ঠিক করার জন্য শনিবার রাতে মিঠাপুকুর থেকে নিজের ভ্যান চালিয়ে রূপলালের বাড়ি আসছিলেন প্রদীপ। গ্রামের ভেতর দিয়ে আসার সময় রাস্তা না চেনায় প্রদীপ সয়ার ইউনিয়নের কাজীরহাট এলাকায় এসে রূপলালকে ফোনে ডেকে নেন। সেখান থেকে দুজন ভ্যানে ঘনিরামপুর আসছিলেন। রাত ৯টার দিকে তারাগঞ্জ-কাজীরহাট সড়কের বটতলা এলাকায় পৌঁছালে ভ্যানচোর সন্দেহে দুজনকে থামান স্থানীয় কয়েকজন। এর পর সেখানে লোক জড়ো হতে থাকে।
এক পর্যায়ে প্রদীপ দাসের ভ্যানে থাকা বস্তা থেকে চারটি প্লাস্টিকের বোতল বের করা হয়। একটি বোতল খুললে ভেতরে থাকা তরলের ঘ্রাণে অসুস্থ হয়ে পড়েন আলমগীর হোসেন ও মেহেদী হাসান। এতে সন্দেহ আরও বাড়ে। অজ্ঞান করে ভ্যান চুরির সন্দেহে তাদের মারধর করা হয়। অচেতন হলে বুড়িরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রূপলাল ও প্রদীপকে ফেলে রাখা হয়। রাত ১১টার দিকে পুলিশ তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে রূপলালকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। প্রদীপকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রোববার ভোরে মারা যান। এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যায় রূপলালের লাশ বাড়িতে আনার পর এলাকাবাসী সেটি রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের বেলতলীতে রেখে বিক্ষোভ করেন। দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তারের
দাবি জানান তারা। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ইউএনওর আশ্বাসে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা। তারাগঞ্জ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক পাপন দত্ত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। মাদারীপুরে তিনজনকে পিটুনি, চোখ উৎপাটনের চেষ্টা মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে সদরের শিরখাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম মাঠ বাঘাবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন– মাঠ বাঘাবাড়ির জাকির শেখ, ইস্রাফিল মাতুব্বর ও শ্রীনদী রায়েরকান্দি গ্রামের বাবুল শিকদার। জাকিরের চোখ উৎপাটনের চেষ্টা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, চুরি-ডাকাতি প্রতিরোধে মাঠ বাঘাবাড়িতে স্থানীয় যুবসমাজ পাহারা দেয়। শনিবার রাতে তিনজনের চলাফেরায় সন্দেহ হলে প্রহরীরা ধরে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ
তিনজনকে হেফাজতে নেয়। গুরুতর আহত জাকিরকে প্রথমে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জাকিরের আত্মীয় রেজাউল করিম বলেন, ‘এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় গেলেই কী মারধর করতে হবে? দেশে পুলিশ-প্রশাসন তাহলে কীসের জন্য? জাকিরের চোখ দুটি হয়তো রক্ষা পাবে না।’ সদর মডেল থানার ওসি আদিল হোসেন জানান, বিষয়টি তারা তদন্ত করছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।