যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ‘যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব’, হামাস ও গাজার সার্বিক পরিস্থিতি – ইউ এস বাংলা নিউজ




যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ ‘যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব’, হামাস ও গাজার সার্বিক পরিস্থিতি

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৩০ মে, ২০২৫ | ৫:৪০ 12 ভিউ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার ইসরাইলের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরাসরি প্রত্যাখ্যান না করলেও প্রস্তাবটি ‘আলোচনাধীন’ বলে জানিয়েছে হামাস। তবে এই প্রস্তাবের বর্তমান রূপ গাজায় ‘হত্যা ও দুর্ভিক্ষের ধারাবাহিকতা’ ছাড়া আর কিছুই বয়ে আনবে না বলেই অভিযোগ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি। এক বিশেষ প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোপন এক পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার প্রথম সপ্তাহেই ২৮ জন ইসরাইলি (জীবিত ও মৃত) জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ১,২৩৬ জন ফিলিস্তিনি বন্দি ও ১৮০টি লাশ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। প্রস্তাবিত সর্বশেষ এই পরিকল্পনাটির ব্যাপারে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং মধ্যস্থতাকারী মিশর ও কাতারের গ্যারান্টিতে দিয়েছে বলেও

উল্লেখ করেছে রয়টার্স। এতে বলা হয়েছে- হামাস যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হলেই গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানো শুরু হবে। একই সঙ্গে মানবিক ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাবে জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। ইসরাইলি গণমাধ্যমও জানিয়েছে, যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় আটক জিম্মিদের পরিবারকে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ যে চুক্তিটি এনেছেন, ইসরাইল তা গ্রহণ করেছে। আল জাজিরা সূত্রে জানা গেছে, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বৃহস্পতিবার জানান, দখলদার ইসরাইল এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ‘অনুমোদন’ দিয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ এটি হামাসের বিবেচনার জন্য জমা দিয়েছেন। এদিকে, হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম

নাইম রয়টার্স-কে বলেন, ‘এ প্রস্তাব আমাদের জনগণের কোনো দাবিই পূরণ করে না, যার মধ্যে প্রধান হলো- যুদ্ধ বন্ধ করা’। ‘তবুও হামাস নেতৃত্ব জাতীয় দায়িত্ব নিয়ে প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া খতিয়ে দেখছে’, যোগ করেন তিনি। হামাসের আরেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি রয়টার্সকে জানান, এতে ইসরাইলের পক্ষ থেকে যুদ্ধ বন্ধের, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বা অবাধ মানবিক সাহায্যের অনুমতির কোনো নিশ্চয়তা নেই– যা হামাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির পক্ষ থেকে রয়টার্সকে জানানো হয়েছে, তারা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে এবং শুক্রবার বা শনিবার এর জবাব দেবে। পরিকল্পনায় যা আছে: • যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইসরাইল গাজায় সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ করবে। • যখন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, হামাস

তখন বাকি ৩০ জন ইসরাইলি জিম্মিকেও মুক্তি দেবে। • ইসরাইলি বাহিনী ধাপে ধাপে গাজা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। আগের যে যুদ্ধবিরতির উদ্যোগগুলো ব্যর্থ হয়েছে, তার কারণ ছিল- হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে গভীর মতপার্থক্য। দখলদার ইসরাইল চাইছে হামাস সম্পূর্ণ নিরস্ত্র হোক, সংগঠন হিসেবে ভেঙে পড়ুক ও তাদেরকে পুরোপুরি নির্মূল করতে। একই সঙ্গে হামাসের হাতে থাকা বাকি ৫৮ জন জিম্মিকে মুক্ত করতে। এরপরেই তারা আগ্রাসন থামাতে রাজি। তবে, হামাস ইসরাইলের এসব শর্ত প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ইসরাইলকে অবশ্যই গাজা থেকে সেনা সরিয়ে নিতে হবে এবং যুদ্ধের স্থায়ী অবসান ঘটাতে হবে। এ নিয়ে স্টিভ উইটকফ বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি এবং দীর্ঘমেয়াদি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানোর ব্যাপারে

আমার ভালো ধারণা হয়েছে’। এই ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে স্থায়ী চুক্তি না হলে, সেটি বর্ধিত হতে পারে বলেও পরিকল্পনায় উল্লেখ রয়েছে। তবে হামাস নেতা সামি আবু জুহরি বলেন, এই প্রস্তাবে ইসরাইলের দৃষ্টিভঙ্গির পুরো প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এতে যুদ্ধ শেষ, সেনা প্রত্যাহার কিংবা সহায়তা প্রবেশের কোনো নিশ্চয়তা নেই। যেগুলো হামাসের প্রধান দাবি। মূলত ১৯৬৭ সালের যুদ্ধের পর ইসরাইল জর্ডানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখলে করে নেয়। যেখানে বর্তমানে প্রায় ৭ লাখ ইহুদি বসতি স্থাপনকারী ও ২৭ লাখ ফিলিস্তিনি বসবাস করেন। এর মধ্যে ইসরাইল পূর্ব জেরুজালেমকে সংযুক্ত করলেও দখলকৃত পশ্চিম তীরে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করেনি। অন্যদিকে, দখলদার ইসরাইলের হাতে

জাতিগত নিধনের শিকার ফিলিস্তিনিরা অবশ্য পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা অঞ্চলকে একটি ভবিষ্যত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে বিবেচনা করে। আর এ নিয়েই মূলত ইসরাইলের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত। এরই জেরে গাজায় ধারাবাহিকভাবে আগ্রাসন চালাতে থাকে ইসরাইল। যার তীব্র প্রতিবাদস্বরূপ, ইসরাইলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর চালানো হামাসের অভিযানে প্রায় ১,২০০ ইসরাইলি নিহত হন। একই সঙ্গে ২৫১ জনকে গাজায় আটক করে নেওয়া হয়। জবাবে ইসরাইল যে সামরিক অভিযান শুরু করে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ অনুযায়ী, দীর্ঘ ১৯ মাস ধরে চলা সেই আগ্রাসনে ৫৪,২০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি বাহিনীর তীব্র বিমান হামলায় গাজা এখন কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া

অফিস তাদের মৃতের সংখ্যা ৬১,৭০০-এরও বেশি আপডেট করেছে। জানিয়েছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষ মৃত বলে ধারণা করা হচ্ছে। ক্রমেই বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ এ অবস্থায় ইউরোপের একাধিক দেশ সম্প্রতি গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও কানাডা সতর্ক করে বলেছে—যদি ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন বন্ধ না করে এবং পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রাখে, তাহলে তারা টার্গেটেড নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে। ইসরাইলের প্রতি সাধারণত সহানুভূতিশীল ইউরোপের অনেকগুলো দেশই এখন যুদ্ধ থামানোর দাবি জানাচ্ছে। পশ্চিম তীরে নতুন ইহুদী বসতি এদিকে, নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ইসরাইলি সরকার ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিম তীরে আরও ২২টি নতুন ইহুদি বসতি গঠনের অনুমোদন দিয়েছে। দেশটির অর্থমন্ত্রী ও চরমপন্থি নেতা বেজালেল স্মোটরিচ বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দেন। সিদ্ধান্তটি এমন এক সময়ে এলো, যখন ইউরোপের একাধিক দেশ পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ না হলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে। খবর রয়টার্সের। স্মোটরিচ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জানান, নতুন এই বসতিগুলো হবে উত্তর পশ্চিম তীরে। যদিও সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানাননি তিনি। তা সত্ত্বেও ইসরাইলের কট্টরপন্থি ইয়েশা কাউন্সিলের প্রধান ইসরাইল গাঞ্জ এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্ত স্পষ্ট বার্তা দেয় যে—আমরা শুধু থেকে যেতে চাই না, বরং এখানেই ইসরাইল রাষ্ট্রকে আরও শক্তিশালী করতে চাই’। গাজার পরিস্থিতি এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় ও ইসরাইলের অনুমোদনে গঠিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামের একটি বেসরকারি সংগঠন বৃহস্পতিবার গাজায় তাদের তৃতীয় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র চালু করেছে। যদিও জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা এটি অপ্রতুল ও ত্রুটিপূর্ণ বলে সমালোচনা করেছে। জিএইচএফ এখন পর্যন্ত প্রায় ১৮ লাখ খাবার বিতরণ করেছে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও বিতরণকেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা করেছে। গত মঙ্গলবার ত্রাণ সহায়তা বিতরণের সময় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ সময় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ত্রাণের জন্য হুড়োহুড়ি করলে নিরাপত্তারক্ষীদের সরে যেতে বাধ্য করা হয়। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহল চাপ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তারা, ইসরাইলকে সহায়তা প্রবেশের পথ খুলে দিতে এবং যুদ্ধ থামাতে হবে বলে জোর দাবি জানিয়েছে। মূলত অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের হার ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। একদিকে ইসরাইলি সামরিক অভিযান, অন্যদিকে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংস হামলা—ফিলিস্তিনিদের জীবনে ভয়াবহ অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত ট্রেনে ফিরতি যাত্রা: ১২ জুনের টিকিট বিক্রি আজ কর অব্যাহতিতে লাগাম কমছে না ক্রীড়া সামগ্রীর দাম! ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তে কাজ শুরু জামুকার কাজ শুরুর আগেই স্থগিত হয়ে গেল প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলপন্থি বিক্ষোভে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, আহত ৬ পশ্চিম তীর সফরে যেতে না দেওয়া ইসরাইলের উগ্রবাদীতার প্রমাণ: সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘লাইফ সাপোর্টে’ ঢাকা দক্ষিণ সিটির সেবা গাজায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৭ ফিলিস্তিনি নিহত রাশিয়ার ৪০টির বেশি বোমারু বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের কিছু ট্রেন বিলম্বে চললেও যাত্রীদের মুখে হাসি পাকিস্তানের লাহোরে টাইগারদের ব্যাটিং তাণ্ডব ভারতীয় গণমাধ্যমে মিথ্যা সংবাদ, আইএসপিআরের প্রতিবাদ ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বেন-গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা পশ্চিমারা অনেক আগেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে নগদে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুদক, তলব করা হতে পারে আতিক ও জুঁইকে বাংলাদেশিসহ ১০৫ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে মালয়েশিয়া বরুড়ায় বাজারে প্রকাশ্যে শিয়ালের মাংস বিক্রি সালথায় ৭ আ.লীগ নেতাকর্মী গ্রেফতার