শুরুতে সতর্ক না হওয়ায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি – ইউ এস বাংলা নিউজ




শুরুতে সতর্ক না হওয়ায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৮ নভেম্বর, ২০২৪ | ৯:৩৭ 21 ভিউ
জ্বর মানবদেহের যে কোনো রোগের সাধারণ উপসর্গ হলেও ডেঙ্গুজ্বর হয় এডিস মশার কামড়ে। উভয় জ্বরের শুরুর লক্ষণ প্রায় এক। তবে জ্বর হলেই অনেকে মনে করেন ঋতু পরিবর্তনজনিত কারণে হয়েছে। ফলে তেমন গুরুত্ব দেন না। ডেঙ্গু আক্রান্তের শুরুতে সতর্ক না হওয়ায় রোগীর শারীরিক অবস্থা জটিল হয়ে শক সিনড্রোম (রক্তচাপ ও রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়) দেখা দেয়। বিশেষ করে যারা কোমরবিডিটিতে (জটিল রোগে আক্রান্ত) ভুগছেন তাদের জটিলতা বেশি হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুজ্বরে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নেওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটছে। সবশেষ বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৭ জন মারা গেছেন। এ বছর এখন

পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেলেন ৩৩৭ জন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ২০৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৯ হাজার ৪৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী। সপ্তাহখানেক আগে জ্বরে আক্রান্ত হন রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষক জায়েদ হোসাইন। মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। বৃহস্পতিবার জায়েদের এক সহকর্মী জানান, কয়েক মাস আগে স্যারের একটা অস্ত্রোপচার হয়। তারপর থেকে মাঝেমধ্যে শরীরে জ্বরভাব হতো। শেষবার জ্বর এলে তেমন গুরুত্ব দেননি। তারপর হঠাৎ করে শক সিনড্রোম দেখা দেয়। হাসপাতালে নিলেও চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হওয়ায় বুধবার মারা যান। বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্যামলীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতালের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ২৬ নম্বর শয্যায় ডেঙ্গু

আক্রান্ত ৫ বছর বয়সি অভ্র অধিকারীকে ডাবের পানি পান করাচ্ছিলেন মা শর্মিলী অধিকারী। তিনি বলেন, ছেলেকে নিয়ে শনিবার যশোর থেকে রাজধানীর শেওরাপাড়ায় স্বামীর কাছে আসেন। রোববার সকালে ছেলের জ্বর আসে। মিরপুরের এমআর খান শিশু হাসপাতালে নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু পজিটিভ হয়। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখান থেকে শিশু হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন এমন একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে সেরে যায়। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে। ‘হেমারেজিক ফিভার’ হলে ডেঙ্গুতে রোগীর চোখে রক্ত জমে যায়। নাক, দাঁতের মাঢ়ি থেকে রক্ত ঝরে; মুখ, কান, মলদ্বার এ রকম যে কোনো একটি বা একের

অধিক অংশ দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। বমি ও কাশির সঙ্গেও রক্ত বের হতে পারে। অন্যদিকে ‘শক সিনড্রোম’ হলে রোগীর রক্তচাপ ও রক্তের অনুচক্রিকা কমে যায়, অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়। এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীর শক সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে। গত বছর শক সিনড্রোমের রোগী আরও বেশি ছিল। কারও মধ্যে শক সিনড্রোম বা হেমোরজিকের উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তারা। বিশেষজ্ঞরা জানান, ডেঙ্গুর চারটি ধরন (ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪) রয়েছে। গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউিট (আইডিসিআর) ডেঙ্গু পজিটিভ ৮৯টি নমুনা বিশ্লেষণ করে সেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ ডেন-২ এর উপস্থিতি পেয়েছে।

পরপর দুই বছর ডেঙ্গুর একই সেরোটাইপ বা ধরনের আধিপত্যের বিষয়ে আইডিসিআরের সায়েন্টিফিক অফিসার (ভাইরোলজি বিভাগ) ডা. আব্দুল্লাহ ওমর নাসিফ বলেন, সাধারণত ডেঙ্গুর একটি সেরোটাইপের প্রাধান্য থাকে তিন থেকে চার বছর। এ সময় বড় একটি সংখ্যক মানুষ এই সেরোটাইপে আক্রান্ত হওয়ার পর তাদের মধ্যে ইমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি) হয়। গত বছর সেরোপটাইপ-২ এর প্রাধান্য দেখা গেছে। তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সাল থেকে আইডিসিআর ডেঙ্গুর সেরোটাইপের ডাটা সংরক্ষণ করছে। দেখা গেছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেরোটাইপ-২ এর প্রাধান্য ছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল সেরোটাইপ-৩। এরপর ২০২৩ থেকে সেরোটাইপ-২ প্রভাব বিস্তার করছে। ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা যে

কোনো রোগের শুরুতে সতর্ক হই না। ডেঙ্গুজ্বরে প্রথমদিকে সতর্ক না হওয়ায় অনেক রোগী শকে চলে যাচ্ছে। অনেকে যথাসময়ে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে সবার আগে মশক নিধনে জোর দিতে হবে। কারও জ্বর হলেই বা ডেঙ্গু সন্দেহ হলেই পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গু টেস্টে অবহেলা করা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না।’ তিনি বলেন, দিনের বেলায় মশার কামড় থেকে বাঁচতে হলে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে ফুলহাতা জামা-প্যান্ট পরিধান করতে হবে। দিনে বা রাতে ঘুমানোর আগে মশারি টানাতে হবে। কারও সাধারণ জ্বর, সর্দি-কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। এতে রোগ নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসা

নেওয়া সহজ হবে। রোগীর ব্যবস্থাপনায় পরিবার থেকে শুরু করে হাসপাতাল সব জায়গায় শতভাগ প্রস্তুতি থাকতে হবে। এজন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে মশা নিধনে গুরুত্ব দিতে হবে। মশা জরিপের ক্ষেত্রে শুধু প্রাকবর্ষা, বর্ষাকাল ও বর্ষাপরবর্তী মশা জরিপ করলে হবে না। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিদিন সার্ভিলেন্স (নজরদারি) করে এডিস মশা প্রজননে হট স্পস্টগুলো চিহ্নিত করতে হবে। সে অনুযায়ী মশার আবাসস্থল ধ্বংস ও বংশবিস্তার রোধ করতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসাব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ১২০৯ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৬৯ হাজার ৪৫৬ জন ডেঙ্গুরোগী। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া সাতজনের মধ্যে চারজন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার এবং দুজন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের। মৃতদের মধ্যে একজন খুলনা বিভাগের। গত একদিনে আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার ৪০৬ জন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা বিভাগে ২২৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৬০ জন, বরিশাল বিভাগে ১৩৮ জন, খুলনা বিভাগে ১৩৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪০ জন, রাজশাহীতে ৭১ জন, রংপুর বিভাগে ২৫ জন এবং সিলেট বিভাগে চারজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতারি পরোয়ানা ক্যালিফোর্নিয়া উপকূলে উদ্ধার হওয়া এই মাছ নিয়ে কেন এত জল্পনা? জিম্মি মুক্তির জন্য যে শর্ত দিল হামাস কারাজীবন দীর্ঘায়িত হচ্ছে ইমরানের, ফের নতুন মামলায় গ্রেফতার ইতিহাসের নিষ্ঠুর স্বৈরশাসকদের অদ্ভূত যতসব স্বভাব বিষ মিশিয়ে ১৪ বন্ধুকে হত্যা, যে সাজা হলো সেই থাই তরুণীর রোনাল্ডো বক্সে, মেসি পুরো মাঠেই ভয়ঙ্কর: রদ্রি ঢাকায় আন্তর্জাতিক কিরাত সম্মেলনে অংশ নেবেন বিশ্বখ্যাত কারিরা আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করছে বড় অঙ্কের জরিমানার মুখে মেটা হাসিনার পতনের পর জোটের শীর্ষ নেতারা এখন কোথায়? গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৮৮ ফিলিস্তিনি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পরামর্শক টবি ক্যাডম্যান আজ গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় র‍্যাঙ্কিং থেকে সাকিবের নাম সরিয়ে দিল আইসিসি লেবাননে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা করতে বৈরুত থেকে ইসরাইলে মার্কিন দূত এবার রাশিয়ায় ব্রিটিশ স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করল ইউক্রেন আজ সারা দিন কেমন থাকবে, যা বলল আবহাওয়া অফিস সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ যুক্তরাজ্য সফর শেষ করে দেশে ফিরলেন জামায়াত আমির