‘চোখ বুজে’ টাকা দিল জনতা ব্যাংক – ইউ এস বাংলা নিউজ




‘চোখ বুজে’ টাকা দিল জনতা ব্যাংক

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ | ৬:৪৫ 18 ভিউ
২০১২ থেকে ২০১৬ সাল-এই ৪ বছরে এ্যানন টেক্স গ্রুপের ব্যাংক ঋণ বেড়েছে ৮ গুণের বেশি। ২০১২ সালে এই ঋণ ছিল ৬৭৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকায়। ওই সময়ে ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। কিন্তু গ্রুপটির ব্যবসায় ঘটেনি তেমন প্রসার। ঋণের টাকা কোথায় গেছে তারও সন্ধান মেলেনি। ঋণের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘটেছে জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা। আলোচ্য ৪ বছরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবে একরকম ‘চোখ বুজে’ এ্যানন টেক্স গ্রুপকে ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক-এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তারা জানান, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়নি ব্যাংক আইনের কোনো বিধিবিধান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অখ্যাত

এই গ্রুপটিকে শুধু ঋণ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, এর বিপরীতে আরোপিত সুদ মওকুফে উদারহস্ত ছিল ব্যাংকটি। কয়েক দফায় বেআইনিভাবে ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার সুদ মওকুফের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু বিধিসম্মত হয়নি বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল করে দিয়েছে। সুদ মওকুফ, নতুন ঋণের জোগান, নীতি সহায়তায় ছাড় এসব সুবিধা দিয়েও গ্রুপটিকে ঋণখেলাপির তালিকা থেকে আটকাতে পারেনি ব্যাংক। গ্রুপটির মোট ৭৭৫৫ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে খেলাপি ৭৭১৩ কোটি। অর্থাৎ মাত্র ৪২ কোটি টাকার ঋণ নিয়মিত রয়েছে। অখ্যাত এই গ্রুপের মালিক ইউনূস বাদল। ব্যবসায়ী হিসাবে তার তেমন কোনো পরিচিতি নেই। বরং ঋণ জালিয়াতির কারণে তিনি ব্যাপকভাবে আলোচিত। ২০১৭ সালের আগ পর্যন্ত

ব্যাংক খাতে এ্যানন টেক্স গ্রুপের ঋণই ছিল সবচেয়ে বড় জালিয়াতির ঘটনা। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এ্যানন টেক্সের বিরুদ্ধে বড় কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন বিষয়টি আবার তদন্ত করে জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দুদকে সুপারিশ পাঠাবে। সূত্র জানায়, ২০০০ সালের আগে থেকেই এ্যানন টেক্স গ্রুপের ব্যবসা ছিল খুব সীমিত আকারে। ২০০৪ সালে এ্যানন টেক্স গ্রুপ জুভিনাইল সোয়েটার্স, ২০০৫ সালে গ্যালাক্সি সোয়েটার্স এবং ২০০৬ সালে সুপ্রভ কম্পোজিট দিয়ে ব্যবসা বাড়াতে শুরু করে। ২০০৪ সালে গ্রুপের ঋণ ছিল ৬৭৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালের পর থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১৪ সালের ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার

৪৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে আরও বেড়ে ১ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। পরোক্ষ ঋণ বা নন ফান্ডেড লোন পরিশোধ না করায় সেগুলো প্রত্যক্ষ ঋণ বা ফান্ডেড দায়ে পরিণত হয়। এতে ২০১৬ সালে ঋণের পরিমাণ বেড়ে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তা আরও বেড়ে প্রত্যক্ষ বা নগদ ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রত্যক্ষ ঋণ ৬ হাজার ২৪০ কোটি ১৭ লাখ এবং পরোক্ষ ঋণ ৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। গত বছরের ডিসেম্বর পর্য়ন্ত ঋণের পরিমাণ আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকায়। এর মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৭ হাজার ৭০৯

কোটি টাকা। বাকি ৪৬ কোটি টাকার মধ্যে আরও ৪ কোটি টাকা সম্প্রতি খেলাপি হয়েছে। এখন খেলাপির বাইরে রয়েছে মাত্র ৪২ কোটি টাকা। আলোচ্য ঋণ মন্দ বা আদায় অযোগ্য ঋণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হচ্ছে। এসব মিলে জনতা ব্যাংকের ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা আটকে রয়েছে এ্যানন টেক্সের ঋণের বিপরীতে। এছাড়া অনারোপিত সুদ হিসাবে আরও অর্থ রয়েছে যা এই হিসাবে যুক্ত করা হয়নি। এর পরিমাণও হাজার কোটি টাকার বেশি হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ্যানন টেক্স গ্রুপের কর্ণধার ইউনূস বাদল ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব খাটিয়ে জনতা ব্যাংক থেকে এসব ঋণ নিয়েছেন। তার সঙ্গে সামনের কাতারে

ছিলেন জনতা ব্যাংকের সরকার সমর্থিত সাবেক সিবিএ নেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক রফিকুল ইসলাম। তিনি সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীকে হাতে নিয়ে এ্যানন টেক্সের জন্য ঋণের দুয়ার খুলে দেন। ঋণের ভাগ যে শুধু এ্যানন টেক্সের ঘরে গেছে তা নয়, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়েও ওই অর্থ গেছে। এছাড়া ব্যাংকের সাবেক এমডি থেকে পরিচালক ও নিচের সারির কর্মকর্তারাও ভাগ নিয়েছেন। যে কারণে ঋণের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা করেনি ব্যাংক। এই ঋণের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ম অনুযায়ী পরিদর্শন করতে পারেনি। যেটুকু করা হয়েছে তার ভিত্তিতে ব্যবস্থাও নিতে পারেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিবিধানকে কোনো আমলেই নিত না জনতা ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা

যায়-২০১৬ সালে একক ঋণ বাবদ ৭৮০ কোটি টাকা বিতরণ করতে পারত। কিন্তু ওই সময়েই গ্রুপটিকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ঋণের বড় অংশই ছিল পরোক্ষ ঋণ। এসব ঋণ পরিশোধ না করায় তা প্রত্যক্ষ বা সরাসরি ঋণে পরিণত হয়। ২০০৭ সালের মধ্যে গ্রুপের ২২টি কোম্পানি গঠন করা হয়। যেগুলোর বেশিরভাগই ছিল অস্তিত্বহীন। একই কারখানাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে দেখানোর নজিরও রয়েছে। ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, এ্যানন টেক্স গ্রুপের ২২টি কোম্পানির নামে জনতা ব্যাংক থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ঋণের ক্ষেত্রেই বড় ধরনের জালিয়াতি ও মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী জাল-জালিয়াতি করে ঋণ নিয়ে খেলাপি হলে সংশ্লিষ্ট গ্রাহক ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো ছাড় পাবে না। এ্যানন টেক্স গ্রুপের ঋণ জালিয়াতির তথ্য প্রমাণিত হলে বিষয়টি জনতা ব্যাংককে জানানো হলেও তারা কয়েক দফায় গ্রুপের ৩ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকার সুদ মওকুফ সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে। একই সঙ্গে গ্রুপের নামে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা নবায়নের প্রস্তাব অনুমোদন করে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিধিসম্মত হয়নি বলে ঋণ নবায়ন ও সুদ মওকুফ প্রস্তাব আটকে দেয়। এদিকে এ্যানন টেক্স গ্রুপকে ঋণ দিয়ে বড় বিপাকে পড়েছে জনতা ব্যাংক। তাদের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। একটি গ্রুপের কাছে এত বেশি খেলাপি ঋণ হওয়ায় ব্যাংকও পড়েছে ঝুঁকিতে। ৩০ জুন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার কোটি টাকায়। ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ ছিল ১৪ হাজার কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এ্যানন টেক্সেরই ৭ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তাদের কাছে ঋণ রয়েছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। এ ঋণেরও বড় জালিয়াতি হয়েছে। এছাড়া রতনপুর গ্রুপের কাছে খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এসব কারণে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ লাফিয়ে বেড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
লেবাননে স্থল অভিযানে ত্রিশ কমান্ডারসহ ৪৪০ হিজবুল্লাহ সদস্য নিহত: ইসরায়েল রাশিয়ার ঋণ পরিশোধে নতুন অনিশ্চয়তা সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চায় জামায়াত সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও এগিয়ে নেবে সরকার কেরানীগঞ্জে হোটেলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নিহত ৩ নতুন ভারতের সঙ্গে পুরোনো বাংলাদেশ অন্যায় করে পার পাওয়ার সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে: অর্থ উপদেষ্টা ভয়াবহ বন্যায় ভাসছে শেরপুর, পানিতে ডুবে দু’দিনে ৫ মৃত্যু সংসদের মেয়াদ ৪ বছর চায় গণঅধিকার পরিষদ, ১২ প্রস্তাব ২১৪ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার মালয়েশিয়ায় ময়মনসিংহে দুই উপজেলার ৮০ গ্রাম প্লাবিত জেলে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন সাবেক মন্ত্রী মান্নান, পাঠানো হলো হাসপাতালে পুরোনোর বদলে নতুন সিন্ডিকেট চাই না রাজনৈতিক ব্যাংকের অবস্থা নাজুক ‘বিকাশে’ বিমানের ফ্লাইট বেচাকেনা নতুন সংবিধান রচনা ও জুলাই হত্যাকারীদের বিচারের দাবি ইরান লেবানন গাজায় অভিযান চালাবে ইসরাইল ডিম-মুরগির দাম বাড়িয়ে ২৮০ কোটি টাকা লোপাট অপুষ্টিতে ধুঁকে মরছে আফগানি শিশুরা টানা বৃষ্টিতে পাঁচ জেলায় জলাবদ্ধতা, শেরপুর ময়মনসিংহে বন্যার অবনতি