ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
চট্টগ্রামে এবার নিজ বাড়ির সামনে খুন হলেন ব্যবসায়ী
ব্রাজিলে এবারের জলবায়ু সম্মেলন অনেক ঝক্কির
রমনায় গির্জা লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ
ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ৪০ রোহিঙ্গা চট্টগ্রামে আটক
ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও লালমনিরহাট বিমান ঘাঁটিতে নতুন রাডার স্থাপন করছে বাংলাদেশ চীনা প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা; নির্মাণাধীন হ্যাঙ্গারের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বাড়ি নির্মাণে বাধা দিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি যুবদল কর্মীদের, প্রতিবাদ করায় প্রবাসীকে পিটুনি
শাহজালালে যাত্রীর পাকস্থলীতে মিলল ৬৩৭৮ ইয়াবা
রাজনীতির মাঠে সক্রিয় চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীরা
নির্বাচন সামনে রেখে চট্টগ্রামে রাজনীতিবিদরা সন্ত্রাসীদের কাছে টানছে; নাকি সন্ত্রাসীরা রাজনীতিবিদদের কাছে ঘেঁষছে– তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগের সময় গুলিতে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলার সঙ্গে একাধিক দলের রাজনীতিকের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিতর্ক আরও গতি পায়। তবে ঘটনা যা-ই হোক, এই সহাবস্থান চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ হয়ে উঠছে।
বিভিন্ন দলের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাদের ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠছে সন্ত্রাসীদের।
চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যাসহ ১৫ মামলার আসামি ছিলেন গত বুধবার গুলিতে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সরওয়ারের সঙ্গে
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শাকিলা ফারজানার ছবি দেখা গেছে। ছবি রয়েছে নগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গেও। হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রসহ ১৭ মামলার আরেক আসামি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। তাঁর সঙ্গে বিএনপির নেতা মীর হেলাল উদ্দিনের ছবি রয়েছে। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন টেম্পু ৩৪ মামলা এবং শহীদুল ইসলাম বুইশ্যা ১৮ মামলার আসামি। তাদের সঙ্গে ছবি আছে বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের। আগে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে দেখা যেত সিআরবি জোড়া খুনসহ ১৫ মামলার
আসামি হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরকে। হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ১৭ মামলার আসামি আলী আকবর ওরফে ছেঁড়া আকবরকে দেখা যেত আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে। গত বুধবার বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে অংশ নেন বাবলা। প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর ঘাড়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তবে রক্ষা পান এরশাদ উল্লাহ। এ ঘটনায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইরফানুল হক শান্ত। সরওয়ার ছিলেন বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের ডান হাত। ২০২০ সালে কাতার থেকে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হন তিনি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই গ্রেপ্তার হন বাবলা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর
জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিতে থাকেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মিছিল-সমাবেশে অংশ নেওয়ার ছবি-ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করতেন বাবলা। তবে নগর যুবদল এ বিষয়ে ওই সময় বিবৃতি দিয়ে জানায়, বাবলা যুবদলের কেউ না। বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজেকে আসলাম চৌধুরীর অনুসারী যুবদল নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরওয়ারের বিয়েতে অংশ নেন আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। তবে তাঁর মৃত্যুর পর সরওয়ার
বিএনপির কেউ ছিল না বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। জানতে চাইলে আসলাম চৌধুরী বলেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা অনেকের বিয়েতে যাই। তার মানে এই নয়, সে আমার অনুসারী। শীর্ষ সন্ত্রাসী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। অপর এক প্রশ্নের জবাবে আসলাম চৌধুরী বলেন, কারাগারে সরওয়ারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। আমাকে জানিয়েছিল, সে ভালো হতে চায়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়। খারাপ পথ থেকে কেউ যদি ভালো হতে চায়, তাকে স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু এটিই তার কাল হয়েছে বলে মনে করি আমি। সরওয়ারের সঙ্গে ছবির ব্যাপারে নগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকাল রাতে তাঁর একান্ত সহকারী মো. আইয়ুব বলেন,
‘স্যার (শাহজাহান চৌধুরী) নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত। আমি তাঁর সঙ্গে নেই।’ শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী। সরওয়ারকে হত্যার পর তাঁর ছোট ভাই আজিজ হোসেনের অভিযোগ, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিএনপি নেতা মীর হেলালের হাত থাকতে পারে। তিনি বলেন, কারাগারে ভাইয়ের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর পরিচয় হয়। এরপর জামিনে বেরিয়ে তাঁর রাজনীতি করতেন আমার ভাই। এটা মানতে পারতেন না মীর হেলাল। তাঁর কথা, এখানে তিনি কেন আসলাম চৌধুরীর রাজনীতি করবেন? আজিজ হোসেনের দাবি, সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সঙ্গে মীর হেলালের যোগাযোগ রয়েছে। তারাই আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। গতকাল শুক্রবার সরওয়ারের বাবা আব্দুল কাদেরের দায়ের করা মামলায় সাজ্জাদকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির
সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী আমার অনুসারী হতে পারে না। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অপকর্ম করে, তাকে গ্রেপ্তার করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কোনো সন্ত্রাসীর জন্য আমি কখনোই কোথাও তদবির করিনি। নগরের অন্য দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন টেম্পু ৩৪ মামলা এবং শহীদুল ইসলাম বুইশ্যা ১৮ মামলার আসামি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নগরের চান্দগাঁও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিকবার গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়েছে এই দুই গ্রুপ। এই দুই সন্ত্রাসী নিজেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। সন্ত্রাসী টেম্পুর সঙ্গে আবু সুফিয়ানের বেশ কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায়। নগরের চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় কর্মরত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, টেম্পু ও বুইশ্যা উভয়ই বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা রাজনীতি করি। গণমানুষের সঙ্গে মিশতে হয় আমাদের। এই সময় অনেকে আমাদের সঙ্গে ছবি তোলে। কিন্তু কোনো সন্ত্রাসীকে আমি কখনোই আমার অনুসারী মনে করি না। এদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার নগরের চালিতাতলী এলাকায় টেম্পুর ভাই ইদ্রিস আলীকে গুলি করে বুইশ্যা ও তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে র্যাব। টেম্পুর আরেক ভাই নুরুন্নবী সোহাগ, আবদুর রহিম, মো. আনিস, সাইফুল, মো. সোহেল, মো. তৌহিদ, জাহেদ হোসেন মুন্না, মো. রবিউল, মো. ইলিয়াস কাঞ্চন, মো. শরীফ, মো. ইশতিয়াকসহ অর্ধশতাধিক উঠতি সন্ত্রাসী রয়েছে টেম্পুর বাহিনীতে। অপর গ্রুপের শহীদুল ইসলাম ওরফে বুইশ্যা নগরের ষোলশহর বদিউল আলম গলির মো. আলীর ছেলে। তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত ২১ জুলাই নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে তাঁর গোপন টর্চার সেলের হদিস পায় পুলিশ। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশের লুট করা গুলি ও বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, সন্ত্রাসী টেম্পু ও বুইশ্যাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বারবার স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেপ্তার করতে দেরি হচ্ছে। শুধু বিএনপি কিংবা জামায়াত নেতা নন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন নেতার সঙ্গে সরওয়ারের ছবি দেখা গেছে। বর্তমান রাজনীতিতে তাদের শক্ত অবস্থান থাকায় এদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছে তারা। গত বছরের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে একটি অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের সঙ্গে সন্ত্রাসী বাবলার ছবি রয়েছে। এর মধ্যে একটি ছবিতে পাশাপাশি দুটি চেয়ারে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা রাসেল আহমেদ ও সরওয়ার বাবলাকে। আরেকটি ছবিতে দাঁড়ানো অবস্থায় তাঁকে দেখা গেছে সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির সঙ্গে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি গতকাল রাতে সমকালকে বলেন, ‘সরওয়ার বাবলা নামে কাউকে আমি চিনি না। এই নামে কোনো সন্ত্রাসী আছে, সেটাও আমার জানা নেই। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে ছবি তোলার জন্য অনেকে অনুরোধ করে। এটি তেমন কোনো ছবি হতে পারে।’ নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদকে ফোন করা হলে তা রিসিভ করা হয়নি। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, নির্বাচন এলে সন্ত্রাসীদের কদর বাড়ে। আধিপত্য ধরে রাখতে রাজনীতিবিদরা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এসব কাজে হতাশ হয়। সাধারণ মানুষও বিরক্ত হয়। তার পরও এই সংস্কৃতি থেকে বের হচ্ছে না কেউ। আগে আওয়ামী লীগের ছায়া খুঁজেছে যারা, এখন তারা বিএনপি, জামায়াতের ছায়া খুঁজছে।
বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শাকিলা ফারজানার ছবি দেখা গেছে। ছবি রয়েছে নগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর সঙ্গেও। হত্যা, চাঁদাবাজি, অস্ত্রসহ ১৭ মামলার আরেক আসামি সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ। তাঁর সঙ্গে বিএনপির নেতা মীর হেলাল উদ্দিনের ছবি রয়েছে। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন টেম্পু ৩৪ মামলা এবং শহীদুল ইসলাম বুইশ্যা ১৮ মামলার আসামি। তাদের সঙ্গে ছবি আছে বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের। আগে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে দেখা যেত সিআরবি জোড়া খুনসহ ১৫ মামলার
আসামি হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরকে। হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ১৭ মামলার আসামি আলী আকবর ওরফে ছেঁড়া আকবরকে দেখা যেত আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে। গত বুধবার বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে অংশ নেন বাবলা। প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর ঘাড়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তবে রক্ষা পান এরশাদ উল্লাহ। এ ঘটনায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন ৩ নম্বর পাঁচলাইশ ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইরফানুল হক শান্ত। সরওয়ার ছিলেন বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের ডান হাত। ২০২০ সালে কাতার থেকে ফেরার পথে গ্রেপ্তার হন তিনি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই গ্রেপ্তার হন বাবলা। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর
জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর নিজেকে যুবদল নেতা পরিচয় দিতে থাকেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মিছিল-সমাবেশে অংশ নেওয়ার ছবি-ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করতেন বাবলা। তবে নগর যুবদল এ বিষয়ে ওই সময় বিবৃতি দিয়ে জানায়, বাবলা যুবদলের কেউ না। বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, কারাগারে থাকা অবস্থায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাঁর। কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজেকে আসলাম চৌধুরীর অনুসারী যুবদল নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন। সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর সরওয়ারের বিয়েতে অংশ নেন আসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শেঠ। তবে তাঁর মৃত্যুর পর সরওয়ার
বিএনপির কেউ ছিল না বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতারা। জানতে চাইলে আসলাম চৌধুরী বলেন, একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা অনেকের বিয়েতে যাই। তার মানে এই নয়, সে আমার অনুসারী। শীর্ষ সন্ত্রাসী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হোক। অপর এক প্রশ্নের জবাবে আসলাম চৌধুরী বলেন, কারাগারে সরওয়ারের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। আমাকে জানিয়েছিল, সে ভালো হতে চায়। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায়। খারাপ পথ থেকে কেউ যদি ভালো হতে চায়, তাকে স্বাগত জানানো উচিত। কিন্তু এটিই তার কাল হয়েছে বলে মনে করি আমি। সরওয়ারের সঙ্গে ছবির ব্যাপারে নগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকাল রাতে তাঁর একান্ত সহকারী মো. আইয়ুব বলেন,
‘স্যার (শাহজাহান চৌধুরী) নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত। আমি তাঁর সঙ্গে নেই।’ শাহজাহান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী। সরওয়ারকে হত্যার পর তাঁর ছোট ভাই আজিজ হোসেনের অভিযোগ, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিএনপি নেতা মীর হেলালের হাত থাকতে পারে। তিনি বলেন, কারাগারে ভাইয়ের সঙ্গে আসলাম চৌধুরীর পরিচয় হয়। এরপর জামিনে বেরিয়ে তাঁর রাজনীতি করতেন আমার ভাই। এটা মানতে পারতেন না মীর হেলাল। তাঁর কথা, এখানে তিনি কেন আসলাম চৌধুরীর রাজনীতি করবেন? আজিজ হোসেনের দাবি, সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সঙ্গে মীর হেলালের যোগাযোগ রয়েছে। তারাই আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। গতকাল শুক্রবার সরওয়ারের বাবা আব্দুল কাদেরের দায়ের করা মামলায় সাজ্জাদকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির
সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসী আমার অনুসারী হতে পারে না। আমার নাম ব্যবহার করে কেউ যদি অপকর্ম করে, তাকে গ্রেপ্তার করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কোনো সন্ত্রাসীর জন্য আমি কখনোই কোথাও তদবির করিনি। নগরের অন্য দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইসমাইল হোসেন টেম্পু ৩৪ মামলা এবং শহীদুল ইসলাম বুইশ্যা ১৮ মামলার আসামি। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নগরের চান্দগাঁও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একাধিকবার গোলাগুলিতে লিপ্ত হয়েছে এই দুই গ্রুপ। এই দুই সন্ত্রাসী নিজেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দেন। সন্ত্রাসী টেম্পুর সঙ্গে আবু সুফিয়ানের বেশ কিছু ছবি সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায়। নগরের চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় কর্মরত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, টেম্পু ও বুইশ্যা উভয়ই বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ানের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তবে বিএনপি নেতা আবু সুফিয়ান বলেন, আমরা রাজনীতি করি। গণমানুষের সঙ্গে মিশতে হয় আমাদের। এই সময় অনেকে আমাদের সঙ্গে ছবি তোলে। কিন্তু কোনো সন্ত্রাসীকে আমি কখনোই আমার অনুসারী মনে করি না। এদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। পুলিশ সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার নগরের চালিতাতলী এলাকায় টেম্পুর ভাই ইদ্রিস আলীকে গুলি করে বুইশ্যা ও তার অনুসারীরা। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তারও করেছে র্যাব। টেম্পুর আরেক ভাই নুরুন্নবী সোহাগ, আবদুর রহিম, মো. আনিস, সাইফুল, মো. সোহেল, মো. তৌহিদ, জাহেদ হোসেন মুন্না, মো. রবিউল, মো. ইলিয়াস কাঞ্চন, মো. শরীফ, মো. ইশতিয়াকসহ অর্ধশতাধিক উঠতি সন্ত্রাসী রয়েছে টেম্পুর বাহিনীতে। অপর গ্রুপের শহীদুল ইসলাম ওরফে বুইশ্যা নগরের ষোলশহর বদিউল আলম গলির মো. আলীর ছেলে। তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল, ছিনতাইসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। গত ২১ জুলাই নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে তাঁর গোপন টর্চার সেলের হদিস পায় পুলিশ। সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশের লুট করা গুলি ও বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। জানতে চাইলে চান্দগাঁও থানার ওসি জাহিদুল কবির বলেন, সন্ত্রাসী টেম্পু ও বুইশ্যাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু বারবার স্থান পরিবর্তন করায় গ্রেপ্তার করতে দেরি হচ্ছে। শুধু বিএনপি কিংবা জামায়াত নেতা নন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন নেতার সঙ্গে সরওয়ারের ছবি দেখা গেছে। বর্তমান রাজনীতিতে তাদের শক্ত অবস্থান থাকায় এদের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছে তারা। গত বছরের ডিসেম্বরে কক্সবাজারে একটি অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া নেতাদের সঙ্গে সন্ত্রাসী বাবলার ছবি রয়েছে। এর মধ্যে একটি ছবিতে পাশাপাশি দুটি চেয়ারে হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা রাসেল আহমেদ ও সরওয়ার বাবলাকে। আরেকটি ছবিতে দাঁড়ানো অবস্থায় তাঁকে দেখা গেছে সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফির সঙ্গে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি গতকাল রাতে সমকালকে বলেন, ‘সরওয়ার বাবলা নামে কাউকে আমি চিনি না। এই নামে কোনো সন্ত্রাসী আছে, সেটাও আমার জানা নেই। কোনো অনুষ্ঠানে গেলে ছবি তোলার জন্য অনেকে অনুরোধ করে। এটি তেমন কোনো ছবি হতে পারে।’ নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদকে ফোন করা হলে তা রিসিভ করা হয়নি। জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক-চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, নির্বাচন এলে সন্ত্রাসীদের কদর বাড়ে। আধিপত্য ধরে রাখতে রাজনীতিবিদরা তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এসব কাজে হতাশ হয়। সাধারণ মানুষও বিরক্ত হয়। তার পরও এই সংস্কৃতি থেকে বের হচ্ছে না কেউ। আগে আওয়ামী লীগের ছায়া খুঁজেছে যারা, এখন তারা বিএনপি, জামায়াতের ছায়া খুঁজছে।



