বর্ণিল জয়নুল উৎসব – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ৫ জানুয়ারি, ২০২৫
     ৭:২২ পূর্বাহ্ণ

বর্ণিল জয়নুল উৎসব

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৫ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৭:২২ 171 ভিউ
শীতের বিকেল কি বিভূতিভূষণের উপন্যাস থেকে উঠে আসে? হতে পারে। এমন সময়ে কোনো ব্যস্ত নগর সড়কের পাশে দাঁড়ালেও মায়া, আবার কোনো অরণ্যের সামনে দাঁড়ালেও। যদি কোনো মেলার সামনে দাঁড়াই, তাহলে তো স্বর্গ। কল্পনা করা যাক, শীতবিকেলি রোদে জড়ানো আমার শরীর। সামনে মানুষের কলধ্বনি। তাদের রঙিন পোশাক দৃষ্টিকে সুখী করছে। সুশোভন নরনারীর হাত ধরে আছে পুতুলের মতো শিশু। ঘুরে ঘুরে তারা মেলা দেখছে। ভীষণ আনন্দময় ছবি। বছর শেষে এমন আনন্দময়তা ছড়াল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। ২৭ থেকে ২৯ ডিসেম্বর চলেছে জয়নুল মেলা। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কাছে শুধু কি চারুকলা অনুষদ ঋণী? ঋণী সারা বাংলা। প্রকারান্তরে সারা বিশ্ব। জয়নুল শিল্পের জন্য শিল্পে বিশ্বাস

করতেন না। তিনি মানুষের জন্য শিল্পনীতিতে বিশ্বাসী। শিল্প ক্লান্তি দূর করবে, মানুষকে প্রেরণা জোগাবে তার কাজে, তার যুদ্ধে। সে যুদ্ধ নিজের সঙ্গে যুদ্ধ হোক কিংবা কোনো ন্যায়রাষ্ট্রীয় লড়াই হোক। পৃথিবীর অনেক বড় শিল্পীই এ পথে ভাবতেন। তেমনই আরেকজন পিকাসো। যা হোক, সে অন্য আলাপ। জয়নুল উৎসব নিয়ে অনুভূতি কিছু বলি। শেষদিনের মেলায় একটা ভাঙনের করুণ সুর লেগে থাকে। উৎসবের মূল মঞ্চ তৈরি হয়েছিল চারুকলার প্রতীক বকুলতলার নিচে। সেখান থেকে দর্শক বসার জন্য চেয়ার পাতা। চেয়ার ছাড়িয়েও মানুষ হয়েছিল আরও একটু পেছনে রক্তকাঞ্চন গাছের নিচ পর্যন্ত। অনুষ্ঠানে গান, নাচসহ উপস্থাপনগুলোয় যেমন ছিল বাংলার কথা, মুক্তিকামী মানুষের কথা, তেমনই ছিল শেষ অভ্যুত্থানের স্মৃতিশ্রদ্ধা।

বাঙ্ময়, বর্ণময়। চারুকলার প্রবেশপথের পরই যে অংশে সাধারণ্যের সবচেয়ে বেশি আসা-যাওয়া, তা জয়নুল গ্যালারি। সেখানে প্রবেশ করলাম। প্রদর্শনী চলছে। শিল্পী রফিকুন নবী, হাশেম খান, ফরিদা জামান, জামাল আহমেদ, মোহাম্মদ ইকবাল, দুলাল গায়েনসহ প্রবীণ, মধ্যপ্রবীণ ও নবীন শিল্পীদের অপূর্ব শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছিল। ছিল তেলচিত্র, জলরং, চারকোল, কাঠ ও ধাতব ভাস্কর্য প্রভৃতি। গোটা চারুকলা অন্তত চার ধরনের উৎসবী ভূখণ্ডে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রদর্শনী, আড্ডা ও সাজসজ্জাপ্রধান ভূখণ্ড। এগুলোর ভেতর তুলনামূলক নিঃশব্দ, স্বাভাবিকভাবেই। রফিকুন নবীর উজ্জ্বল রঙের পাখি, জামাল আহমেদের অন্ধকারে আশার পায়রা স্পর্শ করা তরুণী, আরও কত ছবি। কারুশিল্পে বাংলার দক্ষতা, ক্ষমতা পুরাতন। অপূর্ব সব কারুশিল্পের কাজ রয়েছে। মোহাম্মদ

আবদুল মোনেম মিল্টনের লাটিমের অপূর্ব কাজটির কথা ভুলব না। গ্যালারির বাইরে যে ভুবন, সেই ভুবন ক্রয়-বিক্রয়ের। অবশ্য সাধারণ ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে শিল্পকর্ম ক্রয়-বিক্রয়ের পার্থক্য আছে। পার্থক্য আছে ক্রেতা, বিক্রেতায়ও। সাধারণ পণ্য নিত্যব্যবহার্য। শিল্পের উপযোগ ব্যবহারে নয়, উপভোগে। এই উপভোগ তাকে জীবনের ভাগ দেয়। এই অমূল্যকে বুঝতে চিন্তার জগতে প্রবেশ করা প্রয়োজন। মানুষ চিন্তাশীল জীব। তাই গুহাযুগ থেকেই সে শিল্প সৃষ্টি করে আসছে। এবং শিল্পীকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত তারা করেছে। তাই বিক্রয়কেন্দ্রজুড়ে ব্যবসায়িক উত্তাপ নেই, হুড়োতাড়া নেই। একটা শোভন আহরণের পরিবেশ ছিল। যা দেখেছি। কোথাও ভাস্কর্য বিক্রি হচ্ছিল, কোথাও চিত্রকর্ম। ভাস্কর্য সাজানো জায়গাটি সবার চেনা। প্রবেশপথের পুরোভাগে পড়ে এ অংশ সাদা পাথরে মেঝেময়।

এখানে মঙ্গল শোভাযাত্রার খরচ নির্বাহের জন্য সরা, মুখোশ, শিল্পকর্ম বিক্রয় হয়। সাধারণ মানুষ এখানে সবচেয়ে বেশি ভিড় করে। এখানে দেশি ও বিদেশি শৈলীতে নির্মিত কত রকমের ভাস্কর্য! দেখে গর্ব হয়। ভাস্কর্য থেকে পায়ে চলা বাঁধানো পথ চলে গেছে করিডোর হয়ে আরও পশ্চিমে। কিন্তু কেউ যদি করিডোর ঘেঁষে না হেঁটে মাটিতে নেমে যায়, কে বাধা দিচ্ছে। সেখানে ভিনদেশি ফাইকাস গোত্রীয় বৃক্ষ থেকে শুরু করে দেশীয় বৃক্ষরা শ্বাস নিতে পারে। নগ্ন মাটি। সেখানে ফোয়ারা চত্বরে তরুণ-তরুণীরা বসে গল্প করছে। আরও সামনে ‘সিরিয়াস ডিসকাশন’ ভাস্কর্য অংশ ঘিরে সাধারণ নরনারী, শিশু, কিশোর-কিশোরী হাসছে, নাচছে। দুটো জায়গা দুটো আলাদা দলকে দেখা গেল, তারা মুখে ছবি এঁকে

দিচ্ছে আগ্রহীদের। গাছগুলোর অঙ্গসজ্জা নিয়ে না বললে অন্যায় হবে। কিছু কাগজের শিল্প এখন হারিয়ে গেছে, এখানে তার পুনরুজ্জীবন দেখলাম। রঙিন কাগজ কেটে তৈরি কলস এর আগে রাস্তার মোড়ে বা বেলুনওয়ালার কাছে কিনতে পাওয়া যেত। এখন দেখা যায় না। সেই রানীগোলাপি-বেগুনি-হলুদ সব কলসে গাছগুলো সাজানো। আছে আলোকসজ্জাও। আমি যে প্রাঙ্গণের কথা বলছি এখন, এটি মূলত একাডেমিক ভবনের দক্ষিণ পাশের প্রাঙ্গণ। এর দুটি পাশ জুড়ে পসরা বসেছিল। দক্ষিণ পাশজুড়ে বসেছিল দেশের নানান প্রান্ত থেকে আসা কারুশিল্পীদের কাজ নিয়ে দোকান। দোকানে কারুশিল্পীদের অনেকেই বসেছিলেন। পটচিত্র শৈলীতে তৈরি বয়নচিত্রগুলো খুব নজর কাড়ছিল। এ ছাড়া কাঁসা, পিতলের ভাস্কর্যগুলোও শৌখিনতায় বিভাময়। শিল্পমূল্যের দাম তো আর উপকরণমূল্যে হিসাব

করা যায় না। তাই বলা যায়, কাজগুলোর দাম ছিল– যেটুকু না হলেই নয়। উত্তর অংশে বসেছিল চারুকলার ছেলেমেয়েরা। এই দিকটি নিয়ে বিশেষভাবে বলার অবকাশ আছে। করিডোরের কিনারজুড়ে টেবিল পাতা। টেবিলেরও ওপর ছবির পরে ছবি সাজিয়ে রাখা। মানুষ কেন ছবি আঁকে? ওখানে তার উত্তর পাওয়া যাচ্ছিল। তরুণ শিল্পীদের আঁচড়ে নতুনত্ব আপনাতে আসে। কারণ, যুগই তৈরি করেছে তাদের। নতুনত্বকে পাওয়া গেল, ধ্রুপদও সঙ্গী হলো– এই ধারার ছবিই তো নজর কাড়ে। কাড়লও। ছবি ছাড়াও ছিল দিনপঞ্জি, দিনলিপিগ্রন্থ, গলার হার, চাবির ছড়াসহ আরও নানান পণ্য, গ্রন্থও এমনকি। সেইসব গ্রন্থ হাশেম খান প্রমুখ শিল্পী লেখা-আঁকা সংবলিত। সার্থক জয়নুল উৎসব! নতুন সহস্রাব্দের দ্বিতীয় দশকে যখন আমরা প্রবেশ করি, তখন একটি তথ্য সবাইকে চমকে দিয়েছিল। বলা হচ্ছিল সেই মুহূর্তে বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা অতীতকে ছাড়িয়ে গেছে। যে কোনো খনিজ সম্পদ, আর্থসম্পদের চেয়েও এই মানবসম্পদ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশে মানবসম্পদের চেয়ে অবহেলিত আর কে আছে। সেই অবহেলিতরা নিকট অতীতে জেগেছিল। ভবিষ্যতেও জাগবে। দুর্বলের অর্জন বারবার হাতবদল হয়ে যায়। যেন তা হতে না পারে, সে জন্য হৃদয় শক্ত করা চাই। শিল্পকলা তো হৃদয়ের ধন। হৃদয়ের অস্ত্রও। আমি তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি দেখে মোহিত, এ উৎসবে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ১১১তম জন্মদিন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী এই জয়নুল উৎসব যখন পালিত হচ্ছে, চারুকলা ইনস্টিটিউট তখন ৭৬ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। এ উৎসবের অংশ হিসেবে শেষদিন অধ্যাপক শিল্পী মিজানুর রহিম ও অধ্যাপক শিল্পী রফিকুল আলমের হাতে জয়নুল সম্মাননা পদক ২০২৪ তুলে দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
অ্যাপ সমস্যায় কী করবেন ‘আমার ছেলেকে কেন মারল, সে তো কোনো অপরাধ করেনি’ গাজীপুরে জাসাস নেতাকে ডেকে নিয়ে ইটভাটায় কুপিয়ে হত্যা ৬ সৌর প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম: টিআইবি শাড়ি পরে দুঃসাহসিক স্টান্ট, বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফিরছেন সামান্থা মগবাজারে ফ্লাইওভার থেকে হাত বোমা নিক্ষেপ, যুবক নিহত এনরিখের সঙ্গে ‘আজীবন’ চুক্তি পিএসজির! অপতথ্য রোধে কাজ করা ৫ ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বিধ্বস্ত ভবনে বাঁচার চেষ্টায় গাজাবাসী তুরস্কে বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাপ্রধানসহ নিহত ৮ মস্কোতে ফের বিস্ফোরণে দুই পুলিশসহ নিহত ৩ ত্বকের সমস্যা দূর করতে কমলার খোসা ভারতের সাথে বৈরিতা এখনই বন্ধ করুন: ঢাকাকে রাশিয়ার কড়া হুঁশিয়ারি ‘আপনারাই হাদিকে হত্যা করিয়েছেন, এখন নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছেন’: অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ওমর বিন হাদি পাকিস্তান কানেকশন ও গোপন বৈঠক: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হতে চান গোলাম আযম পুত্র! ইউনূসের সরকারের পৈশাচিকতায় মৃত্যুর মুখে লোহাগাড়া ছাত্রলীগ নেতা গ্লোবাল টিভির বার্তা প্রধানকে ছাঁটাই ও কোটি টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ: কাঠগড়ায় রিফাত রশীদ ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ‘মিসাইল’ উস্কানি: ইমোজি দিয়ে পূর্ণ সমর্থন জানালেন মীর আহমদ বিন কাসেম কোনো দল নিষিদ্ধ হলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না: ড. ইউনূসকে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের বার্তা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদে খলিলুর রহমানের নিয়োগ আটকাল সেনাবাহিনী: তারেক রহমান পাচ্ছেন এসএসএফ নিরাপত্তা