
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

বোতল ব্যবসায়ীকে হত্যার পর খণ্ড-বিখণ্ড করে বালিচাপা

বরিশালের ৪০ হাসপাতালে নেই করোনা পরীক্ষার কিট

ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, নিহত ১

টাঙ্গাইলে উদ্ধারকৃত ১১ মর্টার শেল যমুনা নদীতে বিস্ফোরণ

শার্শায় বিএনপির কর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

রাজধানীতে ফিরছে মানুষ, যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক

এ মাসেই স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তারা বাসা ভাড়া নেন, এখন করুণ পরিণতি
দেশেও করোনার নতুন ধরন

দেশে শনাক্ত হয়েছে কভিড-১৯-এর নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট। এ নিয়ে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশে এটি ব্যাপক হারে ছড়াতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সব ধরনের বন্দর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনের সংক্রমণ এখনো আশঙ্কার কারণ নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন পর্যন্ত মৃত্যুর হার নিয়ে নতুন নতুন তথ্য পাওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এই সংক্রমণকে ‘নিম্ন ঝুঁকি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
এদিকে, গত ৪ জুন করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি পুরুষ। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ওই
দিন এক বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানায়, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিশেষ করে অমিক্রনের সংক্রমণ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত ও অন্যান্য সংক্রমণকবলিত দেশে ভ্রমণরত নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোতে সার্ভেল্যান্স এবং রিস্ক কমিউনিকেশন জোরদার করতে সচেতনতামূলক এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়। অধিদপ্তরের নির্দেশনা: বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড), নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না, হাঁচি-কাশির
সময় বাহু, টিস্যু ও কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে অসুস্থ হলে ঘরে অবস্থান এবং মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। রোগীর নাক-মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে (০১৪০১-১৯৬২৯৩)। আইসিডিডিআর,বি জানায়, বাংলাদেশে অমিক্রনের দুটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির আবির্ভাব হয়েছে, যা সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এই বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই জেএন.১ গ্রুপের ভ্যারিয়েন্ট বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে। মে মাসে কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, সিলেট,
বরিশাল, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স স্টাডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট ৭ শতাংশ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শ, সুরক্ষিত থাকতে হবে আর অসুস্থ অনুভব হলে বাড়িতে থাকতে হবে। বয়স্ক বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) হলে টিকা নিতে হবে। জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক পরতে হবে, নিয়মিত হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাউশির ৫ নির্দেশনা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে দেশে আবারও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে করোনার নতুন উপধরনের প্রভাব বাড়ায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক অবস্থানে যেতে বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান সোমবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে জানান, দেশের সব স্কুল, কলেজ
ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে ৫ নির্দেশনা মানতে হবে: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, জনসমাগমস্থলে এবং ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার, আক্রান্তদের থেকে অন্তত ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, চোখ, নাক ও মুখে অপরিষ্কার হাত না লাগানো এবং হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকা। মেট্রোরেল ভ্রমণে মাস্ক ব্যবহার: করোনা সংক্রমণ বাড়ায় এরই মধ্যে রেল, মেট্রোরেলে মাস্ক ছাড়া যাতায়াত না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার (৬ জুন) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদের পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘কভিড-১৯ সংক্রমণ
হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’ বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তিত হয়েছে, দেশে এখন অমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির প্রভাবে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি যেমন—হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, এগুলো মেনে চললে করোনা থেকে সুরক্ষা থাকা সম্ভব। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। যারা টিকা নেননি, তাদের
টিকা নিয়ে রোগপ্রতিরোধ করতে হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আরিফা আকরাম (সহকারী অধ্যাপক) বলেন, ভয় নয়, সচেতনতাই সুরক্ষা। গুজবে কান না দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সুরক্ষিত থাকা যায়। প্রতিটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক নয়। অনেক সময় এগুলো আগের তুলনায় দুর্বল হতে পারে। টিকা নেওয়া থাকলে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কম। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও প্রয়োজন ছাড়া ভিড় এড়ানো—এমন ছোট অভ্যাসগুলোই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। নতুন করে জ্বর, কাশি বা গলা ব্যথা অনুভব হলে দ্রুত নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে ল্যাবে পিসিআর বা র্যাপিড পরীক্ষা করাতে হবে। ভারত যাতায়াতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ: ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় নতুন সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত সোমবার অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রমণকবলিত দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রমণকবলিত দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রবেশপথের জন্য নির্দেশনাগুলো হলো: ভারত যাতায়াতে নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ, বিমানবন্দরগুলোতে আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার। দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার/ডিজিটাল হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা। দর্শনা ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতা: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের স্বাস্থ্য সহকারী শামীম খান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। তাতে বলা বলা হয়েছে, ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, সংক্রমণটি অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন। এ সংক্রমণ যাতে বাংলাদেশে না ছড়ায়, সে লক্ষ্যে সব ভারতফেরত যাত্রীকে পরীক্ষা করা হবে।’ দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার নীপা বলেন, ‘আগাম সতর্কতার জন্য দর্শনা চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আপাতত আমরা ভারত থেকে আসা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা স্ক্রিনিং করে সিমটম বোঝার চেষ্টা করছি। আমাদের এখানে কীট নেই, এ ছাড়া ল্যাবও নেই।’ এক দিনে আরও ১৩ রোগী শনাক্ত: দেশে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত রোগীর সবাই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ নিয়ে চলতি বছর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২১৫ জনে। মৃত্যু হয়েছে একজনের। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৭ জন শনাক্ত হন চলতি মাসে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের।
দিন এক বিজ্ঞপ্তিতে অধিদপ্তর জানায়, সম্প্রতি পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বিশেষ করে অমিক্রনের সংক্রমণ বেড়েছে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এর সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া অন্যান্য দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত ও অন্যান্য সংক্রমণকবলিত দেশে ভ্রমণরত নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কগুলোতে সার্ভেল্যান্স এবং রিস্ক কমিউনিকেশন জোরদার করতে সচেতনতামূলক এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ দেওয়া হয়। অধিদপ্তরের নির্দেশনা: বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড), নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দূরে থাকতে হবে, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না, হাঁচি-কাশির
সময় বাহু, টিস্যু ও কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে। সন্দেহজনক রোগীদের ক্ষেত্রে অসুস্থ হলে ঘরে অবস্থান এবং মারাত্মক অসুস্থ হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। রোগীর নাক-মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজন হলে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে (০১৪০১-১৯৬২৯৩)। আইসিডিডিআর,বি জানায়, বাংলাদেশে অমিক্রনের দুটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির আবির্ভাব হয়েছে, যা সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এই বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই জেএন.১ গ্রুপের ভ্যারিয়েন্ট বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শনাক্ত হয়েছে। মে মাসে কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, সিলেট,
বরিশাল, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স স্টাডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট ৭ শতাংশ ছিল। প্রতিষ্ঠানটির পরামর্শ, সুরক্ষিত থাকতে হবে আর অসুস্থ অনুভব হলে বাড়িতে থাকতে হবে। বয়স্ক বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) হলে টিকা নিতে হবে। জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক পরতে হবে, নিয়মিত হাত ধোয়া বা স্যানিটাইজ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাউশির ৫ নির্দেশনা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে দেশে আবারও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে করোনার নতুন উপধরনের প্রভাব বাড়ায় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক অবস্থানে যেতে বলেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আজাদ খান সোমবার রাতে এক ফেসবুক পোস্টে জানান, দেশের সব স্কুল, কলেজ
ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে ৫ নির্দেশনা মানতে হবে: নিয়মিত সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, জনসমাগমস্থলে এবং ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহার, আক্রান্তদের থেকে অন্তত ৩ ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, চোখ, নাক ও মুখে অপরিষ্কার হাত না লাগানো এবং হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ঢাকা। মেট্রোরেল ভ্রমণে মাস্ক ব্যবহার: করোনা সংক্রমণ বাড়ায় এরই মধ্যে রেল, মেট্রোরেলে মাস্ক ছাড়া যাতায়াত না করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার (৬ জুন) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদের পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, ‘কভিড-১৯ সংক্রমণ
হারের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।’ বিশেষত বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞ পরামর্শ: রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুশতাক হোসেন বলেন, করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট পরিবর্তিত হয়েছে, দেশে এখন অমিক্রনের সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির প্রভাবে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি যেমন—হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা, এগুলো মেনে চললে করোনা থেকে সুরক্ষা থাকা সম্ভব। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। যারা টিকা নেননি, তাদের
টিকা নিয়ে রোগপ্রতিরোধ করতে হবে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারেল সেন্টারের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান ডা. আরিফা আকরাম (সহকারী অধ্যাপক) বলেন, ভয় নয়, সচেতনতাই সুরক্ষা। গুজবে কান না দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সুরক্ষিত থাকা যায়। প্রতিটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক নয়। অনেক সময় এগুলো আগের তুলনায় দুর্বল হতে পারে। টিকা নেওয়া থাকলে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কম। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া ও প্রয়োজন ছাড়া ভিড় এড়ানো—এমন ছোট অভ্যাসগুলোই সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। নতুন করে জ্বর, কাশি বা গলা ব্যথা অনুভব হলে দ্রুত নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। প্রয়োজনে ল্যাবে পিসিআর বা র্যাপিড পরীক্ষা করাতে হবে। ভারত যাতায়াতে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ: ভারতসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় নতুন সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত সোমবার অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশিদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন দেশে করোনার নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট, বিশেষ করে অমিক্রন এলএফ. ৭, এক্সএফজি, জেএন-১ এবং এনবি ১.৮.১-এর সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে বাংলাদেশে সম্ভাব্য সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত ও অন্যান্য সংক্রমণকবলিত দেশ এবং বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং অন্যান্য সংক্রমণকবলিত দেশে ভ্রমণকারী নাগরিকদের জন্য দেশের সব স্থল, নৌ, বিমানবন্দরের আইএইচআর ডেস্কে নজরদারি জোরদার করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দেশে প্রবেশপথের জন্য নির্দেশনাগুলো হলো: ভারত যাতায়াতে নজরদারি বাড়াতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ, বিমানবন্দরগুলোতে আইএইচআর স্বাস্থ্য ডেস্কগুলোতে সতর্ক থাকা, হেলথ স্ক্রিনিং এবং সার্ভেল্যান্স জোরদার। দেশের পয়েন্টস অব এন্ট্রিগুলোতে থার্মাল স্ক্যানার/ডিজিটাল হেল্ড থার্মোমিটারের মাধ্যমে নন টাচ টেকনিকে তাপমাত্রা নির্ণয় করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভারত ও অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকা। দর্শনা ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য বিভাগের সতর্কতা: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের স্বাস্থ্য সহকারী শামীম খান বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি চিঠি আমরা পেয়েছি। তাতে বলা বলা হয়েছে, ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। জেনেটিক সিকোয়েন্স পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে, সংক্রমণটি অমিক্রন ধরনের একটি উপধরন। এ সংক্রমণ যাতে বাংলাদেশে না ছড়ায়, সে লক্ষ্যে সব ভারতফেরত যাত্রীকে পরীক্ষা করা হবে।’ দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হেলেনা আক্তার নীপা বলেন, ‘আগাম সতর্কতার জন্য দর্শনা চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। আপাতত আমরা ভারত থেকে আসা যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা স্ক্রিনিং করে সিমটম বোঝার চেষ্টা করছি। আমাদের এখানে কীট নেই, এ ছাড়া ল্যাবও নেই।’ এক দিনে আরও ১৩ রোগী শনাক্ত: দেশে সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত রোগীর সবাই ঢাকা মহানগরের বাসিন্দা। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ নিয়ে চলতি বছর শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২১৫ জনে। মৃত্যু হয়েছে একজনের। আক্রান্তদের মধ্যে ৫৭ জন শনাক্ত হন চলতি মাসে। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৬০ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০০ জনের।