আগুনে পুড়ে ছাই উদীচীর ৫৭ বছরের ইতিহাস – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫
     ৫:৫৬ অপরাহ্ণ

আগুনে পুড়ে ছাই উদীচীর ৫৭ বছরের ইতিহাস

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ | ৫:৫৬ 11 ভিউ
গানের মহড়ার সুরে সন্ধ্যা নামত, কারফিউ ভেঙে গান গাওয়ার সাহস জোগাত বাদ্যযন্ত্র। তৈরি করা ছিল নাটকের একাধিক সেট। উদীচী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এখন শুধুই পোড়া গন্ধ। রাজধানীর তোপখানা রোডের ঐতিহ্যবাহী এই ঘরে ছিল কয়েক হাজার বইয়ের সংগ্রহ, নথিপত্রে লেখা ছিল প্রতিষ্ঠার ৫৭ বছরের সাংস্কৃতিক লড়াইয়ের ইতিহাস। এর সবই এখন স্মৃতি। গতকাল শনিবার সেখানে গিয়ে পুড়ে যাওয়া আলমারির ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি। এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক দল হামলাকারীর আগুনে পুড়ে ছাই হয় দেশের প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ঐতিহাসিক কেন্দ্র উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কার্যালয়। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। জানা যায়নি কে বা কারা সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। সরেজমিন দেখা যায়,

দোতলার ছোট্ট কক্ষটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। উদীচীর দীর্ঘদিনের কর্মীরা নিজেদের প্রিয় প্রাঙ্গণের অবস্থা দেখে আবেগ সংবরণ করতে পারেননি। দেখতে আসা অনেকেই বলেন, যা পুড়ে গেছে, সেগুলো সাধারণ কোনো জিনিস নয়। এগুলো ইতিহাস। মানুষ যেমন স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলে, এই বাদ্যযন্ত্র, বইগুলোও তেমনি স্মৃতি বহন করে। কার্যালয়ের ভেতরে ছিল গুরুত্বপূর্ণ বিপুলসংখ্যক বইয়ের একটি লাইব্রেরি। ছিল নাটকের ১০টি পূর্ণাঙ্গ সেট; যার প্রতিটি তৈরি করতে সময় লেগেছে মাসের পর মাস। ছিল কম্পিউটার, আর্কাইভ, পোস্টার, ব্যানার ও নথিপত্র। উদীচীর ৫৭ বছরের কার্যনির্বাহী কমিটির প্রতিটি সভার রেজল্যুশন, সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত, আন্দোলনের নথি সবকিছু। তবে আগুনের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক (একাংশ) রহমান মুফিজ বলেন, ভেতরের সবকিছু

পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, কিছুই নেই। কিছুই উদ্ধার করতে পারিনি আমরা। কারফিউয়ের মধ্যে যে গান গাওয়া হয়েছিল আগুনে পুড়ে গেছে এমন কিছু বাদ্যযন্ত্র, যেগুলো ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় কারফিউ ভেঙে মিছিলে বাজানো হয়েছিল, যেগুলোর তালে তালে স্বৈরাচারবিরোধী গান হয়েছিল রাস্তায়। সেই বাদ্যযন্ত্রগুলো ছিল নীরব ইতিহাস। এ ছাড়া সলিল চৌধুরী, সত্যেন সেনের মতো মানুষের পদচারণা ছিল এই ফ্লোরে। উদীচীতে আগুনের প্রতিবাদ গতকাল সকাল ও বিকেলে প্রতিবাদী সমাবেশে উদীচীর সাংগঠনিক সদস্যরা অভিযোগ করেন, জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে। নব্য ফ্যাসিবাদী ও মৌলবাদী শক্তি পরিকল্পিত হামলা চালাচ্ছে। উদীচী কার্যালয়, ছায়ানট ও গণমাধ্যমে হামলার প্রতিবাদে সমাবেশ-মিছিল থেকে ওসমান হাদি হত্যার বিচার, নিরাপত্তা ব্যর্থতার দায়ে

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করা হয়। এ ছাড়া সন্ধ্যায় গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের ব্যানারে রাজধানীতে মশাল মিছিল বের হয়। ছায়ানটে হামলা: ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা সাংস্কৃতিক ও সংগীত ঐতিহ্যের ধারক ছায়ানটে হামলা, ভাঙচুর ও আগুনের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। শুক্রবার মধ্যরাতে ধানমন্ডি থানায় এ মামলা করা হয়। এতে বাদ্যযন্ত্র, আসবাব ও ইলেকট্রনিক সরঞ্জামসহ ২ কোটি ৪০ লাখ টাকার ক্ষতির কথা বলা হয়েছে। তবে মামলা হলেও হামলায় জড়িত কাউকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের ধানমন্ডি অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিসানুল হক বলেন, হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করতে কাজ চলছে। ঘটনার পর থেকে সেখানে পুলিশ

মোতায়েন রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ধানমন্ডিতে ছায়ানটের ছয়তলা ভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে একদল লোক। তাদের তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় প্রতিটি কক্ষ। এ ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ বাদী হয়ে শুক্রবার রাতে মামলা করেন। ছায়ানটের মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে অস্ত্রশস্ত্রসহ কিছু দুষ্কৃতকারী ভবনের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে। তারা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা মো. শাহাবুদ্দিন, রাসেল হাজং এবং কর্মসহকারী হাফিজুল ইসলাম রিয়াজ ও মো. স্বপনকে মারধরে করে ভবন থেকে বের করে দেয়। আসামিরা মূল ফটক থেকে ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত ভাঙচুর করে এবং চতুর্থ ও ষষ্ঠ তলায়

আগুন ধরিয়ে দেয়। মামলার শেষাংশে বলা হয়, পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র অনুসারে দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিনষ্ট, অরাজকতা সৃষ্টি ও দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার ভয়ানক দুরভিসন্ধি হিসেবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করা হয়; যাতে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এবং তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জিনিসপত্রের তালিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩০টি ইলেকট্রিক তানপুরা, আটটি হারমোনিয়াম, পাঁচ হাজার ৬৯টি দুর্লভ বই, বেশ কয়েকটি দুর্লভ চিত্রকর্ম, আটটি ল্যাপটপ, তিনটি প্রিন্টার, ১৪টি সিসি ক্যামেরা, ২০০ কাঠের চেয়ার, ২০০ টেবিল, রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের পুরস্কার, ৫০টি দরজার কাঁচ, সিসি ক্যামেরার সমুদয় সেটআপ, নিচতলার প্রধান প্রবেশদ্বারের দুটি দরজা, তিনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) ইত্যাদি। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় শুক্রবার থেকে ছায়ানটের সংগীত

বিদ্যায়তনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দাপ্তরিক কার্যক্রমও বন্ধ, কারণ কাজ চালানোর মতো একটি কম্পিউটারও অক্ষত নেই। লুট হয়েছে ল্যাপটপ। ছায়ানটের প্রধান ব্যবস্থাপক দুলাল ঘোষ বলেন, ‘এখনও আমরা সব গুছিয়ে উঠতে পারিনি। তবে দ্রুতই কার্যক্রম শুরু করা যাবে বলে আশা করছি।’ সরকারের নীরবতায় বিশেষ গোষ্ঠী মব সৃষ্টি করছে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এক বিবৃতিতে বলেন, একটি গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট ভবন আক্রমণ করেছে, তাতে অগ্নিসংযোগ করেছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। একই স‌ঙ্গে আমি সাংস্কৃ‌তিক সংগঠন উদীচীর কার্যা‌লয়ে আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগের নিন্দা জানাই। গণমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। সংগঠনটি মনে করে, সরকারের নীরবতায় বিশেষ গোষ্ঠী মব সৃষ্টি করে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে দেশকে একটি অকার্যকর ও নিয়ন্ত্রণহীন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চাচ্ছে। শনিবার এমএসএফের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ সব কথা বলা হয়। প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার নিন্দা দৈনিক প্রথম আলো ও দৈনিক ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলার নিন্দা জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। এই হামলাকে মুক্ত মতের ওপর আক্রমণ হিসেবে দেখছে অধিকার রক্ষার সংগঠনটি। শুক্রবার আর্টিকেল নাইনটিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই নিন্দা জানানো হয়। সম্পাদক পরিষদের সভাপতি, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের ওপর হামলার নিন্দাও জানিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে সহিংস হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন (আইএনএমএ)। এ হামলাকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছে সংগঠনটি। এদিকে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে হামলার নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। একই সঙ্গে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। গতকাল রাতে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক এস এম ফরহাদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন গণমাধ্যম রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার অন্যতম ভিত্তি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল ফেসবুক ও ইউটিউবে কথা বলবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা ‘জনপ্রিয়তা সহ্য করতে না পেরেই হাদিকে সরিয়েছে’— মির্জা আব্বাসের দিকে ইঙ্গিত জামায়াত আমিরের ভিডিও প্রমাণ: ময়মনসিংহে গণপিটুনিতে নিহত হিন্দু যুবক পুলিশের হেফাজতেই ছিলেন, কারখানা থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়নি পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও শয়তানপুজার সংযোগ বাংলাদেশে হিংসার নেপথ্যে পাকিস্তানের ‘ঢাকা সেল’? ভারতের গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য ৪০০ বছরের পুরনো গল্প, ঈদে মুক্তির দৌড়ে ‘রঙবাজার’ এপস্টেইনের ঘনিষ্ঠ নেতা, শিল্পী ও ব্যবসায়ীদের ছবি প্রকাশ মগবাজারে ভাই-বোনের মৃত্যু, পুলিশের ধারণা খাবারে বিষক্রিয়া মঞ্চেই হেনস্তার শিকার গায়িকা, থানায় অভিযোগ পারাপারের সময় ফেরি থেকে পড়ে নদীতে ডুবল ৫ যান, ৩ জনের মৃত্যু দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে বিএসএফ সদস্যের প্রবেশ, বিজিবির হাতে আটক চট্টগ্রামে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রের কার্যক্রম স্থগিত আগুনে পুড়ে ছাই উদীচীর ৫৭ বছরের ইতিহাস ছায়ানটে হামলা: ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা বার্সার লড়াকুকন্যা আইতানা বোনমাতি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য বিপিএলের সময়সূচিতে পরিবর্তন দীর্ঘ নীরোগ জীবনের রহস্যভেদ ইসরায়েলের প্রশ্রয়ে গাজায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর দৌরাত্ম্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের জাতীয় কবির সমাধির পাশে সমাহিত হাদি