ব্যবসা-বাণিজ্য মহাসংকটে – ইউ এস বাংলা নিউজ




ব্যবসা-বাণিজ্য মহাসংকটে

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৯ জুন, ২০২৫ | ৬:৪২ 9 ভিউ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মসূচির কারণে দেশের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্দরে কাঁচামাল খালাস করা যাচ্ছে না। বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে মালামাল নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি বন্দরে ডেমারেজ গুনতে হচ্ছে চারগুণ। এ অবস্থায় ব্যবসা-বাণিজ্য সচল রাখতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেন, দ্রুত সমাধানে আসতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কারণ এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীরা কেন খেসারত দেবেন। তারা বলেন, যুদ্ধাবস্থা ছাড়া পৃথিবীর কোথাও কাস্টমস বন্ধ রেখে এভাবে আন্দোলন করার নজির নেই। কোনো কোনো ব্যবসায়ী নেতা আন্দোলনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। কেউ আবার বিষয়টি শুরুতেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানে

ব্যর্থ হওয়ায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এনবিআরের চলমান আন্দোলন পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশের (আইসিসি-বি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান এবং লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর। এছাড়া নিটপণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান,

সাবেক এফবিসিসিআই সভাপতি মীর নাসির ও মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি কামরান টি. রহমানসহ ব্যবসায়ী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্যে আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, টালমাটাল বিশ্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ চাপে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রপ্তানি খাত, সাপ্লাই চেইন, মুদ্রা ও পুঁজিবাজারে নানা সমস্যা বিরাজমান। এই নাজুক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বেসরকারি খাত প্রতিটি মুহূর্ত বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে অতিবাহিত করছে। এর মধ্যে ১২ মে জারিকৃত অধ্যাদেশের কারণে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তিনি আরও বলেন, এনবিআরে অচলাবস্থার কারণে সঠিক সময়ে পণ্য রপ্তানি করতে না পারলে বিদেশি ক্রেতারা ক্রয়াদেশ বাতিল ও

ভবিষ্যতে নতুন ক্রয়াদেশ দিতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এসব অর্ডার পার্শ্ববর্তী দেশে চলে যাবে, যা হবে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। বর্তমানে দেশের রপ্তানিকারী শিল্প নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় এনবিআরের আন্দোলন বিদেশি ক্রেতাদের মাঝে পুনরায় ইমেজ সংকট সৃষ্টি করবে। তাই আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট স্থবিরতা ও চলমান সংকট দ্রুততার সঙ্গে সমাধান করা অতীব জরুরি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও ব্যাংকের উচ্চ সুদের পরও বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। কারণ ব্যবসায়ীরা জাতি গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সবাই যার যার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ

সময় অর্থ উপদেষ্টা এনবিআরের আন্দোলনের পেছনে ব্যবসায়ীদের ইন্ধনের যে অভিযোগ করেছেন, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরও বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও চান সংস্কার হোক। কিন্তু নিশ্চয় যৌক্তিক কিছু দাবি-দাওয়া আছে। সেগুলো সরকারকে বুঝতে হবে, তাদের কথাও শুনতে হবে। আমরা চাই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলন শেষ হোক। কিন্তু ব্যবসাকে ক্ষতি করে দাবি আদায় যৌক্তিক নয়। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমরা সব সময় এনবিআর, কাস্টমসের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে ব্যবসা করার চেষ্টা করি। বাস্তবতা হলো, আমরা তাদের কাছে জিম্মি। এই আন্দোলন ক্ষমতার বণ্টন নিয়ে, টাকা-পয়সার বণ্টন নিয়ে। মাঝপথে ব্যবসায়ীরা বিপদগ্রস্ত হচ্ছেন। তারা সারাজীবন আমাদের জ্বালিয়েছে, এখন সরকারকে জ্বালাচ্ছে। উনারা আন্দোলন বন্ধ

করুক-এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, প্রতিবছর পোশাকশিল্পের ৬৫ বিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন আনুমানিকভাবে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এনবিআরের আন্দোলনে ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকার পুরোটা ক্ষতি হচ্ছে, সেটা বলা যাবে না। তবে ক্ষতির প্রভাবটা মারাত্মক। কারণ এই আন্দোলনের ক্ষতি মোকাবিলায় যার (কারখানা) সক্ষমতা আছে, তারা টিকে থাকবে, যার সক্ষমতা নেই তারা বন্ধ হয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো-আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অর্থ উপদেষ্টা যদি বলে থাকেন এনবিআরের আন্দোলনের পেছনে ব্যবসায়ী সমাজের ইন্ধন আছে তাহলে তিনি ভুল বলেছেন। যদি নির্দিষ্ট

কোনো ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রতি এই অভিযোগ থাকে তাহলে উনাকে সুনির্দিষ্টভাবে বলতে হবে-কে, কোন প্রতিষ্ঠান বা কারা ইন্ধন দিচ্ছে। লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, এনবিআর সংস্কার প্রয়োজন-এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সমাজের পুরো সমর্থন আছে, কোনো দ্বিমত নেই। তবে এর প্রক্রিয়াটা কী হবে, সেটা সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা দরকার ছিল। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সংস্কার চান। সৎ, যোগ্য ও কর্মঠ অফিসার যারা আছেন, তাদের ক্যারিয়ার প্লানিং কী হবে, সেটা তাদের ন্যায্য প্রশ্ন। চলমান আন্দোলন বন্ধ করতে এ সংক্রান্ত মধ্যস্থতায় যদি ব্যবসায়ীদের ডাকা হয়, তাহলে তারা এগিয়ে আসতে রাজি আছেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলা হয়নি। তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ ছাড়া পৃথিবীর কোনো দেশের কাস্টমস বন্ধ হয়ে যেতে পারে, এমন নজির বিশ্বের কোথাও নেই। এটা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় বিপর্যয়, আমাদের টিকে থাকার প্রশ্ন। সব সমস্যাই টেবিলে বসে সমাধান করা যায়। শর্ত ছাড়া, সরল বিশ্বাসে এবং কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সব পক্ষকে আলোচনায় বসতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংলাপ অনেকটা স্তিমিত হয়ে গেছে- এমন মন্তব্য করে ইন্টারন্যাশনার চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশের (আইসিসি-বি) সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, অর্থনীতির লাইফলাইন এনবিআরে এভাবে মাসখানেক ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করবে-সেটা হতে পারে না। এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অন্যদিকে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ট্রেড ইউনিয়নের নেতাকর্মী নন যে, তারা ঘোষণা দিয়ে সবকিছু বন্ধ করে দেবে। সংস্কারের বিষয়ে তাদের অভিমত থাকতে পারে। কিন্তু সেটা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সরকারকে জানাতে হবে। শাটডাউনের মতো কর্মসূচি নেওয়া ঠিক হয়নি। তারাও তো বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি আরও বলেন, যার সঙ্গে সমস্যা তার সঙ্গে কথা না বলে সাইড লাইনে বথা বলে লাভ হবে না। সরকারকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
গাজার ত্রাণের বস্তায় নেশার বিষ নতুন পাইপলাইন প্রকল্পে ট্যাংকার শিল্পে বিপর্যয় এবার দুদকের মামলায় খালাস গোল্ডেন মনির ‘প্যাডসর্বস্ব’ রাজনৈতিক দলগুলোও তৎপর ধরাছোঁয়ার বাইরে বেশ কিছু মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ব্যবসা-বাণিজ্য মহাসংকটে দুর্বল ১২ ব্যাংক পেল ৫৩ হাজার কোটি টাকা কুমিল্লায় নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল কমল স্বর্ণের দাম বিশ্বে ১ কোটি ৩৩ লাখ শিশু শরণার্থী পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩২ ইস্পাহানের ভূগর্ভেই ইরানের ‘পারমাণবিক শক্তি’ চীনে ২০টি নতুন ভাইরাসের সন্ধান থাই প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্নের পদত্যাগের দাবিতে ব্যাপক বিক্ষোভ ড. ইউনূস, আলী রীয়াজ ও আসিফ নজরুলের বিরুদ্ধে মিশিগান কোর্টে মামলা মব পেল বৈধতা, ইউনূসের নেতৃত্বে রক্তাক্ত বাংলাদেশ ‘বিচ্ছেদ’ গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন ঐশ্বরিয়া খামেনির প্রাণ বাঁচিয়েছি, ধন্যবাদ লাগবে না: ট্রাম্প এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে জরুরি নির্দেশনা পাকিস্তানে আত্মঘাতি হামলায় ১৬ সেনা নিহত