ফেরির যুগে প্রবেশ করল সন্দ্বীপ – ইউ এস বাংলা নিউজ




ফেরির যুগে প্রবেশ করল সন্দ্বীপ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৫ মার্চ, ২০২৫ | ৬:০০ 10 ভিউ
চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ নৌপথে বহুল প্রতীক্ষিত ফেরি সার্ভিসের উদ্বোধন হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ফেরির যুগে প্রবেশ করল চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ। একই সঙ্গে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সমুদ্রপথে ফেরি চলাচলের সূচনা হলো। সোমবার (২৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ঘাটে পাঁচজন উপদেষ্টাকে সঙ্গে নিয়ে এই ফেরি সেবার উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। উদ্বোধনের পর সকাল ৯টায় উপদেষ্টাদের নিয়ে ফেরি সন্দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করে। ৫৫ মিনিট পর ১০টা ৫৫-তে ফেরিটি সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে পৌঁছায়। পরে উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন অন্তর্বর্তী

সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘সন্দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম উপকূলীয় দ্বীপ। কিন্তু স্বাধীনতার পর ঐতিহ্যবাহী এ জনপদের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। কী লজ্জাকর, ৫০ বছর পার হয়ে গেল! একদিকে বিরাট শহর ও বন্দর সবকিছু চলছে, অন্যদিকে এখানে আসতে ও নিজের বাড়িতে যাওয়ার সময় মধ্যযুগীয় অবস্থায় আমাদের চলে যেতে হয়। এটা আমরা সহ্য করে যাচ্ছি, এটা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হচ্ছে না। আজ আমরা সে কলঙ্ক থেকে মুক্ত হলাম।’ প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘এটা মাত্র শুরু হলো। এটা আরও সুন্দর ও নিরাপদ হবে। সন্দ্বীপ যাওয়ার কথা শুনলে মানুষ যেন ভয় না করে, যাওয়ার সময়

যেন মানুষ মনে না করে—কী বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। এখন সন্দ্বীপে শুধু নিজেরা যাব না, বন্ধু-বান্ধব, বিদেশ থেকে যারা আসবে সবাইকে নিয়ে সেখানে যাব। ফুর্তি করব। রিসোর্ট হবে।’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান বলেন, ‘সন্দ্বীপের লোক সারা আমেরিকাজুড়ে আছে। নিউইয়র্ক শহর তো তারা বন্দি করে রেখেছে। ওখান থেকে কেউ এলে অন্যজন বলত কোথায় যাচ্ছিস, সাবধানে থাকিস। এ রকম যেন আর না হয়। এখন তারা ওখানের বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে আসবে, তাদের দেখাবে আমাদের বাড়ি কোথায়, দেশ কোথায়। বুক ফুলিয়ে বলতে পারবে, চট্টগ্রাম শহরে যা পাওয়া যায় না, সন্দ্বীপে তা পাওয়া যায়। আপনাদের সে সুযোগ আছে। আপনারা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান, সেটার একটি ক্ষুদ্র অংশও সন্দ্বীপের

উন্নয়নের জন্য খরচ করা হলে আপনারা অনেক এগিয়ে যাবেন। আপনাদের যাতায়াতের সুযোগটা করে দিলে সব কিছু হয়ে যেতে পারত।’ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম; প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। উচ্ছ্বসিত দ্বীপবাসী : সন্দ্বীপে প্রায় চার লাখ মানুষের বাস। নানা কাজে এ জনপদের বাসিন্দাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে

উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে চট্টগ্রামে আসা-যাওয়া করতে হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্র উপকূল ও সন্দ্বীপের মাঝে রয়েছে উত্তাল নৌ-চ্যানেল, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭ কিলোমিটার। এ পথ পাড়ি দিতে শিশু, নারী ও বয়োবৃদ্ধ যাত্রীদের নৌযাত্রায় প্রতিনিয়ত অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কখনো এক বুক, কখনো বা এক কোমর পানি, আবার কখনো এক হাঁটু পরিমাণ কাঁদা মাড়িয়ে কূলে উঠতে হয়। সূর্য ডোবার পর বন্ধ হয়ে যায় মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় দিনের পর দিন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকতে হয় দ্বীপের বাসিন্দাদের। এসব বিবেচনায় ২০২২ সালে সন্দ্বীপে ফেরি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে অবশেষে ফেরি চালু হওয়ায় ব্যাপক উচ্ছ্বসিত দ্বীপের মানুষ। ফেরি উদ্বোধন উপলক্ষে

গতকাল ঘাটের দুপাশে শত শত লোক উপস্থিত হয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। মীর মাকসুদ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি আমাদের দ্বীপে সরাসরি গাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে। কিন্তু এখন এটা স্বপ্ন নয়, গাড়ি নিয়ে আমরা সন্দ্বীপ চলে যাচ্ছি। সারা বছর যেন যেতে পারি, কর্তৃপক্ষ যেন সে ব্যবস্থা করে।’ রহিম উদ্দীন নামের দ্বীপের আরেক সন্তান বলেন, ‘ফেরি চালু হওয়ায় আমাদের দ্বীপের সামগ্রিক চিত্র পাল্টে যাবে। আমরা নতুন নতুন ব্যবসা চালু করতে পারব। বাস, ট্রাক, ট্যাঙ্ক লরি, মিনিবাস, প্রাইভেট কারসহ সব ধরনের যানবাহন সরাসরি দ্বীপে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় সন্দ্বীপবাসীর জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ারও প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে।’ ফেরির স্বপ্ন যেভাবে সত্যি হলো :

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সীতাকুণ্ডের কুমিরা অংশে ৭০০ মিটারের একটি জেটি নির্মাণ করে বিআইডব্লিউটিএ। এর পরের বছর ২০১৪ সালে তাদের সঙ্গে ঘাট পরিচালনাকারী সংস্থা চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের একটি চুক্তি হয়। চুক্তিতে তিন বছরের জন্য প্রতিবছর ৪০ লাখ টাকা টোল নির্ধারণ হয় বিআইডব্লিউটিএর। তিন বছর পর টোল বাড়িয়ে বার্ষিক ৫৫ লাখ টাকা টোলে আবারও দুই বছরের চুক্তি হয় দুই সংস্থার। এরপর আর চুক্তিতে না গিয়ে দুই সংস্থা বিরোধে জড়িয়ে পড়ে। ঘাটের মালিকানা নিয়ে উভয় সংস্থার দ্বন্দ্ব আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এতে স্থানীয়দের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঘাটের দুর্ভোগ কমাতে আন্দোলন শুরু করে সন্দ্বীপের বাসিন্দারা। ২০২০ সালে তৎকালীন সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব দেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ ফেরি সার্ভিস চালুর জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রাক্কলন নির্ধারণ করতে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে বর্তমান পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২৮ সেপ্টেম্বর ওই কমিটি সম্ভাব্য তিনটি নৌপথ পরিদর্শন করে ফেরি চলাচলের জন্য গাছুয়া আমির মোহাম্মদঘাট (সন্দ্বীপ)-বাঁকখালী (সীতাকুণ্ড) রুট চূড়ান্ত করে। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২৩ সালের মার্চে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ থেকে সন্দ্বীপ চ্যানেলের দিকে ২ কিলোমিটার সড়কও নির্মাণ করে। নির্মাণের এক মাসের মাথায় সড়কটির সাগরের দিকের অংশ প্রবল জোয়ারের ঢেউয়ে ধসে গেলে সেখানে ঘাট নির্মাণে সংশয় তৈরি হয়। এরপর আরও একাধিকবার কমিটির সদস্যরা উপযুক্ত নৌপথ নির্ধারণে পরিদর্শন করেন। গত বছরের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সন্দ্বীপের বাসিন্দা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান আবারও উদ্যোগী হয়ে ফেরিঘাট নির্মাণ কার্যক্রম হাতে নেন। বর্ষায় চলবে কি না, আছে শঙ্কা : বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতে সন্দ্বীপবাসীকে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আর এসময়ে উত্তাল সাগরে ফেরি চলাচল করতে পারবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, মার্চ মাসের পর থেকেই ধীরে ধীরে সন্দ্বীপ চ্যানেল অশান্ত হয়ে ওঠে। এই চ্যানেলে জোয়ার-ভাটায় পানির স্তরের হ্রাস-বৃদ্ধির পার্থক্যও অত্যধিক হয়। জোয়ার-ভাটায় এ বিশাল তারতম্যের কারণে এ চ্যানেলে ফেরি চালানো কঠিন হবে। ফলে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। বিআইডব্লিউটিএর উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম-সন্দ্বীপ রুটে যে ফেরি চলছে তা এ অঞ্চলে চলাচলের উপযোগী নয়, তাই এপ্রিল মাস থেকে ফেরি চলাচল হয়তো বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় এলাকায় চলাচল উপযোগী ফেরি নির্মাণ করছে। আগামী বছর থেকে এই সমস্যা আর থাকবে না বলে আশা করা যায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
রাজতন্ত্র ফেরানোর দাবিতে উত্তাল নেপাল, নিহত ২ গাজায় নতুন ইসরাইলি হামলায় ৯২১ ফিলিস্তিনি নিহত ‘ইত্যাদি করতে গিয়ে অনেক চাপের মুখে পড়েছি, নতি স্বীকার করিনি’ একদিনে যমুনা সেতু‌ পাড়ি দিল ৯১৬৩ মোটরসাইকেল বাংলাদেশেও ৭ মাত্রার ভূমিকম্পের শঙ্কা ঈদের দিন বন্ধ থাকবে মেট্রোরেল পদ্মা সেতুতে এক দিনে সোয়া ৪ কোটি টাকা টোল আদায় চট্টগ্রাম-কুনমিং ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের মুক্তিযোদ্ধা সেনাসদস্যকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ডকে আলাদা দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ‘ফিলিস্তিনপন্থি’ হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে তুর্কি শিক্ষার্থী গ্রেফতার, ৩০ ডেমোক্র্যাট এমপির নিন্দা ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প কোথায় হয়েছিল জানেন? ফের যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে গাজায় ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাত্রায় বাধা তিন চাকার বাহন মাথার উপর যুদ্ধবিমান, আকাশে বিকট বিস্ফোরণ ঈদের আগে সোনার দামে নতুন রেকর্ড ভয়াবহ ভূমিকম্পে মিয়ানমার-থাইল্যান্ডে নিহত ১৫০ গাজীপুরের ৬৬ ভাগ কারখানা ছুটি, মহাসড়কে থেমে থেমে যানজট ঈদের আগে সোনার দামে নতুন রেকর্ড জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত সকাল সাড়ে ৮টায়