ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
ব্যাংকে কর্মরত ২ লক্ষ মানুষ চাকরি হারাতে পারেন
আমদানি করা চালের দ্বিতীয় চালান চট্টগ্রাম বন্দরে
টিসিবি’র চাল বিক্রি বন্ধ: বিপাকে কোটি পরিবার
বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার
ভারত থেকে এলো ২৭ হাজার টন চাল
চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ১১ টাকা, অভিযোগের তীর যাদের দিকে
গোল গাছের বাণিজ্যিক চাষ:সুস্বাদু গুড়ের কদরে গোল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা
দরপত্রে বেড়েছে তদবির
রাজধানীর নগর সংস্থাগুলোর দরপত্রে নানামুখী তদবির বেড়েছে। কেনাকাটা, সেবা ও উন্নয়নকাজের দরপত্রে তদবিরের চাপে কাবু হয়ে পড়েছেন প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও নানাভাবে তদবির করছেন। কাজের তুলনায় তদবিরের পরিমাণ বেশি হওয়ায় আগ্রহীরা দরপত্র আহ্বানকারীদের ওপর অসন্তুষ্ট হচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন যারা দরপত্রে অংশ নিচ্ছেন, তাদের অধিকাংশেরই অভিজ্ঞতা নেই। কারও কারও কাজের ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণাও নেই। তবুও তারা কাজ পেতে চাচ্ছেন। যে কোনো মূল্যে কাজ দিতে প্রকৌশলী-কর্মকর্তাদের চাপ দিচ্ছেন আগ্রহী ঠিকাদাররা। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্তরা। বিভিন্ন দলের নেতারাও ওইসব ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার অনুরোধ করছেন। কেউ কেউ বড় নেতাদের নামও ভাঙাচ্ছেন। এছাড়া বিভিন্ন উপদেষ্টা,
বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা অনেকের জন্য তদবির করেছেন। তদবিরগুলো অগ্রাহ্য করার মতো নয়, আবার আইন অনুযায়ী তাদের সুবিধা দেওয়া যায় না। এ ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন নগর সেবা সংস্থার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা। তারা জানান, একজন কর্মকর্তার রুমে অতিথিদের জন্য ২ থেকে ৩টা চেয়ার থাকে। এসব রুমে ১০-১৫ জন লোকের সমাগম থাকে। কর্মকর্তারা বহিরাগতদের জন্য নিজেদের কাজটিও ঠিকমতো করতে পারেন না। কেউ সরাসরি এসে কাজ দাবি করছেন। আবার কারও জন্য ফোনকল আসছে। দরপত্র আহ্বানের পর যারা কাজ পাচ্ছেন, তারা খুশি হচ্ছেন; আর যারা পাচ্ছেন না, তারা দায়িত্বপ্রাপ্তদের হুমকিধমকি দিচ্ছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা
যায়, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ওয়ার্ডভিত্তিক আবর্জনা পরিষ্কারের দরপত্র হয়েছে। সেখানে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ পেতে তুমুল লড়াই হয়েছে। বিভিন্ন দলের সমর্থক বা নেতাকর্মী দাবি করে একেকটি ওয়ার্ডের জন্য গ্রুপে গ্রুপে লোকবল মহড়া দিয়েছে নগর ভবনে। পট পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত হওয়ার পর একাধিক প্রভাশালী ব্যক্তি, ইসলামপন্থি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও এসব কাজ পাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে। আরও জানা যায়, মশক নিয়ন্ত্রণ এবং বাৎসরিক উন্নয়ন ও সংস্কারকাজেরও দরপত্র হয়েছে। এসব কাজের জন্যও তুমুল লড়াই চলছে। কিছু দরপত্র হয়েছে, কিছু সামনে হবে। এসবকে কেন্দ্র করে ডিএনসিসি নগর ভবন রীতিমতো মাছের বাজারে পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ
করছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোয়। যেসব প্রকৌশলীর দপ্তরে বিভিন্ন কাজ রয়েছে, তারা খুবই শঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন। বেশি লোকের জটলা এবং ভীতিকর পরিবেশ উপলব্ধি করলে অফিস থেকে বেরিয়ে যান কেউ কেউ; কেউবা ফোন বন্ধ করে রাখছেন। ডিএনসিসির এক প্রকৌশলী জানান, বড় বড় জায়গা থেকে ফোন আসছে, এতে তারা বিব্রতবোধ করছেন। আগে এসব বিষয় মেয়ররা ম্যানেজ করতেন। এখন প্রকৌশলী পর্যায়ে চলে আসে বলে তারা খুবই শঙ্কার মধ্যে পড়ে যান। কেননা দরপত্রের নিয়ম অনুসরণ করতে চান না তারা। কিন্তু নিয়ম অনুসরণ করায় এতে যারা যোগ্য, তারা কাজ পাচ্ছেন। আর যারা তদবির করছেন, তারা কাজ না পাওয়ায় প্রাক্কলিত মূল্য বা দরপত্রের গোপন দর জানিয়ে দেওয়ার
চাপ দিচ্ছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৯ ডিসেম্বর ডিএনসিসির ওয়ার্ড পর্যায়ের গৃহস্থালির বর্জ্য অপসারণের ঠিকাদারি কাজ না পাওয়ার ক্ষোভে কয়েকজন ঠিকাদার সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলমকে হেনস্তা করেন। এ সময় তারা নিজেদের বিএনপির রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে দাবি করেন। তারা গুলশান-২ ডিএনসিসি নগর ভবনে সিইওর রুমে প্রবেশ করে গালাগাল করেন এবং তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, পট পরিবর্তনের পর ডিএনসিসিতে ওয়ার্ডভিত্তিক আবর্জনা পরিষ্কার, মশক নিধন এবং নগরীর উন্নয়ন ও সেবা কার্যক্রমের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এসব কাজের জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদবির আসছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র
প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, পট পরিবর্তনের পর ওয়ার্ডভিত্তিক আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ বিএনপির কর্মী-সমর্থক পরিচয়ে দরপত্রের নামে ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। এখন নগরীর উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ এলাকাভিত্তিক বিএনপির নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। যে এলাকার কাজ, ওই এলাকার দলীয় ঠিকাদাররা করছেন। অন্য এলাকার কাউকে করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা অঘোষিত একধরনের নিয়মে পরিণত করার চেষ্টা করছেন তারা। ডিএসসিসির এক প্রকৌশলী জানান, আমি নিজেও বিএনপির সমর্থক। ছাত্রজীবনেও ছাত্রদলের সমর্থক ছিলাম। এখন প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। আগের পরিচয়ের কারণে অনেকে আসছেন, তবে কাউকে আশা দেখাতে পারছি না। তিনি জানান, সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও দরপত্র বাগিয়ে নেওয়ার তদবির আসছে।
দিন শেষে ডিএসসিসির দরপত্রগুলো এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন দলের নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা পাচ্ছেন বা পাবেন। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ডিএসসিসির দরপত্র প্রক্রিয়ায়ও নতুন লোকের সমাগম ঘটেছে। নতুন নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আগমন ঘটেছে। তারা কাজ পেতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন জনকে দিয়ে প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের ফোন করাচ্ছেন। সেসব মোকাবিলা করেই প্রকৌশলী-কর্মকর্তাদের কাজ করতে হচ্ছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে জানা যায়, এখন নতুন বহু ঠিকাদারের আগমন ঘটেছে রাজউকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা বা সরকারের প্রভাবশালীদের সুপারিশে তারা রাজউকে ঢুকছেন। সবাই কাজ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তদবির করছেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রকৌশলী-কর্মকর্তাদের চাপাচাপিও করছেন। এ প্রসঙ্গে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পট পরিবর্তনের আগে একশ্রেণির ঠিকাদার একচেটিয়া কাজ করেছে রাজউকে। আর পট পরিবর্তনের পর আরেক শ্রেণির মানুষ রাজউকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে তারা কিছু কাজও শুরু করেছেন। তবে রাজউক নিয়মের মধ্য থেকে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে তাদের। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, পট পরিবর্তনের পর নতুন অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনলিস্টেট হওয়ার আবেদন করেছে ঢাকা ওয়াসায়। ঢাকা ওয়াসা সেসব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে নতুন করে অনেক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসায় কাজ করার সুযোগ পাবে। আগে থেকে ঢাকা ওয়াসার এনলিস্টেট ছিল। কিন্তু বিগত সরকারর সময়ে কাজ পাননি। তারা বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের নাম ব্যবহার করে কাজ পাওয়ার তদবির করছেন। তারা ঢাকা ওয়াসায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছন। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের তদবিরের ফোনে হিমশিম খাচ্ছেন ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা। এক কর্মকর্তা জানান, মাঠ পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকা ওয়াসার এমডি বা শীর্ষ প্রকৌশলীদের রুমের সামনে ঘোরাঘুরি করেন। নিজেদের পরিচয়ে সাক্ষাৎ পেতে অসুবিধা হয় বলে তারা বড় নেতা বলে পরিচয় দেন। এভাবে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের দাবিদাওয়া জানান। ক্ষেত্রবিশেষে তারা কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের নানাভাবে চাপাচাপিও করছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, নতুন করে অনেকেই ঢাকা ওয়াসায় ব্যবসা করতে চান। তারা ঢাকা ওয়াসা ভবনে আসছেন। আমার সঙ্গে দেখাও করছেন। কাজ পাওয়ার ব্যাপারে কাউকে বলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু আমরা নিয়মের বাইরে কোনো চর্চা করছি না।
বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রধানরা অনেকের জন্য তদবির করেছেন। তদবিরগুলো অগ্রাহ্য করার মতো নয়, আবার আইন অনুযায়ী তাদের সুবিধা দেওয়া যায় না। এ ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছেন নগর সেবা সংস্থার বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা। তারা জানান, একজন কর্মকর্তার রুমে অতিথিদের জন্য ২ থেকে ৩টা চেয়ার থাকে। এসব রুমে ১০-১৫ জন লোকের সমাগম থাকে। কর্মকর্তারা বহিরাগতদের জন্য নিজেদের কাজটিও ঠিকমতো করতে পারেন না। কেউ সরাসরি এসে কাজ দাবি করছেন। আবার কারও জন্য ফোনকল আসছে। দরপত্র আহ্বানের পর যারা কাজ পাচ্ছেন, তারা খুশি হচ্ছেন; আর যারা পাচ্ছেন না, তারা দায়িত্বপ্রাপ্তদের হুমকিধমকি দিচ্ছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) সূত্রে জানা
যায়, ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ডিএনসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে ওয়ার্ডভিত্তিক আবর্জনা পরিষ্কারের দরপত্র হয়েছে। সেখানে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ পেতে তুমুল লড়াই হয়েছে। বিভিন্ন দলের সমর্থক বা নেতাকর্মী দাবি করে একেকটি ওয়ার্ডের জন্য গ্রুপে গ্রুপে লোকবল মহড়া দিয়েছে নগর ভবনে। পট পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্ষমতায়িত হওয়ার পর একাধিক প্রভাশালী ব্যক্তি, ইসলামপন্থি দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও এসব কাজ পাওয়ার জন্য তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে। আরও জানা যায়, মশক নিয়ন্ত্রণ এবং বাৎসরিক উন্নয়ন ও সংস্কারকাজেরও দরপত্র হয়েছে। এসব কাজের জন্যও তুমুল লড়াই চলছে। কিছু দরপত্র হয়েছে, কিছু সামনে হবে। এসবকে কেন্দ্র করে ডিএনসিসি নগর ভবন রীতিমতো মাছের বাজারে পরিণত হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ
করছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয়গুলোয়। যেসব প্রকৌশলীর দপ্তরে বিভিন্ন কাজ রয়েছে, তারা খুবই শঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন। বেশি লোকের জটলা এবং ভীতিকর পরিবেশ উপলব্ধি করলে অফিস থেকে বেরিয়ে যান কেউ কেউ; কেউবা ফোন বন্ধ করে রাখছেন। ডিএনসিসির এক প্রকৌশলী জানান, বড় বড় জায়গা থেকে ফোন আসছে, এতে তারা বিব্রতবোধ করছেন। আগে এসব বিষয় মেয়ররা ম্যানেজ করতেন। এখন প্রকৌশলী পর্যায়ে চলে আসে বলে তারা খুবই শঙ্কার মধ্যে পড়ে যান। কেননা দরপত্রের নিয়ম অনুসরণ করতে চান না তারা। কিন্তু নিয়ম অনুসরণ করায় এতে যারা যোগ্য, তারা কাজ পাচ্ছেন। আর যারা তদবির করছেন, তারা কাজ না পাওয়ায় প্রাক্কলিত মূল্য বা দরপত্রের গোপন দর জানিয়ে দেওয়ার
চাপ দিচ্ছেন। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৯ ডিসেম্বর ডিএনসিসির ওয়ার্ড পর্যায়ের গৃহস্থালির বর্জ্য অপসারণের ঠিকাদারি কাজ না পাওয়ার ক্ষোভে কয়েকজন ঠিকাদার সংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মীর খায়রুল আলমকে হেনস্তা করেন। এ সময় তারা নিজেদের বিএনপির রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বলে দাবি করেন। তারা গুলশান-২ ডিএনসিসি নগর ভবনে সিইওর রুমে প্রবেশ করে গালাগাল করেন এবং তাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, পট পরিবর্তনের পর ডিএনসিসিতে ওয়ার্ডভিত্তিক আবর্জনা পরিষ্কার, মশক নিধন এবং নগরীর উন্নয়ন ও সেবা কার্যক্রমের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এসব কাজের জন্য বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদবির আসছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র
প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, পট পরিবর্তনের পর ওয়ার্ডভিত্তিক আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ বিএনপির কর্মী-সমর্থক পরিচয়ে দরপত্রের নামে ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। এখন নগরীর উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ এলাকাভিত্তিক বিএনপির নেতাকর্মীরা নিয়ন্ত্রণ করছেন। যে এলাকার কাজ, ওই এলাকার দলীয় ঠিকাদাররা করছেন। অন্য এলাকার কাউকে করতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা অঘোষিত একধরনের নিয়মে পরিণত করার চেষ্টা করছেন তারা। ডিএসসিসির এক প্রকৌশলী জানান, আমি নিজেও বিএনপির সমর্থক। ছাত্রজীবনেও ছাত্রদলের সমর্থক ছিলাম। এখন প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। আগের পরিচয়ের কারণে অনেকে আসছেন, তবে কাউকে আশা দেখাতে পারছি না। তিনি জানান, সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকেও দরপত্র বাগিয়ে নেওয়ার তদবির আসছে।
দিন শেষে ডিএসসিসির দরপত্রগুলো এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন দলের নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা পাচ্ছেন বা পাবেন। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লবের পর ডিএসসিসির দরপত্র প্রক্রিয়ায়ও নতুন লোকের সমাগম ঘটেছে। নতুন নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আগমন ঘটেছে। তারা কাজ পেতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। বিভিন্ন জনকে দিয়ে প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের ফোন করাচ্ছেন। সেসব মোকাবিলা করেই প্রকৌশলী-কর্মকর্তাদের কাজ করতে হচ্ছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) সূত্রে জানা যায়, এখন নতুন বহু ঠিকাদারের আগমন ঘটেছে রাজউকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা বা সরকারের প্রভাবশালীদের সুপারিশে তারা রাজউকে ঢুকছেন। সবাই কাজ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তদবির করছেন এবং ক্ষেত্রবিশেষে প্রকৌশলী-কর্মকর্তাদের চাপাচাপিও করছেন। এ প্রসঙ্গে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পট পরিবর্তনের আগে একশ্রেণির ঠিকাদার একচেটিয়া কাজ করেছে রাজউকে। আর পট পরিবর্তনের পর আরেক শ্রেণির মানুষ রাজউকে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে তারা কিছু কাজও শুরু করেছেন। তবে রাজউক নিয়মের মধ্য থেকে দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রয়েছে তাদের। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, পট পরিবর্তনের পর নতুন অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনলিস্টেট হওয়ার আবেদন করেছে ঢাকা ওয়াসায়। ঢাকা ওয়াসা সেসব যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে নতুন করে অনেক প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসায় কাজ করার সুযোগ পাবে। আগে থেকে ঢাকা ওয়াসার এনলিস্টেট ছিল। কিন্তু বিগত সরকারর সময়ে কাজ পাননি। তারা বিএনপির বিভিন্ন নেতাদের নাম ব্যবহার করে কাজ পাওয়ার তদবির করছেন। তারা ঢাকা ওয়াসায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছন। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ব্যক্তি এবং সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের তদবিরের ফোনে হিমশিম খাচ্ছেন ঢাকা ওয়াসার প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা। এক কর্মকর্তা জানান, মাঠ পর্যায়ের বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকা ওয়াসার এমডি বা শীর্ষ প্রকৌশলীদের রুমের সামনে ঘোরাঘুরি করেন। নিজেদের পরিচয়ে সাক্ষাৎ পেতে অসুবিধা হয় বলে তারা বড় নেতা বলে পরিচয় দেন। এভাবে ভেতরে প্রবেশ করে তাদের দাবিদাওয়া জানান। ক্ষেত্রবিশেষে তারা কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের নানাভাবে চাপাচাপিও করছেন। এ প্রসঙ্গে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুর রহমান বলেন, নতুন করে অনেকেই ঢাকা ওয়াসায় ব্যবসা করতে চান। তারা ঢাকা ওয়াসা ভবনে আসছেন। আমার সঙ্গে দেখাও করছেন। কাজ পাওয়ার ব্যাপারে কাউকে বলে দেওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু আমরা নিয়মের বাইরে কোনো চর্চা করছি না।