একাত্তরের কূটনৈতিক যুদ্ধ – ইউ এস বাংলা নিউজ




একাত্তরের কূটনৈতিক যুদ্ধ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ | ৫:০৭ 12 ভিউ
বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র সংগ্রাম আর শত ত্যাগের বিনিময়ে একাত্তরে জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। তবে একাত্তরে কূটনৈতিক যুদ্ধও কম ছিল না। এ সময় ১২০ জন কূটনীতিক এবং অন্যান্য কর্মকর্তা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে বিশ্বজনমত গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। দিনটি ছিল রোববার। এদিন সকালে নরসিংদী হানাদারমুক্ত হয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলছিল ভিন্ন তৎপরতা। আগের দিন শনিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভোরেন্টসভকে ডেকে নেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, আগামীকাল (১২ ডিসেম্বর) মধ্যাহ্নের আগে ভারতকে অবশ্যই যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। না হলে যুক্তরাষ্ট্র

নিজেই প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতে যুক্তরাষ্ট্রের সব চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়ে। এদিন নৌবাহিনীর দুঃসাহসিক অভিযানে পাকিস্তানি বাহিনী নৌপথে দিশেহারা হয়ে পড়ে। বহুসংখ্যক নৌ সদস্যও এদিন শাহাদৎবরণ করেন। দেশের বিভিন্ন এলাকা শত্রুমুক্ত করে মিত্রবাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা চলে এসেছিল ঢাকার কাছাকাছি। এমন এক পরিস্থিতিতে পাকিস্তানিরা বিদেশি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে ছিল। কিন্তু সাহায্য না পেয়ে নিশ্চিত পরাজয় জেনে শেষ কামড় হিসেবে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা চূড়ান্ত করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব উ থান্ট প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের প্রভাবে বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। ৩ ডিসেম্বর

পাকিস্তান-বাংলাদেশ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই সরগরম হয়ে ওঠে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। যুদ্ধ থামানো বা বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে পাকিস্তানের সঙ্গে জোর তৎপরতা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। একের পর এক প্রস্তাব পেশ করে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, বেলজিয়াম, ইতালি, স্পেনসহ পাঁচ দেশ এবং আর্জেন্টিনা, জাপান, নিকারাগুয়াসহ আটটি দেশ। সোভিয়েত রাশিয়ার ভেটোর কারণে যেগুলোর কোনোটিই পাস হয়নি। কিছু প্রস্তাব আবার আগেভাগেই প্রত্যাহার করা হয়। মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দিতে যান। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের বিরোধিতা ও চাপের কারণে তাঁকে ভাষণ দিতে দেওয়া হয়নি। ঢাকা যখন প্রায় শত্রুমুক্ত, তখন জাতিসংঘকে ব্যবহার করে যুদ্ধ থামানোর পাকিস্তানি প্রচেষ্টায় জুলফিকার আলি ভুট্টো

সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তিনি বিফল হয়ে জাতিসংঘকে ভর্ৎসনা করে অধিবেশন ছেড়ে চলে যান। পরিষদের কক্ষ ছাড়ার আগে ভুট্টো তাঁর চেয়ারকে পেছনে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ান এবং তাঁর নথি ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমি ইঁদুর নই। আমার জীবনে কোনো নিচু কাজ আমি করিনি। আমি হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছি। আমি জেল খেটেছি। আজ আমি কোনো নিচু কাজ করছি না, তবে নিরাপত্তা পরিষদের সভা ত্যাগ করছি। আমি মনে করি, আর এক মুহূর্ত এখানে থাকা আমাদের জন্য এবং আমার দেশের জন্য মর্যাদা হানিকর...। আমাদের ওপর আগ্রাসন বৈধকরণ হচ্ছে; বৈধকরণ হচ্ছে ভোগদখল। দেশ আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেন

আমি নিরাপত্তা পরিষদে আমার সময় ক্ষেপণ করব? আমি আমার দেশের জন্য লজ্জাজনক আত্মসমর্পণের অংশ হতে পারি না। আপনারা নিরাপত্তা পরিষদ নিয়ে থাকুন, আমি চললাম।’ ভুট্টো অন্যান্য কূটনীতিককে অবাক করে কার্পেট বিছানো মূল কক্ষ ত্যাগ করে ঝিরঝিরে বৃষ্টির মধ্যে গাড়িতে চলে যান। ভুট্টোর চলে যাওয়ার দিকে পরিষদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল। এর পর যথারীতি নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট ইসমাইল বি টেইলর কামারা তিউনিসিয়ার প্রতিনিধি রিচার্ড ডাইসকে ফ্লোর দিলেন। সভা চলতে থাকল। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধির দীর্ঘ বক্তব্যের পর অধিবেশন মুলতবি হয়ে যায়। বাংলাদেশকে শত্রুমুক্ত করার এই সশস্ত্র অধ্যায়ে উল্লেখযোগ্য কিছু রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতারা পাকিস্তানি দখলদার

বাহিনীর সহযোগী হয়ে মুক্তিকামী মানুষের ওপর জঘন্য, পৈশাচিক অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ড চালায়। এই নির্মম ও নিষ্ঠুর অত্যাচারে শহীদ হয় ৩০ লাখ নিরীহ নিরপরাধ শিশু-কিশোরসহ সর্বস্তরের মানুষ। শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয় ২ লাখ ৫০ হাজারের বেশি নারী। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় প্রায় এক কোটি মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
‘অখণ্ড বাংলাদেশ’ গঠনের ডাক, তীব্র প্রতিক্রিয়া দিল্লির রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি: সংকটে নিম্ন আয়ের মানুষ রাজধানীতে ছিনতাইয়ের বাড়বাড়ন্ত সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের ঘটনায় মিঠুন চক্রবর্তীর সতর্কবার্তা জার্মানি নির্বাচনে ইলন মাস্কের হস্তক্ষেপ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক গত ৪৮ ঘণ্টায় ৩ মন্দিরে হামলা, প্রশ্নবিদ্ধ ‘নতুন বাংলাদেশ’ ‘খুনি হিসেবে র‌্যাবকে সমাজে রাখা ঠিক হবে না’ দিল্লিতে নির্বাসিত হাসিনা, বাংলাদেশ- ভারত সম্পর্কে টানাপোড়ন: এবিসি আমাদের পাকঘরে উঁকি মারবেন না: ভারতকে ডা. শফিকুর রহমান রাখাইনে সামরিক সদর দপ্তর দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মি শেখ হাসিনাকে দেখে রাখার ঘোষণা দিয়ে নিজেই হলেন পলাতক ২৬ বছর আগের ইলন মাস্কের ‘প্রলাপ’এখন বাস্তব দ্বিতীয়বারের মতো পাকিস্তান থেকে পণ্য নিয়ে চট্টগ্রামে ভিড়লো জাহাজ ভারত একটি মারমুখী রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে: আশরাফ কায়সার ‘আওয়ামী লীগ দালাল না, ভারতেরই সরকার ছিল’ নাটোরে মহাশ্মশানে ডাকাতি, মন্দিরে লুটপাট, সেবায়েতকে হত্যা ১৯ বাংলাদেশি নাবিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের খসড়া তালিকা প্রকাশ মূল্যস্ফীতি প্রকাশে কারচুপি নেই, তাই বেশি দেখাচ্ছে: অর্থ উপদেষ্টা