ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
ঢাকার সমাবেশে যাওয়ার পথে নারীসহ আটক ১৬, জানা গেল নাম
পুলিশের পরকীয়া প্রেমিক জুটি হারুন সানজিদা দু‘জনই এখন রংপুরে
সাবেক আইজিপি মামুন ৩ দিনের রিমান্ডে
বান্দরবানে ৩ কেএনএ সদস্য নিহত, অস্ত্র উদ্ধার
স্বামীকে গোপন ভিডিও-ছবি পাঠাল সাবেক প্রেমিক, নববধূর আত্মহত্যা
ধানমন্ডিতে দুই কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত কয়েকজন
যাত্রাবাড়ীতে অটোরিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
নানা অভিযোগ, তবুও বহাল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বহুল আলোচিত চরিত্র পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী। অনৈতিকভাবে লোক নিয়োগ, বেতন কাঠামো নিজের মতো ঠিক করা, পরীক্ষার খাতা বিক্রি, বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা সিন্দুকে রেখে ইচ্ছামতো ব্যবহার, উপাচার্যের অমঙ্গল কামনায় প্রকাশ্যে মোনাজাত, অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও আধিপত্য বিস্তার, অধিভুক্ত কলেজ থেকে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, কম দামে পুরোনো উত্তরপত্রের কাগজ বিক্রি করে টাকার অংশ ভাগবাটোয়ারাসহ নানা ঘটনায় অভিযুক্ত তিনি। এসব অভিযোগ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে রদবদল হয়েছে। পদত্যাগ করেছেন উপাচার্যসহ অনেক কর্মকর্তা। অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে দুই উপ-উপাচার্যকেও। সব দপ্তর থেকে সরানো হয়েছে বিতর্কিতদের। এরপরও
স্বপদে বহাল রয়েছেন বাহালুল হক। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। এমন পরিস্থিতিতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাদের দাবি, বাহালুল হক চৌধুরীর কাছে এ দপ্তর নিরাপদ নয়। অন্যদিকে বাহালুল হক স্বপদে বহাল থাকার জন্য এখনো বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। বর্তমান উপাচার্যকেও নানা কৌশলে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি উপাচার্য কার্যালয়েও বেড়েছে তার আনাগোনা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপাচার্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে একাধিকবার অনৈতিক কাজের পরও বাহালুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এর বদলে দক্ষ, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে
তাকে অভিহিত করেছেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। পরে অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল উপাচার্যের দায়িত্বে এলেও বাহালুল স্বপদে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে ৫৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন বাহালুল হক। অবৈধভাবে দিয়েছেন তাদের বেতন-ভাতাও। ২০২৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং শুরু হয় সমালোচনা। এ ছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাহলুল হকের নিয়োগ দেওয়া ৪২ কর্মচারীর নিয়োগ স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে একে ‘অমানবিক সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ ছাড়া বাহালুলের বিরুদ্ধে অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে
খারাপ আচরণ, অফিসে আধিপত্য বিস্তার, অধিভুক্ত কলেজ থেকে অবৈধ উপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন ফরম বিক্রির টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফান্ডে জমা না দিয়ে সিন্দুকে রেখে ইচ্ছামতো ব্যবহার, পছন্দের প্রতিষ্ঠানের কাছে কম দামে পুরোনো উত্তরপত্রের কাগজ বিক্রি করে টাকার একটি অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ফরম বিক্রির টাকা ইচ্ছামতো ব্যবহারের বিষয়টি সামনে এলে সেই টাকার একটি অংশ তিনি ব্যাংকে জমা রাখেন বলেও অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কত টাকা গ্রহণ করেছেন ও কত টাকা খরচ করেছেন, সেই হিসাব তিনি দেননি। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি ঢাবি প্রশাসন। এমনকি কোনো তদন্ত কমিটিও হয়নি। আরও জানা গেছে, ২০২৩ সালের
৯ ফেব্রুয়ারি ঢাবির এক কর্মকর্তার স্ত্রীর জানাজায় তৎকালীন উপাচার্য অংশ না নেওয়ায় বাহালুলের নেতৃত্বে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ও মোনাজাত করা হয়। সেখানে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ঘটনার পর তাকে শোকজ করা হয় এবং তাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ছানাউল্লাহকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের চলতি দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তিনি নিজে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ হিসেবে জাহির করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যও তাকে ‘মানসিক অসুস্থ’ বলে অভিহিত করেন। হাসপাতালেও ভর্তি করা হয় তাকে। ওই ঘটনার কয়েকদিন পরই তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় যান। পরে জানা যায়, ঘটনা ধামাচাপা দিতেই তিনি এ নাটক করেন। উপাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় কোনো তদন্ত কমিটি
না করে এ ঘটনায় উল্টে তার ছুটি মঞ্জুর করে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। পরে দক্ষ, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধসম্পন্ন আখ্যা দিয়ে তাকে ফের কাজে যোগদানের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মকর্তা বাহলুল হক চৌধুরীর ব্যাপারে বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিভিন্ন অনিয়ম, নিয়োগবাণিজ্য ও সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগের ব্যাপারে বহুবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সতর্ক করেছে। কোনো কাজ হয়নি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে যে কোনো মূল্যে থাকতে চান। চেয়ার টিকিয়ে রাখতে এমন কোনো কাজ নেই, যা তিনি করেননি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তদবির করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুদকেরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে একটা তদন্ত
শুরু হয়েছিল, ব্যক্তিগত প্রভাবের ফলে তা থমকে আছে। ঢাকা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার সম্পদের শেষ নেই। একজন সাধারণ কর্মকর্তা হিসেবে মনে করি, বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অনেক আগেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে তার যোগ্যতা হারিয়েছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে তার অপসারণ অত্যাবশ্যক। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো কীভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর অবস্থান করছেন, তা বুঝে আসে না। এই ব্যক্তির অপকর্মের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না। আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই, তাকে কেন এখনো অপসারণ করা হলো না? তাকে শুধু অপসারণ করলেই হবে না; বরং অনতিবিলম্বে তার অপকর্মগুলোর যথাযথ তদন্ত করে বিচার করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবো। কলা অনুষদের এক শিক্ষক পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনেক নিউজ দেখেছি। সাবেক ভিসি আখতারুজ্জামানের সময় তার বিরুদ্ধে অবৈধ লোক নিয়োগ ও ভিসির বাসভবনে সামনে অস্বাভাবিক আচরণ এবং বিতর্কিত মোনাজাত পরিচালনা, সেকশনের টাকা অ্যাকাউন্টে না রেখে তার সিন্দুকে রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে সংবাদ দেখেছি। কিন্তু সেগুলোর কোনো ঘটনায় তদন্ত কমিটি বা তদন্ত হয়েছে, এমনটা চোখে পড়েনি। আমার জানামতে, তার সঙ্গে সাবেক ভিসি আখতারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অনিয়মে অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভাবতে পারে। অভিযোগের বিষয়ে বাহালুল হক বলেন, আমি যদি কোনো অনিয়ম করে থাকি, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি আমাকে স্বপদে বহাল রাখার কথা? আমি এত বছর ধরে চাকরি করি, আমি কোনো অন্যায়-অনিয়ম করিনি। যারা আমার নামে বিভিন্ন অভিযোগ দেয়, তারা আমার এই পদে আসতে চায়। আমার কথা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাকে না রাখে, তাহলে আমি কি জোর করে থাকব? কিন্তু তাদের ভয়ে তো আমি চলে যাব না। যারা আমার নামে এসব কথা বলে, তাদের মনুষ্যত্ববোধ নেই। আমি কোনো দল করি না। অন্যরা গেলেও আমি কখনো বঙ্গবন্ধুর মাজারে কিংবা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যাইনি। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন আছে কি না, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানকে মোবাইলফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
স্বপদে বহাল রয়েছেন বাহালুল হক। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। এমন পরিস্থিতিতে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাদের দাবি, বাহালুল হক চৌধুরীর কাছে এ দপ্তর নিরাপদ নয়। অন্যদিকে বাহালুল হক স্বপদে বহাল থাকার জন্য এখনো বিভিন্ন পর্যায়ে তদবির করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। বর্তমান উপাচার্যকেও নানা কৌশলে আয়ত্তে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি উপাচার্য কার্যালয়েও বেড়েছে তার আনাগোনা। জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপাচার্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে একাধিকবার অনৈতিক কাজের পরও বাহালুল হকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এর বদলে দক্ষ, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধসম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে
তাকে অভিহিত করেছেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। পরে অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল উপাচার্যের দায়িত্বে এলেও বাহালুল স্বপদে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে ৫৩ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন বাহালুল হক। অবৈধভাবে দিয়েছেন তাদের বেতন-ভাতাও। ২০২৩ সালে নিয়োগপ্রাপ্তদের বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতা তৈরি হলে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং শুরু হয় সমালোচনা। এ ছাড়া গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাহলুল হকের নিয়োগ দেওয়া ৪২ কর্মচারীর নিয়োগ স্থগিত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে একে ‘অমানবিক সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ ছাড়া বাহালুলের বিরুদ্ধে অফিসের কর্মচারীদের সঙ্গে
খারাপ আচরণ, অফিসে আধিপত্য বিস্তার, অধিভুক্ত কলেজ থেকে অবৈধ উপায়ে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ, শিক্ষার্থীদের কাছে বিভিন্ন ফরম বিক্রির টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফান্ডে জমা না দিয়ে সিন্দুকে রেখে ইচ্ছামতো ব্যবহার, পছন্দের প্রতিষ্ঠানের কাছে কম দামে পুরোনো উত্তরপত্রের কাগজ বিক্রি করে টাকার একটি অংশ নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ফরম বিক্রির টাকা ইচ্ছামতো ব্যবহারের বিষয়টি সামনে এলে সেই টাকার একটি অংশ তিনি ব্যাংকে জমা রাখেন বলেও অভিযোগ ওঠে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কত টাকা গ্রহণ করেছেন ও কত টাকা খরচ করেছেন, সেই হিসাব তিনি দেননি। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়নি ঢাবি প্রশাসন। এমনকি কোনো তদন্ত কমিটিও হয়নি। আরও জানা গেছে, ২০২৩ সালের
৯ ফেব্রুয়ারি ঢাবির এক কর্মকর্তার স্ত্রীর জানাজায় তৎকালীন উপাচার্য অংশ না নেওয়ায় বাহালুলের নেতৃত্বে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ও মোনাজাত করা হয়। সেখানে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ঘটনার পর তাকে শোকজ করা হয় এবং তাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. ছানাউল্লাহকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের চলতি দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে তিনি নিজে ‘মানসিকভাবে অসুস্থ’ হিসেবে জাহির করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্যও তাকে ‘মানসিক অসুস্থ’ বলে অভিহিত করেন। হাসপাতালেও ভর্তি করা হয় তাকে। ওই ঘটনার কয়েকদিন পরই তিনি হাসপাতাল থেকে বাসায় যান। পরে জানা যায়, ঘটনা ধামাচাপা দিতেই তিনি এ নাটক করেন। উপাচার্যের আস্থাভাজন হওয়ায় কোনো তদন্ত কমিটি
না করে এ ঘটনায় উল্টে তার ছুটি মঞ্জুর করে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘদিন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি। পরে দক্ষ, মানবিক ও অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধসম্পন্ন আখ্যা দিয়ে তাকে ফের কাজে যোগদানের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের এক কর্মকর্তা বাহলুল হক চৌধুরীর ব্যাপারে বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিভিন্ন অনিয়ম, নিয়োগবাণিজ্য ও সিন্ডিকেট চালানোর অভিযোগের ব্যাপারে বহুবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে সতর্ক করেছে। কোনো কাজ হয়নি। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে যে কোনো মূল্যে থাকতে চান। চেয়ার টিকিয়ে রাখতে এমন কোনো কাজ নেই, যা তিনি করেননি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তদবির করেছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে দুদকেরও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে একটা তদন্ত
শুরু হয়েছিল, ব্যক্তিগত প্রভাবের ফলে তা থমকে আছে। ঢাকা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তার সম্পদের শেষ নেই। একজন সাধারণ কর্মকর্তা হিসেবে মনে করি, বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি অনেক আগেই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে তার যোগ্যতা হারিয়েছেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহৎ স্বার্থে তার অপসারণ অত্যাবশ্যক। বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো কীভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর অবস্থান করছেন, তা বুঝে আসে না। এই ব্যক্তির অপকর্মের ফিরিস্তি বলে শেষ করা যাবে না। আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই, তাকে কেন এখনো অপসারণ করা হলো না? তাকে শুধু অপসারণ করলেই হবে না; বরং অনতিবিলম্বে তার অপকর্মগুলোর যথাযথ তদন্ত করে বিচার করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে বাধ্য হবো। কলা অনুষদের এক শিক্ষক পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে অনেক নিউজ দেখেছি। সাবেক ভিসি আখতারুজ্জামানের সময় তার বিরুদ্ধে অবৈধ লোক নিয়োগ ও ভিসির বাসভবনে সামনে অস্বাভাবিক আচরণ এবং বিতর্কিত মোনাজাত পরিচালনা, সেকশনের টাকা অ্যাকাউন্টে না রেখে তার সিন্দুকে রাখাসহ বিভিন্ন অভিযোগ প্রসঙ্গে সংবাদ দেখেছি। কিন্তু সেগুলোর কোনো ঘটনায় তদন্ত কমিটি বা তদন্ত হয়েছে, এমনটা চোখে পড়েনি। আমার জানামতে, তার সঙ্গে সাবেক ভিসি আখতারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অনিয়মে অভিযুক্ত ব্যক্তির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভাবতে পারে। অভিযোগের বিষয়ে বাহালুল হক বলেন, আমি যদি কোনো অনিয়ম করে থাকি, তাহলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি আমাকে স্বপদে বহাল রাখার কথা? আমি এত বছর ধরে চাকরি করি, আমি কোনো অন্যায়-অনিয়ম করিনি। যারা আমার নামে বিভিন্ন অভিযোগ দেয়, তারা আমার এই পদে আসতে চায়। আমার কথা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাকে না রাখে, তাহলে আমি কি জোর করে থাকব? কিন্তু তাদের ভয়ে তো আমি চলে যাব না। যারা আমার নামে এসব কথা বলে, তাদের মনুষ্যত্ববোধ নেই। আমি কোনো দল করি না। অন্যরা গেলেও আমি কখনো বঙ্গবন্ধুর মাজারে কিংবা ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে যাইনি। উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন আছে কি না, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খানকে মোবাইলফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।