সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সতর্কভাবে অগ্রসর হচ্ছে ইরান-সউদী – ইউ এস বাংলা নিউজ




সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সতর্কভাবে অগ্রসর হচ্ছে ইরান-সউদী

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৮:১৭ 12 ভিউ
কয়েক দশক ধরে ইরান এবং সউদী আরবের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক বিরাজ করছে। তবে গত বছর চীনের মধ্যস্থতায় কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর দেশ দুটি সেই বৈরি সম্পর্ক থেকে অনেকটাই বেরিয়ে এসেছে বলা যেতে পারে। আর মধ্যপ্রাচ্যের এই দুই দেশের সাম্প্রতিক সময়ের কূটনৈতিক আদানপ্রদান এমন ইঙ্গিত দেয় যে, সম্পর্ক গভীর করতে চায় তারা। যেমন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরঘাচির সর্বশেষ সউদী সফরের কথা বলা যেতে পারে। সফরে তিনি সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এই দেশ দুটির বৈরি সম্পর্কের ইতিহাস বেশ পুরোনো। বলা যেতে পারে, ১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লবের পর থেকেই এমন সম্পর্ক বিরাজ করছে। কয়েক দশকের পরিস্থিতি বিবেচনায়

নিয়ে বলা যায়, সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে দুই দেশের এই চেষ্টা খুবই নতুন এক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। মূলত রাজনীতিতে ধর্মের ভূমিকা নিয়ে দুই দেশের ভাবনা একেবারে দুই রকম। আর এখান থেকেই পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানের যাত্রা শুরু। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর ইসলাম নিয়ে ইরান সরকারের বোঝাপড়া ছিল সামাজিক বিপ্লবের জায়গা থেকে। দীর্ঘ সময় ধরে এই অঞ্চলে দেশটি নিজেকে শিয়া মুসলিমদের নেতা হিসেবে মেলে ধরেছে। এদিকে সুন্নি মতাদর্শের সউদী রাজপরিবার নিজের ক্ষমতা ধরে রাখতে ধর্মের ভূমিকার উপর নির্ভর করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যে নিজেকে ইসলামের নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে এবং মুসলমানদের পবিত্র স্থান মক্কা এবং মদিনার জিম্মাদার মনে করে দেশটি। ২০১০ সালের আরব বসন্তের সময়ে দেশ দুটির দুই

মেরুর অবস্থান আরো স্পষ্ট হয়ে উঠে। সউদী রাজপরিবারের আশঙ্কা ছিল, গাঠনিক রূপ দিয়ে ইরান এই আন্দোলনকে ব্যবহার করতে পারে। দ্বন্দ্বের কেন্দ্রে ইয়েমেন তবে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের নানা আলাপ-আলোচনা থাকা সত্ত্বেও দেশ দুটি ইয়েমেন প্রশ্নে দুই মেরুতেই অবস্থান করছে। ইরান সমর্থিত হুতি মিলিশিয়ারা ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবেদ রাবু মানসুরকে ক্ষমতাচ্যুত করা চেষ্টা করেছে এবং দেশটির কিছু অঞ্চল নিজেদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এদিকে সউদী আরবের নেতৃত্বে সুন্নি দেশগুলোর যে জোট তা আবার পশ্চিমাদের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে। তারা হুতিদের মোকাবিলা করতে চায়। মূলত এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব ঠেকাতে তৎপর তারা। সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে সউদীর স্বার্থ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের এই চেষ্টায় সউদী

আরবের দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। জার্মানির থিংক ট্যাংক সিএআরপিও-এর বিশ্লেষক সেবাস্টিয়ান সোনস ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০১৯ সালে সউদী আরবের তেলের স্থাপনায় ইরানের হামলার পর সউদী সরকার বুঝতে পেরেছে যে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারবে না। সেই সাথে প্রতিবেশী ইরানের সাথে বৈরিতার সমাধান করতে হবে।'' তিনি বলেন, তেলের উপর নির্ভর করা রিয়াদের কাছে দেশটির অর্থনীতির সফলতা নির্ভর করবে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার উপর। এই বিষয়টি বুঝতে পেরেছে সউদী আরব। তাছাড়া সউদী আরবে মিসাইল হামলার ঘটনাও বন্ধ করতে চায় রিয়াদ। সউদী আরব মনে করে,হুতি মিলিশিয়াদের প্রভাবিত করতে পারে ইরান। তবে বার্লিনের ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের হামিদরেজা আজিজি

ডয়চে ভেলেকে বলেন, হুতির সব কার্যক্রমের উপর ইরান প্রভাব ফেলতে পারবে বিষয়টি এমন নয়। তবে হুতি এবং ইরান একে অপরের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। এই সম্পর্ক ইয়েমেনে যুদ্ধবিরতিতে ভূমিকা রাখতে পারে। ইরানের স্বার্থ সউদী আরবের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের মাধ্যমে নিজের সুনির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিল করতে চায় ইরান। আজিজি বলেন, বছরের পর বছর ধরে ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, দেশের ভেতরে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি ইরানকে ক্ষতির মুখে ফেলেছে। অর্থনৈতিক এই অস্থিরতার কারণে দেশের ভেতরে মারাত্মক বিক্ষোভ, আন্দোলন তৈরি হতে পারে আশঙ্কা ইরান সরকারের। আজিজির মতে, সরকার কার্যকরভাবে দেশ পরিচালনা করতে পারছে না এমন ভাবনা ইরানিদের মধ্যে রয়েছে। যেহেতু পশ্চিমাদের সাথে পরমাণু বিষয়ে

কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেনি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা উঠাতে পারেনি, এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ইরান ভিন্ন পথ খোঁজার চেষ্টা করছে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা যেমন ব্রিকস, সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন ইত্যাদি জায়গায় নিজেদের যুক্ত করতে চাইছে। সেই সাথে প্রতিবেশী দেশ যেমন সউদী আরবের সাথেও সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাইছে ইরান। নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে ইরানের। আজিজির মতে, চীনের মধ্যস্ততায় সউদী আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের আগে সউদী আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার ইঙ্গিত দেখা গিয়েছিল। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও আরব দেশগুলোর মিলে ইরানবিরোধী একটি জোট তৈরি হতে পারে, এমন আশঙ্কা করছিল ইরান। এর সমাধান হিসেবে কূটনৈতিকভাবে

আরব দেশগুলোর সাথে যোগাযোগে এগিয়ে আসে ইরান। যদিও বর্তমান প্রেক্ষাপটে সউদী-ইসরায়েলের সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা আর প্রাসঙ্গিক নয়। উদাহরণ হিসেবে আজিজি বলেন, সউদী আরব এরই মধ্যে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে দুই রাষ্ট্রের পরিকল্পনা সামনে এনেছে যা ইসরায়েলের কূটনৈতিক মনোভাবের বিরোধী। তবে আজিজি এ-ও বলেন যে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া কিংবা ইরানের সাথে গভীরতা বাড়িয়ে পশ্চিমাদের থেকে দূরে সরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা সউদী আরবের নেই। এর পরিবর্তে এক ধরনের কৌশলগত অবস্থান তৈরি করতে চায় সউদী আরব। মধ্যস্থতাকারী হওয়ার ইচ্ছা সউদীর বিশ্লেষক সোনসের মতে, সব পক্ষের মধ্যস্থতাকারী হওয়ার মতো একটি অবস্থানে যেতে চায় সউদী আরব। সোনস বলেন, একই ভূমিকা পালন করছে কাতার। সউদী আরব ছিল অনেকটা রক্ষণশীল, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এটি তেহরানের সাথে যোগাযোগের রাস্তা উন্মুক্ত রাখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে সউদী আরবের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা পাঠানো হয়েছে। এধরনের কৌশলগত অবস্থান হতে পারে সউদী আরবের আঞ্চলিক নীতি ওবং কূটনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, বলেন তিনি। একই কথা বললেন আজিজি। এই বিশ্লেষকের মতে, ইরান-সউদী আরবের সুসম্পর্ক এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা তৈরি করবে। আর ইরান বুঝতে পারছে, সম্পর্ক পুনঃস্থাপন সব পক্ষের জন্যই লাভজনক। সূত্র: ডয়চে ভেলে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
থাইল্যান্ড-ভিয়েতনামসহ ৫ দেশে যাওয়ার বিষয়ে সতর্কতা ভক্তদের সুখবর দিলেন হিনা খান রাজনীতিতে আলোচনায় ‘মাইনাস টু-মাইনাস ফোর’ অতীতে বিচার ব্যবস্থা দুর্নীতিবাজদের প্রটেকশন দিয়েছে ক্যারিবিয়ানে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ নেতানিয়াহুর গ্রেফতারি পরোয়ানার সমালোচনায় বাইডেন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে পরোয়ানা: গাজায় ন্যায়বিচারের আশার ঝলক চার হাজার ৪০০ কোটি টাকা পাচ্ছে বাংলাদেশ কলম্বিয়ায় গেরিলা হামলায় ৫ সেনা নিহত আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা: ইসরাইল-আমেরিকা দূরত্ব কি বাড়বে? চার বছর নাটকে অভিনয় না করার কারণ জানালেন মিথিলা কুয়েতে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দিবস উদযাপন বাড়ি ভাড়া নিতে ব্রোকার ফি লাগবে না সিটির পাবলিক স্কুলের দেড় লাখ ছাত্রের স্থায়ী আবাস নেই ম্যাট গেইটযের প্রতিবেদন নিয়ে অচলাবস্থায় এথিকস কমিটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদের মনোনয়ন থেকে নাম প্রত্যাহার ম্যাট গেইটযের নিউইয়র্কে সিলেট দক্ষিণ সুরমা ইউনাইটেড ইউএসএ’র আহবায়ক কমিটি : আহ্বায়ক কামরান, সদস্য সচিব শাহ সেলিম নিউইয়র্কে বাংলাদেশির কাছ থেকে কেনা কলায় শিল্পকর্ম, বিক্রি হলো ৭৪ কোটি টাকায় কানাডায় এইচ৫ বার্ড ফ্লু আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত ফসলের মাঠে দোল খাচ্ছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন ধানের শীষ