রেলের সুজন আসলে কুজন: কামিয়েছেন দুহাতে টাকা – ইউ এস বাংলা নিউজ




রেলের সুজন আসলে কুজন: কামিয়েছেন দুহাতে টাকা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ | ৬:১৪ 14 ভিউ
অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন। টানা ১৫ বছর পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ উপজেলা) আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদে নির্বাচিত হওয়ার পর দায়িত্ব পান রেল মন্ত্রণালয়ের। এমপি ও মন্ত্রিত্বের দীর্ঘ এ সময়ে নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিজের হাতের মুঠোয় রেখে দুই হাতে টাকা কামিয়েছেন সুজন। তবে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব চুরমার হয়ে গেছে। দুটি হত্যা (ঢাকার বাড্ডায় হামরান ও পঞ্চগড়ে রিকশাচালক) মামলার আসামি হয়ে তিনি এখন কারাগারে আছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সুজনের কৃষিজমি ছিল মাত্র ৮ একর। আর ঢাকার বাড্ডায় অকৃষি জমি ছিল ৪ দশমিক ৯৫ কাঠার প্লট। কিন্তু বর্তমানে তার কৃষি জমির পরিমাণ ৩০ বিঘা। আর অকৃষি জমির

মধ্যে ঢাকার বাড্ডায় ৪ দশমিক ৯৫ কাঠার প্লট, উত্তরায় ৫ কাঠার প্লট, বনশ্রীতে দুটি ১১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং ধানমন্ডিতে ১৮০০ বর্গফুট আয়তনের ২ দশমিক ৯ শতক জমিতে ৫ তলা পাকা বাড়ি রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলী মেম্বার বলেন, নূরুল ইসলাম সুজনের পৈতৃক নিবাস বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী মহাজনপাড়া গ্রামে। সেখানে বাপ-দাদার আমলে নির্মিত টিনের চালার ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করতেন সুজন। কিন্তু এমপি হওয়ার পর তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। মন্ত্রী হওয়ায় সম্পদ বাড়তে থাকে দ্রুতগতিতে। ২০২২ সালে সুজন পুরোনো বাড়িটি ভেঙে আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন বিলাসবহুল ৩ তলা বাড়ি। অবশ্য ৫ আগস্টের পর বিক্ষুব্ধ লোকজন বাড়িটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর

গান পাউডারের সাহায্যে আগুন দেয়। বর্তমানে জনমানবশূন্য ভস্মীভূত বাড়িটির প্রধান গেটে তালা লাগানো আছে। যদিও এর আগেই মন্ত্রীর পরিবারের লোকজন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। শনিবার কথা হয় মহাজনপাড়া গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে। একটি মৎস্য খামার দেখিয়ে তারা বলেন, এক সময় এখানে ছোট্ট পুকুর ছিল সুজনের। সংসদ-সদস্য হওয়ার পর পুকুরটি সংস্কার ও বর্ধিত (পাশে জমি কিনে) করে সেটিকে বিশালাকার মৎস্য খামারে পরিণত করেন। ২০১৯ সালে পুকুরটি খনন করা হয়। এতে জমি ক্রয়সহ ব্যয় হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। পুকুরের চারদিকে লাগিয়েছেন আমসহ বিভিন্ন ফলের গাছ। পুকুরপাড়ে রয়েছে শান বাঁধানো ঘাট। অভিযোগ রয়েছে এই পুকুর খননে সুজন সরকারি বরাদ্দও নিয়েছিলেন। বিশাল এই পুকুরসংলগ্ন

এলাকায় সুজন আড়াই একর জমিও কিনেছেন। এখন অবশ্য মৎস্য খামারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী এলাকার ফজলুর রহমান জানান, সুজন রেলমন্ত্রী হওয়ার পরই ঢাকা-পঞ্চগড় জাতীয় মহাসড়কের ময়দানদিঘী বাজারে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলেন ৪ তলা বিশিষ্ট মার্কেট। সব ক্ষেত্রেই আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রী সুজন। এলাকায় গড়ে তুলেছিলেন ত্রাসের রাজত্ব। পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগকে পরিবার লীগ বানিয়েছিলেন। নিজ পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে বসিয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। সুজনের দাপট দেখিয়ে দুই ভাতিজা রাকিবুল হাসান জানি ও ডলার সুদের ব্যবসার ফাঁদে ফেলে অভাবী ও স্বল্প আয়ের অনেকের বসতবাড়ি ও জমি দখলে নিয়েছেন। স্থানীয় অধিবাসী আব্বাস আলী, ফজলুর রহমান, তোয়াবুর, করিম

মেম্বার, মতিয়ার রহমান (শিক্ষক) অভিযোগ করেন, এই এলাকার শতাধিক মানুষের কাছ থেকে তারা (সুজনের দুই ভাতিজা) ব্ল্যাংক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে পরে দলিলের মাধ্যমে জায়গাজমি জোর করে দখলে নিতেন। অনেককে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে নিঃস্ব করেন তারা। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগীরা। সাবেক মন্ত্রী সুজন ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত পঞ্চগড় রেলস্টেশন এবং পঞ্চগড় স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. সিরাজুল ইসলামের নামে রেখেছেন। আর পঞ্চগড় রেলস্টেশনের সুরম্য গেট, রেলস্টেশনের ওয়েটিং রুম তৈরিসহ রেলের আধুনিকায়নের কাজ ভাতিজা ফেরদৌস ওয়াহিদ লাবণ্য, ভাগিনা এ্যাপোলো ও মাসুদের মাধ্যমে করিয়েছেন। রেলগেট নির্মাণ, রেলস্টেশন সংস্কার, রেলব্রিজ নির্মাণসহ ডুয়েলগেজ রেল নির্মাণ

বাবদ দেড়শ কোটি টাকার কাজ রেলমন্ত্রীর ভাতিজা-ভাগিনারা বাগিয়ে নিয়েছিলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রত্যেকটি কাজ হয়েছে অত্যন্ত নিম্নমানের। অভিযোগ রয়েছে, রেলে উন্নয়নের নামে নজিরবিহীন লুটপাট করেছেন মন্ত্রীর ভাতিজা-ভাগিনাসহ নিকটাত্মীয়রা। এছাড়া রেলে চাকরি থেকে শুরু করে অন্যান্য কাজের তদবিরের দেখভাল করতেন মন্ত্রীর স্ত্রী শাম্মি আখতার মনি। স্থানীয়ভাবে একটি কথা প্রচলিত আছে যে, মন্ত্রীর স্ত্রীর চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে রেলে কারও চাকরি হতো না। সুজনের স্ত্রী শাম্মি আখতার মনি এতটাই বেপরোয়া ছিলেন যে, তার দুই নিকটাত্মীয়ের বিনা টিকিটে ভ্রমণ নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে রেলের ২ জন স্টাফকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে মনি ক্ষমা চেয়েছিলেন। গত ১৫ বছরে সাবেক রেলপথমন্ত্রী সুজনের অস্থাবর সম্পত্তি

বেড়েছে ৩২ দশমিক ৫৪ গুণ। একই সঙ্গে আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৭৪ গুণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণও। ২০০৮ সালের নবম এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেওয়া দুটি হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে জানতে সুজনের পরিবারের একাধিক সদস্যের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সবার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার গ্রামের বাড়ি মহাজনপাড়ায় সরেজমিন গিয়ে সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। পুরো বাড়ি এখন বিরান ভূমি। পরিবারের সব সদস্য নিরুদ্দেশ। এলাকার লোকজন জানেন না তারা কোথায় আছেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বাংলাদেশের সাথে পাঙ্গা নিতে গিয়ে মহা বিপদে মোদি-মমতা! ‘আট বছরের বন্দিজীবনে আমি কখনও প্রধানমন্ত্রীর নিকট কোন আবেদন করিনি’ ট্রাম্পের সঙ্গ তর্ক করে চাকরি ছাড়লেন সাংবাদিক মাফলারকে নিউজ আইটেম করায় প্রেস সচিবের বিদ্রুপ! ভোটের রাজনীতি : বিএনপির সামনে তিন দশকের মিত্র জামায়াতের চ্যালেঞ্জ? ধ্বংসের ৮৯ সেকেন্ড দূরে পৃথিবী! বাড়তে পারে রান্নার গ্যাসের দাম! জীবনে কি কাজ করেছেন, মানুষের কেন আপনাকে নিয়ে এত মাতামাতি? ছাত্রলীগের ঘোষিত কর্মসূচির প্রতিবাদে মধ্যরাতে উত্তাল যবিপ্রবি ট্রাম্পের একের পর এক স্থগিতাদেশ, জেগে উঠছে আমেরিকানরা? কুম্ভ মেলায় পদদলিত হয়ে প্রায় ৪০ জনের মৃত্যু ট্রেন চালু হলেও ভোগাচ্ছে শিডিউল বিপর্যয় কর্মবিরতিতে কমলাপুর স্টেশনে সোয়া কোটি টাকার ক্ষতি ইজতেমায় আগের চেয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে: আইজিপি প্রতারণার মামলায় ইভ্যালির রাসেল-শামীমার ২ বছরের কারাদণ্ড আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা : আপিল শুনানি ২৬ ফেব্রুয়ারি তিন বিভাগীয় কমিশনারসহ ৮ জনকে হাইকোর্টে তলব পুলিশি বর্বরতায় সরাসরি রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল: এইচআরডব্লিউ সৌদি ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি বাতিল, নতুন ঠিকানায় নেইমার অভিবাসী ফেরত না নেওয়ায় কলম্বিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা ট্রাম্পের