বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে মন্থরগতি – ইউ এস বাংলা নিউজ




বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে মন্থরগতি

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২০ মার্চ, ২০২৫ | ৪:৫২ 9 ভিউ
দেশের সার্বিক অর্থনীতি এখনো প্রধান পাঁচটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এগুলো হচ্ছে-ধীরগতির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির হার, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে মন্দা, বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে নেতিবাচক অবস্থান এবং ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন। এছাড়া আরও আছে-ঋণের সুদের হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ার ক্ষেত্রে মন্থরগতি। এতে শিল্প উৎপাদন খাতে এখন নেতিবাচক অবস্থা বিরাজ করছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সেখানে আরও বলা হয়, সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপের কারণে অর্থনীতি ক্রমেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে আরও সময় লাগবে। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। বৈদেশিক মুদ্রার

সংকট অনেকটা কমেছে, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হচ্ছে। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে নেতিবাচক পরিস্থিতিও আগের চেয়ে বেশ খানিকটা কমেছে। করোনা সংক্রমণের আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। যদিও এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে এরপরের ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমলে প্রবৃদ্ধির হার আবার কিছুটা বেড়ে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে ওঠে। ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার আরও কিছুটা বেড়ে ৭ দশমিক ১০ শতাংশ হয়। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব প্রকট হলে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি আবার কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে দাঁড়ায়। গত অর্থবছরে তা

আবারও কমে ৪ দশমিক ২২ শতাংশে নামে। চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির হারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সব বছরের প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অর্থনীতি নিয়ে দেশের বেসরকারি বিদেশি গবেষণা সংস্থা ও বহুজাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো বারবার বলে আসছে সরকার প্রবৃদ্ধির হার বেশি মাত্রায় দেখিয়েছে। অর্থনীতির বেশিরভাগ খাতেই কর্মকাণ্ড নিম্নমুখী হওয়ায় নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এতে মানুষের আয় কম হয়েছে, জীবনযাত্রার মানে উন্নতি হয়নি। বেকারদের কর্মসংস্থানের গতি কমেছে। এসব কাজে গতি আনতে হলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানো চ্যালেঞ্জিং। অর্থনীতির আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে ২০২২ সালের আগস্টে দেশের মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে

থাকে। ওই মাসে তা বেড়ে সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে দুই এক মাস ৯ শতাংশের নিচে নামলেও তা আর নিম্নমুখী হয়নি। বরং আবার বেড়ে ৯ শতাংশের উপরে ওঠেছে। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে তা বেড়ে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে ওঠে। এরপর আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর কিছুটা কমে। কিন্তু নভেম্বরে আবার তা বেড়ে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে ওঠে। এরপর থেকে কমতে থাকে। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে ৯ দশমিক ৩২ শতাংশে নামে। মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, ডলারের দাম বৃদ্ধি টাকার অবমূল্যায়ন, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি পণ্যের দাম বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও সব ধরনের

পণ্যের দাম বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলসহ গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো, রেকর্ড পরিমাণ টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণের জোগান। এসব বিষয়গুলো মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। এ হার কমাতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণের জোগান বন্ধ করেছে, ডলারের দামকে কিছুটা স্থিতিশীল করেছে। দেশের বাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। টাকার প্রবাহ কমাতে ঋণের সুদের হার বাড়িয়েছে। এর প্রভাব আগস্ট থেকে মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো তা ৯ শতাংশের উপরেই রয়েছে। এ হার ৬ শতাংশের নিচে না আসা পর্যন্ত চ্যালেঞ্জিং মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২২ সালের আগস্টের আগ পর্যন্ত দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে।

ওই সময়ে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে ওঠেছিল। এরপর থেকে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব ও দেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভ কমতে থাকে। এর প্রভাবে রিজার্ভও কমতে থাকে। যে রিজার্ভ নিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের এত বেশি গর্ব করত সেই রিজার্ভ বৈশ্বিক মন্দার ধাক্কায় তিন মাসও টেকেনি। আগস্টের পর থেকে রিজার্ভ দ্রুত কমতে থাকে। এ অবস্থায় আমদানি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ওই সময়ে রিজার্ভ নিম্নমুখী হয়, তা আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে বৈদেশিক ঋণ নিয়েও পতন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। কারণ ওই সময়ে আমদানির পাশাপাশি ব্যাপকভাবে টাকা পাচার হচ্ছিল। যে কারণে রিজার্ভও কমছিল দ্রুত। ৫ আগস্ট সরকারের

পতন হলে রিজার্ভের পতনও কমে যায়। কারণ টাকা পাচার বন্ধ হয়ে যায়। এখন রিজার্ভ খুব বেশি বাড়ছে না। কিন্তু রিজার্ভের পতন ঠেকেছে। তবে রিজার্ভ এখনো সন্তোষজনক মাত্রায় তুলতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার। এখন প্রতি মাসে আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে গড়ে ৬৫০ কোটি ডলার। এ হিসাবে তিন মাসের জন্য লাগবে ১ হাজার ৯৫০ কোটি ডলার। রোববার পর্যন্ত রিজার্ভ ছিল ১ হাজার ৯৭৩ কোটি ডলার। এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। কিন্তু আগের বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে হচ্ছে। যে কারণে তিন মাসের আমদানি মেটানো চ্যালেঞ্জিং। রিজার্ভ আরও বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডলার আয়ের চেয়ে খরচ আবার বেড়ে গেছে। যে কারণে বৈদেশিক লেনদেন এখনো নেতিবাচক। মূলত বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপে ডলারের খরচ বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৪২৮ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা ৫৫ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। গত অর্থবছরে এ খাতে ঘাটতি ছিল ৬৬০ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার সার্বিক স্থিতিতে ঘাটতি গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে ছিল ৪৬৯ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা কমে ১১৭ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এ খাতে ঘাটতি থাকলে রিজার্ভ বাড়ানো কঠিন হবে। একই সঙ্গে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখাও চ্যালেঞ্জিং হবে। বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে। ওই সময়ে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২২ টাকায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর দাম আরও বেশি। আলোচ্য সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে প্রায় ৪২ শতাংশ। তবে নগদ ডলার ১২৩ থেকে ১২৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যাংকগুলো এখনও রেমিট্যান্স কিনছে ১২৪ থেকে ১২৫ টাকায়। যে কারণে তাদের ডলার কেনার খরচ বেড়েছে। এতে ডলারের বিক্রির দামও বাড়ছে। এদিকে আইএমএফ ডলারের দাম আরও বাড়াতে চাপ দিচ্ছে। তাদের মতে, দেশের অর্থনীতি ও মূল্যস্ফীতির হিসাবে ডলারের বিপরীতে টাকা এখনো অতিমূল্যায়িত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ব্যাংক খাতে সুদের হার বেড়ে যাচ্ছে। আমানতের সুদহার বেড়ে গড়ে সাড়ে ১১ শতাংশে ওঠেছে। ফলে ঋণের সুদের হারও বেড়েছে। ব্যাংক ভেদে ঋণের সুদ এখন ১১ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ। কোনো কোনো ব্যাংকে এ হার আরও বেশি। চড়া সুদের হার ও দেশে বিদ্যমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ কমে গেছে। গত অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারিতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ বেড়েছিল ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের আলোচ্য সময়ে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে প্রায় অর্ধেক। প্রতিবেদনে অর্থনীতি সম্পর্কে আগামীতে বেশকিছু আশাবাদের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়েছে, মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে। বৈদেশিক ঋণের সুদের হারও কমছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমছে, আগামীতে আরও কমতে পারে বলে বিশ্বব্যাংক আভাস দিয়েছে। এর প্রভাবে আগামীতে বাংলাদেশেও পণ্যের দাম কমবে বলে আশা করা যায়। এর প্রভাবে মূল্যস্ফীতির হার আরও নিম্নমুখী হবে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়তে শুরু করেছে। এর প্রভাবে বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান যেমন বাড়ছে, তেমনি রেমিট্যান্স প্রবাহও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিল্প ও রপ্তানি খাতে কাঁচামাল আমদানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে শিল্পের উৎপাদন ও রপ্তানিও বাড়বে। কৃষি উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য কায়রোর পথে হামাস প্রতিনিধি দল মার্চে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে রেমিট্যান্স ন্যান্সি বললেন, ‘পরাধীনতার শেকলমুক্ত নতুন বাংলাদেশের সূচনা’ ভারতকে হারানোর লক্ষ্য নিয়ে শিলংয়ে পা রাখল বাংলাদেশ ইসরাইলের বেনগুরিয়ন বিমানবন্দরে ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা গণমাধ্যমে ছুটির গেজেট চায় জার্নালিস্ট কমিউনিটি ইরানে আগুন উৎসবে নিহত ২১, আহত ৬,৪১৯ অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা, নারী-শিশুসহ আটক ১৬ এনজিওর নারী কর্মীকে নিপীড়নের পর ওসির বদলি ইসরাইলের বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্বের মুক্তিকামীরা রুখে দাঁড়ান শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সহযোগীরা অধরা ইতিকাফ আল্লাহর সান্নিধ্যের শ্রেষ্ঠ ইবাদত নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্তি পেলেন সাকিব বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহে মন্থরগতি বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত সাবেক ছাত্রদল নেতার মৃত্যু ‘দ্য রিমান্ড’ প্রদর্শনীর অনুমতি দিতে নির্দেশ ঈদযাত্রার প্রথমদিনই কর্মবিরতির হুমকি আগামী ৩ এপ্রিল ছুটি অনুমোদন হলে, ঈদের ছুটি হবে টানা ৯ দিন সাজা শেষে দেশে ফিরল ২১ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ ও শিশু ‘গাজায় নৃশংসতা মানবতার বিরুদ্ধে এক জঘন্য অপরাধ’