ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
শহিদ আলিফের পরিবারের জন্য কোটি টাকার তহবিল
জান্তাপ্রধানকে গ্রেফতারে পরোয়ানার আবেদন, স্বাগত জানাল বাংলাদেশ
বিচারে সরকারের উদ্যোগ নেই
শিশু বলাৎকারের জন্য কখনো ক্ষমা চায়নি ইসকন
স্বাধীন ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন
ইসকনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ
লগি-বৈঠা দিয়ে জামায়াত নেতাদের পিটিয়ে হত্যা: ১৮ বছর পর হাসিনার নামে মামলা
‘বল’ দেখিয়ে বৈদেশিক কলও কুক্ষিগত করেন সালমান
আওয়ামী লীগের বিগত শাসনামলে অন্যান্য খাতের মতো সিন্ডিকেট থেকে বাদ যায়নি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) খাতও। বৈদেশিক কল আদান-প্রদানের এই মাধ্যমকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল সরকারের শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। সাতটি আইজিডব্লিউ ‘আইওএস’ অপারেটরদের নিয়ে এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছিল। যেই সিন্ডিকেটের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তার নেতৃত্বেই ‘টিয়ার ২’তে থাকা এই অপারেটর সিন্ডিকেট গত ৯ বছরে অতিরিক্ত রাজস্ব ও বাজার উন্নয়ন ব্যয়ের নামে অন্তত ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নন-আইওএস আইজিডব্লিউ অপারেটররা বলছেন, টিয়ার নামে আজগুবি এক প্রথার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় সিন্ডিকেট গঠন করে বৈদেশিক কল আদান-প্রদান
ব্যবসায় চরম বৈষম্য তৈরি করা হয়। গুটিকয় অপারেটরকে সুবিধা দিয়ে বাকিদের প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। এর সঙ্গে খোদ বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে নতুন বাংলাদেশে আইওএস অপারেটরের সংখ্যা সাত থেকে কমিয়ে আন্তর্জাতিক কলের আনুপাতিক হারে নির্ধারণ এবং আর্থিক লুটপাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি অপারেটরদের। বিটিআরসি সূত্র জানায়, দেশের বাইরের সঙ্গে যোগাযোগে ভয়েস কল সম্পন্ন হয় আইজিডব্লিউ অপারেটরের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে বিটিসিএলের সঙ্গে তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলা ট্র্যাক ইনফ্রাস্ট্রাকচার, নভোটেল ও মীর টেলিকমকে প্রথম আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেওয়া হয়। এরপর ২০১২ সালে লাইসেন্স পাওয়া ১৯টিসহ ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে ২৪টি অপারেটর সক্রিয় রয়েছে। এগুলোর
মধ্যে ২০টি আইজিডব্লিউকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভয়েস ইন্টারনেট এককভাবে দখলে রেখেছেন সালমান এফ রহমান। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) নামে একটি সংগঠন তৈরির প্রস্তাবে সায় দিয়ে তা অনুমোদনের জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, অনেকটা চাপে পড়েই তাদের এ কাজ করতে হয়েছে। তৎকালীন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে মিলে সে সময়কার ২৩টি বেসরকারি অপারেটরের মধ্যে ১৮টিকে নিয়েই এ সংগঠন গঠন করেন সালমান এফ রহমান। এর মধ্য দিয়ে আইজিডব্লিউ অপারেটরে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য নিশ্চিত করেন তিনি। প্রভাবশালীদের তত্ত্বাবধানে গঠিত সংগঠন আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরামের (আইওএফ) পরামর্শে ২০১৫ সালে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলকভাবে
আন্তর্জাতিক কল পরিচালনার কর্তৃত্ব দেয় বিটিআরসি। লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, আইজিডব্লিউগুলো একই লাইসেন্সের আওতায় থাকার কথা থাকলেও দুটি অসম স্তরে ভাগ করা হয় এই পরিকল্পনায়। এর মধ্যে টিয়ার-১-এ ১৬টি এবং টিয়ার-২-এ সাতটি প্রতিষ্ঠান স্থান পায়। ২৮ সেপ্টেম্বর একই সঙ্গে বিটিআরসি তাড়াহুড়া করে টিয়ার-২ এর (আইওএস সুইচ পরিচালনাকারী) সাতটি আইজিডব্লিউর নাম চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইউনিক ইনফোওয়ে, ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন্স, রুটস কমিউনিকেশন্স, গ্লোবাল ভয়েস, মীর টেলিকম, বাংলা ট্র্যাক ও নভো টেলিকম। এই সাত আইজিডব্লিউর মধ্যে মীর টেলিকম, নভো টেলিকম ও বাংলা ট্র্যাক ছিল পুরোনো প্রতিষ্ঠান। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ইউনিক ইনফোওয়ে মালিকানায় ছিলেন জিএম সিরাজের স্ত্রী শাহনাজ সিরাজ। ২০১২ সালে ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন্স
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসের সুপারিশে লাইসেন্স পায়। যদিও বিটিআরসির রাজস্ব না দেওয়ায় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে এ প্রতিষ্ঠানটিকে ব্লক করা হয়েছিল। রুটস কমিউনিকেশন্স প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরা। গ্লোবাল ভয়েসের মালিকানায় রয়েছেন একেএম শামসুদ্দোহা। এই কোম্পানিতে ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান রহমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। একাধিক আইজিডব্লিউ ব্যবসায়ী বলেছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সালমান এফ রহমান অনেকটা চাপ সৃষ্টি করেই তাদের এ পরিকল্পনায় নিয়ে আসেন ১৮ সদস্যকে। ওই সময় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এক্সপেন্স’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে। তবে এ খাতটি কীভাবে
কাজ করবে বা কত টাকা দেওয়া হবে, তা চিঠিতে বলা হয়নি। তবে সে সময় সালমান এফ রহমানের ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) নামক সিন্ডিকেটে অংশ নেয়নি বাংলা টেল, বিজি টেল, সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং ডিবিএল নামের কয়েকটি আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৯ বছর ধরে এ খাতের সব লেনদেন টিয়ার-২-এ থাকা সাতটি অপারেটরের সিন্ডিকেটে নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। টিয়ার-১-এর অপারেটরগুলো বিদেশ থেকে কল আনলেও তারা গ্রাহক পর্যন্ত কল নিয়ে যেতে পারে না, যা করতে হয় টিয়ার-২-এর মাধ্যমে। ৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের সব অর্থও হস্তান্তর করতে হচ্ছে ওই সাতটি অপারেটরের সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই। আইজিডব্লিউ অপারেটররা প্রতি মাসে রাজস্ব বণ্টনের ৪০ শতাংশ বিটিআরসিকে প্রদান
করে, বাকি ৬০ শতাংশ অর্থ আইওএস অপারেটরদের ‘রেভিনিউ শেয়ারিং পোল’ (আরএসপি) নামক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করতে হয়। জানা গেছে, সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বেই ‘টিয়ার-২’ তে থাকা সাতটি অপারেটরের সিন্ডিকেট ৯ বছরে অবৈধভাবে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করে। এ ছাড়া অপারেটরদের থেকে সংগ্রহ করা ৬০ শতাংশ অর্থ থেকে প্রতি মাসে ‘বাজার উন্নয়ন ব্যয়ের’ নামে ১০ শতাংশ হারে অর্থ কেটে নিয়ে যায় সালমান এফ রহমান সিন্ডিকেট। ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত হিসাবে আইজিডব্লিউ অপারেটর থেকে বাজার উন্নয়ন ব্যয়ের নামে কর্তন করা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬২৬ কোটি টাকা। যার বিপরীতে কোনো সেবাই প্রদান করা হয়নি। অন্যদিকে কোথায় এবং কীভাবে এই অর্থ ব্যয় হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও নেই কারও কাছে। সব মিলিয়ে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। সালমান এফ রহমানের একচ্ছত্র প্রভাবের কারণে এই খাতে কেউ এতদিন টুঁ শব্দটিও করতে পারেনি। এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের হোতা সালমান এফ রহমানের অনুপস্থিতিতে নতুন অবয়বে তা দখলের পাঁয়তারা চলছে। বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এ টেলিকম খাতের কর্তৃত্ব নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, আইজিডব্লিউ তাদের রাজস্বের ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এএনএসের কাছে পরিশোধ করে থাকে। আইজিডব্লিউ অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, টিয়ার-১ ও টিয়ার-২-এর রাজস্ব বণ্টনের হার ১ অনুপাত ১ দশমিক ৯০ (১: ১.৯০)। অপারেটরদের হিসাব বলছে, ৯ বছরে প্রতিটি আইওএস অপারেটরের আয় ৩৭২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বেশি। যেখানে প্রতিটি নন-আইওএস অপারেটরের আয় মাত্র ১৯৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ একই লাইসেন্সধারী হয়েও ৯ বছরে একটি আইওএস অপারেটর নন-আইওএস অপারেটরের চেয়ে ১৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেশি আয় করছে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সাতটি অপারেটর মিলে অতিরিক্ত লাভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৯ বছর ধরে অনেক অপারেটর এই সিন্ডিকেটের কারণে নিঃস্ব হওয়ার পথে। এ ছাড়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক কল আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বেশ কিছু নন-আইওএস অপারেটর তাদের কোম্পানি অপারেশন বন্ধ করে ‘ডাটা সেন্টারে’ সিস্টেম রেখে গুটিকয় লোকবলের মাধ্যমে তা পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় অর্থ হাতিয়ে নিতেই সাতটি অপারেটরকে নির্বাচন করা হয়। সাতটির মধ্যে চারটির বিরুদ্ধেই বিতর্কিত ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও সে সময় তা আমলে নেওয়া হয়নি। নন-আইওএস আইজিডব্লিউ অপারেটরদের দাবি, আইওএস অপারেটরের সংখ্যা সাত থেকে কমিয়ে আন্তর্জাতিক কলের আনুপাতিক হারে নির্ধারণ করা উচিত। এ ছাড়া গত ৯ বছরে বাজার উন্নয়ন ব্যয়ের নামে ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা ৬২৬ কোটি টাকার সঠিক হিসাব দিয়ে এই খাতকে শৃঙ্খলা ও সিন্ডিকেটমুক্ত করার দাবি অপারেটরদের। সিন্ডিকেটে অংশ না নেওয়া একটি অপারেটরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ‘আইওএফের নামে এ ব্যবসাকে একটি সিন্ডিকেটে কুক্ষিগত করা হতে পারে আশঙ্কায় আমরা এতে যোগ দিইনি। অবশেষে আমাদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে সেক্টরের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অসম এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট বিপুল অঙ্কের টাকা লুটপাট করেছে। নতুন বাংলাদেশে তার বিচার চাই।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, ‘আইজিডব্লিউর লাইসেন্স এবং এর যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। আমরা সেবাটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, ব্যবসাকে নয়। সেবার দিক থেকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইজিডব্লিউর কতটুকু প্রয়োজন আছে, আমরা সেটা পরীক্ষা করে দেখছি। আজকেও (গতকাল) আইওএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠক করেছে। কমিশন যা করার সংশ্লিষ্ট অংশীজন (স্টেকহোল্ডার) ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে।’
ব্যবসায় চরম বৈষম্য তৈরি করা হয়। গুটিকয় অপারেটরকে সুবিধা দিয়ে বাকিদের প্রতি চরম অবিচার করা হয়েছে। এর সঙ্গে খোদ বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। ফলে নতুন বাংলাদেশে আইওএস অপারেটরের সংখ্যা সাত থেকে কমিয়ে আন্তর্জাতিক কলের আনুপাতিক হারে নির্ধারণ এবং আর্থিক লুটপাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি অপারেটরদের। বিটিআরসি সূত্র জানায়, দেশের বাইরের সঙ্গে যোগাযোগে ভয়েস কল সম্পন্ন হয় আইজিডব্লিউ অপারেটরের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে বিটিসিএলের সঙ্গে তিনটি প্রতিষ্ঠান বাংলা ট্র্যাক ইনফ্রাস্ট্রাকচার, নভোটেল ও মীর টেলিকমকে প্রথম আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেওয়া হয়। এরপর ২০১২ সালে লাইসেন্স পাওয়া ১৯টিসহ ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে আইজিডব্লিউ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্তমানে ২৪টি অপারেটর সক্রিয় রয়েছে। এগুলোর
মধ্যে ২০টি আইজিডব্লিউকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভয়েস ইন্টারনেট এককভাবে দখলে রেখেছেন সালমান এফ রহমান। জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) নামে একটি সংগঠন তৈরির প্রস্তাবে সায় দিয়ে তা অনুমোদনের জন্য ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, অনেকটা চাপে পড়েই তাদের এ কাজ করতে হয়েছে। তৎকালীন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর সঙ্গে মিলে সে সময়কার ২৩টি বেসরকারি অপারেটরের মধ্যে ১৮টিকে নিয়েই এ সংগঠন গঠন করেন সালমান এফ রহমান। এর মধ্য দিয়ে আইজিডব্লিউ অপারেটরে নিজের একচ্ছত্র আধিপত্য নিশ্চিত করেন তিনি। প্রভাবশালীদের তত্ত্বাবধানে গঠিত সংগঠন আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরামের (আইওএফ) পরামর্শে ২০১৫ সালে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে পরীক্ষামূলকভাবে
আন্তর্জাতিক কল পরিচালনার কর্তৃত্ব দেয় বিটিআরসি। লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, আইজিডব্লিউগুলো একই লাইসেন্সের আওতায় থাকার কথা থাকলেও দুটি অসম স্তরে ভাগ করা হয় এই পরিকল্পনায়। এর মধ্যে টিয়ার-১-এ ১৬টি এবং টিয়ার-২-এ সাতটি প্রতিষ্ঠান স্থান পায়। ২৮ সেপ্টেম্বর একই সঙ্গে বিটিআরসি তাড়াহুড়া করে টিয়ার-২ এর (আইওএস সুইচ পরিচালনাকারী) সাতটি আইজিডব্লিউর নাম চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইউনিক ইনফোওয়ে, ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন্স, রুটস কমিউনিকেশন্স, গ্লোবাল ভয়েস, মীর টেলিকম, বাংলা ট্র্যাক ও নভো টেলিকম। এই সাত আইজিডব্লিউর মধ্যে মীর টেলিকম, নভো টেলিকম ও বাংলা ট্র্যাক ছিল পুরোনো প্রতিষ্ঠান। বিটিআরসি সূত্রে জানা যায়, ইউনিক ইনফোওয়ে মালিকানায় ছিলেন জিএম সিরাজের স্ত্রী শাহনাজ সিরাজ। ২০১২ সালে ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন্স
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাতিজা সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসের সুপারিশে লাইসেন্স পায়। যদিও বিটিআরসির রাজস্ব না দেওয়ায় ২০১৩ সালের জুলাই মাসে এ প্রতিষ্ঠানটিকে ব্লক করা হয়েছিল। রুটস কমিউনিকেশন্স প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপের স্ত্রী গুলশান আরা। গ্লোবাল ভয়েসের মালিকানায় রয়েছেন একেএম শামসুদ্দোহা। এই কোম্পানিতে ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানের ছেলে শায়ান রহমানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। একাধিক আইজিডব্লিউ ব্যবসায়ী বলেছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সালমান এফ রহমান অনেকটা চাপ সৃষ্টি করেই তাদের এ পরিকল্পনায় নিয়ে আসেন ১৮ সদস্যকে। ওই সময় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এক্সপেন্স’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থাকবে। তবে এ খাতটি কীভাবে
কাজ করবে বা কত টাকা দেওয়া হবে, তা চিঠিতে বলা হয়নি। তবে সে সময় সালমান এফ রহমানের ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে অপারেটরস ফোরাম (আইওএফ) নামক সিন্ডিকেটে অংশ নেয়নি বাংলা টেল, বিজি টেল, সিগমা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং ডিবিএল নামের কয়েকটি আইজিডব্লিউ প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৯ বছর ধরে এ খাতের সব লেনদেন টিয়ার-২-এ থাকা সাতটি অপারেটরের সিন্ডিকেটে নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। টিয়ার-১-এর অপারেটরগুলো বিদেশ থেকে কল আনলেও তারা গ্রাহক পর্যন্ত কল নিয়ে যেতে পারে না, যা করতে হয় টিয়ার-২-এর মাধ্যমে। ৯ বছর ধরে আন্তর্জাতিক কল আদান-প্রদানের সব অর্থও হস্তান্তর করতে হচ্ছে ওই সাতটি অপারেটরের সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই। আইজিডব্লিউ অপারেটররা প্রতি মাসে রাজস্ব বণ্টনের ৪০ শতাংশ বিটিআরসিকে প্রদান
করে, বাকি ৬০ শতাংশ অর্থ আইওএস অপারেটরদের ‘রেভিনিউ শেয়ারিং পোল’ (আরএসপি) নামক অ্যাকাউন্টে হস্তান্তর করতে হয়। জানা গেছে, সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বেই ‘টিয়ার-২’ তে থাকা সাতটি অপারেটরের সিন্ডিকেট ৯ বছরে অবৈধভাবে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকারও বেশি অতিরিক্ত রাজস্ব আয় করে। এ ছাড়া অপারেটরদের থেকে সংগ্রহ করা ৬০ শতাংশ অর্থ থেকে প্রতি মাসে ‘বাজার উন্নয়ন ব্যয়ের’ নামে ১০ শতাংশ হারে অর্থ কেটে নিয়ে যায় সালমান এফ রহমান সিন্ডিকেট। ২০১৫ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত হিসাবে আইজিডব্লিউ অপারেটর থেকে বাজার উন্নয়ন ব্যয়ের নামে কর্তন করা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬২৬ কোটি টাকা। যার বিপরীতে কোনো সেবাই প্রদান করা হয়নি। অন্যদিকে কোথায় এবং কীভাবে এই অর্থ ব্যয় হয়, তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যও নেই কারও কাছে। সব মিলিয়ে এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। সালমান এফ রহমানের একচ্ছত্র প্রভাবের কারণে এই খাতে কেউ এতদিন টুঁ শব্দটিও করতে পারেনি। এদিকে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেটের হোতা সালমান এফ রহমানের অনুপস্থিতিতে নতুন অবয়বে তা দখলের পাঁয়তারা চলছে। বেশকিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এ টেলিকম খাতের কর্তৃত্ব নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। লাইসেন্স নীতিমালা অনুযায়ী, আইজিডব্লিউ তাদের রাজস্বের ৪০ শতাংশ বিটিআরসি, ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ আইসিএক্স এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এএনএসের কাছে পরিশোধ করে থাকে। আইজিডব্লিউ অপারেটর সূত্রে জানা গেছে, টিয়ার-১ ও টিয়ার-২-এর রাজস্ব বণ্টনের হার ১ অনুপাত ১ দশমিক ৯০ (১: ১.৯০)। অপারেটরদের হিসাব বলছে, ৯ বছরে প্রতিটি আইওএস অপারেটরের আয় ৩৭২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বেশি। যেখানে প্রতিটি নন-আইওএস অপারেটরের আয় মাত্র ১৯৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ একই লাইসেন্সধারী হয়েও ৯ বছরে একটি আইওএস অপারেটর নন-আইওএস অপারেটরের চেয়ে ১৭৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা বেশি আয় করছে। সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সাতটি অপারেটর মিলে অতিরিক্ত লাভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ৯ বছর ধরে অনেক অপারেটর এই সিন্ডিকেটের কারণে নিঃস্ব হওয়ার পথে। এ ছাড়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক কল আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়া এবং অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বেশ কিছু নন-আইওএস অপারেটর তাদের কোম্পানি অপারেশন বন্ধ করে ‘ডাটা সেন্টারে’ সিস্টেম রেখে গুটিকয় লোকবলের মাধ্যমে তা পরিচালনা করছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক প্রভাব বিবেচনায় অর্থ হাতিয়ে নিতেই সাতটি অপারেটরকে নির্বাচন করা হয়। সাতটির মধ্যে চারটির বিরুদ্ধেই বিতর্কিত ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও সে সময় তা আমলে নেওয়া হয়নি। নন-আইওএস আইজিডব্লিউ অপারেটরদের দাবি, আইওএস অপারেটরের সংখ্যা সাত থেকে কমিয়ে আন্তর্জাতিক কলের আনুপাতিক হারে নির্ধারণ করা উচিত। এ ছাড়া গত ৯ বছরে বাজার উন্নয়ন ব্যয়ের নামে ১০ শতাংশ হারে কর্তন করা ৬২৬ কোটি টাকার সঠিক হিসাব দিয়ে এই খাতকে শৃঙ্খলা ও সিন্ডিকেটমুক্ত করার দাবি অপারেটরদের। সিন্ডিকেটে অংশ না নেওয়া একটি অপারেটরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ‘আইওএফের নামে এ ব্যবসাকে একটি সিন্ডিকেটে কুক্ষিগত করা হতে পারে আশঙ্কায় আমরা এতে যোগ দিইনি। অবশেষে আমাদের সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। এ পরিকল্পনার মাধ্যমে সেক্টরের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অসম এ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট বিপুল অঙ্কের টাকা লুটপাট করেছে। নতুন বাংলাদেশে তার বিচার চাই।’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিটিআরসির চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, ‘আইজিডব্লিউর লাইসেন্স এবং এর যৌক্তিকতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। আমরা সেবাটাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি, ব্যবসাকে নয়। সেবার দিক থেকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইজিডব্লিউর কতটুকু প্রয়োজন আছে, আমরা সেটা পরীক্ষা করে দেখছি। আজকেও (গতকাল) আইওএফের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বিটিআরসি বৈঠক করেছে। কমিশন যা করার সংশ্লিষ্ট অংশীজন (স্টেকহোল্ডার) ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেবে।’