প্রথাগত জনশক্তি রপ্তানি নাকি মানবসম্পদ রপ্তানিতে বিপ্লব: কোন পথে বাংলাদেশ? – ইউ এস বাংলা নিউজ




প্রথাগত জনশক্তি রপ্তানি নাকি মানবসম্পদ রপ্তানিতে বিপ্লব: কোন পথে বাংলাদেশ?

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ | ৮:০৫ 10 ভিউ
নাজিমের গল্প নাজিম, নরসিংদীর একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা, যার গল্প বাংলাদেশের অসংখ্য স্বপ্নচারী অভিবাসী কর্মীর প্রতিচ্ছবি। ২০২০ সালে, তিনি সৌদি আরবে চাকরি পাওয়ার জন্য ৪ লক্ষ টাকা (প্রায় ৪,৭০০ ডলার) ঋণ নিয়েছিলেন। তাকে মাসিক ৮০০ সৌদি রিয়াল (প্রায় ২১৩ ডলার) বেতনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পৌঁছেই তিনি এক ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হলেন—প্রচণ্ড গরমে নির্মাণ শ্রমিকের কঠোর কাজ, মাসে মাত্র ৬০০ রিয়াল (১৬০ ডলার) বেতন, অস্বাস্থ্যকর বসবাসের পরিবেশ এবং নিয়োগকর্তার কাছে পাসপোর্ট জব্দ হওয়া। নাজিমের অভিজ্ঞতা ব্যতিক্রম নয়। এটি বাংলাদেশের অনেক অভিবাসী কর্মীরই সাধারণ চিত্র, যারা উচ্চাশা নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমায়, কিন্তু শোষণ ও দুর্দশার মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চিত্র

গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪ সালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ৫০১ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থনৈতিক উন্নয়নে দুটি খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে: ১. পোশাক শিল্প (RMG): ২০২৩ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি রেকর্ড ৪৭.৩৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮০%-এর বেশি। এই খাতে প্রায় ৪০ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে, যাদের বেশিরভাগই নারী। ২. প্রবাসী আয়: ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসী আয় ছিল ২১.৬ বিলিয়ন ডলার। এই সময়ে ১১.৩৭ লক্ষ কর্মী বিদেশে গিয়েছেন—যা আগের বছরের তুলনায় ১৫% বেশি—তবুও প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি স্থবির ছিল। পোশাক শিল্প ও জনশক্তি রপ্তানির পার্থক্য পোশাক শিল্প ও

জনশক্তি রপ্তানি খাতের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈপরীত্য রয়েছে: - পোশাক শিল্পের সাফল্যের কারণ: - বাজার গবেষণা: বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ট্রেন্ড ও চাহিদা বিশ্লেষণ। - দক্ষতা উন্নয়ন: টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন। - অবকাঠামো বিনিয়োগ: বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্পপার্ক গড়ে তোলা। - ব্র্যান্ডিং উদ্যোগ: "মেড ইন বাংলাদেশ" লেবেলকে বিশ্বস্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা। - সরকারি সহায়তা: রপ্তানি প্রণোদনা, কর ছাড় ও বাণিজ্য নীতির সমর্থন। - জনশক্তি রপ্তানির চ্যালেঞ্জ: - গবেষণার অভাব: আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদা সম্পর্কে অপর্যাপ্ত জ্ঞান। - দক্ষতার ঘাটতি:

অনেক অভিবাসী কর্মীর প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ও ভাষাগত দক্ষতা নেই। - মধ্যস্বত্বভোগীদের ওপর নির্ভরতা: অনিয়ন্ত্রিত এজেন্টদের মাধ্যমে নিয়োগ, যা শোষণের দিকে নিয়ে যায়। - বাজার কেন্দ্রীভূত: মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর ওপর অত্যধিক নির্ভরতা, বৈচিত্র্যের অভাব। - দুর্বল ব্র্যান্ডিং: বাংলাদেশি কর্মীদের বৈশ্বিকভাবে দক্ষ পেশাদার হিসেবে উপস্থাপনের উদ্যোগের অভাব। অভিবাসী কর্মীদের আয়ের বৈষম্য বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের আয় অন্যান্য দেশের কর্মীদের তুলনায় কম: - ফিলিপাইন: একজন ফিলিপিনো নার্স মাসে প্রায় ১,২০০ ডলার আয় করে। - ভারত: একজন ভারতীয় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মাসে ২,৫০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে। - বাংলাদেশ: একজন বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক

মধ্যপ্রাচ্যে মাসে ২০০ থেকে ৪০০ ডলার আয় করে। এই বৈষম্য বাংলাদেশি কর্মীদের আয়ের সুযোগ বাড়াতে কৌশলগত পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। মানবসম্পদ রপ্তানির কৌশলগত রোডম্যাপ জনশক্তি রপ্তানিকে রূপান্তরিত করতে বাংলাদেশ নিচের পদক্ষেপগুলো বিবেচনা করতে পারে: ১. ডিজিটাল নিয়োগ প্ল্যাটফর্ম: - একটি জাতীয় জব পোর্টাল তৈরি করা, যেখানে সরাসরি বৈধ বিদেশী নিয়োগকর্তাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করা যাবে। - সরকারি তদারকির মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে মধ্যস্বত্বভোগীদের উপর নির্ভরতা কমানো। ২. সম্পূর্ণ দক্ষতা উন্নয়ন: - প্রতিটি জেলায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, যেখানে নার্সিং, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা

শেখানো হবে। - জাপানি, জার্মান ইত্যাদি ভাষার বাধ্যতামূলক কোর্স যোগ করে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করা। ৩. বাজার বৈচিত্র্যকরণ: - জাপান, জার্মানি ও কানাডার মতো উদীয়মান শ্রম বাজার অন্বেষণ করা, যেখানে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে। - দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করা। ৪. বৈশ্বিক ব্র্যান্ডিং উদ্যোগ: - "দক্ষ বাংলাদেশি পেশাদার" নামে একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড তৈরি করা। - সফল প্রবাসীদের গল্প তুলে ধরে দেশের ইমেজ উন্নয়ন। ভবিষ্যত সম্ভাবনা এই কৌশল বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশ: - প্রবাসী আয় বৃদ্ধি: বার্ষিক

৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি প্রবাসী আয় অর্জন করতে পারবে। - দক্ষ কর্মী রপ্তানি: ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ২০ লক্ষ দক্ষ কর্মী বিদেশে প্রেরণ করতে পারবে। - কর্মীদের কল্যাণ নিশ্চিত: অভিবাসী কর্মীদের জন্য উন্নত কাজের পরিবেশ ও উচ্চ বেতন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। কৌশলগত পদক্ষেপের আহ্বান বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সাফল্য প্রমাণ করে যে কৌশলগত পরিকল্পনা, মানবসম্পদে বিনিয়োগ ও সক্রিয় বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কী অর্জন করা সম্ভব। জনশক্তি রপ্তানি খাতেও এই সাফল্য পেতে হলে একটি আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন—প্রথাগত শোষণমূলক পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে দক্ষতাভিত্তিক কাঠামোগত পদ্ধতিতে যাওয়া। এভাবে বাংলাদেশ শুধু তার অভিবাসী কর্মীদের জীবনমানই উন্নত করবে না, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তার অবস্থানও শক্তিশালী করবে। দ্রষ্টব্য: সকল আর্থিক তথ্য আনুমানিক এবং ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদটা দরকার ছিল: মেলিন্ডা গেটস নিলামে উঠছে বিরল ভারতীয় নীল হীরা, কততে বিক্রি হতে পারে? আউটসোর্সিং কর্মীদের সুখবর দিল সরকার বাড়ল সয়াবিন তেলের দাম ‘এ সিদ্ধান্ত সরকারের অপরিণামদর্শিতা’ ভারত থেকে এলো আরও ১০ হাজার টন চাল হজযাত্রীদের জন্য ফের নতুন নির্দেশনা সৌদির র‍্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার জাবেদ ইকবাল বরখাস্ত আগামী বছর থেকে স্মার্ট প্রিপেইড মিটার চালু করবে তিতাস দীর্ঘমেয়াদী অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহারে বাড়তে পারে মৃত্যুর ঝুঁকি সাগরে ৫৮ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ সংসদে আইন করে ইসরাইলিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করল মালদ্বীপ ইসলামকে অবমাননা করে ভারতীয় টেলিভিশন ‘জি বাংলা’য় ধারাবাহিক, ক্ষিপ্ত নেটিজেনরা বিলুপ্ত প্রজাতির বিড়াল চোরাচালান, পুলিশের জালে গোটা চক্র সম্পর্ক পুনর্নির্মাণে সিরিয়া সফরে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জামায়াতের নিবন্ধন আটকে থাকার দুই কারণ ভারত সিরিজের সূচি প্রকাশ, ৬ ম্যাচের ৪টি মিরপুরে সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নিয়ে যা বলছে পুলিশ হঠাৎ বিসিবিতে দুদকের অনুসন্ধান সম্পর্ক পুনর্নির্মাণে সিরিয়া সফরে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী