
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

দেশব্যাপী লোডশেডিং হতে পারে, থাকবে যতদিন

বৃহস্পতিবার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

বায়ুদূষণে শীর্ষে কিনশাসা, ঢাকার অবস্থান কত?

চুয়াডাঙ্গায় এক বছরে বিয়ে হয়েছে ৮ হাজার, বিচ্ছেদ সাড়ে ৫ হাজার

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম প্রয়াণদিবসে শেখ হাসিনার বাণী

বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমছে সাড়ে ৫ বছর! কেন এ ভয়াবহ পরিস্থিতি?

দারিদ্র্য বেড়ে ২৭.৯৩ শতাংশে
জুলাই অনেকের জন্য রঙিন হলেও, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য নিকষ কালো অন্ধকারে যাত্রা

গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন, যা ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে পরিচিত, দেশের রাজনৈতিক কাঠামোয় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারীরা সফল হলেও এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে। বিশেষ করে, রাইড শেয়ারিং খাতে আয়ের তীব্র হ্রাস, গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানা বন্ধের কারণে বেকারত্বের বৃদ্ধি এবং নারীদের জীবনযাত্রার অবনতি এই আন্দোলনের পরবর্তী চিত্রকে আরও জটিল করে তুলেছে।
রাইড শেয়ারিং: আয়ের অর্ধেকে নেমে এসেছে জীবিকা
বিগত কয়েক বছরে রাইড শেয়ারিং বাংলাদেশের যুবকদের জন্য একটি প্রধান আয়ের উৎস হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। পাঠাও, উবারের মতো প্ল্যাটফর্মে বাইক রাইডাররা দিনে ১৮০০ থেকে ২০০০
টাকা আয় করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিডি ডাইজেস্ট-এর সপ্তাহব্যাপী অনুসন্ধানে ডজনখানেক রাইডারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দৈনন্দিন আয় এখন ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কখনো কখনো আরও কম। বিশেষ করে রাস্তাঘাট অবরোধ করে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলতে থাকলে সেদিন রাইড প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। মহাখালীর ৪৩ বছর বয়সী রাইডার সুজন বলেন, “ফজরের নামাজ পড়ে ভোরে বের হই, দুপুরে লাঞ্চ আর বিশ্রামের জন্য বাসায় যাই, আবার সন্ধ্যায় রোদ কমলে রাস্তায় নামি। আগে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০০০ টাকা বাসায় নিতে পারতাম, এখন ১১০০-১২০০ টাকা নিয়ে ফেরাও কঠিন।” রামপুরার রাইডার এনামুল হক যোগ করেন, “গত
এক বছরে রাইডারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। বিভিন্ন কল-কারখানা, অফিস-আদালতে চাকরি হারিয়ে মানুষ বাধ্য হয়ে এই পেশায় নামছে, ফলে রাইডের সংখ্যা কমে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।” বেকারত্বের ঢেউ: নতুন রাইডারের উপচে পড়া ভিড় ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানাগুলোতে অরাজকতা ও লুটপাটের ঘটনায় অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে নতুন করে প্রায় ২৬ লাখ মানুষ বেকার হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮ লাখই নারী। এই বেকারদের একটি বড় অংশ রাইড শেয়ারিং ও অটোরিকশা চালানোর মতো পেশায় ঝুঁকেছে। বিডি ডাইজেস্ট-এর প্রতিনিধি নতুন রাইডারদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, গত ৭-৮ মাসে যারা এই পেশায় এসেছেন, তাদের বেশিরভাগই চাকরি হারিয়েছেন। একজন রাইডার, যিনি আগে
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং অর্ডার সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন, বলেন, “আগস্টের পর সব ছেড়ে ঢাকায় এসেছি। এলাকায় ফিরতে পারি না, মেসে থাকি। বাচ্চাদের খরচ আর সংসারের জন্য রাইড শেয়ারিংই এখন একমাত্র ভরসা।” তবে, রাইডারের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে, যা ব্যক্তিগত আয়কে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। নারীদের দুর্দশা: গ্রামে ফিরে যাওয়া কিংবা পতিতাবৃত্তি বেকারত্বের ঢেউ পুরুষদের রাইড শেয়ারিং বা অটোরিকশার মতো বিকল্প পেশায় ঠেলে দিলেও নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও মর্মান্তিক। ১৮ লাখ নারী বেকারের মধ্যে বেশিরভাগই গ্রামে ফিরে গেছেন। যারা ঢাকা, গাজীপুর কিংবা নারায়ণগঞ্জে থেকে গেছেন, তাদের অনেকে বাসা-বাড়ির কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। আরও উদ্বেগজনক হলো, বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ
এলাকায় অনেক নারী জীবিকার তাগিদে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতি নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতির একটি করুণ চিত্র তুলে ধরে। জুলাই আন্দোলনের দ্বিমুখী প্রভাব জুলাই আন্দোলন অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে নতুন দিশার সন্ধান দেয়ার কথা থাকলেও গুটিকতক রাজনৈতিক নেতা ও গোষ্ঠীর জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে মাত্র। বাকি সাধারণ মানুষের জীবনে এটি অভূতপূর্ব সংকট সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের মতে, “শতাধিক কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছেন। যারা কারখানা বন্ধ করে পালিয়েছেন, তারা সাবেক সরকারের সুবিধাভোগী ছিলেন। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না রাখা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।” বৈষম্য তো কাটেইনি, বরং বৈষম্য এর নতুন করে মেরুকরণ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫
সালে নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে। জ্বালানি সংকট, কারখানায় উৎপাদন হ্রাস এবং বিনিয়োগের অভাবে অর্থনীতি আরও নাজুক হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রাইড শেয়ারিংয়ের মতো খাতে নতুন রাইডারের ভিড় ব্যক্তিগত আয়কে কমিয়ে দিচ্ছে, আর নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের অভাব জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে। জুলাই আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট হলেও, এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণতি সাধারণ মানুষের জীবনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। রাইড শেয়ারিংয়ে আয় হ্রাস, বেকারত্বের বৃদ্ধি এবং নারীদের পতিতাবৃত্তির মতো অমানবিক পেশায় ঠেলে দেওয়া এই আন্দোলনের অন্ধকার দিক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা সফল না হলে, এই সংকট আরও গভীর
হবে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন।
টাকা আয় করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিডি ডাইজেস্ট-এর সপ্তাহব্যাপী অনুসন্ধানে ডজনখানেক রাইডারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের দৈনন্দিন আয় এখন ১১০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কখনো কখনো আরও কম। বিশেষ করে রাস্তাঘাট অবরোধ করে বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন চলতে থাকলে সেদিন রাইড প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। মহাখালীর ৪৩ বছর বয়সী রাইডার সুজন বলেন, “ফজরের নামাজ পড়ে ভোরে বের হই, দুপুরে লাঞ্চ আর বিশ্রামের জন্য বাসায় যাই, আবার সন্ধ্যায় রোদ কমলে রাস্তায় নামি। আগে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০০০ টাকা বাসায় নিতে পারতাম, এখন ১১০০-১২০০ টাকা নিয়ে ফেরাও কঠিন।” রামপুরার রাইডার এনামুল হক যোগ করেন, “গত
এক বছরে রাইডারের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। বিভিন্ন কল-কারখানা, অফিস-আদালতে চাকরি হারিয়ে মানুষ বাধ্য হয়ে এই পেশায় নামছে, ফলে রাইডের সংখ্যা কমে অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে।” বেকারত্বের ঢেউ: নতুন রাইডারের উপচে পড়া ভিড় ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানাগুলোতে অরাজকতা ও লুটপাটের ঘটনায় অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। ফলে নতুন করে প্রায় ২৬ লাখ মানুষ বেকার হয়েছেন, যার মধ্যে ১৮ লাখই নারী। এই বেকারদের একটি বড় অংশ রাইড শেয়ারিং ও অটোরিকশা চালানোর মতো পেশায় ঝুঁকেছে। বিডি ডাইজেস্ট-এর প্রতিনিধি নতুন রাইডারদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছেন, গত ৭-৮ মাসে যারা এই পেশায় এসেছেন, তাদের বেশিরভাগই চাকরি হারিয়েছেন। একজন রাইডার, যিনি আগে
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং অর্ডার সাপ্লাইয়ের কাজ করতেন, বলেন, “আগস্টের পর সব ছেড়ে ঢাকায় এসেছি। এলাকায় ফিরতে পারি না, মেসে থাকি। বাচ্চাদের খরচ আর সংসারের জন্য রাইড শেয়ারিংই এখন একমাত্র ভরসা।” তবে, রাইডারের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে, যা ব্যক্তিগত আয়কে অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে। নারীদের দুর্দশা: গ্রামে ফিরে যাওয়া কিংবা পতিতাবৃত্তি বেকারত্বের ঢেউ পুরুষদের রাইড শেয়ারিং বা অটোরিকশার মতো বিকল্প পেশায় ঠেলে দিলেও নারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও মর্মান্তিক। ১৮ লাখ নারী বেকারের মধ্যে বেশিরভাগই গ্রামে ফিরে গেছেন। যারা ঢাকা, গাজীপুর কিংবা নারায়ণগঞ্জে থেকে গেছেন, তাদের অনেকে বাসা-বাড়ির কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। আরও উদ্বেগজনক হলো, বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ
এলাকায় অনেক নারী জীবিকার তাগিদে পতিতাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছেন। এই পরিস্থিতি নারীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও সুযোগ-সুবিধার ঘাটতির একটি করুণ চিত্র তুলে ধরে। জুলাই আন্দোলনের দ্বিমুখী প্রভাব জুলাই আন্দোলন অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে নতুন দিশার সন্ধান দেয়ার কথা থাকলেও গুটিকতক রাজনৈতিক নেতা ও গোষ্ঠীর জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে মাত্র। বাকি সাধারণ মানুষের জীবনে এটি অভূতপূর্ব সংকট সৃষ্টি করেছে। অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদের মতে, “শতাধিক কলকারখানা বন্ধ হওয়ায় লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছেন। যারা কারখানা বন্ধ করে পালিয়েছেন, তারা সাবেক সরকারের সুবিধাভোগী ছিলেন। কিন্তু শ্রমিকদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা না রাখা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর।” বৈষম্য তো কাটেইনি, বরং বৈষম্য এর নতুন করে মেরুকরণ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৫
সালে নতুন করে ৩০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়তে পারে। জ্বালানি সংকট, কারখানায় উৎপাদন হ্রাস এবং বিনিয়োগের অভাবে অর্থনীতি আরও নাজুক হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে রাইড শেয়ারিংয়ের মতো খাতে নতুন রাইডারের ভিড় ব্যক্তিগত আয়কে কমিয়ে দিচ্ছে, আর নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের অভাব জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলছে। জুলাই আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি টার্নিং পয়েন্ট হলেও, এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিণতি সাধারণ মানুষের জীবনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। রাইড শেয়ারিংয়ে আয় হ্রাস, বেকারত্বের বৃদ্ধি এবং নারীদের পতিতাবৃত্তির মতো অমানবিক পেশায় ঠেলে দেওয়া এই আন্দোলনের অন্ধকার দিক। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা সফল না হলে, এই সংকট আরও গভীর
হবে বলে অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন।