ইসলামের সামাজিক দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধ – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইসলামের সামাজিক দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১১ নভেম্বর, ২০২৪ | ৬:৫৪ 48 ভিউ
ইসলামে সামাজিক দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একজন মুসলিমের জীবন কেবল ব্যক্তিগত ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সমাজে ন্যায়বিচার, দয়া, ও সহযোগিতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ এবং উন্নত সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি মুসলিমের উপর কিছু দায়িত্ব আরোপ করা হয়েছে। কুরআন ও হাদিসে এই সামাজিক দায়িত্বের বিষয়টি বিভিন্নভাবে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। সামাজিক দায়িত্বের গুরুত্ব: ইসলামে মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সাহায্যের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ কুরআনে বলেন: আর তোমরা সৎকর্ম ও পরহেযগারিতায় একে অপরের সহায়ক হও, কিন্তু পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অপরের সহায়ক হয়ো না। আল্লাহকে ভয় করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। (সূরা আল-মায়িদা, আয়াত ২) এই আয়াতে আল্লাহ তার বান্দাদের ন্যায়

ও কল্যাণের কাজে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো, সমাজের কল্যাণে কাজ করা এবং পাপ থেকে দূরে থাকা। গরিব ও দুস্থদের সাহায্য করা: ইসলামে ধনী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপর দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য করার দায়িত্ব রয়েছে। ইসলামিক শিক্ষা অনুযায়ী, এটি একটি মৌলিক দায়িত্ব, যা মানবসম্প্রদায়ের সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে সাহায্য করে। আল্লাহ বলেন: আর তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে, ভিক্ষুক ও বঞ্চিতদের জন্য।(সূরা আদ-যারিয়াত, আয়াত ১৯) এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, প্রতিটি মুসলিমের উপর সমাজের দরিদ্র এবং অসহায়দের অধিকার রয়েছে। ইসলামে এই বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যাকাত, সদকা, ফিতরা ইত্যাদি দানের ব্যবস্থার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা

রাখা হয়েছে। পারিবারিক ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ব: পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করাও ইসলামের অন্যতম সামাজিক দায়িত্বের একটি অংশ। পিতা-মাতার প্রতি, সন্তান-সন্ততির প্রতি, এবং আত্মীয়স্বজনের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে কুরআন ও হাদিসে বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন: আর তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করো। তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদেরকে ‘উফ্’ বলো না এবং তাঁদেরকে ধমক দিও না, বরং তাদের সাথে নম্র ও ভদ্রভাবে কথা বলো।” (সূরা আল-ইসরা, আয়াত ২৩) এই আয়াতটি আমাদের পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের গুরুত্বকে নির্দেশ করে। তাদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা এবং যত্ন

নেওয়া প্রতিটি সন্তানের কর্তব্য। প্রতিবেশীর অধিকার: ইসলামে প্রতিবেশীর প্রতি সহানুভূতি ও দায়িত্ব পালনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: তিনি ঈমানদার হতে পারে না, যে তার প্রতিবেশীকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রেখে নিজে তৃপ্ত থাকে। (সহিহ বোখারি) এই হাদিসের মাধ্যমে সমাজে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে এবং মানবিক দায়িত্ব পালন করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে। মুসলিম সমাজে প্রতিবেশীর সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বলে বিবেচিত হয়। ন্যায় ও সৎকর্মে দায়িত্ববোধ: ইসলামে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উপর অত্যন্ত জোর দেওয়া হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার, সদাচার ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি সদয় আচরণ করতে নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, মন্দ কাজ ও অবাধ্যতা থেকে নিষেধ করেন।

তিনি তোমাদের উপদেশ দেন, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। (সূরা আন-নাহল, আয়াত ৯০) এটি একটি সমাজে ন্যায়বিচার এবং সৎকর্মের গুরুত্ব নির্দেশ করে। একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো, প্রতিটি কাজ ন্যায়ের ভিত্তিতে সম্পন্ন করা এবং অশ্লীলতা ও অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকা। হাদিসে সামাজিক দায়িত্বের শিক্ষা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদিসের মাধ্যমে মুসলিমদের সামাজিক দায়িত্ব পালন সম্পর্কে সচেতন করেছেন। তিনি বলেন: “সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণকারী। (আল-মুআত্তা) এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, একজন প্রকৃত মুসলিমের দায়িত্ব হলো সমাজের কল্যাণে কাজ করা। নিজের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি অন্যদের প্রয়োজনও মেটানো উচিত। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দায়িত্ব: ইসলামের সামাজিক দায়িত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সমাজে শান্তি ও

স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী, কোনো মুমিন কখনো সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে না। আল্লাহ বলেন: আর পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না। (সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২০৫) এই আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব রয়েছে। ইসলামে সামাজিক দায়িত্ব ও দায়িত্ববোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কুরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। একজন মুসলিমের দায়িত্ব হলো, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, গরিব ও অসহায়দের সাহায্য করা, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীর অধিকার রক্ষা করা, এবং সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। ইসলামের এই শিক্ষাগুলো অনুসরণ করলে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ

সমাজ গঠন সম্ভব। লেখক: বিএ অনার্স (বাংলা), এমএ (বাংলা), ফাযিল (ইসলামিক স্টাডিজ), কামিল (হাদিস)।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ চেয়ে ছাত্ররাই কেন সংগঠন করছে? ২১ ফেব্রুয়ারির ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম কুয়াকাটায় মালয়েশিয়া থেকে ৪৫ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠালো ট্রাম্প বললেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগবে না, কারণ ? ভারত, চীনসহ ৫ দেশকে কঠোর হুমকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে হামলার নির্দেশ নেতানিয়াহুর দল না জেতায় মন ভেঙেছে তাওহীদের আড়ালেও মন দেওয়া নেওয়া করছেন শামীম-তানিয়া… দুয়ারে কড়া নাড়ছে রমজান : ভোগ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে লড়ছে সরকার ভিয়েতনামে মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৫ পালন ভারতসহ ৪ দেশকে কঠোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প জাকির নায়েকের প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করল মালয়েশিয়া এবার টঙ্গীতে মুখোমুখি ছাত্রদল ও শিবির, পালটাপালটি কর্মসূচি দুই ঘণ্টার চেষ্টায় খিলগাঁওয়ে স’মিলের আগুন নিয়ন্ত্রণে চলন্ত বাসে ডাকাতি, বড়াইগ্রাম থানার ওসিকে প্রত্যাহার বরখাস্ত হচ্ছেন শেকৃবির ১৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবার পুতিনকে ‘স্বৈরশাসক’ বললেন ইইউর শীর্ষ কূটনীতিক পশ্চিম তীরে আবারও ‘অভিযান’ চালানোর নির্দেশ নেতানিয়াহুর হামাসকে চরম মূল্য দিতে হবে: নেতানিয়াহুর হুঙ্কার দিল্লির ‘লেডি ডন’ কে এই জয়া খান