ইসরাইলি হামলার পর ইরানে ব্যতিক্রমী আশুরা – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইসরাইলি হামলার পর ইরানে ব্যতিক্রমী আশুরা

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৬ জুলাই, ২০২৫ | ৭:৫৮ 51 ভিউ
ইরানে ১০ মহররম বা আশুরা কেবল শোকের অনুষ্ঠান নয়। এটি যুগ যুগ ধরে এক চেতনার নাম। মুসলমানদের আত্মপরিচয়ের উৎস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান এবং জাতিসত্তার প্রতিরোধে আশুরা এক অবিনাশী প্রতীক। চলতি বছরের মহররম এই প্রতিরোধ চেতনাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। কারণ, যখন ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক আগ্রাসনে পুরো ইরান ছিল উত্তেজনার কেন্দ্রে, তখন ইমাম হোসাইন (আ.)-এর শাহাদত স্মরণে আয়োজিত আশুরার শোকানুষ্ঠান রূপ নেয় জাতীয় ঐক্য, সংহতি, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মহাসমাবেশে। নেতানিয়াহু-শাহ’র আহ্বান ও জনসমর্থনের বাস্তবতা ইরানের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দাবি করেন, ‘ইরানের ৮০ শতাংশ মানুষ সরকার উৎখাত করতে চায়।’ তিনি বলেন, ‘পারস্যবাসী এবং ইহুদি জনগণের

মধ্যে একটি প্রাচীন বন্ধুত্ব ছিল। এই সময়ে পদক্ষেপ নেওয়ার, জেগে ওঠার সিদ্ধান্ত ইরানি জনগণের।’ অন্যদিকে, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে, ২৪ জুন প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের শেষ ‘শাহ’ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির ছেলে রেজা পাহলভি বলেন, ‘এটাই আমাদের বার্লিন প্রাচীর ভাঙার মুহূর্ত।’ তিনি সেনাবাহিনী ও জনগণকে বিদ্রোহের আহ্বান জানান। কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত চিত্রই দেখা গেছে। ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্রের হামলা শুরুর পর ইরানিরা এমনকি সরকারবিরোধী অনেকেই জাতীয় পতাকার নিচে ঐক্যবদ্ধ হন। কারবালার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আশুরার শোকানুষ্ঠান রূপ নেয় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদের প্রকাশ্যে। শহীদের ছবিবহন, ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘরবাড়িকে শোকস্থলে রূপান্তর এবং রাজনৈতিক প্ল্যাকার্ডে ভরপুর স্লোগান সবই

ছিল এর বাস্তব উদাহরণ। আশুরা : শোক থেকে প্রতিরোধে রূপান্তর ২২ বছর ধরে ইরানে থেকে আমি প্রত্যক্ষ করছি, কীভাবে আশুরা সময়ের পরিক্রমায় একটি সামাজিক-ধর্মীয়-রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় ইরানিরা এবার মহররমের শোকানুষ্ঠানের তেমন প্রস্তুতি নিতে পারেনি। তারপরও শোককে শক্তিতে পরিণত করতে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শোকানুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। এবারের শোকানুষ্ঠানে ইসরাইলি আগ্রাসনে শহীদ সেনা কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি,নারী ও শিশু শহীদদের ছবি বহন করা হয়েছে। তাদের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা ও স্মৃতিচারণ করা হয়। রাস্তাঘাট, চত্বর, ফ্লাইওভার বিপণিকেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে স্থান পেয়েছে শহীদদের ছবি। মহররমের দিনগুলোতে কুরআন তেলাওয়াত, কালো পতাকা, শোকগাঁথা, শোকসঙ্গীত, আলাম বা নাখল বহন, তবারক

বিতরণ, এসবই আশুরাকে এক ব্যতিক্রমী জাতীয় ঐক্যের মঞ্চে পরিণত করেছে। শোকের মিছিলে অংশ নেন সর্বস্তরের মানুষ, প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ। তাসুয়া ও আশুরার দিনে আলাম বহনকারী যুবকদের দৃঢ়তা, শোক মিছিলের শৃঙ্খলা সবই প্রমাণ করে, ইরানে আশুরা এক সভ্য ও সচেতন চেতনার বহিঃপ্রকাশ। শরীর রক্তাক্ত করে শোক পালন নয়, বরং রক্তদান ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি শরীর রক্তাক্ত করে শোক পালনের বিরুদ্ধে স্পষ্টভাবে ফতোয়া দিয়েছেন। তিনি এটিকে ‘শোক প্রকাশ নয়, বরং শোকের বিকৃতি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। ইসলামি দণ্ডবিধি অনুযায়ী এ ধরনের কাজ করলে জরিমানা, দণ্ড বা নির্বাসনের শাস্তিও হতে পারে। তার পরিবর্তে আলেম সমাজ উৎসাহ দেন, অপচয়ের পরিবর্তে রক্ত দান করতে।

কারবালার আত্মত্যাগের প্রকৃত চেতনা যেন রক্ত নয়, বরং জীবন বাঁচানোর মাঝে প্রতিফলিত হয়। ইমাম খামেনির এই ফতোয়ার পূর্ণ বাস্তবায়ন দেখা হয়েছে এবার আশুরার অনুষ্ঠানে। আলেমদের দৃষ্টিতে আশুরা ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নেতা ইমাম খোমেনি (রহ.) বলেছিলেন, ‘আমাদের যা কিছু অর্জন, সবই পবিত্র আশুরা ও শাহাদাতে কারবালা থেকে।’ বর্তমান সর্বোচ্চ নেতায় আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, ‘কারবালার শিক্ষা না থাকলে ইসলামি বিপ্লব কখনো জয়ী হতো না।’ আর হুজ্জাতুল ইসলাম মোহাম্মাদ হাসান আবু তোরাবি ফার্দ বলেন, ‘আজ ইয়েমেন, ফিলিস্তিনসহ যেসব দেশে জিহাদি প্রতিরোধ চলছে, তা ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের ধারাবাহিকতা।’ এই বক্তব্যগুলো থেকে স্পষ্ট, আশুরা কেবল অতীত স্মরণ নয়, বরং সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় ইসলামী

প্রতিরোধের প্রাণসঞ্চারী চেতনা। আশুরার শক্তি ইরানের আত্মা ইরানে এবারের আশুরা ছিল অনন্য। ইসরাইলি হামলার পর কারবালার শোক যেন রূপ নিয়েছে প্রতিরোধের শক্তিতে। নেতানিয়াহু, রেজা পাহলভি কিংবা ট্রাম্পের মতো ব্যক্তিরা যতবারই ইরানের পতনের স্বপ্ন দেখুন না কেন, আশুরার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ইরানি জাতি আবারও প্রমাণ করেছে, তারা প্রতিরোধ জানাতে জানে। এই কারণেই ইরান, শোকের মাঝেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। লেখক : ইরানে বসবাসরত সাংবাদিক ও বিশ্লেষক

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
বাঁধনের সঙ্গে ভার্চুয়াল দ্বন্দ্বে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের সোহানা সাবা বাঁধনের সঙ্গে ভার্চুয়াল দ্বন্দ্বে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের সোহানা সাবা কোন দেশের ওপর ট্রাম্পের কত শুল্ক বসলো শাহজিবাজার বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে আগুন, ১৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন পুরো হবিগঞ্জ জেলা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক অপু গ্রেপ্তার ‘শুধু প্রত্যাশা নয়, ভালো প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্বকাপে যেতে হবে’ ভারত ম্যাচে পাকিস্তানি ভক্তকে মাঠ ছাড়া করে ক্ষমা প্রার্থনা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি কমবে রাউজানে দ্বন্দ্ব-খুনের পেছনে মাটির ব্যবসা, বালুমহাল দখল, চাঁদা মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে প্রতারণা, সতর্ক করল হাইকমিশন ভারতে বাঙালিদের ওপর হেনস্থার অভিযোগ, এবার মুখ খুললেন অমর্ত্য সেন প্রতিশোধ আর বাঁচার আকাঙ্ক্ষা মিলেমিশে চলবে এবার এমন বর্ণাঢ্য অন্তিম যাত্রা কেউ কোনোদিন দেখেনি… আমি ৩৪ লাখ পারিশ্রমিকের টাকা রেখে আসছি : ডলি জহুর পাবনায় ব্যাংক ভাঙচুর ও ম্যানেজারকে পেটালো যুবদল নেতা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর মিয়ানমার জান্তার চট্টগ্রামে ছাত্রকে বলাৎকার, শিক্ষক গ্রেপ্তার বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার দেশের এক তৃতীয়াংশ শিশু মিয়ানমারে ৪ বছরের জরুরি অবস্থার অবসান, ডিসেম্বরে নির্বাচন