ইরানি সিনেমা ভালোবাসার ছবি আঁকে হৃদয়ে

বিশ্বব্যাপী সিনেপ্রেমীদের কাছে হলিউড-বলিউড কিংবা কোরীয়-চায়নিজ সিনেমাগুলোই বেশি জনপ্রিয়। তবে তিলে তিলে গড়ে ওঠা ইরানি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি শৈল্পিক ও স্বতন্ত্র হিসেবে অতুলনীয়। সাধারণ গল্পকে মনোমুগ্ধকর আবেগি করে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার গুণে ইরানি সিনেমা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। সেন্সরশিপ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, অর্থনৈতিক সংকট ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সত্ত্বেও স্বতন্ত্র ধারায় উজ্জ্বল ইরানি সিনেমা। সামাজিকতার শৃঙ্খল ও ধর্মীয় অনুশাসনের বাধা থাকলেও আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের একটি স্বতন্ত্র ও প্রভাবশালী ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে আরবি চলচ্চিত্রের এই ভুবন। অনেক ইরানি নির্মাতা তাদের সৃজনশীলতা ও গল্প বলার মাধ্যমে বিশ্ব চলচ্চিত্রের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। ২০১২ সালে ইরানে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘এ সেপারেশন’ সেরা বিদেশি ভাষার সিনেমা হিসেবে জিতে
নেয় একাডেমি পুরস্কার। এ ছাড়া ইরানের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়রোস্তামি ‘টেস্ট অব চেরি’র জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাম দোর অর্জন করেন। বাংলাদেশেও ইরানি সিনেমার একটি আলাদা প্রভাব লক্ষণীয়। কম-বেশি সবাই এসব সিনেমা পছন্দ করেন। রুচিশীল ও বাস্তববাদী কাহিনিনির্ভর গল্পের জন্য ইরানের সিনেমা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। বেশ কিছু বাংলায় ডাবিং করা ইরানি সিনেমা মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে। সত্যি বলতে, ইরানি চলচ্চিত্র না দেখলে চলচ্চিত্রের মর্ম বোঝা সম্ভব নয়। কল্পনা আর স্বপ্নের জগতের কাহিনি মানুষ সবসময়ই পছন্দ করে এবং করেই যাবে—এটাই নিয়ম। তবে বাস্তবধর্মী কাহিনিতে নির্মিত ইরানি সিনেমাগুলোর প্রভাব মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গেড়ে নেয়। আর এ কারণেই ইরানি চলচ্চিত্রের
প্রতি সিনেপ্রেমীদের ভালোবাসা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। ইরানি নির্মাতাদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তারা তাদের গল্পে সাধারণত্বকে অসাধারণভাবে তুলে আনতে পারেন। সামাজিক বাস্তবতা, মানবিক সম্পর্ক, শৈশবের নানা কথা ও জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত খুব দক্ষভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয় ইরানি সিনেমায়। এতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান দর্শক। এসব সিনেমা কেবল বিনোদনের জন্যই নয়; বরং জীবনকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শেখায়। কিছু ইরানি চলচ্চিত্র আছে যেগুলো মনের গহিনে জায়গা করে নেয় খুব সহজেই। বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয় এবং প্রশংসাও কুড়ায়। ছোটবোন জোহরার একমাত্র জুতা হারিয়ে ফেলে ভাই আলির একই জুতা ভাগ করে স্কুলে যাওয়ার মর্মস্পর্শী কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘চিলড্রেন অব হেভেন’ সিনেমাটি অস্কারের জন্য মনোনীত প্রথম
ইরানি চলচ্চিত্র। খুব সাধারণ একটি ঘটনাকে কতটা হৃদয়নিংড়ানো করে পর্দায় উপস্থাপন করা যায়—সেই ধারা দেখান পরিচালক মাজিদ মাজিদি। ১৯৯৯ সালে মাজিদ মাজিদি তার আরেকটি সিনেমা ‘দ্য কালার অব প্যারাডাইস’কে যেভাবে ইরানের গ্রামীণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে সিনেবন্দি করে রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করলেন, তা ইরানি সিনেমার তো বটেই পুরো বিশ্বের সিনেমেকারদের জন্যই অনুকরণীয়। একটি অন্ধ শিশু ও তার বাবার অসহায়ত্বের গল্পের কাহিনিতে আবেগের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফ্রেমিং সিনেমাটিকে আলাদা করে তুলেছে। এ ছাড়া জাফর পানাহির শিশুতোষ সিনেমা ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’, আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘হয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ড’স হাউস’, হাদি মোহাম্মদিয়ানের অ্যানিমেটেড অ্যাডভেঞ্চার ‘দ্য এলিফ্যান্ট কিং’ প্রভৃতি সিনেমা সিনেমাপ্রেমীদের চিত্তকে আন্দোলিত করে তোলে। আর অস্কারজয়ী সিনেমা
‘এ সেপারেশন’ ও ‘দ্য সেলসম্যান’-এ পরিচালক আসগর ফরহাদি যেভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের আবেদনের গল্পের ভেতরে পরিবার ও সন্তান নিয়ে দম্পতির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়নের বাস্তবতা তুলে ধরছেন—তা শুধু চরিত্রের প্রতি সহানুভূতি জাগায় না, দর্শকের হৃদয়ের অন্তস্তলকেও ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেবে। উনিশ শতকের একেবারে প্রারম্ভে একজন ইরানি হিসেবে প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় চিত্রধারণ করেছিলেন মির্জা ইব্রাহিম খান আক্কাসবাসি। রাজদরবারের চিত্রগ্রাহক প্যারিস থেকে একটি ক্যামেরা কিনে আনেন তিনি। আর সেটি দিয়েই শুরু করেন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ। ওই বছরই প্রথমবারের মতো ইরানে একটি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করা হয়। যদিও সেটি যিশুখ্রিষ্টের বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছিল। পরে সেটি হয়ে ওঠে ইরানি চলচ্চিত্রের মূল কেন্দ্র। এভাবেই তিলে তিলে
গড়ে ওঠে ইরানি সিনেমার ভুবন। অনেক সিনেবোদ্ধা-সমালোচক ইরানি সিনেমাকে গুরুত্বপূর্ণ শৈল্পিক সিনেমার একটি ধারা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অ্যাকশন, ভায়োলেন্স, রোমান্স ছাপিয়ে সমাজের গভীরে সহানুভূতি আর ভালোবাসার ছবি আঁকছে ইরানি সিনেমাগুলো। যে সিনেমা দর্শকের ভেতরের মানুষকে নাড়িয়ে দেয়, নতুন করে তাকে ভাবতে শেখায়, জীবনকে উপলব্ধি করার তাড়না সৃষ্টি করে—সেই সিনেমাই তো আসল সিনেমা।
নেয় একাডেমি পুরস্কার। এ ছাড়া ইরানের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্রকার আব্বাস কিয়রোস্তামি ‘টেস্ট অব চেরি’র জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ পুরস্কার পাম দোর অর্জন করেন। বাংলাদেশেও ইরানি সিনেমার একটি আলাদা প্রভাব লক্ষণীয়। কম-বেশি সবাই এসব সিনেমা পছন্দ করেন। রুচিশীল ও বাস্তববাদী কাহিনিনির্ভর গল্পের জন্য ইরানের সিনেমা বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। বেশ কিছু বাংলায় ডাবিং করা ইরানি সিনেমা মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটে গেছে। সত্যি বলতে, ইরানি চলচ্চিত্র না দেখলে চলচ্চিত্রের মর্ম বোঝা সম্ভব নয়। কল্পনা আর স্বপ্নের জগতের কাহিনি মানুষ সবসময়ই পছন্দ করে এবং করেই যাবে—এটাই নিয়ম। তবে বাস্তবধর্মী কাহিনিতে নির্মিত ইরানি সিনেমাগুলোর প্রভাব মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী আসন গেড়ে নেয়। আর এ কারণেই ইরানি চলচ্চিত্রের
প্রতি সিনেপ্রেমীদের ভালোবাসা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে। ইরানি নির্মাতাদের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তারা তাদের গল্পে সাধারণত্বকে অসাধারণভাবে তুলে আনতে পারেন। সামাজিক বাস্তবতা, মানবিক সম্পর্ক, শৈশবের নানা কথা ও জীবনের ছোট ছোট মুহূর্ত খুব দক্ষভাবেই ফুটিয়ে তোলা হয় ইরানি সিনেমায়। এতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান দর্শক। এসব সিনেমা কেবল বিনোদনের জন্যই নয়; বরং জীবনকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শেখায়। কিছু ইরানি চলচ্চিত্র আছে যেগুলো মনের গহিনে জায়গা করে নেয় খুব সহজেই। বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয় এবং প্রশংসাও কুড়ায়। ছোটবোন জোহরার একমাত্র জুতা হারিয়ে ফেলে ভাই আলির একই জুতা ভাগ করে স্কুলে যাওয়ার মর্মস্পর্শী কাহিনি নিয়ে নির্মিত ‘চিলড্রেন অব হেভেন’ সিনেমাটি অস্কারের জন্য মনোনীত প্রথম
ইরানি চলচ্চিত্র। খুব সাধারণ একটি ঘটনাকে কতটা হৃদয়নিংড়ানো করে পর্দায় উপস্থাপন করা যায়—সেই ধারা দেখান পরিচালক মাজিদ মাজিদি। ১৯৯৯ সালে মাজিদ মাজিদি তার আরেকটি সিনেমা ‘দ্য কালার অব প্যারাডাইস’কে যেভাবে ইরানের গ্রামীণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে সিনেবন্দি করে রাজনৈতিক ভাষ্য তৈরি করলেন, তা ইরানি সিনেমার তো বটেই পুরো বিশ্বের সিনেমেকারদের জন্যই অনুকরণীয়। একটি অন্ধ শিশু ও তার বাবার অসহায়ত্বের গল্পের কাহিনিতে আবেগের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফ্রেমিং সিনেমাটিকে আলাদা করে তুলেছে। এ ছাড়া জাফর পানাহির শিশুতোষ সিনেমা ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’, আব্বাস কিয়ারোস্তামির ‘হয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ড’স হাউস’, হাদি মোহাম্মদিয়ানের অ্যানিমেটেড অ্যাডভেঞ্চার ‘দ্য এলিফ্যান্ট কিং’ প্রভৃতি সিনেমা সিনেমাপ্রেমীদের চিত্তকে আন্দোলিত করে তোলে। আর অস্কারজয়ী সিনেমা
‘এ সেপারেশন’ ও ‘দ্য সেলসম্যান’-এ পরিচালক আসগর ফরহাদি যেভাবে মধ্যবিত্ত পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদের আবেদনের গল্পের ভেতরে পরিবার ও সন্তান নিয়ে দম্পতির মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়নের বাস্তবতা তুলে ধরছেন—তা শুধু চরিত্রের প্রতি সহানুভূতি জাগায় না, দর্শকের হৃদয়ের অন্তস্তলকেও ভীষণভাবে নাড়িয়ে দেবে। উনিশ শতকের একেবারে প্রারম্ভে একজন ইরানি হিসেবে প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় চিত্রধারণ করেছিলেন মির্জা ইব্রাহিম খান আক্কাসবাসি। রাজদরবারের চিত্রগ্রাহক প্যারিস থেকে একটি ক্যামেরা কিনে আনেন তিনি। আর সেটি দিয়েই শুরু করেন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ। ওই বছরই প্রথমবারের মতো ইরানে একটি প্রেক্ষাগৃহ নির্মাণ করা হয়। যদিও সেটি যিশুখ্রিষ্টের বাণী প্রচারের উদ্দেশ্যেই নির্মিত হয়েছিল। পরে সেটি হয়ে ওঠে ইরানি চলচ্চিত্রের মূল কেন্দ্র। এভাবেই তিলে তিলে
গড়ে ওঠে ইরানি সিনেমার ভুবন। অনেক সিনেবোদ্ধা-সমালোচক ইরানি সিনেমাকে গুরুত্বপূর্ণ শৈল্পিক সিনেমার একটি ধারা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অ্যাকশন, ভায়োলেন্স, রোমান্স ছাপিয়ে সমাজের গভীরে সহানুভূতি আর ভালোবাসার ছবি আঁকছে ইরানি সিনেমাগুলো। যে সিনেমা দর্শকের ভেতরের মানুষকে নাড়িয়ে দেয়, নতুন করে তাকে ভাবতে শেখায়, জীবনকে উপলব্ধি করার তাড়না সৃষ্টি করে—সেই সিনেমাই তো আসল সিনেমা।