ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
বাংলাদেশের এলজিবিটি কমিউনিটিকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র: পর্ব-৩
ট্রাইব্যুনাল এলাকায় সেনা মোতায়েন চেয়ে সেনাসদরে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি, আইনি এখতিয়ার বহির্ভূত
আইন হয়নি, অথচ আইনের বিচার (!) কলঙ্কজনক অধ্যায়ের রচনা
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যেভাবে উপহাসে পরিনত হলো
যে আওয়ামীলীগ তোমরা দেখো নাই, চেনো না…
ইউনূস এবং শান্তির মূল্য
‘জ্যোতিই এখন সর্বেসর্বা’
আওয়ামী লীগ কি সশস্ত্র সংগ্রাম করবে?
শামীম আহমেদ
বর্তমান অগণতান্ত্রিক, অসংবিধানিক, অবৈধ ইউনূস সরকারের পতনের জন্য কি আওয়ামী লীগ সশস্ত্র সংগ্রামে যাবে? আমার স্পষ্ট উত্তর হচ্ছে – না। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরবে।
এবার ঘটনার পিছনে আসি। গতকাল রাতে সাংবাদিক ফজলুল বারী এবং ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারের একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার পোস্ট করেছিলাম। ভিডিওতে নিঝুম মজুমদার বলেছেন যে সশস্ত্র সংগ্রামের দিকে যেতে হতে পারে আওয়ামী লীগের। অস্ত্র হাতে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতির কথাও স্পষ্টভাবে বলেছেন তিনি। তিনি ব্যক্তিগত মত জানিয়ে বলেছেন অস্ত্র হাতে যুদ্ধ ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
গত ১৪ মাসে আওয়ামী লীগের অনেকে অনেকভাবে লেখালেখি করছেন, আন্দোলন সংগ্রাম করছেন। অস্ত্র
হাতে যুদ্ধের কথা এর আগে এভাবে কেউ প্রকাশ্যে বলেননি। যারা আমার লেখা পড়েন, তারা জানেন, আমি কয়েকটা কাজ খুব নিয়মতান্ত্রিকভাবে করি। এক, কিছু বলার আগে ব্যাপক চিন্তাভাবনা ও পড়ালেখা করা। দুই, যাই বলি না কেন তৃণমূলের মন-মানসিকতা বোঝার চেষ্টা এবং সেটিকে শ্রদ্ধা করা। আমি নিঝুম মজুমদারের বক্তব্য শুনে তাতে সহমত প্রকাশ করিনি। কিন্তু আমার মত প্রকাশের আগে আমি তৃণমূলের চিন্তাভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আমরা যদি আমার সেই পোস্টের নিচে মানুষের কমেন্টস দেখি, তাহলে অর্ধেকের বেশী মানুষ নিঝুম মজুমদারের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। আমি মনোযোগ দিয়ে দেখেছি, যারা তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন তারা অধিকাংশ ইউনূসের শাসনামলে সরাসরি আক্রমণ ও ক্ষতির শিকার হয়েছেন, অথবা
দেশের ক্রমাবনতি দেখে উদ্বিগ্ন। আর যারা এর বিরোধীতা করেছেন, তারা কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক আদর্শ ধারণ করেন, এবং অনেকেই মুক্তচিন্তার অধিকারী, কেউ কেউ বিদেশে থাকেন। আরো গভীরে যাবার আগে দুটি কথা বলি। এটা স্পষ্ট আওয়ামী লীগের পক্ষে যারা লেখালেখি করেন এবং মোটামুটি একটা ফ্যান-ফলোয়ার বেজ আছে, তাদের কথা অনেক মানুষ শোনেন এবং মানেন। নিঝুম মজুমদারকে যেমন অনেক মানুষ অপছন্দ করেন, তার কথা অনেককে প্রভাবিত করে। নিঝুম মজুমদার যখন সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বলেন, সেটা অনেককে উজ্জীবীত করে, অনুপ্রাণিত করে এবং ঠিক এই কারণে তার মতো এত মানুষের কাছে পৌঁছুতে পারা শেখ হাসিনার সৈনিকের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে এ ধরণের একটা ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক মন্তব্য করার
আগে সতর্কতা অবলম্বন করা, চিন্তাভাবনা করা। জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ এ শেখ হাসিনা যখন একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন, তখনও আওয়ামী লীগের অনেকের আগ্রাসী অবস্থানে ছিল, সেটা কাজ দেয়নি। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। ওই সময়ে যারা আক্রমণাত্মক ছিলেন, আগ্রাসী ছিলেন – তারা ৫ অগাস্ট পরাজিত হয়েছেন। সাথে সাথে আমরা যারা সমাধানের পথ খুঁজছিলাম, সহনশীলতার পথ দেখাচ্ছিলাম, তারাও পরাজিত হয়েছি। সবচেয়ে বড় পরাজয় ঘটেছে বাংলাদেশের। তাই কথাবার্তা বলার সময় আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। নিঝুম মজুমদারকে আমি বাহবা দিই গত একবছরে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাগ্রচিত্তে লড়াই করার জন্য। ক্রমাগত পর্দায় আসার জন্য, নিউ ইউর্ক, টরোন্টো, লন্ডন, প্যারিস, দিল্লিতে ঘুরে ঘুরে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে
আনার লক্ষ্যে ভয়েস রেইজ করার জন্য। এই ক্রেডিট আমি তাকে দেব। টরোন্টোতে তার সাথে আমার দীর্ঘ ৪ ঘন্টা আলাপ হয়েছে। আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান থেকে দেশের স্বার্থে এগুনোর চিন্তা করেছি। আমি মনে করি নিঝুম মজুমদারের সশস্ত্র সংগ্রামের এই চিন্তা হতাশা থেকে, ফ্রাস্ট্রেশন থেকে। রাগ থেকে, ক্ষোভ থেকে। এটিকে আমি গুরুত্ব দিয়ে নেব না, এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও বলব এমন চিন্তা ঘুণাক্ষরেও মাথায় ঠাঁই না দিতে। বঙ্গবন্ধুর কথা চিন্তা করুন। একাত্তরের ৭ই মার্চ কেন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না, এটি নিয়ে পাকিবীর্যরা ক্রমাগত শোরগোল করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন তিনি যদি ৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে
বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন হতো না, ওই ডাককে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কাজ হিসেবে বিবেচনা করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হতো, এবং ওখানেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের যবনিকাপাত হতো। বঙ্গবন্ধু সেটা জানতেন বলেই অপেক্ষা করেছেন পাকিস্তানের হামলার, তারপরই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। ভারত এবং সোভিয়েট ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। শেখ হাসিনার পুরো ১৫ বছরের শাসনামলে ষড়যন্ত্র চলেছে। ২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ, ২০১৩ সালের হেফাজতের শাপলা চত্বর ঘেরাও, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক চাই এবং ২০২৪ এর কোটাবিরোধী আন্দোলন সবই ষড়যন্ত্রের অংশ। কিন্তু আগেরগুলোতে সঠিক পন্থা অবলম্বন করায় আওয়ামী লীগ টিকে গেছে। ২০২৪ এর ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ব্যর্থতার পেছনে অনেক কারণের একটি ছিল শেখ হাসিনা
এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর লাগাম ছাড়া কথাবার্তা। ছাত্রলীগের কিছু নেতা এমনকি ইনবক্সে আমাকে ভাই বলে সম্বোধন করে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ জানানো পোস্ট ডিলিট করতে হুমকি দিয়েছে। তারা এখন এখন নিজেরা পালিয়ে আছে, শেখ হাসিনাকেও দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। মূল কথা হচ্ছে প্রথমত, আক্রমণ-আঘাত-বেসামাল কথাবার্তা ২০২৫ সালের রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক কৌশল সব প্রকাশ্যে বলতে হয় না। আমি যখন আওয়ামী লীগের কোন সাবেক মন্ত্রী কিংবা প্রেসিডিয়াম সদস্যের সাথে কথা বলি, সেখানে যা আলাপ হয়, সেটি আমি কখনও আমার ফেইসবুকের পোস্টে বলব না। এমনকি নিঝুম মজুমদারের সাথে সাক্ষাতে আমাদের কী আলাপ হয়েছে সেটিও আমি বলব না। প্রতিটা প্লাটফরমে বলার বিষয় ভিন্ন। এটা বোঝা জরুরী। গত ১০-১২ মাসে খুব কম ইউটিউব ফেইসবুক টকশো আছে, যেখানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নাই, কিন্তু আমি সবিনয়ে তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি, কারণ লাইভ শো কিংবা টকশো হচ্ছে একটা ট্র্যাপ আপনাকে দিয়ে বেফাঁস কথা বলিয়ে নেবার। যদিও জানি আমি অনেকের চাইতে ভাল বলতে পারব, তবুও আমি এখন পর্যন্ত যাইনি, কারণ আমার মনে হয়েছে আরও সময় নেয়া দরকার। বঙ্গবন্ধুর একটা ভাষণ, একটা পাবলিক স্পিচ, একটা উক্তি আপনি দেখাতে পারবেন যেটি দেশ ও দশের বিরুদ্ধে গিয়েছে? মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে? পারবেন না। যদি পারেন, সেটি না জেনে, বিএনপি-জামায়াতের প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে চালিয়ে দেয়া মিথ্যাচার। বঙ্গবন্ধু কখনও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতেন না। তার কথায় জাদু ছিল। মানুষ তাকে পাগলের মতো ভালোবাসত। ভালোবাসত না কেবল তারা যারা ১৯৭১ এর স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, যারা ৭০ এর নির্বাচনে স্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। এবং এই সংখ্যাটিও কম নয়, ২৫ শতাংশের বেশী। অন্যদিকে শেখ হাসিনার এমন একটা বক্তৃতা, পাবলিক স্পিচ আপনি দেখাতে পারবেন না, যেটি বিতর্কের সৃষ্টি করেনি, মানুষকে ক্ষুব্ধ করেনি। রাষ্ট্র পরিচালনায়, দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর চাইতে হাজার গুণ ভাল হয়েও শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি তার পাবলিক স্পিকিং-এ দুর্বলতার কারণে। আমি চাই না বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন, এমন কেউ একই ভুল করুন। কথাবার্তায় শালীন হতে হবে। মাত্র ১৪ মাসে আওয়ামী লীগের যে উত্থান তার সূত্রপাতটা রাস্তায় হয়নি, সারা বিশ্বের সুভাষী, ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত মানুষরা কলম দিয়ে অর্জন করেছেন। সেটিকে ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ এখন রাস্তায় নামছে। কিন্তু এই অর্জনকে কোন বিতর্কিত বিপ্লব ভেবে যাতে আমরা ভন্ডুল না করে দিই। যেমন জুলাইকে বিপ্লব দাবী করা কুশীলবরা এখন পালানোর পথ খুঁজছে। তাই কথাবার্তায় সতর্ক হওয়া জরুরী। গতকাল এই ভিডিও প্রকাশ করার পর আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন, মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসেন, শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন, তদুপরি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, এমন অনেকেই আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন সশস্ত্র সংগ্রাম বিষয়ক যে কোন আহ্বান বিপজ্জনক এবং এটি দল ও দেশের ক্ষতি করতে পারে। আমি এর মধ্যে একজনের মতামত- তার নাম যৌক্তিক কারণে, তার অনুরোধেই প্রকাশ না করে উল্লেখ করছি, “নিঝুম যা বলছে এটা কোনভাবেই বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়। ‘৭১ ছিলো বহিঃশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই। এখানে কে কার বিরুদ্ধে লড়বে? এসব যারা বলে তারা সোশ্যাল ডিনামিক্স বোঝে না। রাজনীতির জন্য সমাজ বোঝা জরুরী। শুধু আওয়ামী লীগ কর্মী না, ইন্টেরিমের অপকর্মে দেশের বেশীরভাগ মানুষ বিশেষ করে নিম্নবিত্তরা খুবই ক্ষুব্ধ। মানুষ শেখ হাসিনাকে চায় তাঁর সময়ের ন্যুনতম শাসন কাঠামো, আইন শৃংখলা এবং অর্থনৈতিক কমফোর্টের কথা মনে করে। কিন্তু এর জন্য যুদ্ধ, রক্তপাতে মানুষ আগ্রহী নয়। গ্রামের একটা সাধারণ মানুষও এখন মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করে। সশস্ত্র লড়াইয়ের জন্য যে ডেসপারেশন সেটা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের থাকে না। আওয়ামী লীগকে ফিরতে হবে তার জনসম্পৃক্ততা, রাজনীতি এবং কুটনৈতিক শক্তির জোরে।” আমি নিঝুম মজুমদারের ডেডিকেশনকে গ্রাহ্য করি। এটি সবাই পারে না। তার কথা বহু মানুষ শোনেন। তাই তার জন্য কথা বলায় আরও সতর্ক হওয়া বেশী জরুরী। আমার যারা ফ্যান ফলোয়ার আছেন, তাদের বলব, আমি জানি আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক লড়াই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালিয়ে যাব। এবং আমরা কোন কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা সমীচীন, কোনটি নয় সেদিকে খেয়াল রাখব। আসিফ-সারজিস-নাহিদ-মাহফুজ এত বড় বেইমানি, ছাত্রলীগ করে করতে পেরেছে, কারণ তারা অযাচিতভাবে মুখ খোলেনি। আর আওয়ামী লীগ তো গণমানুষের দল, সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক শক্তি। তারা যা করবে যৌক্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আদর্শিক পথ মেনে করবে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে করবে। তৃণমূলের জয় হোক। জয় বাংলা।
হাতে যুদ্ধের কথা এর আগে এভাবে কেউ প্রকাশ্যে বলেননি। যারা আমার লেখা পড়েন, তারা জানেন, আমি কয়েকটা কাজ খুব নিয়মতান্ত্রিকভাবে করি। এক, কিছু বলার আগে ব্যাপক চিন্তাভাবনা ও পড়ালেখা করা। দুই, যাই বলি না কেন তৃণমূলের মন-মানসিকতা বোঝার চেষ্টা এবং সেটিকে শ্রদ্ধা করা। আমি নিঝুম মজুমদারের বক্তব্য শুনে তাতে সহমত প্রকাশ করিনি। কিন্তু আমার মত প্রকাশের আগে আমি তৃণমূলের চিন্তাভাবনা জানার চেষ্টা করেছি। আমরা যদি আমার সেই পোস্টের নিচে মানুষের কমেন্টস দেখি, তাহলে অর্ধেকের বেশী মানুষ নিঝুম মজুমদারের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। আমি মনোযোগ দিয়ে দেখেছি, যারা তার বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন তারা অধিকাংশ ইউনূসের শাসনামলে সরাসরি আক্রমণ ও ক্ষতির শিকার হয়েছেন, অথবা
দেশের ক্রমাবনতি দেখে উদ্বিগ্ন। আর যারা এর বিরোধীতা করেছেন, তারা কিছু বুদ্ধিবৃত্তিক আদর্শ ধারণ করেন, এবং অনেকেই মুক্তচিন্তার অধিকারী, কেউ কেউ বিদেশে থাকেন। আরো গভীরে যাবার আগে দুটি কথা বলি। এটা স্পষ্ট আওয়ামী লীগের পক্ষে যারা লেখালেখি করেন এবং মোটামুটি একটা ফ্যান-ফলোয়ার বেজ আছে, তাদের কথা অনেক মানুষ শোনেন এবং মানেন। নিঝুম মজুমদারকে যেমন অনেক মানুষ অপছন্দ করেন, তার কথা অনেককে প্রভাবিত করে। নিঝুম মজুমদার যখন সশস্ত্র সংগ্রামের কথা বলেন, সেটা অনেককে উজ্জীবীত করে, অনুপ্রাণিত করে এবং ঠিক এই কারণে তার মতো এত মানুষের কাছে পৌঁছুতে পারা শেখ হাসিনার সৈনিকের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে এ ধরণের একটা ভয়ংকর ধ্বংসাত্মক মন্তব্য করার
আগে সতর্কতা অবলম্বন করা, চিন্তাভাবনা করা। জুলাই-অগাস্ট ২০২৪ এ শেখ হাসিনা যখন একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন, তখনও আওয়ামী লীগের অনেকের আগ্রাসী অবস্থানে ছিল, সেটা কাজ দেয়নি। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে। ওই সময়ে যারা আক্রমণাত্মক ছিলেন, আগ্রাসী ছিলেন – তারা ৫ অগাস্ট পরাজিত হয়েছেন। সাথে সাথে আমরা যারা সমাধানের পথ খুঁজছিলাম, সহনশীলতার পথ দেখাচ্ছিলাম, তারাও পরাজিত হয়েছি। সবচেয়ে বড় পরাজয় ঘটেছে বাংলাদেশের। তাই কথাবার্তা বলার সময় আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। নিঝুম মজুমদারকে আমি বাহবা দিই গত একবছরে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাগ্রচিত্তে লড়াই করার জন্য। ক্রমাগত পর্দায় আসার জন্য, নিউ ইউর্ক, টরোন্টো, লন্ডন, প্যারিস, দিল্লিতে ঘুরে ঘুরে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে
আনার লক্ষ্যে ভয়েস রেইজ করার জন্য। এই ক্রেডিট আমি তাকে দেব। টরোন্টোতে তার সাথে আমার দীর্ঘ ৪ ঘন্টা আলাপ হয়েছে। আমরা অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি, কিছু বিষয়ে ভিন্ন অবস্থান থেকে দেশের স্বার্থে এগুনোর চিন্তা করেছি। আমি মনে করি নিঝুম মজুমদারের সশস্ত্র সংগ্রামের এই চিন্তা হতাশা থেকে, ফ্রাস্ট্রেশন থেকে। রাগ থেকে, ক্ষোভ থেকে। এটিকে আমি গুরুত্ব দিয়ে নেব না, এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও বলব এমন চিন্তা ঘুণাক্ষরেও মাথায় ঠাঁই না দিতে। বঙ্গবন্ধুর কথা চিন্তা করুন। একাত্তরের ৭ই মার্চ কেন তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন না, এটি নিয়ে পাকিবীর্যরা ক্রমাগত শোরগোল করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু জানতেন তিনি যদি ৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেন তাহলে
বাংলাদেশ কখনও স্বাধীন হতো না, ওই ডাককে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের রাষ্ট্রবিরোধী কাজ হিসেবে বিবেচনা করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হতো, এবং ওখানেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের যবনিকাপাত হতো। বঙ্গবন্ধু সেটা জানতেন বলেই অপেক্ষা করেছেন পাকিস্তানের হামলার, তারপরই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা করেছেন। ভারত এবং সোভিয়েট ইউনিয়নের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। শেখ হাসিনার পুরো ১৫ বছরের শাসনামলে ষড়যন্ত্র চলেছে। ২০০৯ এর বিডিআর বিদ্রোহ, ২০১৩ সালের হেফাজতের শাপলা চত্বর ঘেরাও, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক চাই এবং ২০২৪ এর কোটাবিরোধী আন্দোলন সবই ষড়যন্ত্রের অংশ। কিন্তু আগেরগুলোতে সঠিক পন্থা অবলম্বন করায় আওয়ামী লীগ টিকে গেছে। ২০২৪ এর ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ব্যর্থতার পেছনে অনেক কারণের একটি ছিল শেখ হাসিনা
এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীর লাগাম ছাড়া কথাবার্তা। ছাত্রলীগের কিছু নেতা এমনকি ইনবক্সে আমাকে ভাই বলে সম্বোধন করে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে অনুরোধ জানানো পোস্ট ডিলিট করতে হুমকি দিয়েছে। তারা এখন এখন নিজেরা পালিয়ে আছে, শেখ হাসিনাকেও দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে। মূল কথা হচ্ছে প্রথমত, আক্রমণ-আঘাত-বেসামাল কথাবার্তা ২০২৫ সালের রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক কৌশল সব প্রকাশ্যে বলতে হয় না। আমি যখন আওয়ামী লীগের কোন সাবেক মন্ত্রী কিংবা প্রেসিডিয়াম সদস্যের সাথে কথা বলি, সেখানে যা আলাপ হয়, সেটি আমি কখনও আমার ফেইসবুকের পোস্টে বলব না। এমনকি নিঝুম মজুমদারের সাথে সাক্ষাতে আমাদের কী আলাপ হয়েছে সেটিও আমি বলব না। প্রতিটা প্লাটফরমে বলার বিষয় ভিন্ন। এটা বোঝা জরুরী। গত ১০-১২ মাসে খুব কম ইউটিউব ফেইসবুক টকশো আছে, যেখানে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয় নাই, কিন্তু আমি সবিনয়ে তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছি, কারণ লাইভ শো কিংবা টকশো হচ্ছে একটা ট্র্যাপ আপনাকে দিয়ে বেফাঁস কথা বলিয়ে নেবার। যদিও জানি আমি অনেকের চাইতে ভাল বলতে পারব, তবুও আমি এখন পর্যন্ত যাইনি, কারণ আমার মনে হয়েছে আরও সময় নেয়া দরকার। বঙ্গবন্ধুর একটা ভাষণ, একটা পাবলিক স্পিচ, একটা উক্তি আপনি দেখাতে পারবেন যেটি দেশ ও দশের বিরুদ্ধে গিয়েছে? মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে? পারবেন না। যদি পারেন, সেটি না জেনে, বিএনপি-জামায়াতের প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে চালিয়ে দেয়া মিথ্যাচার। বঙ্গবন্ধু কখনও অপ্রাসঙ্গিক কথা বলতেন না। তার কথায় জাদু ছিল। মানুষ তাকে পাগলের মতো ভালোবাসত। ভালোবাসত না কেবল তারা যারা ১৯৭১ এর স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি, যারা ৭০ এর নির্বাচনে স্বাধীন বাংলাদেশের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। এবং এই সংখ্যাটিও কম নয়, ২৫ শতাংশের বেশী। অন্যদিকে শেখ হাসিনার এমন একটা বক্তৃতা, পাবলিক স্পিচ আপনি দেখাতে পারবেন না, যেটি বিতর্কের সৃষ্টি করেনি, মানুষকে ক্ষুব্ধ করেনি। রাষ্ট্র পরিচালনায়, দেশের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর চাইতে হাজার গুণ ভাল হয়েও শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেননি তার পাবলিক স্পিকিং-এ দুর্বলতার কারণে। আমি চাই না বর্তমানে আওয়ামী লীগের সাথে সংশ্লিষ্ট আছেন, এমন কেউ একই ভুল করুন। কথাবার্তায় শালীন হতে হবে। মাত্র ১৪ মাসে আওয়ামী লীগের যে উত্থান তার সূত্রপাতটা রাস্তায় হয়নি, সারা বিশ্বের সুভাষী, ভদ্র, শিক্ষিত, মার্জিত মানুষরা কলম দিয়ে অর্জন করেছেন। সেটিকে ভিত্তি করে আওয়ামী লীগ এখন রাস্তায় নামছে। কিন্তু এই অর্জনকে কোন বিতর্কিত বিপ্লব ভেবে যাতে আমরা ভন্ডুল না করে দিই। যেমন জুলাইকে বিপ্লব দাবী করা কুশীলবরা এখন পালানোর পথ খুঁজছে। তাই কথাবার্তায় সতর্ক হওয়া জরুরী। গতকাল এই ভিডিও প্রকাশ করার পর আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন, মুক্তিযুদ্ধকে ভালোবাসেন, শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন, তদুপরি বাংলাদেশকে ভালোবাসেন, এমন অনেকেই আমার সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে তাদের হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বলেছেন সশস্ত্র সংগ্রাম বিষয়ক যে কোন আহ্বান বিপজ্জনক এবং এটি দল ও দেশের ক্ষতি করতে পারে। আমি এর মধ্যে একজনের মতামত- তার নাম যৌক্তিক কারণে, তার অনুরোধেই প্রকাশ না করে উল্লেখ করছি, “নিঝুম যা বলছে এটা কোনভাবেই বাংলাদেশের বাস্তবতা নয়। ‘৭১ ছিলো বহিঃশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই। এখানে কে কার বিরুদ্ধে লড়বে? এসব যারা বলে তারা সোশ্যাল ডিনামিক্স বোঝে না। রাজনীতির জন্য সমাজ বোঝা জরুরী। শুধু আওয়ামী লীগ কর্মী না, ইন্টেরিমের অপকর্মে দেশের বেশীরভাগ মানুষ বিশেষ করে নিম্নবিত্তরা খুবই ক্ষুব্ধ। মানুষ শেখ হাসিনাকে চায় তাঁর সময়ের ন্যুনতম শাসন কাঠামো, আইন শৃংখলা এবং অর্থনৈতিক কমফোর্টের কথা মনে করে। কিন্তু এর জন্য যুদ্ধ, রক্তপাতে মানুষ আগ্রহী নয়। গ্রামের একটা সাধারণ মানুষও এখন মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করে। সশস্ত্র লড়াইয়ের জন্য যে ডেসপারেশন সেটা মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের থাকে না। আওয়ামী লীগকে ফিরতে হবে তার জনসম্পৃক্ততা, রাজনীতি এবং কুটনৈতিক শক্তির জোরে।” আমি নিঝুম মজুমদারের ডেডিকেশনকে গ্রাহ্য করি। এটি সবাই পারে না। তার কথা বহু মানুষ শোনেন। তাই তার জন্য কথা বলায় আরও সতর্ক হওয়া বেশী জরুরী। আমার যারা ফ্যান ফলোয়ার আছেন, তাদের বলব, আমি জানি আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা আমাদের গণতান্ত্রিক লড়াই নিয়মতান্ত্রিকভাবে চালিয়ে যাব। এবং আমরা কোন কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় বলা সমীচীন, কোনটি নয় সেদিকে খেয়াল রাখব। আসিফ-সারজিস-নাহিদ-মাহফুজ এত বড় বেইমানি, ছাত্রলীগ করে করতে পেরেছে, কারণ তারা অযাচিতভাবে মুখ খোলেনি। আর আওয়ামী লীগ তো গণমানুষের দল, সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক শক্তি। তারা যা করবে যৌক্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং আদর্শিক পথ মেনে করবে। বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে করবে। তৃণমূলের জয় হোক। জয় বাংলা।



