
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

অভিনেতা প্রিয়াংশুর অর্ধনগ্ন মরদেহ উদ্ধার

অভিনেতা বিজয় থালাপতির বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ

ভারত সফরে রানি মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাৎ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর, কেন?

কারিনা কাপুরের গোপন ফিটনেস রুটিন ফাঁস

টালিউড সিনেমায় শারমান যোশির সঙ্গে কে?

সান মিউজিক অ্যান্ড মোশন পিকচার্সের সঙ্গে শাকিব খানের চুক্তি

ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন
হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গুলতেকিন খানের পোস্ট

বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন খান ফেসবুকে একটা পাবলিক পোস্ট দিয়েছেন। বিশেষ করে কিশোরী ও তরুণীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেই তিনি এই অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তিনি। প্রতিক্রিয়া বা রিঅ্যাকশনে স্যাড বা দুঃখের ইমোজি সাড়ে ১৫ হাজার, লাইক ৬ হাজারের বেশি, লাভ আড়াই হাজার, কেয়ার ৯২৮ (সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে)।
হজযাত্রীর কোটা পূরণ নিয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জরুরি নির্দেশনা
গুলতেকিন জানান, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে তাদের দাম্পত্য জীবনে টানাপোড়েন শুরু হয়। নর্থ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সময় ব্যর্থতা ও মানসিক চাপের কারণে হুমায়ূন আহমেদ ক্রমশ অস্থির হয়ে
পড়েন। এই সময়ে দাম্পত্য জীবনে রাগ-অভিমান ও দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। একপর্যায়ে হুমায়ূন আহমেদ তাকে বাসা থেকে বের করে দেন। ‘এই সত্যি কথাগুলো আমি লিখেছি শুধু মাত্র কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে। এতো ব্যক্তিগত ঘটনা লিখেছি কারণ আর কোনো মেয়ে আমার (পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিল) মতো ভুল যেনো না করে। জুন মাসের ৬ তারিখ ছিল রোববার। শীলাকে যেমন হাসতে হাসতে বলেছিলাম প্রায় একইভাবে ইকবাল ভাইকেও জানালাম (হুমায়ূন আহমদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব)। ড. ইয়াসমীন হক তার পরিচিত কয়েকজন lawyer (আইনজীবী) আমার বাসায় পাঠান। তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ব্যাংকে টাকা পয়সা কেমন আছে? আমি বলি, কার ব্যাংকে? আপনাদের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে? আমাদের তো কোনো জয়েন্ট
অ্যাকাউন্টে নেই! ব্যাংকে হুমায়ূন আহমেদের কতো টাকা আছে? সেটা তো আমি জানি না। তখন উনি আপসেট হয়ে বলেন, কিছু একটা বলেন? আমি বলি, একজন মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে! কী ধরনের সম্পর্ক? যতদুর জানি সব ধরনের সম্পর্ক। উনি নিজেই আমাকে জানিয়েছেন! আমি বাকি কারও নাম বললাম না! তারা এখন বিয়ে করে শান্তিতে আছেন। কী দরকার তাদের নাম বলার! আইনজীবীরা দখিন হাওয়ায় (আমার ফ্ল্যাটে যেখানে আমার মৌখিক অ্যাগ্রিমেন্ট নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ থাকছিলেন) সেখানে যান। এবং চলেও আসেন আমার কাছে। একজন বলেন তিনি তো কয়েকটি বই দেখান যেখানে আগে থেকেই আন্ডার লাইন করা ছিল। হোটেল গ্রেভারিন, মেফ্লাওয়ার আরও কিছু বই। আপনি নাকি অনেক আগে থেকেই ডিভোর্স
চাচ্ছিলেন? ওগুলো সত্যি না। ডিভোর্সের নিয়ম আমি এখনো জানি না! আমেরিকাতে কীভাবে জানব? ‘হোটেল গ্রেভারিনে’ ওসব বানিয়ে লেখা! তার আত্মজীবনীমূলক বইয়ে অনেক কিছুই তার কল্পনা থেকে লেখা। ঐসব বই লেখার সময় আমি তাকে বার বার বলেছিলাম ওসব না লিখতে! কিন্তু উনি আমাকে তখন বলেছিলেন, ‘একদম সত্যি হচ্ছে জলের মতো, কোনো স্বাধহীন, তাই কিছু মিথ্যা থাকলে লোকজন পড়ে মজা পাবে!’ আমি শুধু তার পায়ে ধরে বাকি রেখেছিলাম। বারবার বলেছি, আমার সম্পর্কে কিছু না লিখতে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাইনি! ওর তখন খারাপ একটি সময় যাচ্ছিল, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির জন্যে একটি পরীক্ষা হয় যার নাম কিউমিলিয়েটিভ, সেখানে দশ নাম্বার থাকে। পরীক্ষার জন্য
সম্ভবত দুই বছর সময় থাকে। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা হয় এবং দশের মধ্যে তিনটি ২ নাম্বার পেতে হয়, বাকি গুলো ১ নাম্বার পেলেই হয়। কিন্তু সে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েও একটিতেও ২ নাম্বার পাননি তখনো। এটা নিয়ে তার মধ্যে ফ্রাসটেশন (বিষণ্নতা) কাজ করছিল। তাছাড়া তিনি রেগে গেলেই বলতেন, ‘বাসা থেকে বের হয়ে যাও।’ সেদিনও পরীক্ষায় ১ পেয়ে মেজাজ খুব খারাপ ছিল। বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করে। এবং এক পর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেন, ‘বাসা থেকে বের হয়ে যাও!’ আমি বলি, কোথায় যাবো? উনি বলেন, ‘যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও!’ আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরও রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর
থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প্যান্ট, পায়ে স্পন্জের স্যান্ডেল ছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচন্ড ঠান্ডা!আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দেই আর বলি, দরজা খোলো প্লিজ, কলিংবেল বাজাতে থাকি কিন্তু দরজা খুলে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার হাত পা প্রায় জমে যায়! তখন দৌড়াতে থাকি। আমাদের বাসার কাছে একটি দোকান ছিল। একজন আমেরিকান বৃদ্ধা মহিলা তার বিশাল ড্রয়িং রুমকে নানারকম মসলা, আচার, হারবাল জিনিস দিয়ে দোকান বানিয়েছিলেন। নাম ছিল ‘টচি’। আমরাও ওখান থেকে মসলা কিনতাম এবং প্রায়ই যেতাম নতুন কোনো মসলার খোঁজে! এমনিতে কাছেই মনে হতো কিন্তু সে শীতের সন্ধ্যায় যেন দোকানটি বাসার কাছে
ছিল সেটি মনে হলো বহু দূরে চলে গেছে! শেষ পর্যন্ত টচি পৌঁছেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মনে হলো স্বর্গে ঢুকেছি! বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলাম, আমি একটি ফোন করতে পারি কিনা! টাকা পরে দেবো! উনি বললেন, ‘টাকা লাগবে না, তুমি ফোন করো।’ তিনি আমার প্রাইভেসির জন্য একটু দূরে সরে গেলেন। আমার একমাত্র মুখস্থ নাম্বারে ফোন করলাম। -এ্যানি, আমি টিংকু (গুলতেকিনের ডাক নাম) বলছি। -কী হয়েছে টিংকু, এমন ভাবে কথা বলছো কেনো? -এ্যানি, তুমি কি আমাকে একটু তুলে নিতে পারবে? আমি (এ্যানির ছেলে, এ্যারোনকে আমি বেবিসিট করি। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধুও) ওকে ঠিকানা বলি। এ্যানি চলে আসে। আমি টচির বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠি। ও আমাকে একটি জ্যাকেট দেয়। আমি ভাবি, ও কেমন করে জানলো যে আমার গায়ে জ্যাকেট নেই? ওর বাড়িতে যেতে যেতে সবকিছু বলি ওকে। বাসায় পৌঁছে এ্যানি আমাকে একটি রুম দেখিয়ে বলে, ‘এখন তুমি ঘুমাওতো।’ সারাদিন কাজ করার ক্লান্তি, বাসা পরিষ্কার, রান্না কতো কী করেছি! কোনো কিছুতেই ঘুম আসেনা! ভয়ে, উৎকণ্ঠায় এতোক্ষণ কাঁদতেও পারিনি! বালিশে মাথা রাখতেই ঝর্নার মতো দু’চোখের জলে বালিশ ভিজে গেলো! নোভার কথা ভেবে কষ্ট গলার ভেতর আটকে গেলো! এখানে আমার মা-বাবা, ভাইবোন, কোনো আত্মীয়স্বজন নেই! কি করে সে পারলো এমন করতে? সারা রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটলো। বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আমি বসে থাকি। এ্যানি আর স্টেইনলি নাস্তার টেবিলে এসে বসে। আমিও বসি ওদের সাথে। টেবিলে এ্যানি আমাকে বলে, ‘কি ঠিক করলে?’ -কী বলছো, এ্যানি? -ল্যায়ারের সাথে কথা বলব না? একবারে ডিভোর্স পাঠাতে বলবে? -আমি ভয়ে আতকে উঠি! -না, না। হুমায়ূন আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাগের মাথায় ওসব করেছে! তুমি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? নোভার জন্য খুব মন খারাপ লাগছে! ওরা দু’জন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে। বাসায় ঢুকেই আমি নোভাকে কোলে নিয়ে দুতালায় যাই। বিছানায় বসে নোভাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে থাকি। আর বলি, নোভাকে আমার বোকামি করতে দেবোনা। ওর হাজবেন্ডের যেনো সাহস না হয় ওকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেবার! আমার চোখের সামনে অসংখ্য ছবি দেখতে পাই যেখানে একটি ১৮/১৯ বয়েসের তরুণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন হুমায়ূন আহমেদ তাকে যা ইচ্ছে তা বলে বকছে। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইয়াসমীনের পাঠানো ঐ ল্যায়ারকে জিজ্ঞেস করতে, ‘আসলে তখনি নোভাকে নিয়ে দেশে ফিরে ঐ ভদ্রলোক কে ডিভোর্স দেওয়া উচিত ছিলো, তাই না?’ কিন্তু পারিনি!’
পড়েন। এই সময়ে দাম্পত্য জীবনে রাগ-অভিমান ও দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। একপর্যায়ে হুমায়ূন আহমেদ তাকে বাসা থেকে বের করে দেন। ‘এই সত্যি কথাগুলো আমি লিখেছি শুধু মাত্র কিশোরী, তরুণী এবং তাদের অভিভাবকদের জন্যে। এতো ব্যক্তিগত ঘটনা লিখেছি কারণ আর কোনো মেয়ে আমার (পুরো বিয়েটাতে আমার চেয়ে অভিভাবকদের বেশি ভুল ছিল) মতো ভুল যেনো না করে। জুন মাসের ৬ তারিখ ছিল রোববার। শীলাকে যেমন হাসতে হাসতে বলেছিলাম প্রায় একইভাবে ইকবাল ভাইকেও জানালাম (হুমায়ূন আহমদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব)। ড. ইয়াসমীন হক তার পরিচিত কয়েকজন lawyer (আইনজীবী) আমার বাসায় পাঠান। তাদের একজন আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ব্যাংকে টাকা পয়সা কেমন আছে? আমি বলি, কার ব্যাংকে? আপনাদের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে? আমাদের তো কোনো জয়েন্ট
অ্যাকাউন্টে নেই! ব্যাংকে হুমায়ূন আহমেদের কতো টাকা আছে? সেটা তো আমি জানি না। তখন উনি আপসেট হয়ে বলেন, কিছু একটা বলেন? আমি বলি, একজন মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আছে! কী ধরনের সম্পর্ক? যতদুর জানি সব ধরনের সম্পর্ক। উনি নিজেই আমাকে জানিয়েছেন! আমি বাকি কারও নাম বললাম না! তারা এখন বিয়ে করে শান্তিতে আছেন। কী দরকার তাদের নাম বলার! আইনজীবীরা দখিন হাওয়ায় (আমার ফ্ল্যাটে যেখানে আমার মৌখিক অ্যাগ্রিমেন্ট নিয়ে হুমায়ূন আহমেদ থাকছিলেন) সেখানে যান। এবং চলেও আসেন আমার কাছে। একজন বলেন তিনি তো কয়েকটি বই দেখান যেখানে আগে থেকেই আন্ডার লাইন করা ছিল। হোটেল গ্রেভারিন, মেফ্লাওয়ার আরও কিছু বই। আপনি নাকি অনেক আগে থেকেই ডিভোর্স
চাচ্ছিলেন? ওগুলো সত্যি না। ডিভোর্সের নিয়ম আমি এখনো জানি না! আমেরিকাতে কীভাবে জানব? ‘হোটেল গ্রেভারিনে’ ওসব বানিয়ে লেখা! তার আত্মজীবনীমূলক বইয়ে অনেক কিছুই তার কল্পনা থেকে লেখা। ঐসব বই লেখার সময় আমি তাকে বার বার বলেছিলাম ওসব না লিখতে! কিন্তু উনি আমাকে তখন বলেছিলেন, ‘একদম সত্যি হচ্ছে জলের মতো, কোনো স্বাধহীন, তাই কিছু মিথ্যা থাকলে লোকজন পড়ে মজা পাবে!’ আমি শুধু তার পায়ে ধরে বাকি রেখেছিলাম। বারবার বলেছি, আমার সম্পর্কে কিছু না লিখতে। আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাইনি! ওর তখন খারাপ একটি সময় যাচ্ছিল, নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডির জন্যে একটি পরীক্ষা হয় যার নাম কিউমিলিয়েটিভ, সেখানে দশ নাম্বার থাকে। পরীক্ষার জন্য
সম্ভবত দুই বছর সময় থাকে। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা হয় এবং দশের মধ্যে তিনটি ২ নাম্বার পেতে হয়, বাকি গুলো ১ নাম্বার পেলেই হয়। কিন্তু সে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়েও একটিতেও ২ নাম্বার পাননি তখনো। এটা নিয়ে তার মধ্যে ফ্রাসটেশন (বিষণ্নতা) কাজ করছিল। তাছাড়া তিনি রেগে গেলেই বলতেন, ‘বাসা থেকে বের হয়ে যাও।’ সেদিনও পরীক্ষায় ১ পেয়ে মেজাজ খুব খারাপ ছিল। বাসায় এসেই অকারণে রাগারাগি শুরু করে। এবং এক পর্যায়ে কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে বলেন, ‘বাসা থেকে বের হয়ে যাও!’ আমি বলি, কোথায় যাবো? উনি বলেন, ‘যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাও!’ আমাকে চুপচাপ কাঁদতে দেখে আরও রেগে যান এবং আমাকে ধাক্কা দিয়ে বাইরে পাঠিয়ে ভেতর
থেকে দরজা লাগিয়ে দেন। আমার গায়ে তখন একটি শার্ট এবং প্যান্ট, পায়ে স্পন্জের স্যান্ডেল ছিল। আর বাইরে ডিসেম্বর মাসের প্রচন্ড ঠান্ডা!আমি শীতে কাঁপতে কাঁপতে দরজা ধাক্কা দেই আর বলি, দরজা খোলো প্লিজ, কলিংবেল বাজাতে থাকি কিন্তু দরজা খুলে না। বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার হাত পা প্রায় জমে যায়! তখন দৌড়াতে থাকি। আমাদের বাসার কাছে একটি দোকান ছিল। একজন আমেরিকান বৃদ্ধা মহিলা তার বিশাল ড্রয়িং রুমকে নানারকম মসলা, আচার, হারবাল জিনিস দিয়ে দোকান বানিয়েছিলেন। নাম ছিল ‘টচি’। আমরাও ওখান থেকে মসলা কিনতাম এবং প্রায়ই যেতাম নতুন কোনো মসলার খোঁজে! এমনিতে কাছেই মনে হতো কিন্তু সে শীতের সন্ধ্যায় যেন দোকানটি বাসার কাছে
ছিল সেটি মনে হলো বহু দূরে চলে গেছে! শেষ পর্যন্ত টচি পৌঁছেই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলাম। মনে হলো স্বর্গে ঢুকেছি! বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে অনুরোধ করলাম, আমি একটি ফোন করতে পারি কিনা! টাকা পরে দেবো! উনি বললেন, ‘টাকা লাগবে না, তুমি ফোন করো।’ তিনি আমার প্রাইভেসির জন্য একটু দূরে সরে গেলেন। আমার একমাত্র মুখস্থ নাম্বারে ফোন করলাম। -এ্যানি, আমি টিংকু (গুলতেকিনের ডাক নাম) বলছি। -কী হয়েছে টিংকু, এমন ভাবে কথা বলছো কেনো? -এ্যানি, তুমি কি আমাকে একটু তুলে নিতে পারবে? আমি (এ্যানির ছেলে, এ্যারোনকে আমি বেবিসিট করি। কিন্তু আমরা ভালো বন্ধুও) ওকে ঠিকানা বলি। এ্যানি চলে আসে। আমি টচির বয়স্ক ভদ্রমহিলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে উঠি। ও আমাকে একটি জ্যাকেট দেয়। আমি ভাবি, ও কেমন করে জানলো যে আমার গায়ে জ্যাকেট নেই? ওর বাড়িতে যেতে যেতে সবকিছু বলি ওকে। বাসায় পৌঁছে এ্যানি আমাকে একটি রুম দেখিয়ে বলে, ‘এখন তুমি ঘুমাওতো।’ সারাদিন কাজ করার ক্লান্তি, বাসা পরিষ্কার, রান্না কতো কী করেছি! কোনো কিছুতেই ঘুম আসেনা! ভয়ে, উৎকণ্ঠায় এতোক্ষণ কাঁদতেও পারিনি! বালিশে মাথা রাখতেই ঝর্নার মতো দু’চোখের জলে বালিশ ভিজে গেলো! নোভার কথা ভেবে কষ্ট গলার ভেতর আটকে গেলো! এখানে আমার মা-বাবা, ভাইবোন, কোনো আত্মীয়স্বজন নেই! কি করে সে পারলো এমন করতে? সারা রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটলো। বাথরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আমি বসে থাকি। এ্যানি আর স্টেইনলি নাস্তার টেবিলে এসে বসে। আমিও বসি ওদের সাথে। টেবিলে এ্যানি আমাকে বলে, ‘কি ঠিক করলে?’ -কী বলছো, এ্যানি? -ল্যায়ারের সাথে কথা বলব না? একবারে ডিভোর্স পাঠাতে বলবে? -আমি ভয়ে আতকে উঠি! -না, না। হুমায়ূন আমাকে অনেক ভালোবাসে! রাগের মাথায় ওসব করেছে! তুমি আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসতে পারবে? নোভার জন্য খুব মন খারাপ লাগছে! ওরা দু’জন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে। বাসায় ঢুকেই আমি নোভাকে কোলে নিয়ে দুতালায় যাই। বিছানায় বসে নোভাকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে থাকি। আর বলি, নোভাকে আমার বোকামি করতে দেবোনা। ওর হাজবেন্ডের যেনো সাহস না হয় ওকে ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেবার! আমার চোখের সামনে অসংখ্য ছবি দেখতে পাই যেখানে একটি ১৮/১৯ বয়েসের তরুণী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে এবং একজন হুমায়ূন আহমেদ তাকে যা ইচ্ছে তা বলে বকছে। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ইয়াসমীনের পাঠানো ঐ ল্যায়ারকে জিজ্ঞেস করতে, ‘আসলে তখনি নোভাকে নিয়ে দেশে ফিরে ঐ ভদ্রলোক কে ডিভোর্স দেওয়া উচিত ছিলো, তাই না?’ কিন্তু পারিনি!’