রেলে নিজের ঘরেই ভয়াবহ চোরচক্র – ইউ এস বাংলা নিউজ




রেলে নিজের ঘরেই ভয়াবহ চোরচক্র

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২০ এপ্রিল, ২০২৫ | ১০:৪২ 2 ভিউ
রেলওয়ের নিজের ঘরেই গড়ে ওঠেছে বিশাল চোরচক্র। শুধু মাঠপর্যায়ে নয়, এখন গোডাউনে রাখা মালামালও দেদার চুরি হচ্ছে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম পাহাড়তলী রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের গোডাউন থেকে কোটি কোটি টাকার মালামাল চুরি হয়েছে। এমন ঘটনা রেলে প্রায়ই ঘটছে। অভিযোগ-চোরচক্রের মধ্যে ফ্যাসিস্ট আর ফ্যাসিস্টবিরোধীরা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট রেলওয়ের দোষী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া যাচ্ছে না। বরং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদানসহ প্রাণনাশের হুমকিও দিচ্ছে চোরচক্রটি। অর্থাৎ রেলে নিজের ঘরেই চোর-ডাকাত ঘুরে বেড়াচ্ছে। অতি প্রয়োজনীয় মালামাল ক্রয় করে গোডাউনে আনা, গোডাউন থেকে মাঠপর্যায়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও মালামাল চুরি কিংবা মালামালের ধরন পালটে যাচ্ছে। কখনো ক্রয়কৃত মালামাল ট্রেন-কোচ-ইঞ্জিনে ফিটিং না করেই

কাগজ-কলমে উঠানো হচ্ছে-যন্ত্রাংশ লাগানো হয়েছে। এমন অভিযোগ বছরের পর বছর ধরে উঠে এলেও চুরি বন্ধ হচ্ছে না। কখনো কখনো তদন্ত কমিটি হচ্ছে কিন্তু কমিটির অধিকাংশ রিপোর্ট ভাঁওতায় পরিণত হচ্ছে। রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, অভিযোগের সত্যতা পেলে আমরা দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। রেলে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দিচ্ছি না। সম্প্রতি তেল চুরির ঘটনায় সম্পৃক্তদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সরঞ্জাম চুরির ঘটনা নিশ্চয় ভয়াবহ ঘটনা। মজুত সরঞ্জাম ট্রেন পরিচালনার ক্ষেত্রে নিয়ামক। সরঞ্জাম চুরির ঘটনায় সম্পৃক্তদের বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থানে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। মালামাল চুরির বিষয়ে তদন্ত কমিটির ৫

পাতার তদন্ত রিপোর্ট কাছে এসেছে। তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পরিদর্শন) আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত রিপোর্টে বলা হয়-রেলপথ-ট্রেন সচল রাখার জন্য সরঞ্জাম মজুত রাখতে হয়। আর সেই মজুতকৃত মালামাল যখন চুরি হয়ে যায়, তখন উদ্বেগের শেষ থাকে না। চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। ওই সময় গোডাউনের ভেতর-বাইরে থাকা সিসি ক্যামেরার বৈদ্যুতিক লাইন কাটা পাওয়া যায়। গোডাউনের ভেতরে রাখা ১২০০০ ফিট কেবল যা কাঠের বাক্সে ছিল-সেসব চুরি হয়েছে। ২০২৪ সালের ২২ ডিসেম্বর সিসি ক্যামেরার ভিডিও সংগ্রহ করা হয়। ভিডিওতে ওই দিন ৩ জন দুষ্কৃতকারীকে সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে দেখা যায়। শাকিল ও শাহিন নামের দুজনকে গ্রেফতার করা

হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চল প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তর ঘিরে মালামাল চুরি; সঠিক মালামাল গ্রহণ না করে নকল মালামাল গ্রহণের মতো বহু অভিযোগ রয়েছে। এ দপ্তর দুটির কোনো কোনো কর্মকর্তা নিজেরাই আপনজন দিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। নিজেরাই দেশীয় মালামাল তৈরি করে সেই মালামাল বিদেশি দেখিয়ে রেলে দিচ্ছেন। বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৫ বছর এমন অনিয়ম-দুর্নীতি প্রকাশ্যে ঘটলেও আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং রেলওয়ে শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের হুমকির মুখে দুর্নীতির ঘটনাগুলো বিলীন হয়ে যেত। রেলওয়ে সরঞ্জাম দপ্তরের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে রেলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সন্ত্রাসী এবং রেলওয়ে শ্রমিক লীগ নেতাদের আনাগোনা নেই। তবে সরঞ্জামকেন্দ্রিক মালামাল ক্রয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত

ঠিকাদার, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং রেলওয়েকেন্দ্রিক রাজনৈতিক নেতারা লুটপাট কায়েম করতে সবাই এক কাতারে রয়েছেন। নতুন করে রাজনৈতিক পরিচয়ে রেলে ত্রাস সৃষ্টি করছেন। নিজেদের পছন্দমতো কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি-পদায়নের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী সরকারের সময়কালে এ দপ্তরে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী বীরদর্পে অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। এখনো তাদের রাজত্ব রয়েছে। তাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছেন ফ্যাসিস্টবিরোধী নামধারী আরও কিছু রেলসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতাকর্মী। ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর নতুন করে ‘রাজনৈতিক সুবিধা’ নিয়ে একেকজন কর্মচারী ২-৩টি দপ্তরের দায়িত্বে কাজ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরঞ্জাম দপ্তরকেন্দ্রিক অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে সম্প্রতি রেলভবন থেকে ১৭ এপ্রিল একটি ‘বদলি-পদায়নের’ আদেশ জারি করা হয়েছে। ৮ জনকে বদলি-পদায়ন করা হয়েছে। ইয়াকুব আলী ফকিরকে পূর্বের

দায়িত্ব থেকে সরিয়ে চট্টগ্রাম সিআরবির দপ্তর সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক পদে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমজাদ হোসেনকে পাহাড়তলী জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পরিদর্শক), শরিফুল ইসলামকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসাবে এসএসএই/এস বুকিং, আমিনুল ইসলামকে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সরঞ্জাম শাখা পাহাড়তলী) মোল্লা জাকির আজসানকে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (শিপিং) পাহাড়তলী, মোহাম্মদ শাহ আলমকে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (সরঞ্জাম শাখা) পাহাড়তলী, মনিরুল ইসলাম মজুমদারকে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পরিদর্শক) পাহাড়তলী এবং মঞ্জুর মোরশেদকে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পরিদর্শন) পাহাড়তলীতে বদলি করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী বছরের পর বছর ধরে পূর্বাঞ্চল রেলের নির্ধারিত দপ্তরে কাজ করছেন। রেলওয়ে নিয়মানুসারে একজন কর্মকর্তা একই পদে ৩ বছরের বেশি চাকরি করতে পারবেন না। এদিকে ইয়াকুব আলী ফকিরের

বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ তুলেছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এক সময় একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সভাপতি এবং ফরিদপুরের একটি ওয়ার্ডের মেম্বার/কমিশনার ছিলেন ইয়াকুব আলী ফকির। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় তিনি নিশ্চুপ থাকলেও জুলাই-আগস্টের পর একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের নেতা পরিচয়ে পুরো পূর্বাঞ্চল রেলে দাবড়ে বেড়াচ্ছেন। রেলে রাজনৈতিকভাবে নিজের ছবিসহ দলীয় প্রধানদের ছবি দিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন লাগাচ্ছেন। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাজেহাল-মারধরের অভিযোগ রয়েছে এ নেতার বিরুদ্ধে। তবে এ বিষয়ে শুক্রবার দুপুরে ইয়াকুব আলী ফকির বলেন, আমি এক সময় ছাত্রদল করতাম, ফরিদপুরে একটি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কমিশনারও ছিলাম। রেলে যোগদান করেছি ২০০৭ সালের মার্চের ২৮ তারিখে। আমি ১৭ বছর ধরে একই পদে আছি। আমার চাকরি জীবনে কোনো দিন রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা রেলের কোনো স্টাফের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। আমার বিপক্ষে সবই মিথ্যা বলা হচ্ছে। রেলে দুর্নীতি-লুটপাটের সঙ্গেও আমি জড়িত নই। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় রেলওয়ে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক এমআর মঞ্জু বলেন, আমরা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার পুরো রেলকে দুর্নীতি আর লুটপাটের হাতিয়ার বানিয়ে রেখেছিল। রেলে আর কখনো রাজনীতির নামে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাজেহাল হতে হবে না। ইয়াকুব আলী ফকিরের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। আমার জানা মতে তিনি অন্যায় কাজে লিপ্ত নন। তবে যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, নিশ্চয় বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তাছাড়া রেলে সরঞ্জাম চুরির সঙ্গে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী যে কেউ জড়িত থাকুক-তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এদিকে ২০২০ সালের জুন মাসে রেলের এক কর্মকর্র্তার সহযোগিতায় সেল ডিপো থেকে মালামাল চুরির সময় তিন চোরকে আটক করা হয়। পরে পাহাড়তলীর সেল ডিপোর ইনচার্জ উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ইউনুস, শফিকুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন ও আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেলের সরঞ্জাম দপ্তরে প্রায়ই এমন চুরির ঘটনা ঘটছে। প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মো. বেলাল হোসেন সরকার বলেন, আমার চাকরি জীবনে প্রথম (২৯ ডিসেম্বর ২০২৪) এ পদে যোগদান করেছি। আমার যোগদানের আগেই সরঞ্জাম চুরির ঘটনা ঘটেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
সালমান খানের বাড়ি থেকে বেরিয়ে কতটা বদলেছে সীমা সাজদেহের জীবন মিনি বাসচাপায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শ্রমিক নিহত, সড়ক অবরোধ রেলে নিজের ঘরেই ভয়াবহ চোরচক্র টস জিতে শুরুতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের হামাসের সঙ্গে তুর্কি গোয়েন্দা প্রধানের বৈঠক, যা নিয়ে আলোচনা সারা দেশে বৃষ্টির আভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সতর্কবার্তা ভিডিও প্রকাশ করল হামাস, বাঁচার আকুতি ইসরাইলি জিম্মির গাজায় নিহত ৫২, হামলা আরও জোরদারের নির্দেশ নেতানিয়াহুর সারা দেশে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মহাসমাবেশ আজ নীলফামারীতে হবে চীন সরকারের হাসপাতাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল সাধারণ সভায় প্রশ্নের মুখে এনসিপির কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতা শিঙাড়া খাওয়া নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী হারতে হারতে জিতে লা লিগার কর্তৃত্ব বার্সার হাতে বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তা উত্তরায় প্রকাশ্যে যুবককে তুলে নেওয়ার ভিডিও ভাইরাল পাকিস্তানে কেএফসিতে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ১, গ্রেপ্তার ১৭৮ ইস্টার সানডে উপলক্ষে ইউক্রেনে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা পুতিনের বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত বাংলাদেশের, বাদ ওয়েষ্ট ইন্ডিজ অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আজাদ আবুল কালাম, সাধারণ সম্পাদক অপু