সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে ঝুঁকি থাকবে – ইউ এস বাংলা নিউজ




সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে আন্দোলনের চেতনা বাস্তবায়নে ঝুঁকি থাকবে

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ১৯ নভেম্বর, ২০২৪ | ১০:৪৮ 11 ভিউ
‘শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়নি। হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য। সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার না করা এবং আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করলে, তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল চেতনা বাস্তবায়নে ঝুঁকি থেকে যাবে। মঙ্গলবার রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে দুর্নীতি বিরোধী আন্তর্জাতিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের ১০০ দিনের ওপর' পর্যবেক্ষণ তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি। টিআইবি বলছে, দায়িত্ব নেওয়ার পর বেশ কিছু ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এরমধ্যে বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ অন্যতম।

এসব পদক্ষেপ 'নতুন বাংলাদেশ' বিনির্মাণে সহায়ক হবে। তবে একত্রে সম্ভাবনার পাশাপাশি বেশ কিছু ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার কতটা দক্ষতা দেখাতে পারে, সেটি বিবেচ্য বিষয়। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান। টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ১০০ দিনে অন্তর্বর্তী সরকার অসংখ্য সময়োচিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকলেও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অগ্রগতি দৃশ্যমান। বিশেষ

করে কর্তৃত্ববাদী সরকারকর্তৃক সংঘটিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও বহুমাত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়াও ইতিবাচক পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে। আন্দোলনে আহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিত্সা সেবার উদ্যোগ, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো নিপীড়নমূলক আইন বাতিল, গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই, গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশন গঠন, রাষ্ট্র সংস্কারের মূল খাতগুলোকে চিহ্নিত করে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন, আর্থিক খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তনের সূচনা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আন্দোলনের চিরস্থায়ী স্বীকৃতি ও সম্মানের দৃষ্টান্ত হিসেবে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের পদক্ষেপ, পতিত সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ কর্তৃত্ববাদের দোসরদের দুর্নীতির জবাবদিহি প্রক্রিয়া ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে কৌশলগত পদক্ষেপ ইত্যাদি। তবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত অর্জন সম্ভব হয়নি। একইভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতিতেও ঘাটতি

দৃশ্যমান। বিদ্যমান সিন্ডিকেটের শেকড় অনেক গভীরে এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও চর্চার পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ।' টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর অর্পিত রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক সমঝোতার অভীষ্ট অর্জনের অবকাঠামো তৈরির বিশাল দায়িত্ব পালনে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় কৌশল ও রোডম্যাপ প্রণয়ন না করা, শিক্ষাখাত ও ব্যক্তি মালিকানাধীন খাতকে সংস্কার উদ্যোগে অর্ন্তভুক্ত না করা, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অ্যাডহক প্রবণতা লক্ষণীয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সংস্কারের উদ্যোগ আমরা দেখিনি। তা ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব সত্ত্বেও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রত্যাশিত পর্যায়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকার ঘাটতি এবং কোনো কোনো গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও হুমকি-হামলাসহ বন্ধ

করার তত্পরতা উদ্বেগের কারণ। ড. জামান বলেন, 'শুধু সরকার পরিবর্তনের জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়নি। হয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য। সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠিত কমিশনগুলোর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কার না করা এবং আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি না করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা হলে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মূল চেতনা ও অভীষ্ট বাস্তবায়নে ঝুঁকি থেকে যাবে। সরকারের দায়িত্ব হবে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে অর্পিত দায়িত্ব পালনে কৌশলগত রোডম্যাপ তৈরি করা।' 'নতুন বাংলাদেশ: কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী ১০০ দিনের ওপর পর্যবেক্ষণ' শীর্ষক টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, একদিকে রাষ্ট্র সংস্কার ও নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে 'নতুন বাংলাদেশ'

গড়ার অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়েছে। যেখানে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতার বহুমাত্রিক ভিত্তি ও অংশীজনের ভূমিকা রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। অন্যদিকে চলার পথে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি রয়েছে। অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বহুবিধ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ১০০ দিনে সংস্কার, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, গণ-অভু্যত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধের তদন্ত ও বিচার, আর্থিক খাত, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অংশ। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব বাস্তবায়নে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ প্রণয়ন করা হয়নি। আবার আন্দোলনে সংঘটিত সহিংসতার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ও তথ্য-প্রমাণভিত্তিক মামলা দায়ের করার উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। এ ছাড়া ঢালাওভাবে

মামলায় শত শত ব্যক্তিকে আসামি করায় মূল অপরাধীর উপযুক্ত বিচারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন, দুদক, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন পুনর্গঠনে চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে অ্যাডহক প্রবণতা, উপদেষ্টা পরিষদ গঠন ও দায়িত্ব বণ্টনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হয়েছে। প্রশাসন পরিচালনায় সরকারের দক্ষতা ও কর্মপরিকল্পনার ঘাটতি এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বশীলদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকাশ পেয়েছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর পরিবর্তন করা হয়েছে। প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের ক্ষেত্রে দলীয়করণের শেকড় অনেক গভীরে। ফলে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়া প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দখল ও আধিপত্য বিস্তারের সংস্কৃতি এখনো চলছে। একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী ও দলীয়করণের পরিবর্তে আরেকটি গোষ্ঠীর প্রতিস্থাপন বা হাতবদল হয়েছে বলে লক্ষ করা যায়। কর্তৃত্ববাদ পতনের ক্ষেত্রে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকলেও পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব সত্ত্বেও শানি্ত-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রত্যাশিত পর্যায়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের পক্ষ থেকে সংস্কারের ক্ষেত্রে সরকারকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়ার প্রশ্নে ধৈর্য্যর ঘাটতি লক্ষণীয়। রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ সংস্কার নিয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। এতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও রাষ্ট্র সংস্কারের মূল চেতনা ধারণের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। এছাড়া ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অভূপূর্ব বিকাশ ও প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। গণমাধ্যমের ওপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও হুমকি-হামলাসহ কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করার তত্পরতা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। কোনো কোনো মহলের অতিক্ষমতায়ন ও তার অপব্যবহার এবং চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অসাম্প্রদায়িক সমঅধিকারভিত্তিক ও বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের অভীষ্টের পথে অন্তরায়।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
লোকালয়ে ঢুকতেই রয়্যাল বেঙ্গলের উপর হামলা, নষ্ট হলো বাঘিনীর দু’টি চোখই নতুন সিইসির নাম বিএনপি-জামায়াতের প্রস্তাবে ছিল উপদেষ্টা আসবেন বলে… ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়ার গ্রাফিতিতে কালো রং, এরপর যা যা হলো ভারতে বাংলায় কথা বলায় নারীকে ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে হেনস্তা, অতঃপর… প্রথম দিন : শুরুর মতো হলো না বাংলাদেশের শেষটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে নিরাপদ থাকবে যেসব দেশ ‘ইস, সত্যি যদি মুগ্ধ না মারা যাইতো’ ছাত্রদলের হামলার প্রতিবাদে উত্তাল চট্টগ্রাম পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট নায়িকা পরীমনির প্রথম স্বামী নিহত জন্মদিন উদযাপনের সময় নিজের গুলিতে শিক্ষার্থী নিহত দেশে যার যা ইচ্ছা তাই করছে : নিলয় ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘন্টায় আরও ২ জনের মৃত্যু নতুন ইসির শপথ রোববার দুপুরে ডেঙ্গুতে গত ২৪ ঘন্টায় আরও ২ জনের মৃত্যু মিয়ানমারসহ ৫ দেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা ৪ দিনের সফরে ঢাকায় এলো মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল হোয়াটসঅ্যাপে যুক্ত হলো দারুণ একটি ফিচার মক্কায় যখন হামলা হয়েছিল বিপিএল মাতাতে আসছেন রাহাত ফতেহ আলী খান