৭২ এর সংবিধান বাঙালির মুক্তিসনদ – ইউ এস বাংলা নিউজ




৭২ এর সংবিধান বাঙালির মুক্তিসনদ

সামছুদ্দীন আজাদ, সহ-সভাপতি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৭ আগস্ট, ২০২৫ | ১১:৩৬ 24 ভিউ
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ নির্যাতন - ভারতবর্ষে প্রায় দুইশত বছর স্থায়ী ছিল, এরপর সর্বশেষ ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ ই আগস্ট ভারত নামে দুটি আলাদা রাষ্ট্রের জন্ম দিয়ে ব্রিটিশ শাসনের দুই শত বছরের যবনিকা টানেন। আমরা মুসলমানেরা কিছুটা স্বস্তি পেলাম এই ভেবে - আমরা পরাধীনতা থেকে মুক্ত হলাম, স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের স্বতন্ত্র পথচলা শুরু হলো। পাকিস্তান স্বাধীন হলেও আমরা পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হইনি, আমরা আবার নতুন করে পাকিস্তানের কলোনী রাষ্ট্রে পরিণত হলাম - ব্রিটিশ কায়দায় আমাদের শাসনের নামে শোষণ দমন পীড়ন শুরু করলো পাকিস্তান। শোষণ ছিল অর্থনৈতিক শোষণ, সামাজিক শোষণ, সংস্কৃতিক শোষণ।

বাঙালিরা ছিল মর্যাদায় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, সরকারের প্রশাসনে - আমলাতন্ত্রে, সামরিক আমলাতন্ত্রে কোন বাঙালির জায়গা হয়নি, একমাত্র বাঙালি তার মেধার কারণে কর্নেল পর্যন্ত হওয়ার সুযোগ ছিল তিনি হলেন - সম্মানিত কর্নেল এম এ জি ওসমানী। এমনকি পাকিস্তানিরা আমাদের মায়ের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি। আমার মায়ের ভাষা বাংলা কেড়ে নিয়ে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয়ার জন্য ঢাকায় কারফিউ জারি করে, জনতা কারফিউ ভেঙে বাংলা ভাষার দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করতে রাজপথে নামলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালির উপর গুলি চালায় রফিক শফিক বরকত সহ অসংখ্য বাঙালি কে হত্যা করে। জিন্নাহ ঢাকায় এসে বক্তৃতা দেয় - উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। থামানো

যায়নি বাঙালিকে, ১৯৭১ সালে আমরা বর্বর পাকিস্তানিদের পরাজিত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি, প্রতিষ্ঠিত করেছি মাতৃভাষা বাংলাকে - আর এই অর্জনে সফলতায় যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনিই হলেন সর্বকালের সেরা বাঙালি - জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি স্বাধীনতার মহানায়ক। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করে আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৯৪ হাজার মিলিটারিকে আত্মসমর্পণ করিয়ে - মুক্তিবাহিনী, ভারতীয় মিত্রবাহিনী, যৌথ বাহিনীর কাছে অস্ত্রসমর্পণ করে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করিয়ে বর্বর পাকিস্তানিদের পরাজয় নিশ্চিত করি। পাকিস্তানিদের এই পরাজয় মেনে নিতে পারেনি বাংলাদেশের কুখ্যাত রাজাকার জামাত, মুসলিম লীগ সহ বাংলাদেশে থাকা পাকিস্তানের দোসররা। পরবর্তীতে জামাত স্বাধীন বাংলাদেশে - বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী নামকরণ

করে রাজনীতি শুরু করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে - পাকিস্তানের পক্ষে, তারা তখন স্বাধীন বাংলাদেশ মেনে নেয়নি আজও মেনে নিতে পারেনি। আর যারা মুসলিম লীগ করতো - তারাও পাকিস্তানের দালাল হয়ে বাংলাদেশে রয়ে গেছে - পরবর্তীতে এই কুখ্যাত দালাল গুলি স্বৈরাচারী জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপিতে যোগ দেয়। আজও তারা বিএনপি করলেও পাকিস্তানের পক্ষে রাজনীতি করে, কারণ জিয়া ছিল পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৫ বছর পার হয়ে গেলেও সেই জামাত, মুসলিম লীগ বিএনপির সাথে একাকার হয়ে এ দেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানানোর পথে হাঁটছে। তারা এতদিন অপেক্ষা করেছিল - কখন সুযোগ আসবে শেষ ছোবল মারার। নিজেদের শক্তি কুলোয়নি বলে তাদের এই পথ চলার

সঙ্গী হিসেবে যুক্ত হয়েছে আবারো পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন - হিজবুত তাহেরী, লস্কর-ই তৈয়্যবা, হিন্দাল শারক্কিয়া, হরকতুল জিহাদ, ইসলামিক স্টেট, নিউ জামাত মুজাহেদীন সহ আরো অনেক জঙ্গি সংগঠনকে যুক্ত করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কূটনৈতিক ও আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে - বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা চালানো হয় ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে। এই জঙ্গিদের সাথে যুক্ত হয় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী, পুলিশের একাংশ সহ দেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আল বদর ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধী ও তাদের বংশধর। ক্ষমতা দখল করে তারা শীর্ষ পদে অর্থাৎ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে বসিয়ে দেন ড. ইউনূস নামক সাম্রাজ্যবাদের এক পদলহিকে - যিনি মূলত স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার এবং জঙ্গিবাদের শীর্ষ

নেতা। দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশ থেকে আওয়ামী লীগের সমস্ত নেতাকর্মীদের তাড়িয়ে দিয়েছে, যারা দেশে ছিল তাদের গ্রেফতার করেছে, আর যারা দেশের বাইরে যেতে পারেনি তাদেরকে জঙ্গি সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে, অসংখ্য নারীদের ধর্ষণ করেছে ১৯৭২ সালের কায়দায়, মানুষের ঘরবাড়ি লুটপাট করেছে, টাকা পয়সার সব কেড়ে নিয়ে গেছে, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে। এটি খুবই পরিষ্কার - তারা ১৯৭১ সালের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিচ্ছে স্বাধীনতার ৫৫ বছর পর - এই হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ তারই ধারাবাহিকতা। এরপর তাদের পরবর্তী এজেন্ডা আওয়ামী লীগ যা করেছে

- এদেশের জন্য সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দেবে - তাদেরকে সমর্থন করছে বিএনপি, লন্ডন বসে তারেক জিয়া নির্দেশ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা কে হত্যা করতে হবে, কোন নেতার বাড়িঘর ভাঙতে হবে, কোন নেতার বাড়িতে লুটপাট করতে হবে, কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি করতে হবে, কোথায় কোন নারীকে ধর্ষণ করতে হবে। জামাত, হিজবুত তাহেরি, বিএনপি মিলেমিশে এদেশকে পাকিস্তান বানাবে এটি অনেকটা নিশ্চিত। একে একে এই এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য - তারা প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিয়েছে ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করে দেবে, আমাদের জাতীয় সংগীত বাতিল করে দেবে, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সব চিহ্ন ভেঙে ফেলবে, আমাদের শহীদ মিনার ভেঙে ফেলবে, জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভেঙে ফেলবে, বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলেছে, এবার তারা হুংকার ছেড়েছে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধুর পবিত্র মাজার ভাঙবে, এরই মধ্যে জঙ্গি সন্ত্রাসীরা আর সেনাবাহিনী মিলে গত ১৬ ই জুলাই গোপালগঞ্জের সাধারণ নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালিয়েছে, সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে, শত শত মানুষকে পঙ্গু ও আহত করেছে, মানুষের ঘরবাড়ি লুটপাট করেছে, নারীদের নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে। এবার তারা ঘোষণা দিয়েছে পুরা গোপালগঞ্জের সব মানুষকে হত্যা করে গোপালগঞ্জকে জনশূন্য করে এটাকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলবে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢুকিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ জঙ্গি সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেবে। ওরা ১৯৭২ সালের সংবিধান বাতিল করে জুলাই সনদ নামে সন্ত্রাসের রোজনামচা তৈরি করে ফেলেছে। কোন সন্ত্রাসী নীতিমালায় তারা বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করবে। ১৯৭২ সালের সংবিধান বাঙালির হৃদয়ের ¯পন্দন, ৭২ এর সংবিধান বাঙালির মুক্তির সনদ, ৭২ এর সংবিধান আমার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ৭২ এর সংবিধান মানে ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ, ৭২ সংবিধান মানে তিন লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রম হারানোর মতো বেদনাবিদুর লোমহর্ষক নির্যাতনের ইতিহাস। ৭২ মানে ঐতিহাসিক ৬ দফা, ছাত্র জনতার ১১ দফা, ৭২ মানে ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি, ৭২ মানে আমার জাতীয় সংগীত রবি ঠাকুরের শ্রেষ্ঠ গান আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, ৭২ মানে মুক্তিযুদ্ধে সন্তানহারা মায়ের আর্তনাদ, ৭২ মানে নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ আর শরৎচন্দ্র, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ৭২ মানে কবি শামসুর রহমান, হুমায়ুন আজাদ, ৭২ মানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ। জাতির পিতার আজীবনের লালিত স্বপ্ন ছিল - গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। এই গণতন্ত্রের লড়াইয়ে সামিল হয়ে জীবন যৌবনের ১৩ টি বছর জেল জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন - শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার সোনার হরিণটি তিনি এনে দিয়েছেন এই বাঙালি জাতিকে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। যে মানুষটি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন শুধু বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য - শেষ পর্যন্ত তাকে আবারও কারাবরণ করতে হয় ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালো রাত্রিতে, একই সময় বর্বর পাকিস্তানিরা ঘুমন্ত বাঙালির উপর হামলা চালায় কোন কারন ছাড়াই। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্ব বাংলার অবিসংবাদিত নেতা - পূর্ব পাকিস্তানের গণমানুষের নেতা হিসেবে। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব বাংলার ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে বিজয় লাভ করে সারা পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা নির্বাচিত হন। যদি পাকিস্তানি স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন তাহলে সারা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানাতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, সেটা না করে ইয়াহিয়া খান, জুলফিকার আলী ভুট্টো, রাও ফরমান আলী, টিক্কা খান, মোনায়েম খানের মতো কুখ্যাত জল্লাদের পরামর্শে - আর গোলাম আজমের বিরোধীতার কারণে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতায় না বসিয়ে ক্ষমতা দেয়ার তালবাহানা করে যুদ্ধ শুরু করে দেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৬ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হিমাচলে বৃষ্টি ও ধসে প্রাণ গেল ১৯৯ জনের, নিখোঁজ ৩৬ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ অংশে ৪ কিলোমিটার যানজট ডেঙ্গুতে এক দিনে ৩ জনের মৃত্যু বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে ভারত সফরে আসছেন পুতিন ইরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপে ইউরোপের পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন পবিপ্রবির ডা. আবু সাঈদ চকরিয়ায় ইয়াবাসহ পাচারকারী গ্রেপ্তার সাবেক সিইসিসহ ৯ নির্বাচন কমিশনারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা নেত্রকোনায় মহিলা ক্রিকেটারদের মাঝে বাই-সাইকেল বিতরণ তরুণীর বিছানার নিচে সাপ, তারপর যা ঘটল… ৭২ এর সংবিধান বাঙালির মুক্তিসনদ স্ত্রীকে পিটিয়ে হত্যা : স্বামীর বাড়িতে আগুন বিক্ষুব্ধ জনতার শাহজালালে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া গেল সোয়া ৮ কেজি স্বর্ণ সুমাইয়া জাফরিন ৫ দিনের রিমান্ডে পাঁচ মাসে গাজা দখলের পরিকল্পনা নেতানিয়াহুর গোপনে রাশিয়ান ল্যাবে গিয়েছিলেন ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীরা চট্টগ্রামে ভেঙে দুই ভাগ হয়ে গেল সেতু রেকর্ড হারে কমলো জাপানের জনসংখ্যা মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট মিন্ট সোয়ে মারা গেছেন সাতসকালে সড়কে ঝরল ৩ প্রাণ