২০০ বারের বেশি সাপের ছোবল খাওয়া ব্যক্তির রক্ত থেকে তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিভেনম – ইউ এস বাংলা নিউজ




ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আপডেটঃ ৪ মে, ২০২৫
     ৪:০০ অপরাহ্ণ

২০০ বারের বেশি সাপের ছোবল খাওয়া ব্যক্তির রক্ত থেকে তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিভেনম

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ৪ মে, ২০২৫ | ৪:০০ 104 ভিউ
ইচ্ছাকৃতভাবে ২০০ বারের বেশি সাপের কামড় খেয়েছেন তিনি। গোখরাসহ বিশ্বের ভয়ংকর নানা সাপের বিষ ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে নিয়েছেন ৭০০ বারের বেশি। আলোচিত এই ব্যক্তির নাম টিম ফ্রিড। তিনি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। এক সময় ট্রাক মেরামত ছিল তার পেশা। পরে সাপ নিয়ে কাজ করা হয়ে যায় তার নেশা। শুরুতে তিনি নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে চেয়েছিলেন যাতে সাপ ধরার সময় তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন এবং নিজের এই কীর্তিকলাপ তিনি ভিডিও করে ইউটিউবে রেকর্ড করে রাখতেন। তিনি বিষ সংগ্রহ করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে মারাত্মক কিছু সাপ থেকে, যার মধ্যে রয়েছে একাধিক প্রজাতির মাম্বা, কোবরা, তাইপান ও ক্রেইট। বিজ্ঞানীরা বলছেন, টিম ফ্রিডের রক্তে এমন এক

ধরনের অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে যা মারাত্মক ধরনের বিষের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। টিমের রক্তে পাওয়া অ্যান্টিবডি প্রাণীদের ওপর পরীক্ষা করা হয়। ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে এই অ্যান্টিবডি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীকে সাপের বিষের মারাত্মক ডোজ থেকে রক্ষা করেছে। সাপের বিষ কাটাতে বর্তমানে যে থেরাপিগুলো প্রচলিত আছে তা নির্দিষ্ট প্রজাতির সাপের বিষ অনুযায়ী কাজ করে, অর্থাৎ কোনো ব্যক্তিকে যে সাপ কামড়েছে, সেই প্রজাতির সাপের জন্য তৈরি অ্যান্টিভেনমই দিতে হয়। ফ্রিডের ১৮ বছরের প্রচেষ্টা সব ধরনের সাপের কামড়ের বিরুদ্ধে একটি সার্বজনীন অ্যান্টিভেনম খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। টিম ফ্রিড বলছেন, আমি মারা যেতে চাইনি, আমার একটি আঙুলও হারাতে চাইনি।

কাজ করতে পারবো না এমন পরিস্থিতির শিকার হতে চাইনি আমি। প্রায় ১৮ বছর ধরে টিম ফ্রিড যে কাজ করছেন, তার ফলে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় একটি সার্বজনিন ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যেখানে সাপের কামড়ে প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজারেরও মতো মানুষের মৃত্যু হয় এবং এর তিনগুণেরও বেশি মানুষ অঙ্গ কেটে ফেলা বা স্থায়ী পঙ্গুত্বের শিকার হয়। ফ্রিড বলেন, তার লক্ষ্য ছিল বিশ্বের অন্যান্য মানুষের জন্য ভালো থেরাপি তৈরি করা। এটা একসময় আমার জীবনযাত্রার অংশ হয়ে যায়। আমি নিজেকে ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যেতে থাকি—তাদের জন্য, যারা আমার থেকে আট হাজার মাইল দূরে সাপের কামড়ে মারা

যাচ্ছে। তোমার রক্ত আমরা পেতে চাই বর্তমানে অ্যান্টিভেনম তৈরি করা হয় ঘোড়ার মতো প্রাণীদের শরীরে সাপের বিষের ছোট ছোট ডোজ ইনজেকশন দিয়ে প্রয়োগ করার মাধ্যমে। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেই বিষের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা সংগ্রহ করে থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বিষ এবং অ্যান্টিভেনমকে একে অন্যের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে হয়, কারণ একেক প্রজাতির সাপের বিষ একেক রকম হয়ে থাকে। আবার একই প্রজাতির সাপের মধ্যেও অঞ্চল ভেদে নানা বৈচিত্র্য থাকে, বিষে পার্থক্য থাকে—যেমন, ভারতের সাপ থেকে তৈরি অ্যান্টিভেনম শ্রীলঙ্কার সেই একই প্রজাতির সাপের বিরুদ্ধে কম কার্যকর। এই সমস্যার সমাধানে বিজ্ঞানীরা খুঁজতে থাকেন এমন এক ধরনের অ্যান্টিবডি যাকে বলে ব্রডলি নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি বলা

হয়—যা বিষের নির্দিষ্ট অংশ নয়, বরং সব ধরনের বিষে থাকা সাধারণ অংশগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করে। এই সময়ই সেন্টিভ্যাক্স নামের বায়োটেক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ড. জ্যাকব গ্লানভিল খোঁজ পান টিম ফ্রিডের। তিনি বলেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে ভাবলাম—বিশ্বে যদি কারও শরীরে এমন ব্রডলি নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে থাকে, তবে সেটা টিমের শরীরেই তৈরি হয়েছে। তাই আমি যোগাযোগ করলাম। প্রথম ফোনেই বললাম, বিষয়টা অদ্ভুত শোনালেও, তোমার কিছু রক্ত পেলে খুব ভালো হতো। টিম ফ্রিড রাজি হন এবং গবেষণাটি নৈতিক অনুমোদন পায়। কারণ এই গবেষণায় তাকে আর বিষ দেওয়া হয়নি, কেবল রক্ত নেওয়া হয়েছে। গবেষণাটি মূলত ইলাপিডস নামের বিষাক্ত প্রজাতির সাপের ওপর কেন্দ্রীভূত ছিল। ইলাপিডস হলো বিষধর

সাপের দুটি গোত্রের মধ্যে একটিতে অন্তর্ভুক্ত। যার মধ্যে রয়েছে কোরাল সাপ, মাম্বা, কোবরা বা গোখরা, তাইপান ও ক্রেইট। ইলাপিডসরা মূলত তাদের বিষে নিউরোটক্সিন ব্যবহার করে, যা তাদের শিকারকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পেশি স্থবির করে ফেলে যা ওই প্রাণীর মৃত্যুর কারণও হয়। গবেষকরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চিহ্নিত সবচেয়ে মারাত্মক ১৯টি ইলাপিডস প্রজাতির ওপর পরীক্ষা করেন এবং এই বিষের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে তারা ফ্রিডের রক্ত পরীক্ষা শুরু করেন। বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সেল’-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, তারা দুটি ব্রডলি নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি শনাক্ত করেছে, যা দুটি আলাদা নিউরোটক্সিন শ্রেণিকে লক্ষ্য করে কাজ করতে পারে। তৃতীয় একটি বিষের জন্য তারা ওষুধ যোগ

করে তৈরি করেন একটি অ্যান্টিভেনম ককটেল। ইঁদুরের ওপর করা পরীক্ষায় দেখা যায়, এই ককটেল ১৯ প্রজাতির বিষাক্ত সাপের মধ্যে ১৩টি সাপের মারাত্মক বিষ থেকে তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। বাকি ছয়টির বিরুদ্ধে আংশিক সুরক্ষা দিয়েছে। ড. গ্লানভিল বলেন, এই অ্যান্টিভেনম অতুলনীয়, কারণ এটি এমন বহু ইলাপিডস প্রজাতির সাপের বিরুদ্ধে কাজ করে, যেগুলোর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর অ্যান্টিভেনম নেই। গবেষক দলটি অ্যান্টিবডিগুলোকে আরও উন্নত করার চেষ্টা করছে এবং দেখছে যদি চতুর্থ একটি উপাদান যোগ করা যায়, তাহলে ইলাপিড প্রজাতির সাপের বিষের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে কি না। সাপের আরেকটি প্রজাতি হলো ভাইপার, যাদের বিষ সাধারণত হিমোটক্সিন হয়, যা রক্তকে আক্রমণ করে—এসব সাপের বিষ নিউরোটক্সিন নয়। সব মিলিয়ে সাপের বিষে প্রায় এক ডজন ভিন্ন ধরনের টক্সিন বা বিষাক্ত উপাদান থাকে, যার মধ্যে সাইটোটক্সিনও রয়েছে—যা সরাসরি কোষ ধ্বংস করে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক পিটার কোয়াং বলেন, আমার ধারণা, আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আমরা প্রতিটি শ্রেণির বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর কিছু পেয়ে যাব। এবং টিম ফ্রিডের রক্তের নমুনা নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে। অধ্যাপক কোয়াং আরও বলেন, টিমের অ্যান্টিবডিগুলো সত্যিই অসাধারণ—সে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শিখিয়েছে কীভাবে খুব বিস্তৃতভাবে বিষকে চিনতে হয়। চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো, এমন একটি একক অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যা সব বিষের বিরুদ্ধে কাজ করবে, অথবা ইলাপিডের জন্য একটি ইনজেকশন এবং ভাইপারের জন্য একটি ইনজেকশন। লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সাপের বিষ বিষয়ক গবেষণা ও চিকিৎসা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নিক কেসওয়েল বলেছেন, এই গবেষণায় সাপের কামড় থেকে সুরক্ষা পাওয়ার যে বিপুল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা মানুষের জন্য অনেক উপকারী হবে। এই পদ্ধতি অবশ্যই নতুন এবং এখন পর্যন্ত যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই অ্যান্টিভেনম তৈরির চেষ্টা সফল হওয়ার দৃঢ় সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে এখনো অনেক কাজ বাকি আছে এবং এই অ্যান্টিভেনম মানুষের ওপর ব্যবহারের আগে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রয়োজন। তবে টিম ফ্রিডের জন্য, এই পর্যায়ে আসা একটি আত্মতৃপ্তির বিষয়। তিনি বলেন, আমি মানবতার জন্য ভালো কিছু করছি এবং এটি আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি এতে গর্বিত। এ এক দারুণ অনুভূতি। তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
জুলাই সনদকে সংবিধানে ‘অটোপাস’ করার প্রস্তাব: আলী রিয়াজের ২৭০ দিনের বাধ্যবাধকতার বিরোধীতা বিএনপি’র আধুনিক ব্যালাস্টিক হেলমেটে সজ্জিত আরসা সদস্যরাঃ বৈদেশিক শক্তির সহয়তার আভাস অর্থনীতিতে বহুমুখী চাপ: ব্যয়ের লাগাম টানতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার কারাগারে চিকিৎসা না পেয়ে আরও এক বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু বাংলাদেশে হিন্দু-সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত উস্কানি: টিএমডি হ্যাশট্যাগ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে গণহত্যার প্রচারণা আদর্শের টানে পরিবার ছাড়লেন মুবিন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রীর আরাফাতের পিতা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সেতাব উদ্দীন নেই অসুস্থতার গুজব উড়িয়ে দিলেন শেখ হাসিনা; বললেন, ‘দেশকে উদ্ধার করতে হবে, মানুষকে উদ্ধার করতে হবে’ জয়ের সাক্ষাৎকার কী হবে আওয়ামী লীগের ? জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও স্বতন্ত্র এমপি জাহেদী চান বিএনপির মনোনয়ন ফেনীতে টেন্ডার না পেয়ে প্রকৌশলীর উপর বিএনপি নেতার হামলা-ভাংচুর নোয়াখালীর শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবদল ক্যাডার চান মিয়া অস্ত্রসহ গ্রেফতার ইউনূস সরকারের সমালোচনা করে ফেসবুকে রিল: গ্রেফতার ১৯ বছরের ছাত্রলীগ সদস্য ফাইজা সকল নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলো যুবলীগ আসিয়ান সম্মেলনে চীন মুক্ত বাণিজ্য এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধাতে এনসিপি নেতার পরামর্শে নাটক সাজান মুফতি মহিব্বুল্লাহ মেট্রোরেল বন্ধের প্রভাবে রাজধানী জুড়ে তীব্র যানজট ঢাবি শিক্ষার্থীদের ‘মেরে ঠ্যাং ভেঙে’ দেওয়ার হুমকি দিলেন শিবিরপন্থী ডাকসু সদস্য সর্বমিত্র চাকমা অপহরণের নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করলেন মুফতি মুহিব্বুল্লাহ! বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, ‘খুনি-ফ্যাসিস্ট ইউনূস গং-এর’ পতন নিশ্চিতের নির্দেশ