সেজ্জিল-২: যে ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দুঃস্বপ্ন – ইউ এস বাংলা নিউজ




সেজ্জিল-২: যে ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দুঃস্বপ্ন

ডেস্ক নিউজ
আপডেটঃ ২৪ জুন, ২০২৫ | ৭:১৮ 43 ভিউ
ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সম্প্রতি নতুন মাত্রা পেয়েছে। ট্রু প্রমিজ-৩ অভিযানের দ্বাদশ পর্বে ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোর আইআরজিসি প্রথমবারের মতো শক্তিশালী সেজ্জিল-২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ ইরানের আকাশসীমায় এক রহস্যময় দৃশ্যের অবতারণা করেছিল, যা তেহরানসহ কেন্দ্রীয় ইরানের বাসিন্দাদের কৌতূহল বাড়িয়ে দেয়। গত বুধবার সন্ধ্যায় যখন নতুন প্রজন্মের এই ক্ষেপণাস্ত্রটি রাতের আকাশে উড়ে যায়, তখন তেহরান এবং অন্যান্য প্রদেশের বাসিন্দারা এক চলমান আলোর বিন্দু দেখতে পান, যার পেছনে ছিল সাপের মতো ধোঁয়ার কুন্ডলী। এক পর্যায়ে, এই উজ্জ্বল বস্তুটি একটি অগ্নিগোলকে রূপান্তরিত হয় এবং তার গতিপথে এগিয়ে যায়, আকাশে এঁকে দেয় এক কোবরার মতো বক্রপথ। অজানা এই দৃশ্য দেখে উৎসুক জনতা

প্রথমে ধারণা করেন এটি হয়তো ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র, কোনো শত্রু ক্ষেপণাস্ত্র, অথবা এমনকি কোনো প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন উল্কাপাত হতে পারে। তবে এর পশ্চিমমুখী গতিপথ দ্রুতই সত্য উন্মোচন করে। এটি ছিল ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র, যা ট্রু প্রমিজ-৩ এর অভিযানের অংশ। সামরিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, একটি দুই-পর্যায়ের সেজ্জিল-২ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এই আলো সৃষ্টি করেছিল। বিশেষ করে এর প্রথম পর্যায়ের জ্বালানি শেষ হওয়ার পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এই দৃশ্য তৈরি হয়। আইআরজিসির জনসংযোগ দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে ট্রু প্রমিজ-৩ অভিযানের দ্বাদশ পর্ব অতি ভারী, দীর্ঘ পাল্লার, দুই-পর্যায়ের সেজ্জিল ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের মাধ্যমে শুরু হয়েছিলো। সেজ্জিলের বৈশিষ্ট্য তাহলে কী এমন জিনিস সেজ্জিলকে বর্তমান ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর মধ্যে অতুলনীয় করে

তুলেছে? আইআরজিসি মুখপাত্র মেজর জেনারেল মোহসেন রেজাই বলেছেন, সুপারহেভি সেজ্জিল এবং হাইপারসনিক ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বয়ে এই হামলা চালানো হয়। এতে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাঘাত ঘটে। ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্রটি অত্যন্ত তাপ-প্রতিরোধী বিশেষ উপকরণ দিয়ে তৈরি একটি নির্ভুল-নির্দেশিত, দুই-পর্যায়ের, কঠিন-জ্বালানি চালিত রকেট। এর পাল্লা ১,৪০০ কিলোমিটার এবং চূড়ান্ত গতি ১৩ থেকে ১৫ ম্যাকের মধ্যে। এই গতি এবং এর নমনীয় অগ্রভাগ যা বায়ুমণ্ডলের ভিতরে ও বাইরে সম্পূর্ণ দিকনির্দেশক চালচলন সক্ষম করে। এটি সহজেই বিশ্বের বিদ্যমান ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকেজো করে ফেলতে পারে। ফাত্তাহ-১ প্রায় ১,০০০ কেজি ওজনের একটি ওয়ারহেড বহন করে, যার মধ্যে ৩৫০-৪৫০ কেজি বিস্ফোরক পেলোড থাকে। যদিও ফাত্তাহ-১ এবং আপগ্রেড করা ফাত্তাহ-২ একটি

২০০ কেজি হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকেলে সাজানো। উভয়ই শক্তিশালী অস্ত্র, তবে স্কেল এবং পেলোডের দিক থেকে এগুলি সেজ্জিল-২ এর সাথে তুলনীয় নয়। ফাত্তাহ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১১.৫ মিটার দীর্ঘ, ৮০ সেমি ব্যাসের এবং এর মোট ওজন ৪ থেকে ৪.৬ টন। অন্যদিকে, সেজ্জিল-২ ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পূর্ববর্তী প্রজন্মের উপর ভিত্তি করে বানানো। এটি আরও বেশি বিশাল এবং শক্তিশালী। এটি ১৮ মিটার দীর্ঘ, ১.২৫ মিটার ব্যাসের এবং এর উৎক্ষেপণ ওজন ২৩.৬ টন, যা ফাত্তাহের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি। লক্ষ্যের দূরত্বের উপর নির্ভর করে সেজ্জিল-২ প্রায় ৭০০ কেজি পেলোড ২,০০০ কিলোমিটার পাল্লায় বা প্রায় ১.৫ টন পেলোড ১,০০০ কিলোমিটারের কম পাল্লায় সরবরাহ করতে পারে।

ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করার মাত্র দুই দিন আগে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী দুই-টন ওয়ারহেডসহ একটি ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষার ঘোষণা দিয়েছিলেন। যদিও তখন নির্দিষ্ট করে ক্ষেপণাস্ত্রটির নাম জানানো হয়নি। এটি সম্ভবত সেজ্জিল বা খোরামশাহর (খেইবার) ক্ষেপণাস্ত্র ছিলো বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা ইরানের সুপারহেভি শ্রেণির আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্র। ইরানের ব্যালিস্টিক কর্মসূচির বিবর্তন শাহাব-৩ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগে জ্বালানি ভরতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় নেয়। ২০০৯ সালের শেষ নাগাদ এরই একটি উন্নত সংস্করণ আনা হয়। যার নাম সেজ্জিল-২। এতে নির্ভুলতা বাড়ানোর জন্য নিয়ন্ত্রণ পাখাসহ একটি বিচ্ছিন্ন করার যায় এমন দ্বিতীয় পর্যায় ছিল। সেজ্জিল-২ একমাত্র দুই-পর্যায়ের ক্ষেপণাস্ত্র যা ইরানের দেশীয়ভাবে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদিত হয়। উভয় পর্যায় কঠিন

জ্বালানি চালিত হওয়ায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্রাগারে সেজ্জিল-২ বিশেষ জায়গা পেয়ে থাকে। উড্ডয়নের সময় প্রথম পর্যায়ের জ্বালানি শেষ হওয়ার পর একটি ছোট বিস্ফোরণ এটিকে দ্বিতীয় পর্যায় থেকে বিচ্ছিন্ন করে। যার ইঞ্জিন তখন জ্বলে ওঠে। এই প্রক্রিয়াটিই গত বুধবার সন্ধ্যায় তেহরান জুড়ে দেখা নাটকীয় দৃশ্য তৈরি করে। প্রায় দুই দশক ধরে উৎপাদনে থাকা সত্ত্বেও সেজ্জিল-২ এর আগে আইআরজিসি ব্যবহার করেনি। এই ক্ষেপণাস্ত্রের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর অত্যন্ত ভারী ওয়ারহেড। যা কয়েকশো মিটারের ব্যাসার্ধের মধ্যে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাতে সক্ষম। এটি সুরক্ষিত সামরিক স্থাপনা এবং অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করার জন্য আদর্শ। সেজ্জিল-২ একটি মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রিএন্ট্রি ভেহিকেল সিস্টেম বহন করতে পারে। যা এটিকে একক হামলায় একাধিক

শক্তিশালী ওয়ারহেড বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ছোঁড়ার সক্ষমতা দেয়। আরেকটি মূল শক্তি হলো এর বর্ধিত পাল্লা, যা এটিকে ইরানের প্রায় যেকোনো স্থান থেকে উৎক্ষেপণের করার সমর্থ দেয়। সূত্র: প্রেস টিভি

সংশ্লিষ্ট সংবাদ:


শীর্ষ সংবাদ:
দেশের ৬৪ জেলায় হবে ‘মডেল মন্দির’ মধ্যপ্রাচ্য কাঁপাচ্ছে ইসরায়েল, বড় দ্বিধায় সৌদি-আমিরাত নেপালের নতুন প্রধানমন্ত্রীর স্বামী ১৯৭৩ সালে বিমান ছিনতাই করেছিলেন ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড কীভাবে সহ্য করছে আমিরাত? শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল রাশিয়ার পূর্ব উপকূল মেট্রোরেলের টিকিট ব্যবস্থাপনায় ঠিকাদার নিয়োগে নয়ছয় সাবেক ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম গ্রেপ্তার সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে যেসব অঞ্চলে জাকসু নির্বাচনে আরেক কমিশনারের পদত্যাগ সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে হস্তান্তর করল বিএসএফ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড কীভাবে সহ্য করছে আমিরাত? ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, তেল আবিবে বেজে উঠল সাইরেন এবার ইসরাইলি কূটনীতিককে তলব করল স্পেন দরপত্র ছাড়াই ২ কোটি ৬৬ লাখ টাকার কাজ সম্পন্ন সেই অধ্যক্ষ লুটে নিলেন ৫ কোটি টাকা ৩৮৯ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় আনতে তিন চ্যালেঞ্জ চট্টগ্রামে দখল চাঁদাবাজি নিয়ে খুনোখুনি বাড়ছে দখলদাররা গিলে খাচ্ছে কীর্তনখোলা নদী ছাত্র-জনতাকে জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদলেন ইউএনও