
ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র, সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে জাতিসংঘের সম্মেলন কি ভূরাজনীতিকে প্রভাবিত করবে?

জাহেলি যুগে আরবের দীর্ঘতম যুদ্ধ

ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতিতে ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা: বদিউল আলম

যে কালসাপ লালন-পালন করেছেন এতকাল এখন কেন তার ভয়ে ভীত ডা. জাহেদ?

শেখ হাসিনার ১৬ বছরের তিলে তিলে গড়ে উঠা শেয়ার বাজারের ২৫% এক বছরে ধ্বংস করেছে ইউনূস

মন্ত্রীদের জন্য ৬০ পাজেরো কিনছে সরকার: বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞদের চোখে ‘লুটপাটের উৎসব’
সংস্কৃতি চর্চায় উগ্রবাদের বিরোধ

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে সবচেয়ে সংকটময় সময় পার করছি আমরা। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক মহাপ্রলয়ে ঢুকে গেছে দেশ। আইনশৃঙ্খলার চূড়ান্ত অবনতির ফলে এখানে স্বাভাবিক জীবনযাপন করাটাই এখন বিস্ময়কর। গণমাধ্যমে চোখ বুলালেই রোজকার খবর- খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি লুটপাট, সংঘর্ষ-সংঘাত ও মব সন্ত্রাস মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলছে। মানবাধিকারের পরিস্থিতিও ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তা সম্ভব না হলেও সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর দৃষ্টিতে বাংলাদেশের মানুষ বেশ শান্তিতেই রয়েছে। কেননা এখানে এখন শান্তিতে নোবেল জয়ী একজন শাসক রয়েছেন, যার উপর ভরসা করে আমরা স্বর্গের স্বাদ উপভোগ করছি। ভোগ-উপভোগের মাঝখানে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে সাংস্কৃতিক সম্ভোগ।
দমবন্ধ করা নৈরাজ্যবাদের উত্থান এবং
এক বিরুদ্ধ পরিবেশে মানুষ যখন তার স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দিহান, সন্দিহান স্বাভাবিক জীবন যাপন প্রসঙ্গে, সেসময় সংস্কৃতি চর্চার কথা তোলাটাও পরিহাস ব্যতিত কিছু নয়! তবুও কিছু কথা না বললেই নয়। এই অস্থিতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সুখহীন মানবসমাজ নৈরাজ্যের দরুন খেই হারিয়ে ফেলছে। এমন দুঃসময়েই আমাদের মাঝে সংস্কৃতি চর্চার বিতর্ক হাজির করানো হয়েছে। এই বিতর্ক যে একদিনের এমনটাও নয়। শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে মৌলবাদের আপোসকামীতা এই আস্ফালনের জন্য বিশেষভাবে দায়ি। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রত্যেক শাসকই অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পরিবর্তে পাকিস্তানী মননকাঠামোয় মৌলবাদীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। ভোটের রাজনীতিতে ধর্মের ট্রামকার্ড খেলে দেশকে পৌঁছে দিয়েছে আফগানিস্তানের কাছাকাছি। যার ফলে ‘আমরা হব আফগান, বাংলা
হবে বাংলাস্তান’র মিশন খুব জোর গতিতেই এগিয়েছে। আমরা দেখছি, গত কয়েক দিন থেকেই দেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলন চলাকালেই কিছুদিন আগে প্রকাশিত এক দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনের কথা মনে হলো। ‘বণিক বার্তা’র প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, বাংলাদেশে বাদ্যযন্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের হার শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কমে গিয়েছে। বাংলাদেশে বাদ্যযন্ত্রের বাজারের আকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, “সংশ্লিষ্টদের ধারণা, স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে এ বাজারের আকার প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। গিটার, পিয়ানো, হারমোনিয়াম, ড্রাম সেটসহ অন্তত ১২ ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাংলাদেশ আমদানি করে। এছাড়া ভারত থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে তবলা ও ঢোলসহ
বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র দেশের বাজারে প্রবেশ করে। জার্মানভিত্তিক অনলাইন পরিসংখ্যান ও বাজার গবেষণা প্লাটফর্ম স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বাদ্যযন্ত্র বাজারের আকার ৬৩৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)।” সংশ্লিষ্ট অনেকে এ অংককে বাজারের প্রকৃত আকারের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করেন। বাদ্যযন্ত্র বিক্রেতারা দাবি করেছেন, বর্তমানে বিক্রি ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। আগে যেখানে দিনে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি হতো, এখন ৩০ হাজার টাকার বিক্রি করতেও কষ্ট হয়। কারো কারো মতে বিক্রি কমেছে ৭০%। প্রতিবেদন থেকে অনুমেয় দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির যুদ্ধে
যে বেহাল দশা শুরু হয়েছিল, তা আজ সর্বনাশায় রূপ নিয়েছে। আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’ প্রবন্ধটি যারা পাঠ করেছেন, তারা জানেন বাঙালির সংস্কৃতি চর্চার হালহকিকত। তিনি বলেছিলেন, “সংস্কৃতি নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ‘আজকালি বড়ো গোল’ দেখা যায়। প্রতিপক্ষ ছাড়া কোনো তর্ক তেমন জমে না, সংস্কৃতি-বিষয়ে কথাবার্তায় একটি শত্রুপক্ষ জুটে গেছে, এই শত্রুবরের নাম ‘অপসংস্কৃতি’’। এই অপসংস্কৃতির বদৌলতে সংস্কৃতি চর্চায় মৌলবাদীদের বিরুদ্ধাচরণও জোরালোভাবে পালে হাওয়া যুগিয়েছে। সর্বদা বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী এই জনগোষ্ঠী সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতাবলেয়র খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠায় তাদের তৎপরতাও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। আমরা দেখেছি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের নানা প্রান্তরের সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পকলা একাডেমি,
পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে হামলার খবর এসেছে বারবার। একইসঙ্গে মুক্তমনা মানুষদের ওপর আক্রমণ, বাংলা একাডেমিতে বইমেলার স্টল বন্ধ করে দেয়া, শিল্পকলাতে নাটক দেখানো বন্ধ করাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লালন উৎসব, নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে বাধা প্রদান করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক ও নাট্যকর্মীদের ওপর হামলা-মামলাও হচ্ছে । বিভিন্ন মাজারে বাউলগানসহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মেলা। ধ্বংস করা হয়েছে অসংখ্য মাজার। সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বাড়িঘরে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড বৈধ করতে উগ্রবাদীদের বলা হচ্ছে ‘তৌহিদি জনতা’ ও ‘ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমাজ’র ঈমান রক্ষার লড়াই। ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদে আক্রান্তদের দেয়া হচ্ছে ‘ইসলাম বিরোধী’ ‘নাস্তিক’ ও ‘অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড’র ট্যাগ। ভয়ঙ্কর মবোক্রেসির এই সময়ে এসব ট্যাগ
মুহূর্তেই পরিস্থিতিকে পৌঁছে দিচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিণতির দিকে। যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রধানতম প্রতিবন্ধকতায় রূপ নিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের জীবন ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। নিজের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। নিজ গ্রামের নতুন প্রজন্মের মাঝে বইপাঠ ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য গড়ে তুলেছিলাম ‘প্রজন্ম সমাজ-সংস্কৃতি কেন্দ্র’ নামে একটি পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। জুলাইয়ে বর্তমান নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি অংশ এখানে আক্রমণ করেছিল। জুলাই পরবর্তীতে এটি দখল করেছিল ছাত্রদল। বিভিন্নজনের সহযোগিতায় দখলমুক্ত করে আমরা পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেটাও আর অব্যহত রাখা সম্ভব হয়নি। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ব্যহত করতে বই ও বাদ্যযন্ত্র চুরি করানো হয়েছে। সেই সঙ্গে হুমকি দেয়া হয়েছে ধর্মবিরোধী ট্যাগের। ‘নাস্তিক ও ইসলাম বিরোধী’ অপবাদ দিয়ে মব উস্কে দেয়ার ষড়যন্ত্রের ভেতরেই আমাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। অন্যথায় সেখানে কি ঘটতো পাঠকমাত্রই অনুমান করুন। এমন কাহিনী কম বেশি সকলেরই। এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে গত কয়েক দশক থেকে প্রচার হয়ে আসা “সাংস্কৃতিক চর্চা ধর্ম বিরুদ্ধ কিংবা ধর্মের পরিপন্থী কাজ” প্রতিরোধের ক্ষেত্রকে প্রস্তুত করেছে। বিগত সময়ে এরূপ প্রচার-প্রচারণা সর্বস্থানেই ছিল। বর্তমানে সেই প্রচার-প্রচারণার ফল প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। মৌলবাদীদের এই প্রচারণা বিফলে যায়নি তা বর্তমান বাস্তবতায় আমরা দেখছি। নাটক, যাত্রাপালা, কনসার্ট, স্টেজ শো ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেভাবে গত কয়েক দশক থেকে কমতে শুরু করে আজ শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাচ্ছে, তা মাত্র এক দুই বছরের বিষয় নয়। এই এক দুই বছর শুধুমাত্র মৌলবাদীদের ফসল তুলবার সময় এবং ফসল ভোগ করবার ক্ষেত্র প্রস্তুতের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। যার ফলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আক্রমণ হলেও দেশের মুসলিম অধ্যুষিত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে কোনো প্রতিবাদ বা কোনো প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এও লক্ষ্যনীয়, সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে দেশে, অনানুষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক সংগীত, নাট্য ও নৃত্যকলার চর্চা আজ অনেক বেড়েছে। কিন্তু এই তিন ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া খুব দুরূহ। সৃজনশীলতার চেয়ে পূর্বের সৃজনকর্মকে বিনষ্ট করার চেষ্টা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঙ্গীত, নাট্য ও নৃত্যকলার যা-কিছু আজও মানুষকে, বিশেষভাবে মধ্যবিত্তসমাজের মানুষক স্পর্শ করে তার প্রায় সবটাই আগেকার রচনা। সেসবকেও বিলিন করে দিচ্ছে আধুনিক এই ভার্চুয়াল সংস্কৃতি। টিকটক, রিলসের নামে অশ্লীলতা, ভাড়ামি ও সংস্কৃতির বিকৃতিকরণের উৎসবে মেতে উঠেছে নতুন প্রজন্ম। প্রজন্মের এই অবনতিকে পুঁজি করে সাংস্কৃতিক চর্চা বিরোধী গোষ্ঠীর উত্থানের পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। সুস্থধারার সাংস্কৃতিক চর্চার সংকট, মৌলবাদীদের বিরুদ্ধাচরণ সব মিলিয়ে সংস্কৃতিকেই নির্বাসনে পাঠানোর আয়োজন চলছে মহাসমারোহে। এ কথা সত্য, জাতির সংস্কৃতিবিমুখতায় সাংস্কৃতিক চর্চা ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। হারিয়ে গেছে অনেক সাংস্কৃতিক পালা-পার্বন। সংস্কৃতির মেলবন্ধনে চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির যে সৌন্দর্যবোধ ছিল তাও হ্রাস পেতে শুরু করেছে আশি-নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকেই। সুস্থ ধারার সংস্কৃতিমুখীকরণের অভাবে সাংস্কৃতিক, সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার সংকট ডেকে এনেছে। অবক্ষয়ের স্রোতে দেশের তরুণ সমাজও হয়ে উঠেছে বিপথগামী। এদের বড় একটি অংশ যেমন উশৃঙ্খল হয়েছে, তেমনি আরেকটি অংশ জড়িয়ে পড়েছে মৌলবাদী দর্শনে। এমন সব নানা জটিলতায় সংকুচিত হয়ে পড়ছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন। যার বদৌলতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আক্রমণ বেড়েছে অধিকতরভাবে। এই আক্রমণকারী গোষ্ঠী নিজেদের ধার্মিক পরিচয় দিলেও, তারা ধর্মপ্রাণ মানবিক মানুষ নন। তারা ধর্মান্ধ এবং অনেকাংশেই অবিবেচনাপ্রসূত অবিবেচক ও অমানুষ। তাদের সংস্কৃতিই হচ্ছে ‘সৃষ্টি নয় ধ্বংস করা’। এরা মূলত ধ্বংস করতেই পছন্দ করে। অন্যকে ধ্বংস করতে করতে তারা নিজেরাই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, এই ভাবান্তর তাদের নেই। ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধে মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন “ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জিত লোকের ধর্ম। কালচার মানে উন্নততর জীবন সম্বন্ধে চেতনা–সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রেম সম্বন্ধে অবহিতি। সাধারণ লোকেরা ধর্মের মারফতেই তা পেয়ে থাকে। তাই তাদের ধর্ম থেকে বঞ্চিত করা আর কালচার থেকে বঞ্চিত করা এক কথা”। মৌলবাদীরা এর সঙ্গে একমত নন, তারা তাদের ধর্মমত সবার ওপরে চাপিয়ে দিতেই ব্যস্ত। অন্যদিকে সংস্কৃতিবান মানুষেরা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা কোনো মতবাদ বা দর্শন জোর করে চাপিয়ে দেয়ার পক্ষে নন। তারা জানেন, ধর্ম মানে শৃঙ্খলিত জীবন। মোতাহার হোসেন চৌধুরীর ভাষায়, ‘মার্জিত আলোকপ্রাপ্তরা কালচারের মারফতেই নিজেদের নিয়ন্ত্রিত করে। বাইরের আদেশ নয়, ভেতরের সূক্ষ্মচেতনাই তাদের চালক, তাই তাদের জন্য ধর্মের ততটা দরকার হয় না। বরং তাদের উপর ধর্ম তথা বাইরের নীতি চাপাতে গেলে ক্ষতি হয়। কেননা তাতে তাদের সূক্ষ্ম চেতনাটি নষ্ট হয়ে যায়, আর সূক্ষ্ম চেতনার অপর নাম আত্মা”। আর এই আত্মা বিনষ্টকারীরাই মৌলবাদী। প্রচলিত ধর্মকে আশ্রয় করে তারা স্বীয় স্বার্থ হাসিল করে। তাদের এই অপতৎপরতা রুখতে সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছাড়া এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা ছিল আমাদের, সেই অসাম্প্রদায়িক, সর্বজনীন সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। সেক্যুলারিজমের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রুখে দিতে হবে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে। অশুভ এই সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করা যাবে, নতুবা নয়। এটা করা না গেলে সাম্প্রদায়িকতা আরও অসহিষ্ণু ও সহিংস হয়ে উঠবে। যার উদাহরণ আমরা ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক জ্যান্ত ও মৃত মানুষের লাশ পোড়ানোর পৈশাচিক আনন্দের ভেতর দিয়ে দেখতে পেয়েছি। এখনই এর বিরুদ্ধে জেগে না উঠলে আমাদের এই ভয়ঙ্কর পরিণতিকেই আলিঙ্গন করতে হবে।
এক বিরুদ্ধ পরিবেশে মানুষ যখন তার স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নিয়ে সন্দিহান, সন্দিহান স্বাভাবিক জীবন যাপন প্রসঙ্গে, সেসময় সংস্কৃতি চর্চার কথা তোলাটাও পরিহাস ব্যতিত কিছু নয়! তবুও কিছু কথা না বললেই নয়। এই অস্থিতিশীল রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সুখহীন মানবসমাজ নৈরাজ্যের দরুন খেই হারিয়ে ফেলছে। এমন দুঃসময়েই আমাদের মাঝে সংস্কৃতি চর্চার বিতর্ক হাজির করানো হয়েছে। এই বিতর্ক যে একদিনের এমনটাও নয়। শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে মৌলবাদের আপোসকামীতা এই আস্ফালনের জন্য বিশেষভাবে দায়ি। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রত্যেক শাসকই অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের পরিবর্তে পাকিস্তানী মননকাঠামোয় মৌলবাদীদের সঙ্গে আঁতাত করেছে। ভোটের রাজনীতিতে ধর্মের ট্রামকার্ড খেলে দেশকে পৌঁছে দিয়েছে আফগানিস্তানের কাছাকাছি। যার ফলে ‘আমরা হব আফগান, বাংলা
হবে বাংলাস্তান’র মিশন খুব জোর গতিতেই এগিয়েছে। আমরা দেখছি, গত কয়েক দিন থেকেই দেশের ধর্মভিত্তিক দলগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলন চলাকালেই কিছুদিন আগে প্রকাশিত এক দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনের কথা মনে হলো। ‘বণিক বার্তা’র প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, বাংলাদেশে বাদ্যযন্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের হার শতকরা পঞ্চাশ ভাগ কমে গিয়েছে। বাংলাদেশে বাদ্যযন্ত্রের বাজারের আকার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, “সংশ্লিষ্টদের ধারণা, স্থানীয় উৎপাদন ও আমদানি মিলিয়ে এ বাজারের আকার প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা। গিটার, পিয়ানো, হারমোনিয়াম, ড্রাম সেটসহ অন্তত ১২ ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাংলাদেশ আমদানি করে। এছাড়া ভারত থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে তবলা ও ঢোলসহ
বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র দেশের বাজারে প্রবেশ করে। জার্মানভিত্তিক অনলাইন পরিসংখ্যান ও বাজার গবেষণা প্লাটফর্ম স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বাংলাদেশের বাদ্যযন্ত্র বাজারের আকার ৬৩৫ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৭ হাজার ৮১১ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২৩ টাকা হিসাবে)।” সংশ্লিষ্ট অনেকে এ অংককে বাজারের প্রকৃত আকারের তুলনায় অনেক বেশি বলে মনে করেন। বাদ্যযন্ত্র বিক্রেতারা দাবি করেছেন, বর্তমানে বিক্রি ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। আগে যেখানে দিনে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি হতো, এখন ৩০ হাজার টাকার বিক্রি করতেও কষ্ট হয়। কারো কারো মতে বিক্রি কমেছে ৭০%। প্রতিবেদন থেকে অনুমেয় দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিস্থিতি খুব ভালো নয়। সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির যুদ্ধে
যে বেহাল দশা শুরু হয়েছিল, তা আজ সর্বনাশায় রূপ নিয়েছে। আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘সংস্কৃতির ভাঙা সেতু’ প্রবন্ধটি যারা পাঠ করেছেন, তারা জানেন বাঙালির সংস্কৃতি চর্চার হালহকিকত। তিনি বলেছিলেন, “সংস্কৃতি নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ‘আজকালি বড়ো গোল’ দেখা যায়। প্রতিপক্ষ ছাড়া কোনো তর্ক তেমন জমে না, সংস্কৃতি-বিষয়ে কথাবার্তায় একটি শত্রুপক্ষ জুটে গেছে, এই শত্রুবরের নাম ‘অপসংস্কৃতি’’। এই অপসংস্কৃতির বদৌলতে সংস্কৃতি চর্চায় মৌলবাদীদের বিরুদ্ধাচরণও জোরালোভাবে পালে হাওয়া যুগিয়েছে। সর্বদা বাঙালি সংস্কৃতি বিরোধী এই জনগোষ্ঠী সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতাবলেয়র খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠায় তাদের তৎপরতাও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। আমরা দেখেছি, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের নানা প্রান্তরের সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিল্পকলা একাডেমি,
পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে হামলার খবর এসেছে বারবার। একইসঙ্গে মুক্তমনা মানুষদের ওপর আক্রমণ, বাংলা একাডেমিতে বইমেলার স্টল বন্ধ করে দেয়া, শিল্পকলাতে নাটক দেখানো বন্ধ করাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লালন উৎসব, নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনে বাধা প্রদান করা হয়েছে। সাংস্কৃতিক ও নাট্যকর্মীদের ওপর হামলা-মামলাও হচ্ছে । বিভিন্ন মাজারে বাউলগানসহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মেলা। ধ্বংস করা হয়েছে অসংখ্য মাজার। সংখ্যালঘু ও ভিন্নমতাবলম্বীদের বাড়িঘরে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড বৈধ করতে উগ্রবাদীদের বলা হচ্ছে ‘তৌহিদি জনতা’ ও ‘ধর্মপ্রাণ মুসলমান সমাজ’র ঈমান রক্ষার লড়াই। ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদে আক্রান্তদের দেয়া হচ্ছে ‘ইসলাম বিরোধী’ ‘নাস্তিক’ ও ‘অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড’র ট্যাগ। ভয়ঙ্কর মবোক্রেসির এই সময়ে এসব ট্যাগ
মুহূর্তেই পরিস্থিতিকে পৌঁছে দিচ্ছে যুদ্ধক্ষেত্রের পরিণতির দিকে। যা দেশের স্থিতিশীলতার জন্য প্রধানতম প্রতিবন্ধকতায় রূপ নিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের সাংস্কৃতিক কর্মীদের জীবন ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। নিজের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ না করলেই নয়। নিজ গ্রামের নতুন প্রজন্মের মাঝে বইপাঠ ও সাংস্কৃতিক চর্চার জন্য গড়ে তুলেছিলাম ‘প্রজন্ম সমাজ-সংস্কৃতি কেন্দ্র’ নামে একটি পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। জুলাইয়ে বর্তমান নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের একটি অংশ এখানে আক্রমণ করেছিল। জুলাই পরবর্তীতে এটি দখল করেছিল ছাত্রদল। বিভিন্নজনের সহযোগিতায় দখলমুক্ত করে আমরা পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। কিন্তু সেটাও আর অব্যহত রাখা সম্ভব হয়নি। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ব্যহত করতে বই ও বাদ্যযন্ত্র চুরি করানো হয়েছে। সেই সঙ্গে হুমকি দেয়া হয়েছে ধর্মবিরোধী ট্যাগের। ‘নাস্তিক ও ইসলাম বিরোধী’ অপবাদ দিয়ে মব উস্কে দেয়ার ষড়যন্ত্রের ভেতরেই আমাদের সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়েছে। অন্যথায় সেখানে কি ঘটতো পাঠকমাত্রই অনুমান করুন। এমন কাহিনী কম বেশি সকলেরই। এমন পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে গত কয়েক দশক থেকে প্রচার হয়ে আসা “সাংস্কৃতিক চর্চা ধর্ম বিরুদ্ধ কিংবা ধর্মের পরিপন্থী কাজ” প্রতিরোধের ক্ষেত্রকে প্রস্তুত করেছে। বিগত সময়ে এরূপ প্রচার-প্রচারণা সর্বস্থানেই ছিল। বর্তমানে সেই প্রচার-প্রচারণার ফল প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। মৌলবাদীদের এই প্রচারণা বিফলে যায়নি তা বর্তমান বাস্তবতায় আমরা দেখছি। নাটক, যাত্রাপালা, কনসার্ট, স্টেজ শো ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেভাবে গত কয়েক দশক থেকে কমতে শুরু করে আজ শূন্যের কোঠায় পৌঁছে যাচ্ছে, তা মাত্র এক দুই বছরের বিষয় নয়। এই এক দুই বছর শুধুমাত্র মৌলবাদীদের ফসল তুলবার সময় এবং ফসল ভোগ করবার ক্ষেত্র প্রস্তুতের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। যার ফলে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আক্রমণ হলেও দেশের মুসলিম অধ্যুষিত বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে কোনো প্রতিবাদ বা কোনো প্রতিক্রিয়া উল্লেখযোগ্যভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এও লক্ষ্যনীয়, সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে দেশে, অনানুষ্ঠানিক বা অপ্রাতিষ্ঠানিক সংগীত, নাট্য ও নৃত্যকলার চর্চা আজ অনেক বেড়েছে। কিন্তু এই তিন ক্ষেত্রেই সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া খুব দুরূহ। সৃজনশীলতার চেয়ে পূর্বের সৃজনকর্মকে বিনষ্ট করার চেষ্টা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঙ্গীত, নাট্য ও নৃত্যকলার যা-কিছু আজও মানুষকে, বিশেষভাবে মধ্যবিত্তসমাজের মানুষক স্পর্শ করে তার প্রায় সবটাই আগেকার রচনা। সেসবকেও বিলিন করে দিচ্ছে আধুনিক এই ভার্চুয়াল সংস্কৃতি। টিকটক, রিলসের নামে অশ্লীলতা, ভাড়ামি ও সংস্কৃতির বিকৃতিকরণের উৎসবে মেতে উঠেছে নতুন প্রজন্ম। প্রজন্মের এই অবনতিকে পুঁজি করে সাংস্কৃতিক চর্চা বিরোধী গোষ্ঠীর উত্থানের পথ প্রশস্ত করা হয়েছে। সুস্থধারার সাংস্কৃতিক চর্চার সংকট, মৌলবাদীদের বিরুদ্ধাচরণ সব মিলিয়ে সংস্কৃতিকেই নির্বাসনে পাঠানোর আয়োজন চলছে মহাসমারোহে। এ কথা সত্য, জাতির সংস্কৃতিবিমুখতায় সাংস্কৃতিক চর্চা ক্রমশ সংকুচিত হয়েছে। হারিয়ে গেছে অনেক সাংস্কৃতিক পালা-পার্বন। সংস্কৃতির মেলবন্ধনে চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতির যে সৌন্দর্যবোধ ছিল তাও হ্রাস পেতে শুরু করেছে আশি-নব্বইয়ের দশকের শেষ দিক থেকেই। সুস্থ ধারার সংস্কৃতিমুখীকরণের অভাবে সাংস্কৃতিক, সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি-নৈতিকতার সংকট ডেকে এনেছে। অবক্ষয়ের স্রোতে দেশের তরুণ সমাজও হয়ে উঠেছে বিপথগামী। এদের বড় একটি অংশ যেমন উশৃঙ্খল হয়েছে, তেমনি আরেকটি অংশ জড়িয়ে পড়েছে মৌলবাদী দর্শনে। এমন সব নানা জটিলতায় সংকুচিত হয়ে পড়ছে সাংস্কৃতিক অঙ্গন। যার বদৌলতে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আক্রমণ বেড়েছে অধিকতরভাবে। এই আক্রমণকারী গোষ্ঠী নিজেদের ধার্মিক পরিচয় দিলেও, তারা ধর্মপ্রাণ মানবিক মানুষ নন। তারা ধর্মান্ধ এবং অনেকাংশেই অবিবেচনাপ্রসূত অবিবেচক ও অমানুষ। তাদের সংস্কৃতিই হচ্ছে ‘সৃষ্টি নয় ধ্বংস করা’। এরা মূলত ধ্বংস করতেই পছন্দ করে। অন্যকে ধ্বংস করতে করতে তারা নিজেরাই একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে, এই ভাবান্তর তাদের নেই। ‘সংস্কৃতি কথা’ প্রবন্ধে মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন “ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জিত লোকের ধর্ম। কালচার মানে উন্নততর জীবন সম্বন্ধে চেতনা–সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রেম সম্বন্ধে অবহিতি। সাধারণ লোকেরা ধর্মের মারফতেই তা পেয়ে থাকে। তাই তাদের ধর্ম থেকে বঞ্চিত করা আর কালচার থেকে বঞ্চিত করা এক কথা”। মৌলবাদীরা এর সঙ্গে একমত নন, তারা তাদের ধর্মমত সবার ওপরে চাপিয়ে দিতেই ব্যস্ত। অন্যদিকে সংস্কৃতিবান মানুষেরা এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তারা কোনো মতবাদ বা দর্শন জোর করে চাপিয়ে দেয়ার পক্ষে নন। তারা জানেন, ধর্ম মানে শৃঙ্খলিত জীবন। মোতাহার হোসেন চৌধুরীর ভাষায়, ‘মার্জিত আলোকপ্রাপ্তরা কালচারের মারফতেই নিজেদের নিয়ন্ত্রিত করে। বাইরের আদেশ নয়, ভেতরের সূক্ষ্মচেতনাই তাদের চালক, তাই তাদের জন্য ধর্মের ততটা দরকার হয় না। বরং তাদের উপর ধর্ম তথা বাইরের নীতি চাপাতে গেলে ক্ষতি হয়। কেননা তাতে তাদের সূক্ষ্ম চেতনাটি নষ্ট হয়ে যায়, আর সূক্ষ্ম চেতনার অপর নাম আত্মা”। আর এই আত্মা বিনষ্টকারীরাই মৌলবাদী। প্রচলিত ধর্মকে আশ্রয় করে তারা স্বীয় স্বার্থ হাসিল করে। তাদের এই অপতৎপরতা রুখতে সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই। সাংস্কৃতিক বিপ্লব ছাড়া এই ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধ করা সম্ভব নয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে সংস্কৃতি গড়ে তোলার কথা ছিল আমাদের, সেই অসাম্প্রদায়িক, সর্বজনীন সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। সেক্যুলারিজমের প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে রুখে দিতে হবে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে। অশুভ এই সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করা যাবে, নতুবা নয়। এটা করা না গেলে সাম্প্রদায়িকতা আরও অসহিষ্ণু ও সহিংস হয়ে উঠবে। যার উদাহরণ আমরা ইতোমধ্যে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী কর্তৃক জ্যান্ত ও মৃত মানুষের লাশ পোড়ানোর পৈশাচিক আনন্দের ভেতর দিয়ে দেখতে পেয়েছি। এখনই এর বিরুদ্ধে জেগে না উঠলে আমাদের এই ভয়ঙ্কর পরিণতিকেই আলিঙ্গন করতে হবে।