ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
ক্ষমতার মোহ নয়, সাধারণ মানুষের হৃদয়েই থাকতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: ড. কামাল হোসেন
৫ ডিসেম্বর ১৯৬৯: ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নাম মুছে যেভাবে ‘বাংলাদেশ’ নাম দিলেন বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট ও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে ইইউ পার্লামেন্ট সদস্যের সাথে ‘হ্যান্ড ইন হ্যান্ড ফাউন্ডেশন’-এর বৈঠক
‘বালের বিজয় দিবস’ মন্তব্যের জেরে ইলিয়াসকে ‘স্টুপিড’, ‘শুয়োরের বাচ্চা’, ‘বেজন্মা’ বললেন আম জনতা দলের তারেক
ক্ষমতার মোহ নয়, সাধারণ মানুষের হৃদয়েই থাকতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু: ড. কামাল হোসেন
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড ‘সাংবিধানিক প্রহসন’, সংবিধানের ওপর আঘাত: ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদন
তারেক জিয়ার হাত ধরেই বাংলাদেশে প্রতিহিংসার রাজনীতির উত্থান: একটি অন্ধকার অধ্যায়ের বিশ্লেষণ
শাসক বঙ্গবন্ধু: ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে এক রাষ্ট্রনির্মাতার উপাখ্যান
ইতিহাসের খুব কম রাষ্ট্রনায়ককেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, যার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একদিকে তিনি হাজার বছরের পরাধীন বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা, অন্যদিকে তিনি সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দেউলিয়া এক রাষ্ট্রের শাসক। মাত্র সাড়ে তিন বছর (জানুয়ারি ১৯৭২ - আগস্ট ১৯৭৫) তিনি সময় পেয়েছিলেন দেশ পরিচালনার। এই স্বল্প সময়ের শাসনকালকে আবেগের ঊর্ধ্বে উঠে নির্মোহভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়—এটি ছিল এক অসম সাহসী রাষ্ট্রনির্মাণের সংগ্রাম।
ধ্বংসস্তূপ ও শূন্য রাজকোষের চ্যালেঞ্জ
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যখন বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরেন, তখন বাংলাদেশ আক্ষরিক অর্থেই এক ধ্বংসস্তূপ। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বন্দর—সব গুঁড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। রাজকোষ ছিল শূন্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেই। তার ওপর ভারত
থেকে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন। একজন শাসকের জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ শুরু আর হতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সাফল্য ছিল—রাষ্ট্রকে ‘ব্যর্থ’ হতে না দেওয়া। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানালেন এবং বিস্ময়কর দ্রুততায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করলেন। সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান: দুই বড় স্তম্ভ শাসক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় এবং অসামান্য অর্জন হলো স্বাধীনতার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে জাতিকে একটি বিশ্বমানের সংবিধান উপহার দেওয়া। যেখানে পাকিস্তান সংবিধান পেতে সময় নিয়েছিল ৯ বছর, সেখানে বঙ্গবন্ধু মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল প্রস্তুত করেন। দ্বিতীয় বড় অর্জন হলো ভারতীয় মিত্রবাহিনীর
দ্রুত প্রত্যাহার। সাধারণত কোনো দেশ স্বাধীন করতে আসা বিদেশি বাহিনী বছরের পর বছর সেই দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকে (যেমন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানি বা জাপান)। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সফল কূটনৈতিক আলোচনার ফলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে (মার্চ ১৯৭২) ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ত্যাগ করে। এটি ছিল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আপোষহীনতার চূড়ান্ত প্রমাণ। অর্থনীতি ও সমাজতন্ত্রের গোলকধাঁধা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শোষণহীন সমাজ গড়তে, তাই তিনি সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি করেছিলেন। পাকিস্তানি মালিকরা পালিয়ে যাওয়ায় ব্যাংক, বিমা ও কলকারখানা জাতীয়করণ করা ছাড়া তখন কোনো বিকল্পও ছিল না। কিন্তু সমস্যা হলো ব্যবস্থাপনায়। সদ্য স্বাধীন দেশে দক্ষ আমলা ও ব্যবস্থাপকের চরম সংকট ছিল।
ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতগুলোতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হয়নি, বরং অদক্ষতা ও দুর্নীতি বাসা বাঁধে। এরই মধ্যে ১৯৭৩-৭৪ সালের বৈশ্বিক তেল সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসে। ১৯৭৪ সালের বন্যা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য রাজনীতি (পিএল-৪৮০ স্থগিত করা) দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে। শাসক হিসেবে এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক ও প্রশাসনিক ধাক্কা। তিনি দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে অনেক মানুষকে বাঁচাতে না পারার বেদনা তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। অন্তর্ঘাত, বিশৃঙ্খলা ও বাকশাল বিতর্ক বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের বিশ্লেষণে সবচেয়ে জটিল অধ্যায় হলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বাকশাল গঠন। যুদ্ধের পর সাধারণ মানুষের হাতে
প্রচুর অবৈধ অস্ত্র ছিল। জাসদ ও সর্বহারা পার্টির মতো উগ্র বামপন্থী দলগুলো ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ নামে সশস্ত্র অরাজকতা শুরু করে। থানা লুট, পাটের গুদামে আগুন এবং গুপ্তহত্যা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, নিজ দলের একাংশের দুর্নীতি বঙ্গবন্ধুকে হতাশ করে তুলেছিল। তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, "সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য আট কোটি কম্বল। আমার কম্বলটা কই?" প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তিনি দ্রুত সমাধান পাচ্ছিলেন না। এই অরাজকতা, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটানোর জন্যই তিনি ১৯৭৫ সালে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বা বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) কর্মসূচির ডাক দেন। এটি ছিল প্রচলিত সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রপতি শাসিত একদলীয় ব্যবস্থা। এর লক্ষ্য ছিল
উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় ঐক্য। তিনি প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করে জেলা গভর্নর পদ্ধতি চালু করতে চেয়েছিলেন। সমালোচকদের দৃষ্টিতে এটি ছিল গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার হরণ। তবে সমর্থকদের মতে, তৎকালীন চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রকে বাঁচাতে এটি ছিল এক অনিবার্য ও সাময়িক কঠোর পদক্ষেপ। বাকশালের ফলাফল কী হতো, তা দেখার সুযোগ ইতিহাস দেয়নি; তার আগেই ১৫ আগস্টের কালরাত নেমে আসে। উপসংহার: পিতার চোখে শাসক শাসক বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতে হলে মনে রাখতে হবে, তিনি কোনো প্রথাগত প্রশাসক ছিলেন না। তিনি ছিলেন জাতির পিতা। তাঁর শাসন পদ্ধতিতে আমলাতান্ত্রিক কঠোরতার চেয়ে পিতৃসুলভ আবেগ বেশি ছিল। তিনি মানুষকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন, যা অনেক
সময় তাঁর দুর্বলতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে সাড়ে তিন বছরের খতিয়ান টানলে দেখা যায়, তিনি শূন্য থেকে একটি রাষ্ট্র কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন। জাতিসংঘ, ওআইসি, ন্যাম-এর সদস্যপদ লাভ, সমুদ্রসীমা আইন প্রণয়ন, এবং প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণের মতো কাজগুলো আজকের আধুনিক বাংলাদেশের ভিত্তি। শাসক হিসেবে বঙ্গবন্ধু হয়তো সব সংকট সামাল দিতে পারেননি, কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তও নিয়েছেন; কিন্তু তাঁর দেশপ্রেম, সততা এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ছিল প্রশ্নাতীত। তিনি যে স্বপ্ন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গিয়েছিলেন, তার ওপর দাঁড়িয়েই আজকের বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে কথা বলছে। ইতিহাস তাঁকে কেবল একজন শাসক হিসেবে নয়, বরং এক ভগ্নস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অকুতোভয় ‘রাষ্ট্রনির্মাতা’ হিসেবেই মনে রাখবে।
থেকে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন। একজন শাসকের জন্য এর চেয়ে ভয়াবহ শুরু আর হতে পারে না। এই পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সাফল্য ছিল—রাষ্ট্রকে ‘ব্যর্থ’ হতে না দেওয়া। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের আবেদন জানালেন এবং বিস্ময়কর দ্রুততায় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করলেন। সার্বভৌমত্ব ও সংবিধান: দুই বড় স্তম্ভ শাসক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় এবং অসামান্য অর্জন হলো স্বাধীনতার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে জাতিকে একটি বিশ্বমানের সংবিধান উপহার দেওয়া। যেখানে পাকিস্তান সংবিধান পেতে সময় নিয়েছিল ৯ বছর, সেখানে বঙ্গবন্ধু মাত্র এক বছরেরও কম সময়ে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দলিল প্রস্তুত করেন। দ্বিতীয় বড় অর্জন হলো ভারতীয় মিত্রবাহিনীর
দ্রুত প্রত্যাহার। সাধারণত কোনো দেশ স্বাধীন করতে আসা বিদেশি বাহিনী বছরের পর বছর সেই দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকে (যেমন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানি বা জাপান)। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সফল কূটনৈতিক আলোচনার ফলে মাত্র তিন মাসের মধ্যে (মার্চ ১৯৭২) ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ত্যাগ করে। এটি ছিল বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি বঙ্গবন্ধুর আপোষহীনতার চূড়ান্ত প্রমাণ। অর্থনীতি ও সমাজতন্ত্রের গোলকধাঁধা বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন শোষণহীন সমাজ গড়তে, তাই তিনি সমাজতন্ত্রকে মূলনীতি করেছিলেন। পাকিস্তানি মালিকরা পালিয়ে যাওয়ায় ব্যাংক, বিমা ও কলকারখানা জাতীয়করণ করা ছাড়া তখন কোনো বিকল্পও ছিল না। কিন্তু সমস্যা হলো ব্যবস্থাপনায়। সদ্য স্বাধীন দেশে দক্ষ আমলা ও ব্যবস্থাপকের চরম সংকট ছিল।
ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতগুলোতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন হয়নি, বরং অদক্ষতা ও দুর্নীতি বাসা বাঁধে। এরই মধ্যে ১৯৭৩-৭৪ সালের বৈশ্বিক তেল সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আসে। ১৯৭৪ সালের বন্যা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য রাজনীতি (পিএল-৪৮০ স্থগিত করা) দেশে দুর্ভিক্ষ ডেকে আনে। শাসক হিসেবে এটি ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক ও প্রশাসনিক ধাক্কা। তিনি দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনীতির মারপ্যাঁচ এবং অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে অনেক মানুষকে বাঁচাতে না পারার বেদনা তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। অন্তর্ঘাত, বিশৃঙ্খলা ও বাকশাল বিতর্ক বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের বিশ্লেষণে সবচেয়ে জটিল অধ্যায় হলো আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বাকশাল গঠন। যুদ্ধের পর সাধারণ মানুষের হাতে
প্রচুর অবৈধ অস্ত্র ছিল। জাসদ ও সর্বহারা পার্টির মতো উগ্র বামপন্থী দলগুলো ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ নামে সশস্ত্র অরাজকতা শুরু করে। থানা লুট, পাটের গুদামে আগুন এবং গুপ্তহত্যা নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে, নিজ দলের একাংশের দুর্নীতি বঙ্গবন্ধুকে হতাশ করে তুলেছিল। তিনি আক্ষেপ করে বলেছিলেন, "সাড়ে সাত কোটি মানুষের জন্য আট কোটি কম্বল। আমার কম্বলটা কই?" প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় তিনি দ্রুত সমাধান পাচ্ছিলেন না। এই অরাজকতা, দুর্নীতি এবং অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটানোর জন্যই তিনি ১৯৭৫ সালে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ বা বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ) কর্মসূচির ডাক দেন। এটি ছিল প্রচলিত সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রপতি শাসিত একদলীয় ব্যবস্থা। এর লক্ষ্য ছিল
উৎপাদন বৃদ্ধি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং জাতীয় ঐক্য। তিনি প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করে জেলা গভর্নর পদ্ধতি চালু করতে চেয়েছিলেন। সমালোচকদের দৃষ্টিতে এটি ছিল গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার হরণ। তবে সমর্থকদের মতে, তৎকালীন চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রকে বাঁচাতে এটি ছিল এক অনিবার্য ও সাময়িক কঠোর পদক্ষেপ। বাকশালের ফলাফল কী হতো, তা দেখার সুযোগ ইতিহাস দেয়নি; তার আগেই ১৫ আগস্টের কালরাত নেমে আসে। উপসংহার: পিতার চোখে শাসক শাসক বঙ্গবন্ধুকে মূল্যায়ন করতে হলে মনে রাখতে হবে, তিনি কোনো প্রথাগত প্রশাসক ছিলেন না। তিনি ছিলেন জাতির পিতা। তাঁর শাসন পদ্ধতিতে আমলাতান্ত্রিক কঠোরতার চেয়ে পিতৃসুলভ আবেগ বেশি ছিল। তিনি মানুষকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করতেন, যা অনেক
সময় তাঁর দুর্বলতা হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে সাড়ে তিন বছরের খতিয়ান টানলে দেখা যায়, তিনি শূন্য থেকে একটি রাষ্ট্র কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন। জাতিসংঘ, ওআইসি, ন্যাম-এর সদস্যপদ লাভ, সমুদ্রসীমা আইন প্রণয়ন, এবং প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণের মতো কাজগুলো আজকের আধুনিক বাংলাদেশের ভিত্তি। শাসক হিসেবে বঙ্গবন্ধু হয়তো সব সংকট সামাল দিতে পারেননি, কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তও নিয়েছেন; কিন্তু তাঁর দেশপ্রেম, সততা এবং মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা ছিল প্রশ্নাতীত। তিনি যে স্বপ্ন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গিয়েছিলেন, তার ওপর দাঁড়িয়েই আজকের বাংলাদেশ বিশ্বমঞ্চে মাথা উঁচু করে কথা বলছে। ইতিহাস তাঁকে কেবল একজন শাসক হিসেবে নয়, বরং এক ভগ্নস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা অকুতোভয় ‘রাষ্ট্রনির্মাতা’ হিসেবেই মনে রাখবে।



