ইউ এস বাংলা নিউজ ডেক্স
আরও খবর
সংলাপে বসতে নতুন প্রস্তাব সরকারের, পিটিআইয়ের অবস্থান অনিশ্চিত
মার্কেট-কাঁচাবাজারে সন্ত্রাসীদের থাবা
ছাত্রদের ওপর মোজাম্মেল বাহিনীর হামলা, গাজীপুরে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ
ধানমন্ডি ৩২ এ ভাঙচুর নিয়ে যা বললেন সোহেল তাজ
৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়ার দায় সরকার এড়াতে পারে না
র্যাব-১ এর প্রধান ফটকে অবস্থান ভুক্তভোগীদের
সত্য বলার সাহসিকতাই সাংবাদিকতার মূলমন্ত্র: কাদের গনি চৌধুরী
ধ্বংসপ্রায় মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য-স্মৃতিচিহ্ন
মেহেরপুর শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান মুজিবনগর। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন বৈদ্যনাথ বাবুর আম্রকাননে প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। পাঠ করা হয় স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। সেদিন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ আম্রকাননের নাম রাখেন ‘মুজিবনগর’। বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানীও ঘোষণা করা হয় মুজিবনগরকে। ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল সেখানে ‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে বঙ্গবন্ধু সরকার। গত ৫ দশকে ৬৬ একর জায়গাজুড়ে সেই কমপ্লেক্সকে পরিণত করা হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের এক টুকরা প্রতিচ্ছবি হিসেবে। কিন্তু এই কমপ্লেক্স এখন ধ্বংসের প্রতিচ্ছবি।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর শতাধিক দুর্বৃত্ত হানা দেয় মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সে। তারা অন্তত ৪০০ ছোট-বড়
ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। চার মাস পার হলেও সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে এই কমপ্লেক্স। শুধু এটিই নয়; গত আগস্টে ধ্বংস করা হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’, চট্টগ্রামের ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’, খুলনার ‘গণহত্যা জাদুঘর’সহ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত তিন ডজন জাদুঘর। এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলা ও উপজেলায় নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সসহ অন্তত দেড় হাজার স্থাপনা ধ্বংস বা ভাংচুরের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভাস্কর্য ও ম্যুরালের বেশির ভাগই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক। ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাদ যায়নি বিভিন্ন জেলায় বীরশ্রেষ্ঠদের স্মরণে নির্মিত জাদুঘর ও স্মৃতিস্তম্ভ, উত্তরবঙ্গ
জাদুঘর, ময়মনসিংহের শশী লজের ভেনাসের মূর্তি, তেজগাঁওয়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, শিশু একাডেমির ‘দুরন্ত’, দিনাজপুরের বিরলে সাঁওতাল বিদ্রোহের ভাস্কর্য ‘সিধু-কানু’ ও সুপ্রিম কোর্টের থেমিসও। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। দেশের ৫৪তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এসব জাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক বয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় সরকার প্রশাসন থেকে এসব জাদুঘর ও স্থাপনা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রায় সব স্থাপনাই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সারওয়ার আলী বলেন, ‘জনযুদ্ধে যে বিপুল আত্মদানের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সে ইতিহাস যেন বিস্মৃত না
হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও তার প্রস্তুতি পর্বে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা এই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সম্প্রতি এ ধরনের কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের স্বার্থে সেগুলো সংস্কার ও পুনঃস্থাপন বিবেচনা করা যেতে পারে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর চার মাসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জাদুঘর এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্য ও স্থাপনা সংস্কারের কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বরং মন্ত্রণালয়ের উদ্যাগে প্রকল্পের আওতায় ১১টি জাদুঘর নির্মাণ এবং এডিপিভুক্ত জাদুঘর-সংশ্লিষ্ট চারটি নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা বাতিল করা হয়েছে। কারণ হিসেবে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়ছে আর্থিক সাশ্রয়ের কথা। মুজিবনগর কমপ্লেক্স দেশের মানচিত্র অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে ভাগ করে প্রায় ৬০০টি মুক্তিযুদ্ধকালীন ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে
তোলা হয়েছিল মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসতেন ঐতিহাসিক মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে। অথচ সেই কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যগুলো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেক ভাস্কর্য চেনার উপায় নেই। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির মাথা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদের ভাস্কর্যকে আঘাত করা হয়েছে। গার্ড অব অনারের ভাস্কর্যগুলোতে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়েছে। মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ ও সিরাজ উদ্দিন জানান, আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ দেখার জন্য লোক আসত। এখন আর তেমন কেউ আসছে না। কমপ্লেক্সের সংস্কার বিষয়ে মুজিবনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, কমপ্লেক্সের সার্বিক চিত্র জানিয়ে গণপূর্ত
অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা দেখছেন। এ প্রসঙ্গে মেহেরপুরের গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বলেন, কমপ্লেক্সের ভেতর এবং বাইরের বড়-ছোট ভাস্কর্যগুলো ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। প্রবেশ তোরণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাস্কর্য রক্ষণাবেক্ষণের লোহার সীমানা প্রাচীর, পানির মোটর ও ২০-২৫টি সিসি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতি অনেক। এসব সংস্কারে কোনো বাজেট এখনও মেলেনি। তিনি জানান, মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলে বা সংস্কারের জন্য বাজেট বরাদ্দ করলে তখন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে ধ্বংস করা হয়েছে ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িও। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই বাড়ির রয়েছে নিবিড় সংযোগ। বঙ্গবন্ধু
তাঁর এই বাসভবন থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগের দিনগুলোতে দিকনির্দেশনা দিতেন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতে বঙ্গবন্ধু, তাঁর স্ত্রীসহ আত্মীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিন তলা এই বাড়িতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে জাদুঘর স্থাপনের পর ১৯৯৪ সালে তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। গত ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তের আগুনে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি এবং জাদুঘরে সংরক্ষিত জিনিসপত্র সবই পুড়ে গেছে। অনেক জিনিসপত্র লুটও হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, নিচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত পুরোটাই এখন ধ্বংসস্তূপ। সিঁড়িতে যেখানে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ পড়ে ছিল, সেখানেও ভাঙচুর আর পুড়িয়ে দেওয়ার চিহ্ন। জাদুঘরের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, এই ভবন ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িত। ইতিহাসের সত্যকে ধ্বংস করতেই জাদুঘরের সব জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’ নির্মাণ শেষে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মুঘল শাসনামল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের বিজয় দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রাম-ইতিহাসের সচিত্র বর্ণনা লিপিবদ্ধ ছিল এই জাদুঘরে। আরও ছিল মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক কিছু স্মারক স্মৃতিচিহ্ন। এসব এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, গ্যালারির ভেতরে থাকা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রায় সব স্মারক এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নানা ঘটনার ঐতিহাসিক ছবি ও দলিল ভেঙে ও ছিঁড়ে নষ্ট করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবির ডিউক বলেন, ‘অপরাজেয় বাংলা’ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সব ভাস্কর্যই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে করতে হয়েছে। এবার পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আড়ালে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে এক দল দুষ্কৃতকারী। সারাদেশে শত শত ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। এটি নিন্দনীয়। আমরা চাই ভাস্কর্যগুলো পুনর্নির্মাণ করা হোক। সরকার চাইলে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।’ এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মেহেরপুরের মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সসহ যেসব জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের অনান্য প্রতিষ্ঠানও যুক্ত আছে। তাই তালিকা পাওয়ার পর সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নষ্ট হচ্ছে নথিপত্র বৃহৎ আকারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৭৭ সালে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৫ খণ্ডে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ এবং এক খণ্ডে অ্যালবাম প্রকাশ করে ১৯৮৮ সালে প্রকল্পটি বিলুপ্ত করা হয়। তখন সংগৃহীত প্রায় সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠার দলিল ও তথ্যাদি বস্তাবন্দি করে রাখা হয় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) গ্যারেজে। সেখানে ওই বছরই ভয়াবহ বন্যায় মহামূল্যবান অনেক দলিল নষ্ট হয়ে যায়। পরে নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয় জাতীয় জাদুঘরে। বর্তমানে জাদুঘরে এক হাজার ৫৫১টি ফাইলে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার পৃষ্ঠার দলিল সংরক্ষিত আছে। অর্থাৎ দুই লাখ ৩৮ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র আর সংরক্ষণে নেই। জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা দলিল ও নথিপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য– মুজিবনগর সরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দলিলপত্র, রণাঙ্গনের কিছু দলিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাক্ষাৎকার। এসব তথ্য-উপাত্ত ২০১৪ সালে ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তা হয়নি। সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ‘যুদ্ধশিশু’দের অনেক নথিপত্রও। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকে ১০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার শিশুকে বিদেশে দত্তক পাঠানো হয়। যার তথ্যাদি আগারগাঁওয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরে থাকার কথা। কিন্তু সেখানে এখন নথি রয়েছে সাতশর মতো। বাকি নথি খোয়া গেছে। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩০ লাখ বাঙালি নিধনযজ্ঞের পাশাপাশি এ দেশের প্রায় পাঁচ লাখ নারীকে নির্যাতন করেছে। এতে অনেকেই গর্ভধারণ করেন। তাদের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুদেরই ‘যুদ্ধশিশু’ বলা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের তথ্য সংগ্রহে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যে তথ্য-উপাত্ত আছে, সেগুলো অন্তত জাতীয় ইতিহাসের স্বার্থে ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত। তাহলে গবেষণা আরও বিস্তৃত হবে এবং তরুণ প্রজন্মও ইতিহাসের সত্য জানতে পারবে।’ মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে দেশে ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর প্রথম গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয় কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তি, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক সংরক্ষণ নিয়েই ব্যস্ত। সরকারি উদ্যোগে নিজস্ব গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ এবং ডিজিটাল আর্কাইভ হয়নি এখনও। আর্কাইভ থাকলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই, দলিল, একাত্তরে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ, অডিওসহ যাবতীয় তথ্যাদি তাতে সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। ডিজিটাল আর্কাইভ না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ইতিহাস সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রকাশনা শাখা নামে একটি শাখা রয়েছে। নেতৃত্বে রয়েছেন একজন উপসচিব। বার্ষিক বাজেট ৫ লাখ টাকা, যা দিয়ে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মন্ত্রণালয়ের কাজের বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করছি। মুক্তিযুদ্ধের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ বিষয়ে কী করা যায়, সেটি আলোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ভাস্কর্য ভেঙে ফেলে। চার মাস পার হলেও সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে এই কমপ্লেক্স। শুধু এটিই নয়; গত আগস্টে ধ্বংস করা হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ‘বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর’, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’, চট্টগ্রামের ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’, খুলনার ‘গণহত্যা জাদুঘর’সহ সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত তিন ডজন জাদুঘর। এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলা ও উপজেলায় নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সসহ অন্তত দেড় হাজার স্থাপনা ধ্বংস বা ভাংচুরের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভাস্কর্য ও ম্যুরালের বেশির ভাগই ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক। ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাদ যায়নি বিভিন্ন জেলায় বীরশ্রেষ্ঠদের স্মরণে নির্মিত জাদুঘর ও স্মৃতিস্তম্ভ, উত্তরবঙ্গ
জাদুঘর, ময়মনসিংহের শশী লজের ভেনাসের মূর্তি, তেজগাঁওয়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, শিশু একাডেমির ‘দুরন্ত’, দিনাজপুরের বিরলে সাঁওতাল বিদ্রোহের ভাস্কর্য ‘সিধু-কানু’ ও সুপ্রিম কোর্টের থেমিসও। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে। দেশের ৫৪তম বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এসব জাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মারক বয়ে বেড়াচ্ছে ক্ষতচিহ্ন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় সরকার প্রশাসন থেকে এসব জাদুঘর ও স্থাপনা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রায় সব স্থাপনাই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মাণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সারওয়ার আলী বলেন, ‘জনযুদ্ধে যে বিপুল আত্মদানের মধ্য দিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে, সে ইতিহাস যেন বিস্মৃত না
হয়। মুক্তিযুদ্ধ ও তার প্রস্তুতি পর্বে বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থাপনা এই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সম্প্রতি এ ধরনের কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাসের স্বার্থে সেগুলো সংস্কার ও পুনঃস্থাপন বিবেচনা করা যেতে পারে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর চার মাসে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জাদুঘর এবং ক্ষতিগ্রস্ত ভাস্কর্য ও স্থাপনা সংস্কারের কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। বরং মন্ত্রণালয়ের উদ্যাগে প্রকল্পের আওতায় ১১টি জাদুঘর নির্মাণ এবং এডিপিভুক্ত জাদুঘর-সংশ্লিষ্ট চারটি নতুন প্রকল্প প্রস্তাবনা বাতিল করা হয়েছে। কারণ হিসেবে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়ছে আর্থিক সাশ্রয়ের কথা। মুজিবনগর কমপ্লেক্স দেশের মানচিত্র অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরকে ভাগ করে প্রায় ৬০০টি মুক্তিযুদ্ধকালীন ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে
তোলা হয়েছিল মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসতেন ঐতিহাসিক মুজিবনগরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে। অথচ সেই কমপ্লেক্সে মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যগুলো এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অনেক ভাস্কর্য চেনার উপায় নেই। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটির মাথা ভেঙে ফেলা হয়েছে। তাজউদ্দীন আহমদের ভাস্কর্যকে আঘাত করা হয়েছে। গার্ড অব অনারের ভাস্কর্যগুলোতে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়েছে। মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়া আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ ও সিরাজ উদ্দিন জানান, আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ দেখার জন্য লোক আসত। এখন আর তেমন কেউ আসছে না। কমপ্লেক্সের সংস্কার বিষয়ে মুজিবনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, কমপ্লেক্সের সার্বিক চিত্র জানিয়ে গণপূর্ত
অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তারা দেখছেন। এ প্রসঙ্গে মেহেরপুরের গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন বলেন, কমপ্লেক্সের ভেতর এবং বাইরের বড়-ছোট ভাস্কর্যগুলো ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। প্রবেশ তোরণ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাস্কর্য রক্ষণাবেক্ষণের লোহার সীমানা প্রাচীর, পানির মোটর ও ২০-২৫টি সিসি ক্যামেরাও ভেঙে ফেলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতি অনেক। এসব সংস্কারে কোনো বাজেট এখনও মেলেনি। তিনি জানান, মন্ত্রণালয় নির্দেশ দিলে বা সংস্কারের জন্য বাজেট বরাদ্দ করলে তখন নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে ধ্বংস করা হয়েছে ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জাতির স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িও। মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে এই বাড়ির রয়েছে নিবিড় সংযোগ। বঙ্গবন্ধু
তাঁর এই বাসভবন থেকে মুক্তিযুদ্ধের আগের দিনগুলোতে দিকনির্দেশনা দিতেন। দেশ স্বাধীন হলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এই বাড়িতে বঙ্গবন্ধু, তাঁর স্ত্রীসহ আত্মীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিন তলা এই বাড়িতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে জাদুঘর স্থাপনের পর ১৯৯৪ সালে তা জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। গত ৫ আগস্ট দুর্বৃত্তের আগুনে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি এবং জাদুঘরে সংরক্ষিত জিনিসপত্র সবই পুড়ে গেছে। অনেক জিনিসপত্র লুটও হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, নিচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত পুরোটাই এখন ধ্বংসস্তূপ। সিঁড়িতে যেখানে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ পড়ে ছিল, সেখানেও ভাঙচুর আর পুড়িয়ে দেওয়ার চিহ্ন। জাদুঘরের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, এই ভবন ঘিরে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি জড়িত। ইতিহাসের সত্যকে ধ্বংস করতেই জাদুঘরের সব জিনিসপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতা জাদুঘর মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’ নির্মাণ শেষে ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মুঘল শাসনামল থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের বিজয় দিবস পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রাম-ইতিহাসের সচিত্র বর্ণনা লিপিবদ্ধ ছিল এই জাদুঘরে। আরও ছিল মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক কিছু স্মারক স্মৃতিচিহ্ন। এসব এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, গ্যালারির ভেতরে থাকা স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রায় সব স্মারক এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নানা ঘটনার ঐতিহাসিক ছবি ও দলিল ভেঙে ও ছিঁড়ে নষ্ট করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ভাস্কর্য বিভাগের চেয়ারম্যান নাসিমুল খবির ডিউক বলেন, ‘অপরাজেয় বাংলা’ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সব ভাস্কর্যই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে করতে হয়েছে। এবার পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের আড়ালে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে এক দল দুষ্কৃতকারী। সারাদেশে শত শত ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে। এটি নিন্দনীয়। আমরা চাই ভাস্কর্যগুলো পুনর্নির্মাণ করা হোক। সরকার চাইলে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।’ এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, মেহেরপুরের মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সসহ যেসব জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর ক্ষয়ক্ষতির তালিকা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের অনান্য প্রতিষ্ঠানও যুক্ত আছে। তাই তালিকা পাওয়ার পর সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। নষ্ট হচ্ছে নথিপত্র বৃহৎ আকারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৭৭ সালে। তথ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৫ খণ্ডে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র’ এবং এক খণ্ডে অ্যালবাম প্রকাশ করে ১৯৮৮ সালে প্রকল্পটি বিলুপ্ত করা হয়। তখন সংগৃহীত প্রায় সাড়ে তিন লাখ পৃষ্ঠার দলিল ও তথ্যাদি বস্তাবন্দি করে রাখা হয় চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের (ডিএফপি) গ্যারেজে। সেখানে ওই বছরই ভয়াবহ বন্যায় মহামূল্যবান অনেক দলিল নষ্ট হয়ে যায়। পরে নথিপত্র সংরক্ষণ করা হয় জাতীয় জাদুঘরে। বর্তমানে জাদুঘরে এক হাজার ৫৫১টি ফাইলে প্রায় এক লাখ ১২ হাজার পৃষ্ঠার দলিল সংরক্ষিত আছে। অর্থাৎ দুই লাখ ৩৮ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র আর সংরক্ষণে নেই। জাদুঘরের সংগ্রহে থাকা দলিল ও নথিপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য– মুজিবনগর সরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দলিলপত্র, রণাঙ্গনের কিছু দলিল এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাক্ষাৎকার। এসব তথ্য-উপাত্ত ২০১৪ সালে ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণের কথা বলা হলেও তা হয়নি। সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে ‘যুদ্ধশিশু’দের অনেক নথিপত্রও। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সাল থেকে ১০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার শিশুকে বিদেশে দত্তক পাঠানো হয়। যার তথ্যাদি আগারগাঁওয়ের সমাজসেবা অধিদপ্তরে থাকার কথা। কিন্তু সেখানে এখন নথি রয়েছে সাতশর মতো। বাকি নথি খোয়া গেছে। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ৩০ লাখ বাঙালি নিধনযজ্ঞের পাশাপাশি এ দেশের প্রায় পাঁচ লাখ নারীকে নির্যাতন করেছে। এতে অনেকেই গর্ভধারণ করেন। তাদের গর্ভে জন্ম নেওয়া শিশুদেরই ‘যুদ্ধশিশু’ বলা হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের তথ্য সংগ্রহে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘যে তথ্য-উপাত্ত আছে, সেগুলো অন্তত জাতীয় ইতিহাসের স্বার্থে ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা উচিত। তাহলে গবেষণা আরও বিস্তৃত হবে এবং তরুণ প্রজন্মও ইতিহাসের সত্য জানতে পারবে।’ মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে দেশে ২০০১ সালের ২৩ অক্টোবর প্রথম গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয় কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তি, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রদান এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক সংরক্ষণ নিয়েই ব্যস্ত। সরকারি উদ্যোগে নিজস্ব গ্রন্থাগার ও আর্কাইভ এবং ডিজিটাল আর্কাইভ হয়নি এখনও। আর্কাইভ থাকলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই, দলিল, একাত্তরে প্রকাশিত পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ, অডিওসহ যাবতীয় তথ্যাদি তাতে সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো। ডিজিটাল আর্কাইভ না থাকায় সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো বিচ্ছিন্নভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ইতিহাস সংরক্ষণ, গবেষণা ও প্রকাশনা শাখা নামে একটি শাখা রয়েছে। নেতৃত্বে রয়েছেন একজন উপসচিব। বার্ষিক বাজেট ৫ লাখ টাকা, যা দিয়ে মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মন্ত্রণালয়ের কাজের বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করছি। মুক্তিযুদ্ধের তথ্য-উপাত্ত সংরক্ষণ বিষয়ে কী করা যায়, সেটি আলোচনা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।